Bangla Lecture One For BCS Exam

ভাষা ও বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বাংলা লিপি  ও  ছাপাখানা, বাংলা ভাষার রূপ,ভাষারীতি রূপান্তর, নমুনা প্রশ্ন 

ভাষা ও বাংলা ভাষা:

  •  বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের বাহন বা মাধ্যমকে ভাষা বলে।
  •  ভাষা সৃষ্টি হয় ধ্বনির সাহায্যে এবং ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
  •  ভাষার বাহন, ক্ষুদ্রতম একক ও মূলভিত্তি – ধ্বনি
  • ভাষার মূল উপাদান –  ধ্বনি (অধিকাংশের মতে: শব্দ)
  •  ভাষার মূল উপকরণ, প্রাণ ও একক – বাক্য
  •  ব্যাকরণের প্রাণ – ভাষা
  •  ভাষার মৌলিক অংশ- চারটি(ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ)
  •  বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৭১১১ টি ভাষা প্রচলিত আছে।
  •  সবচেয়ে বেশি ভাষার দেশ দুটি- পাপুয়া নিউগিনি (৮৫০ টি) ও ইন্দোনেশিয়া (৬৭০ টি)। (সূত্র: ইথনোলগ)
  •  পৃথিবীতে বিদ্যমান ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাষাগোষ্ঠী- ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী(খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০)
  •  জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের প্রথম ভাষা- মান্দারিন (চৈনিক/চীনা ভাষা)
  •  ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা- ষষ্ঠ বৃহৎ মাতৃভাষা (সূত্র: ইথনোলগ)
  •  দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বিশ্বের প্রথম ভাষা- ইংরেজি
  • দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান- দশম
  • বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিয়ন

জনসংখ্যা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০ ভাষা

প্রথমমান্দারিন
দ্বিতীয়স্প্যানিশ
তৃতীয়ইংরেজি
চতুর্থআরবি
পঞ্চমহিন্দি
ষষ্ঠবাংলা
সপ্তমপর্তুগিজ
অষ্টমরুশ
নবমজাপানিজ
দশমজার্মান

Source:Ethnologue: Languages of the World

বাংলা ভাষার উৎপত্তি

  • বাংলা ভাষা ইন্দো – ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত।
  • ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী দুই ভাগে বিভক্ত – কেন্তুম (ইউরোপীয় ভাষাসমূহ) এবং শতম (এশীয় ভাষাসমূহ)
  • ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার শতম শাখার আর্য বা ইন্দো – ইরানীয় ভাষা থেকে এসেছে বাংলা ভাষা।
  • ভারতীয় আর্য ভাষার স্তর তিনটি – প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা, মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা ও নব্য ভারতীয় আর্যভাষা।
  • বাংলা ভাষা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার ‘প্রাচীন প্রাচ্য’ থেকে এসেছে।
  • বাংলার আদি অধিবাসীদের ভাষা ছিল – অস্ট্রিক ভাষা
  • আর্যদের ভাষার নাম বৈদিক ভাষা। একে ‘আর্য ভাষা’ বলা হয়।
  • বাংলা ভাষার মূল উৎস – বৈদিক ভাষা।
  • বাংলা ভাষার জন্ম – ‘বঙ্গ কামরূপি’ ভাষা থেকে।
  • বাংলা ভাষার ভগ্নী বলা হয় – অসমিয়া ভাষাকে।
  • বৈদিক ভাষা সংস্কার করে সৃষ্টি হয়েছে – সংস্কৃত ভাষা (ব্রাহ্মণ-পন্ডিতদের ভাষা)
  • সংস্কৃত ভাষা চূড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ হয় – পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতে (খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দে, ‘অষ্ট্যাধায়ী’ ব্যাকরণগ্রন্থে)
  • সাধারণ মানুষের মুখের ভাষার নাম – প্রাকৃত ভাষা।
  • বাংলা সৃষ্টি হয়েছে ভাষার প্রাকৃত রূপ থেকে।
  • প্রাকৃত শব্দের অর্থ – প্রকৃতিজাত বা স্বাভাবিক
  • অপভ্রংশ – প্রাকৃত স্তরের পরের ভাষা
  • অপভ্রংশ শব্দের অর্থ – বিকৃতি/বিচ্যুতি/অশুদ্ধি
  • বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে – ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, সপ্তম শতাব্দীতে (৬৫০ খ্রি.) এবং ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, দশম শতাব্দীতে (৯৫০ খ্রি.)
  • বাংলা ভাষা এসেছে – ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে এবং ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, মাগধী প্রাকৃত থেকে।

