আলোচ্য বিষয় সাহিত্য ও বাংলা সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ, নমুনা প্রশ্ন
সাহিত্য ও বাংলা সাহিত্য
‘সাহিত্য’ কথাটি ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। সাহিত্য বলতে লিখন-শিল্পকে বোঝায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “একের সহিত অন্যের মিলনের মাধ্যমই হলো সাহিত্য।” ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক ও মহাজাগতিক চিন্তাচেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত রূপ বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতিকে সাহিত্য বলে। সাহিত্যকে প্রধানত গদ্য, পদ্য ও নাটক এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
গদ্যের মধ্যে প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস; পদ্যের মধ্যে ছড়া ও কবিতা এবং নাটক-নাটিকা সাহিত্যের ভিন্ন শাখা। সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীনতম শাখা কবিতা। বাংলা সাহিত্যের প্রথম উত্তরাধিকার ভারতীয় ‘পুরাণ’ থেকে সাহিত্যবস্তু গ্রহণ। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও শক্তিশালী ধারা কবিতা এবং কাব্যের সমৃদ্ধ ধারা গীতিকবিতা। কথাসাহিত্য বলতে উপন্যাস ও ছোটগল্পকে বোঝায়। সাধারণ মানুষের জন্য যে সাহিত্য রচিত হয় তাকে গণসাহিত্য বলে।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ:
১. প্রাচীন বা আদিযুগ: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, (৬৫০-১২০০ খ্রি.)
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, (৯৫০-১২০০ খ্রি.)
২. মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০ খ্রি.)
৩. আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রি.-বর্তমান)
- অন্ধকার যুগ- (১২০১-১৩৫০ খ্রি.)
- যুগ সন্ধিক্ষণ- (১৭৬১-১৮৬০ খ্রি.)
- রবীন্দ্রযুগ- (১৯০১-১৯৪০ খ্রি.)
- উত্তরাধুনিক যুগ (১৯৯১ খ্রি.-বর্তমান)
প্রাচীন যুগ
- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের নিদর্শন – চর্যাচর্যবিনিশ্চয় > চর্যাগীতিকোষ > চর্যাগীতি > চর্যাপদ।
- চর্যাপদ রচনা করেন – বৌদ্ধ সহজিয়াগণ (সহজিয়া সম্প্রদায়ের সাথে বাউলদের ঘনিষ্ঠতা আছে)।
- চর্যাপদের বিষয়বস্তু – বৌদ্ধ ধর্মের সাধনভজনের তত্ত্ব (এগুলো একইসাথে গান ও কবিতা)।
- চর্যাপদের ভাষাকে – ‘সান্ধ্য ভাষা’ বলা হয়।
- চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন – হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ গ্রন্থশালা (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে। ১৯১৬ সালে কলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায়চর্যাপদ প্রকাশিত হয়।
- চর্যাপদের মোট পদসংখ্যা: ড. সুকুমার সেনের মতে – ৫১ টি (সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত) এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে – ৫০ টি।
- চর্যাপদের মোট পদ পাওয়া গেছে – সাড়ে ছেচল্লিশটি।
- চর্যাপদের যে পদগুলো পাওয়া যায়নি – ২৪, ২৫, ও ৪৮ সংখ্যক পদ
- চর্যাপদের যে পদটি খন্ডিত আকারে পাওয়া গেছে – ২৩ নং পদ
- চর্যাপদের মোট কবির সংখ্যা: ড. সুকুমার সেনের মতে – ২৪ জন (সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত) এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে – ২৩ জন।
- চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেন – কাহ্নপা (১৩ টি) এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ লেখেন – ভুসুকুপা (৮ টি)।