বাংলা লিপি ও ছাপাখানা

  • ভারতীয় উপমহাদেশে আর্য ভাষার যে প্রাচীনতম লিপির সন্ধান পাওয়া যায় তার নাম ব্রাহ্মী লিপি। এ লিপির সন্ধান পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ অব্দে সম্রাট অশোকের অনুশাসনের সময় বগুড়ার মহাস্থানগড়ে।
  • প্রাচীন ভারতে দুই ধরনের লিপি প্রচলিত ছিল – ব্রাহ্মী লিপি ও খরোষ্ঠী লিপি।
  • ব্রাহ্মী লিপির তিনটি রূপ ছিল – সারদা (পশ্চিম-ভারতীয় লিপি), নাগর (মধ্য-ভারতীয় লিপি) ও কুটিল (পূর্ব-ভারতীয় লিপি)
  • বঙ্গলিপির উদ্ভব হয় – ‘ব্রাহ্মী লিপি’র কুটিল রূপ থেকে। একে ‘পূর্বী লিপি’ বলা হয়।
  • ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হত – খরোষ্ঠী লিপি (এ লিপি পরবর্তীতে অবলুপ্ত হয়)।
  • বাংলা লিপির গঠন কাজ শুরু হয় – সেন রাজাদের সময়
  • বাংলা লিপি স্থায়ী রূপ বা পূর্ণতা লাভ করে – পাঠান যুগে (কলকাতায় ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’ স্থাপিত হওয়ার পর)
  • উপমহাদেশে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৪৯৮ সালে ভারতের গোয়ায় (পর্তুগিজ ভাষার মুদ্রণযন্ত্র)
  • প্রথম বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন – চার্লস উইলকিন্স (১৭৭৮) এবং তার নির্দেশেই প্রথম বাংলা অক্ষর খোদাই করেন – পঞ্চানন কর্মকার।
  • বাংলা মুদ্রাক্ষরের জনক বলা হয় – পঞ্চানন কর্মকারকে।
  • প্রথম বাংলা হরফ মুদ্রিত হয় – নাথিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের ‘A Grammar of Bengal Language’ গ্রন্থে (১৭৭৮)
  • কলকাতার শ্রীরামপুরে ‘শ্রীরামপুর মিশন প্রেস’ স্থাপন করেন – উইলিয়াম কেরি (১৮০০)
  • বাংলাদেশের প্রথম ছাপাখানা – রংপুরের ‘বার্তাবহ যন্ত্র’ (১৮৪৭)
  • ঢাকার প্রথম ছাপাখানা – সুন্দর মিত্রের ‘বাংলা প্রেস’ (আজিমপুর, ১৮৬০)

বাংলা ভাষার রূপ

  • পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষার রূপ দুইটি। যেমন: লেখ্য রূপ ও কথ্য রূপ।
  • লেখ্য রূপ দুই প্রকার – সাধু ও চলিত
  • কথ্য রূপ দুই প্রকার – চলিত ও আঞ্চলিক
  • পৃথিবীর সকল ভাষারই উপভাষা আছে। অঞ্চলভিত্তিক মানুষের মুখের ভাষাকে আঞ্চলিক ভাষা/উপভাষা (Dialect) বলে।
  • সর্বপ্রথম সাধু ভাষা প্রয়োগ করেন – রাজা রামমোহন রায় ১৮১৫ সালে ‘বেদান্ত’ প্রবন্ধ গ্রন্থে
  • সাধু ভাষা পরিপূর্ণতা লাভ করে – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে।
  • ব্যাকরণ সিদ্ধ ভাষা হলো – সাধু ভাষা।
  • ভাষার সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ রূপ বা প্রমিত ভাষারীতি – চলিতরীতি (লেখ্য ও কথ্য উভয়ের মিশ্রণে সৃষ্ট)।
  • চলিত ভাষাকে‘বীরবলী ভাষা’ বলা হয় (প্রমথ চৌধুরী এ ভাষার স্রষ্টা)
  • কথ্য ও সাধু ভাষার মিশ্রণকে বলে – আলালী ভাষা (প্যারীচাঁদ মিত্র এ ভাষার স্রষ্টা)
  • সাধু ও চলিত ভাষার মূল পার্থক্য – ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের রূপে
  • সর্বপ্রথম চলিত ভাষা ব্যাবহার করেন – প্রমথ চৌধুরী (তাঁর সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় ১৯১৪ সালে)। তিনি বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক।
  • চলিত ভাষার জন্ম – কলকাতা অঞ্চলের ভাষাকে কেন্দ্র করে
  • সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণে ভাষার স্বকীয়তা বিনষ্ট হয় বলে একে ‘গুরুচন্ডালী দোষ’ বলে।

ভাষারীতি রূপান্তর

সাধু ও চলিতরীতির পার্থক্য:

সাধু ভাষাচলিত ভাষা
সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম মেনে চলে।ব্যাকরণ না থাকায় এর অনুসৃতি কষ্টসাধ্য।
কাঠামো অপরিবর্তনীয় ও বানাননিষ্ঠ।কাঠামো পরিবর্তনীয় ও বানাননিষ্ঠ নয়।
গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী।সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য ও কৃত্রিমতাবর্জিত।
নাট্যসংলাপ, কথোপকথন ও বক্তৃতায় অনুপযোগী।নাট্যসংলাপ, বক্তৃতা ও আলাপ-আলোচনায় উপযোগী।
সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণাঙ্গরূপ প্রকাশ পায়।সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পরিবর্তিত ও সংক্ষিপ্ত রূপ প্রকাশ পায়।
তৎসম শব্দ ও যুক্তব্যঞ্জনের ব্যবহার বেশি।অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রাধান্য বেশি।
সন্ধি ও সমাসের আধিক্য।সন্ধি ও সমাসবদ্ধ শব্দকে ভেঙে লেখার প্রবণতা বেশি।
শুধু লৈখিক রূপ বিদ্যমান।লৈখিক ও মৌখিক উভয় রূপ বিদ্যমান।

 সাধু ও প্রমিত চলিতরীতির পার্থক্য:

  • সাধারণ বর্তমান
    সাধু : চাহে, গাহে, সহে ,বহে
    প্রমিত : চায়, গায়, সয়, বয়
  • ঘটমান বর্তমান
    সাধু : দিতেছিস, হাসাইতেছেন, গাহিতেছে, শুনাইতেছে, দেখিতেছ, বলিতেছি
    প্রমিত : দিচ্ছিস, হাসাচ্ছেন, গাইছে, শোনাচ্ছে, দেখছ, বলছি
  • পুরাঘটিত বর্তমান
    সাধু : গিয়াছিস, হাসাইয়াছেন, শুনাইয়াছ, দেখিয়াছে, বলিয়াছি
    প্রমিত : গেছিস, হাসিয়েছেন, শুনিয়েছ, দেখেছে, বলেছি
  • সাধারণ অতীত
    সাধু : আসিল, বলিলাম, দেখিলে, শুনাইল, হাসাইলেন, দিলি
    প্রমিত : এল, বললাম, দেখিলে, শোনাল, হাসালেন, দিলি
  • নিত্যবৃত্ত অতীত
    সাধু : বলিতাম, দেখিতে, শুনাইত, হাসাইতেন, দিতিস
    প্রমিত : বলতাম, দেখতে, শোনাত, হাসাতেন, দিতিস
  • ঘটমান অতীত
    সাধু : বলিতেছিলাম, দেখিতেছিলে, শুনাইতেছিল, হাসাইতেছিলেন, দিতেছিলি
    প্রমিত : বলছিলাম, দেখছিলে, শোনাচ্ছিল, হাসাচ্ছিলেন, দিচ্ছিলি
  • সাধারণ ভবিষ্যৎ
    সাধু : বলিব, দেখিবে, শুনাইবে, হাসাইবেন, দিবি
    প্রমিত : বলব, দেখবে, শোনাবে, হাসাবেন, দিবি
  • ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা
    সাধু : বলিও, শুনাইও, দেখিবেন, হাসাইবেন, যাইস
    প্রমিত : বোলো, শুনিয়ো, দেখবেন, হাসাবেন, যাস
  • সাপেক্ষ সংযোজক
    সাধু : খাইলে, বলিলে, শুনাইলে, গাহিলে, শুইলে
    প্রমিত : খেলে, বললে, শোনালে, গাইলে, শুলে
  • নিমিত্তার্থক ক্রিয়া
    সাধু : খাইতে, বলিতে, শুনাইতে, গাহিতে, শুইতে
    প্রমিত : খেতে, বলতে, শোনাতে, গাইতে, শুতে
  • পূর্বক্রিয়া
    সাধু : খাইয়া, বলিয়া, শুনাইয়া, দিয়া, গাহিয়া
    চলিত : খেয়ে, বলে (বোলে), শুনিয়ে, দিয়ে, গেয়ে
  • সর্বনাম
    সাধু : ইহা, উহা, কাহা, তাহা, যাহা
    প্রমিত : এ, ও, কা, তা, যা
  • অনুসর্গ
    সাধু : অপেক্ষা, জন্য, ব্যতীত, সম্মুখে, সহিত
    প্রমিত : চেয়ে/চাইতে/থেকে, জন্যে, ছাড়া, সামনে, সাথে
  • যোজক শব্দ
    সাধু : অনন্তর, অপিচ, তাহাতে, তাহা হইলে, পরন্তু, পুনরপি, পুনরায়, যথা-তথা, যদ্যপি, সুতরাং
    প্রমিত : তারপর, তা সত্তে¡ও, তাতে, তা হলে, তবুও, আবারও, আবার, যেখানে-সেখানে, যদিও, তাই
  • সাধারণ শব্দ
    সাধু : বানিয়া, ধনিয়া, খরচিয়া, জুতা, টুকরা, ধুলা, মুলা, ফিতা, হিরা
    প্রমিত : বেনে, ধনে, র্খচে, জুতো, টুকরো, ধুলো, মুলো, ফিতে, হিরে

সাধু থেকে চলিতরীতিতে পরিবর্তনের কতগুলো সাধারণ সূত্র:

  •  ক্রিয়াপদের মধ্যস্থিত ‘ই’ ধ্বনি চলিতরীতিতে লোপ পায়। যেমন – খাইব > খাব, করিব > করব।
  • ক্রিয়াপদের মধ্যস্থিত ‘উ’ ধ্বনি চলিতরীতিতে লোপ পায়। যেমন – যাউক > যাক, খাউক > খাক।
  • পদের শেষে ‘অ/আ/এ’ থাকলে পূর্ববর্তী ‘আ’ ধ্বনি চলিতরীতিতে ‘এ’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন – বিকাল > বিকেল, হিসাব > হিসেব।
  • পদের শেষে ‘অ/আ/এ’ থাকলে পূর্ববর্তী ‘উ’ ধ্বনি চলিতরীতিতে ‘ও’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন – উঠে > ওঠে, উড়ে > ওড়ে।
  •  পদের পূর্বে ‘ই’ ধ্বনি থাকলে পরবর্তী ‘আ’ ধ্বনি চলিতরীতিতে ‘এ’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন – দিয়া > দিয়ে, গিয়া > গিয়ে, বিয়া > বিয়ে, নিয়া > নিয়ে।
  •  পদের পূর্বে ‘উ/ঊ’ ধ্বনি থাকলে পরবর্তী ‘আ’ ধ্বনি চলিতরীতিতে ‘ও’ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। যেমন –  জুতা > জুতো, তুলা > তুলো, মুলা > মুলো, চুলা > চুলো।