- চর্যাপদের প্রাচীন কবি লুইপা। প্রধান কবি কাহ্নপা।
- ভুসুকুপা নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন।
মধ্যযুগ
অন্ধকার যুগ
- বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ মধ্যযুগের অন্তর্ভূক্ত। এ যুগের সাহিত্যিক নিদর্শন:
ক) ‘শূন্যপুরাণ’ – রামাই পন্ডিত (ধর্মপূজার কাব্য)
খ) ‘সেক শুভোদয়া’ – হলায়ুধ মিশ্র (বাংলা গান ও আর্যা) - গদ্যপদ্য মিশ্রিত কাব্যকে বলা হয় – চম্পুকাব্য (‘শূন্যপুরাণ ও সেক শুভোদয়া’ চম্পুকাব্যের নিদর্শন)।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য
- বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন – ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। এ কাব্যগ্রন্থের কবি – বড় –চন্ডীদাস (মধ্যযুগের আদি কবি)। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যগ্রন্থ আবিষ্কার করেন – ১৯০৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বসন্তরঞ্জন রায়। ১৯১৬ সালে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে বসন্তরঞ্জন রায়ের সম্পাদনায় ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাংলা সাহিত্যে চন্ডীদাস তিন জন:বড় – চন্ডীদাস (সবচেয়ে প্রাচীন), দ্বিজ চন্ডীদাস ও দীন চন্ডীদাস।
বৈষ্ণব পদাবলি
- রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা অনুসারে যে আধ্যাত্মিক সাহিত্য রচিত হয়েছে তাকে বৈষ্ণব সাহিত্য বলে।রাধা ও কৃষ্ণের স্বর্গীয় নাম – লক্ষ্মী ও বিষ্ণু।
- বৈষ্ণব পদাবলি রচিত – ব্রজবুলি ভাষায় (এটি মুখের ভাষা না, সাহিত্যকর্মের ভাষা)।
- ব্রজবুলি ভাষা – বাংলা ও মৈথিলি ভাষার মিশ্রণে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম ভাষা। এ ভাষার স্রষ্টা মিথিলার কবি বিদ্যাপতি। তিনিএকটিও বাংলা পঙ্ক্তি না লিখে বাংলা সাহিত্যের মর্যাদাবান কবি হিসেবে পরিচিত।
- বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা – বিদ্যাপতি (অবাঙালি কবি) এবং বড় – চন্ডীদাস (বাঙালি কবি)।
- বাংলা সাহিত্যের প্রথম মানবতাবাদী কবি – চন্ডীদাস
- চন্ডীদাস বাংলা সাহিত্যে – ‘দ্বিজ চন্ডীদাস’ হিসেবে পরিচিত।
- আধুনিক যুগের অন্যতম পদাবলি সাহিত্য লেখক – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জীবনী সাহিত্য
- বাংলায় জীবনীসাহিত্য রচনা শুরু হয় শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী রচনার মধ্য দিয়ে।
- বাংলা সাহিত্যের একটি পদ না লিখেও যার নামে একটি যুগের সৃষ্টি হয়েছে- শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি প্রচার করেছিলেন – বৈষ্ণব ধর্ম (মানবপ্রেম ধর্ম)।
- বাংলা ভাষায় রচিত শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনী গ্রন্থ – বৃন্দাবন দাসের ‘শ্রীচৈতন্য – ভাগবত’ (১৫৪৮ খ্রি.)। বাংলা সাহিত্যে চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ ‘কড়চা’ নামে পরিচিত।
মঙ্গলকাব্য
- ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্যই হলো মঙ্গলকাব্য। মঙ্গলকাব্যের প্রধান শাখা তিনটি – মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল।
- মঙ্গলকাব্যে ব্যবহৃত হয়েছে – পয়ার ছন্দ
- সবচেয়ে প্রাচীন মঙ্গলকাব্য – মনসামঙ্গল। মনসামঙ্গলের আদি কবি – কানাহরি দত্ত
- চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি – মানিক দত্ত এবং শ্রেষ্ঠ কবি – মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
- অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি – ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর (বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাগরিক কবি)
- মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি – মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এবং শেষ কবি – ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
- “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে” প্রার্থনাটি করেছেন – ঈশ্বরী পাটনী অন্নদা দেবীর কাছে (ঈশ্বরী পাটনী ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের একটি চরিত্র)। এটি রচনা করেন ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর।
নাথ সাহিত্য
- নাথ সাহিত্য – মধ্যযুগে শিব উপসক এক শ্রেণির যোগী সম্প্রদায় ছিল, তাদের ধর্মের নাম নাথ ধর্ম। নাথ ধর্মের কাহিনী অবলম্বনে রচিত কাব্যই নাথসাহিত্য নামে পরিচিত। নাথ ধর্মের উৎপত্তি – বৌদ্ধধর্ম ও শিবধর্মের মিশ্রণে।
- ‘নাথ’ শব্দের অর্থ – প্রভু। নাথ সাহিত্য পরিচিত – গীতিকা হিসেবে।
- নাথ সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ – ‘গোরক্ষ বিজয়’ (শেখ ফয়জুল্লাহ)। মুুসলমান হয়েও তিনি প্রথম নাথ সাহিত্য রচনা করেন।
মর্সিয়া সাহিত্য
- মর্সিয়া সাহিত্য – আরবি সাহিত্যে মর্সিয়ার উদ্ভব ঘটেছে নানা শোকাবহ ঘটনার মধ্য দিয়ে। কারবালায় মুহাম্মদ (স) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন ও অন্যদের শহিদ হওয়ার কাহিনীই মূলত মর্সিয়া সাহিত্যের জন্ম দিয়েছে।
- আরবি শব্দ ‘মর্সিয়া’ এর অর্থ – শোক প্রকাশ করা
- মর্সিয়া সাহিত্য ধারার প্রথম কবি – শেখ ফয়জুল্লাহ
- শেখ ফয়জুল্লাহ রচিত মর্সিয়া কাব্য – জয়নবের চৌতিশা।
- কারবালার বিষাদময় যুদ্ধবিগ্রহ বিষয়ক কাব্য ‘জঙ্গনামা’ এর রচয়িতা – দৌলত উজির বাহরাম খান(‘দৌলত উজির’ তাঁর উপাধি)।
- আধুনিক যুগের অন্যতম মর্সিয়া সাহিত্যিক – মীর মশাররফ হোসেন ও কায়কোবাদ
- মর্সিয়া সাহিত্যের হিন্দু কবি – রাধারমণ গোপ।
- ‘আমীর হামযা’ গ্রন্থের রচয়িতা – ফকির গরীবুল্লাহ (যুদ্ধবিগ্রহ বিষয়ক কাব্য)
মুসলিম সাহিত্য
- মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিদের উল্লেখযোগ্য অবদান – রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান। এ ধারার প্রথম কবি – শাহ মুহম্মদ সগীর।
- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম বাঙালি মুসলমান কবি – শাহ মুহম্মদ সগীর।
- ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যের রচয়িতা – শাহ মুহম্মদ সগীর (প্রথম রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান)।
- ‘লায়লি-মজনু’ কাব্যের রচয়িতা – দৌলত উজির বাহরাম খান
- মধ্যযুগে বাংলাদেশের বাইরে সাহিত্যচর্চা শুরু হয় – মিয়ানমারের আরাকানে। আরাকানকে বাংলা সাহিত্যে – ‘রোসাং/রোসাঙ্গ’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
- রোসাঙ্গ রাজসভার আদি কবি – দৌলত কাজী (রাজসভার প্রথম বাঙালি কবি)।
- আরাকান রাজসভার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি – আলাওল (মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ মুসলমান কবি)।
- কবি আলাওলের প্রথম ও বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ – পদ্মাবতী
- রোসাঙ্গ রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও আলাওলের পৃষ্ঠপোষক – কোরেশী মাগন ঠাকুর
- কোরেশী মাগন ঠাকুর রচিত কাব্যগ্রন্থ – চন্দ্রাবতী।
অনুবাদ সাহিত্য