সর্বনাম পদের পার্থক্য:

সাধুচলিত
যাহাযা
যাহারযার
যাহারাযারা
যাহাকেযাকে
যাহাতেযাতে
যাহাদেরযাদের
আপনকার/ভবদীয়আপনার
কাহারকার
কাহাকেকাকে
মদীয়আমার
ত্বদীয়তোমার
তদীয়তার
আমায়আমাকে
তোমায়তোমাকে
তাহাদিগকেতাদেরকে
তোমাদিগকেতোমাদেরকে
আমাদিগকেআমাদেরকে
সাধুচলিত
ইহা/এটা
ইহারএর
ইহারাএরা
ইহাকেএকে
ইহাতেএতে
ইহাদেরএদের
তাহাতা
তাহারতার
তাহারাতারা
তাহাকেতাকে
তাহাতেতাতে
তাহাদেরতাদের
উহাও/ওটা
উহারওর
উহারাওরা
উহাকেওকে
উহাদেরওদের

ক্রিয়াপদের পার্থক্য:

সাধুচলিত
দেখিয়াদেখে
দেখিলেনদেখলেন
করিলেনকরলেন
করিবারকরবার
করিতামকরতাম
হইলেহলে
হইলোহলো
হইয়াহয়ে
শুনিয়াশুনে
বলিয়াবলে
আসিলএসে
আসিয়াকরছে
করতেছেকরছিলেন
করতেছিলেনকরেছে
করিয়াছেকরেছিলেন
করিয়াছিলেনকরবো
করিবোকরে
করিয়াহচ্ছে

সংযোগমূলক ক্রিয়াপদের পার্থক্য:

সাধুচলিত
দেন নাইদেননি
পারি নাইপারিনি
পার হইয়াপেরিয়ে
ফুটিয়া রহিয়াছেফুটে রয়েছে
ভাঙিয়া যাইতে লাগিলভেঙে যেতে লাগল
দর্শন করিলদেখলো
প্রদর্শন করিলদেখালো
ভোজন করিবেখাবে
প্রস্থান করিবেচলে যাবে
আহবান করিলডাকলো
আরোহণ করিলউঠল

কাব্যে বিশেষ রূপে ব্যবহৃত শব্দের শিষ্ট চলিত রূপ:

সাধু রূপশিষ্ঠ চলিত রূপ
অদ্রিপর্বত
অবলেপেসগর্বে
অলখঅলক্ষ্য
একেলাএকলা
অবহেলিঅবহেলা করে
অবোধনির্বোধ
আজ্ঞাআদেশ
আথালগোয়াল
করিকরে
কয়ে দিলাবলে দিলা
করিনুকরলাম
কেলিনুখেললাম
কায়দেহ/শরীর
কুক্ষণেঅসময়ে
কিরীটমুকুট
কুহেলিকুয়াশা
কুক্কুরকুকুর
মোদেরআমাদের
মতনমতো
যথাযেমন
যশখ্যাতি
স্বনিলশব্দ করল
হেরিলদেখল
হেথায়এখানে
হোথায়সেইখানে
চাহেচায়
জিজ্ঞাসুকৌতূহলী
জাঙ্গালসেতু, বাঁধ
তবতোমার
মমআমার
তোমাতোমাকে
তারেতাকে
নহেনয়
নাহিনাই/¯œান করি
নিনাদশব্দ
পুলকেআনন্দে
পালিলামপালন করলাম
ফিরিফিরে
বোধজ্ঞান
বারীন্দ্রসমুদ্র
বিহনেবিহীন/ছাড়া/বিনা
ভরসাআশা
ভালেকপালে
ভবজগৎ
যবেযখন
লহনাও/লও
শৃঙ্গধরপর্বত
সায়াহ্নসন্ধ্যা
হেরিদেখি
শোভিছেশোভা পাচ্ছে

নমুনা প্রশ্ন

১. বাংলার আদি অধিবাসীদের ভাষা ছিল-

ক) বৈদিক ভাষা

খ) আর্য ভাষা

গ) অস্ট্রিক ভাষা

ঘ) সংস্কৃত ভাষা

উত্তর: গ

২. বাংলা ভাষার জন্ম কোন ভাষা থেকে?