- বাংলায় অনুবাদ সাহিত্যের সূত্রপাত হয় – পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’ অনুবাদের মধ্য দিয়ে (রুকনুদ্দিন বরবক শাহের আমলে)।
- বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ – কৃত্তিবাসের ‘রামায়ণ’। এটি অনূদিত হয় – বাল্মীকি রচিত সংস্কৃত ‘রামায়ণ’ থেকে।
- বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য আসে মূলত – সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ও হিন্দি ভাষা থেকে।
লোকসাহিত্য
- লোকসাহিত্য – লোকসাহিত্য বলতে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথা, গান, ছড়া, কাহিনী, কথা, প্রবাদ, ধাঁধাঁ ইত্যাদি বুঝায়। এক কথায়, কোন সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর অলিখিত সাহিত্যই লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা – ছড়া
- বাংলাদেশের লোকসাহিত্য সংগ্রহে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন – ড. আশরাফ সিদ্দিকী
- বিখ্যাত প্রাচীন লোকগীতি সংকলন – ‘হারামণি’ (১০ খন্ড)। সম্পাদক – মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন।
- গীতিকা – এক শ্রেণির আখ্যানমূলক লোকগীতি সাহিত্য।
- বাংলাদেশের গীতিকা সাহিত্য তিন ধরনের: নাথ গীতিকা, মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গ গীতিকা।
- নাথ গীতিকা সংগ্রহ করেন – স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন রংপুরের মুসলমান কৃষকদের নিকট থেকে।
- মৈমনসিংহ গীতিকা সংগ্রহ করেন – চন্দ্রকুমার দে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে। এটি বিশ্বের ২৩ টি ভাষায় অনূদিত হয়।
- মহুয়া পালার রচয়িতা – দ্বিজ কানাই (প্রণয় আখ্যান মিশ্রিত মৈমনসিংহ গীতিকার শ্রেষ্ঠ পালা)।
- ‘দেওয়ানা মদিনা’ পালার রচয়িতা – মনসুর বয়াতি (একে আলাল-দুলালের পালা বলা হয়)। পল্লিকবি জসীম উদ্দীন এটা সংগ্রহ করেন।
- পূর্ববঙ্গ গীতিকা সংগ্রহ করেন – ড. দীনেশচন্দ্র সেন, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম এলাকা থেকে।
- লালনের গানগুলো সর্বপ্রথম সংগ্রহ করেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২৯৮ টি গান)
- বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বাউল সাধক ও বাউল গান রচয়িতা – লালন শাহ (১৭৭২-১৮৯০) লালনের আখড়া অবস্থিত – কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে।
যুগ সন্ধিক্ষণ
- যুগ সন্ধিক্ষণ বা অবক্ষয় যুগের কবি – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।
- অবক্ষয় যুগের প্রধান বাংলা সাহিত্য – কবিগান (হিন্দুদের মধ্যে) ও পুঁথিসাহিত্য (মুসলমানদের মধ্যে)। কবিগানের আদিগুরু- গোঁজলা গুঁই।
- পুঁথিসাহিত্য – অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরবি-ফারসি-উর্দু-হিন্দি-তুর্কি শব্দবহুল মিশ্র ভাষারীতির এক ধরনের সাহিত্যকে ‘পুঁথিসাহিত্য’ বলা হয়। একে ‘বটতলার পুঁথি’ ও ‘দোভাষী পুঁথি’ওবলা হয়।
- পুঁথিসাহিত্য ধারার প্রথম কাব্য – ‘রায়মঙ্গল’ (রচয়িতা: কৃষ্ণরাম দাস)
- পুঁথিসাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি – ফকির গরীবুল্লাহ।
- বাংলা টপ্পাগানের জনক – নিধু বাবু (রামনিধি গুপ্ত)
- পাঁচালি গানের শক্তিশালী কবি – দাশরথি রায়
নমুনা প্রশ্ন
১. ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?
ক) ড. দীনেশচন্দ্র সেন
খ) ড. মুহাম্মদ এনামুল হক
গ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ঘ) ড. সুনীতিকুমার চট্টো.