ক) ইন্দো-ইরানীয় ভাষা

খ) প্রাকৃত ভাষা

গ) বঙ্গকামরূপি ভাষা

ঘ) আসামি ভাষা

উত্তর: গ

৩. বাংলা মুদ্রাক্ষরের জনক বলা হয় কাকে?

ক) উইলিয়াম কেরি

খ) পঞ্চানন কর্মকার

গ) চার্লস উইলকিন্স

ঘ) জর্জ গ্রিয়ারসন

উত্তর: খ

৪. বাংলাদেশের প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়-

ক) ১৮০০ সালে

খ) ১৯৪৭ সালে

গ) ১৮৬০ সালে

ঘ) ১৮৪৭ সালে

উত্তর: ঘ

৫. ব্যাকরণ-সিদ্ধ ভাষারীতি কোনটি?

ক) উপভাষা

খ) কথ্য ভাষা

গ) প্রমিত চলিত ভাষা

ঘ) সাধু ভাষা

উত্তর: ঘ

৬. বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে নিম্নোক্ত একটি ভাষা থেকে-

ক) সংস্কৃত

খ) পালি

গ) প্রাকৃত

ঘ) অপভ্রংশ

উত্তর: গ

৭. কোন সম্রাটের শাসনামলে ব্রাহ্মী লিপি পাওয়া যায়?

ক) চন্দগুপ্ত

খ) অশোক

গ) আলোকজান্ডার

ঘ) সমুদ্রগুপ্ত

উত্তর: খ

৮. ড. সুনীতিকুমারের মতে বাংলা ভাষা কোন ভাষা থেকে এসেছে?

ক) মাগধী প্রাকৃত

খ) অর্ধ মাগধী প্রাকৃত

গ) গৌড়ীয় প্রাকৃত

ঘ) বঙ্গ কামরূপী

উত্তর: ক

৯. বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে কোন লিপি হতে?

ক) ব্রাহ্মী লিপি

খ) সংস্কৃতি লিপি

গ) হিন্দি লিপি

ঘ) প্রাকৃত লিপি

উত্তর: ক

১০. এক এক সমাজের সকল মানুষের অর্থবোধক আওয়াজের সমষ্টি হলো-

ক) সাহিত্য

খ) ভাষা

গ) শব্দ

ঘ) ধ্বনি

উত্তর: খ

১১. ভাষার মৌলিক একক কী?

ক) ধ্বনি

খ) বর্ণ
গ) শব্দ

ঘ) বাক্য

উত্তর: ঘ

১২. ‘শিক্ষা হচ্ছে সেই বস্তু যাহা লোকে নিতান্ত অনীচ্ছা সত্বেও গলাধকরণ করিতে বাধ্য হয়।’ চলিত রীতির বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা-

ক) তিন

খ) চার

গ) পাঁচ

ঘ) ছয়

উত্তর: গ

১৩. “ত্রুটি যারা মার্জ্জনা করেন ঔদার্য্য তাহাদেরই।” চলিতরীতির বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা-

ক) ১

খ) ২

গ) ৩

ঘ) ৪

উত্তর: গ

১৪. “অভাবগ্রস্থ ছেলেটি তার দুরাবস্থার কথা সাশ্রুপূর্ণ  নয়ণে বর্ণনা করিল।” চলিতরীতির বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা-

ক) ৪টি

খ) ৫টি

গ) ৬টি

ঘ) ৭টি

উত্তর: খ

১৫. ‘আমি তার উদ্ধতপূর্ণ আচরণে ব্যাথিত হইয়াছি।’ সাধুভাষার এই বাক্যে মোট কয়টি ভুল আছে?

ক) ২টি

খ) ৩টি

গ) ৪টি

ঘ) ৫টি

উত্তর: খ

১৬. চলিতরীতির নিম্ন বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা মোট কয়টি? ‘পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত দুস্ত বালকটির সবিনয়ে নিবেদন শুনিয়া উপস্থিত সকলের চোখ অশ্রু সজল হইয়া উঠিল।’

ক) ৫

খ) ৬

গ) ৭

ঘ) ৮

উত্তর: গ

১৭. ‘জরাগ্রস্থ মহারাজ বানপ্রস্থ অবলম্বনের সিদ্ধ্যান্ত গ্রহণ করিয়া মহারানীর সম্মতির জন্য অপেক্ষা করতে লাগিলেন।’ চলিতরীতির বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা কয়টি?

ক) ২টি

খ) ৩টি

গ) ৪টি

ঘ) ৫টি

উত্তর: ঘ

১৮. মানুষের মধ্যে এই প্রবনতা লক্ষ্যনীয় যে, যাঁহারা সত্যিকার গুনের অধীকারী নয় তাঁরাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়া থাকে। চলিতরীতির বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা-

ক) ৩

খ) ৫

গ) ৪

ঘ) ৭

উত্তর: ঘ

১৯. ‘দেশবাসীর উচিত বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের গণপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ গ্রহনে সাহায্য-সহযোগিতা করিয়া দেশ ও দশের কল্যান সাধনে নিজেদের বলিষ্ট ভূমিকা সমুজ্জল রাখবেন।’ চলিত বাংলায় লেখা বাক্যটিতে ভুলের সংখ্যা-

ক) নয়

খ) চার

গ) সাত

ঘ) ছয়

উত্তর: ঘ

২০. “সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জানানো যাইতেছে যে, মুখস্ত করে পরীক্ষায় লিখিলে ক্রীতকার্য হওয়া যাবে না।” চলিতরীতির বাক্যে ভুলের সংখ্যা-

ক) তিন

খ) চার
গ) পাঁচ

ঘ) ছয়

উত্তর: খ

২১. কোন শব্দটি সাধু ভাষারীতিতে ব্যবহৃত হয়?

ক) তুলা

খ) সঙ্গে

গ) দেখে

ঘ) বুনো

উত্তর: ক

২২. চলিত গদ্যরীতি কোন অঞ্চলের ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে?

ক) কৃষ্ণনগর

খ) কুষ্টিয়া

গ) যশোর

ঘ) কলকাতা

উত্তর: ঘ

২৩. নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার জন্য কোন ভাষা উপযোগী?

ক) সাধু

খ) কথ্য
গ) চলিত

ঘ) আঞ্চলিক

উত্তর: গ

২৪. লেখ্য ভাষার দুটি রূপের নাম কী ?

ক) সাধু ও চলিত

খ) লেখ্য ও আঞ্চলিক

গ) সাধু ও আঞ্চলিক

ঘ) আঞ্চলিক ও সর্বজনীন

উত্তর: ক

২৫. বাংলা লেখা সাধুরীতির নমুনা পাওয়া গিয়েছিলো-

ক) গোয়াল ঘরে

খ) শ্রীকৃষ্ণের বাসগৃহে

গ) দলিল-দস্তাবেজে

ঘ) চর্যাপদে

উত্তর: গ

২৬. বাংলা ভাষার মৌলিক রূপ কয়টি?

ক) ২টি

খ) ৩টি

গ) ৪টি

ঘ) ৫টি

উত্তর: গ

২৭. গুরুচন্ডালী দোষ বলতে বোঝায়-

ক) চলিত ও উপ-ভাষার মিশ্রণ

খ) চলিত ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণ

গ) সাধু ও আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ

ঘ) সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ

উত্তর: ঘ

২৮. ভাষার ঐশ্বর্যময় সম্ভার কোনটি?