উত্তর: গ
২. বাংলা সাহিত্যের অবক্ষয় যুগের সময়কাল কত বছর?
ক) ২০০ বছর
খ) ১৫০ বছর
গ) ১০০ বছর
ঘ) ৪০ বছর
উত্তর: গ
৩. কাদের হাতে বাংলা সাহিত্যের সূচনা ঘটে?
ক) মুসলমান
খ) হিন্দু
গ) ব্রাহ্মণ
ঘ) বৌদ্ধ
উত্তর: ঘ
৪. চর্যাপদের প্রধান কবির নাম কী?
ক) লুইপা
খ) কাহ্নপা
গ) ভুসুকুপা
ঘ) সরহপা
উত্তর: খ
৫. বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন কোনটি?
ক) চর্যাচর্যবিনিশ্চয়
খ) বৈষ্ণব পদাবলি
গ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
ঘ) শূন্যপুরাণ
উত্তর: গ
৬. ‘কানু ছাড়া গীত নাই’ কথাটি কোন যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
ক) প্রাচীন যুগ
খ) আধুনিক যুগ
গ) অন্ধকার যুগ
ঘ) মধ্যযুগ
উত্তর: ঘ
৭. বাংলা সাহিত্যে ‘কড়চা’ নামে পরিচিত-
ক) চরিত সাহিত্য
খ) মঙ্গলকাব্য
গ) বৈষ্ণব পদাবলি
ঘ) লোকসাহিত্য
উত্তর: ক
৮. বৈষ্ণব পদাবলির বাঙালি কবি কে?
ক) জয়দেব
খ) বিদ্যাপতি
গ) চন্ডীদাস
ঘ) রামাই পন্ডিত
উত্তর: গ
৯. মঙ্গলকাব্যের সবচেয়ে প্রাচীন শাখা কোনটি?
ক) চন্ডমঙ্গল
ক) অন্নদামঙ্গল
গ) মনসামঙ্গল
গ) ধর্মমঙ্গল
উত্তর: গ
১০. মুসলমান হয়েও নাথ সাহিত্য রচনা করেছেন-
ক) ফকির গরিবুল্লাহ
খ) শাহ মুহাম্মদ সগীর
গ) শেখ ফয়জুল্লাহ
ঘ) বাহরাম খান
উত্তর: গ
১১. ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি বাংলাদেশের কোন জেলায়?
ক) নারায়ণগঞ্জ
খ) মানিকগঞ্জ
গ) কিশোরগঞ্জ
ঘ) নরসিংদী
উত্তর: ঘ
১২. বাংলাদেশের লোকসাহিত্য সংগ্রহে কার কৃতিত্ব বেশি?
ক) দক্ষিণারঞ্জন মিত্র
খ) আবদুল করিম
গ) আশরাফ সিদ্দিকী
ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তর: গ
১৩. রূপকথা ও অলৌকিক কাহিনীসমৃদ্ধ মিশ্র ভাষারীতির সাহিত্যকে বলা হয়-
ক) লোকসাহিত্য
খ) কবিগান
গ) পুঁথিসাহিত্য
ঘ) পাঁচালি সাহিত্য
উত্তর: গ
১৪. বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম মুসলমান কবি-
ক) আলাওল
খ) শাহ মুহাম্মদ সগীর
গ) দৌলত কাজী
ঘ) বাহরাম খান
উত্তর: খ
১৫. পদ্মাবতী কাব্যের রচয়িতা-
ক) মরদন
খ) আবদুল হাকিম
গ) আলাওল
ঘ) মাগন ঠাকুর
উত্তর: গ
১৬. মধ্যযুগের আদি নিদর্শন কোনটি?
ক) চর্যাপদ
খ) শূন্যপুরাণ
গ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য
ঘ) মঙ্গলকাব্য
উত্তর: গ
১৭. “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।” পংক্তিটির রচয়িতা-
ক) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
খ) বড়– চন্ডীদাস
গ) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
ঘ) কৃত্তিবাস ওঝা