ক) নাটক

খ) কাব্য

গ) শব্দ

ঘ) বাক্য

উত্তর: গ

২৯. ভাষার অঙ্গ কোনটি?

ক) ছন্দ

খ) ধ্বনি

গ) অর্থ

ঘ) ব্যাকরণ

উত্তর: খ

৩০. ভাষার মৌলিক ক্ষুদ্রতম একক হলো-

ক) শব্দ

খ) ধ্বনি
গ) অক্ষর

ঘ) কণ্ঠ

উত্তর: খ

৩১. বাংলাভাষার আদি জননী কোনটি?

ক) সংস্কৃতি

খ) ইন্দো-ইউরোপীয়

গ) ভারতীয়

ঘ) প্রাকৃত

উত্তর: খ

৩২. ভাষার একক কী?

ক) ধ্বনি

খ) বর্ণ

গ) শব্দ

ঘ) বাক্য

উত্তর: ঘ

৩৩. বাংলা ভাষা এসেছে কোন ভাষা থেকে?

ক) বৈদিক

খ) অর্ধ-মাগধী

গ) মগধ

ঘ) প্রাকৃত

উত্তর: ঘ

৩৪. বাংলা লিপির উৎস কী?

ক) খরোষ্ঠী লিপি

খ) সংস্কৃতলিপি

গ) আরবি লিপি

ঘ) ব্রাহ্মীলিপি

উত্তর: ঘ

৩৫. ভারতীয় কোন লিপিমালা ডান দিক থেকে লেখা হতো-

ক) হিন্দি

খ) মারাঠি

গ) গুজরাটি

ঘ) খরোষ্ঠী

উত্তর: ঘ

৩৬. বাংলা লিপির ডিজাইনার কে?

ক) উইলিয়াম কেরি

খ) চার্লস উইলকিন্স

গ) পঞ্চালন কর্মকার

ঘ) জর্জ গ্রিয়ার্সন

উত্তর: খ

৩৭. বাংলা লিপি খোদাই-এর কাজ করেন কে?

ক) উইলিয়াম কেরি

খ) চার্লস উইলকিন্স

গ) পঞ্চানন কর্মকার

ঘ) জর্জ গ্রিয়ার্সন

উত্তর: গ

৩৮. বাংলা লিপি প্রথম কার গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়?

ক) উইলিয়াম কেরি

খ) মানোএল দ্যা-আসসুম্পসাঁও

গ) রামমোহন রায়

ঘ) এন বি হ্যালহেড

উত্তর: ঘ

৩৯. বাংলা ভাষা নিচের কোন ভাষা থেকে এসেছে?

ক) সংস্কৃত ভাষা

খ) সিংহলি ভাষা

গ) প্রাচীন প্রাচ্য ভাষা

ঘ) পালি ভাষা

উত্তর: গ

৪০. ভাষা প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম কোনটি?

ক) ইশারা-ইঙ্গিত

খ) কণ্ঠস্বর

গ) লেখনী

ঘ) চিত্রাঙ্কন

উত্তর: খ

তথ্যসূত্র:

১. হুমায়ূন আজাদ, কতো নদী সরোবর বা বাংলা ভাষার জীবনী (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭)
২. হুমায়ূন আজাদ, ভাষাশিক্ষা ও ভাষাবিজ্ঞান পরিচিতি (ফেব্রুয়ারি ২০১০)
৩. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৬৮)
৪. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
৫. মহাম্মদ দানীউল হক, ভাষাবিজ্ঞানের কথা (মাওলা ব্রাদার্স, ডিসেম্বর ২০০২)
৬. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৯)
৭. নারায়ণ হালদার, বাংলা ভাষা প্রসঙ্গ : বানান কথন লিখনরীতি (কলকাতা ২০০৭)
৮. ড. নীহাররঞ্জন রায়, বাঙালির ইতিহাস (জানুয়ারি ১৯৫০)
৯. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খন্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *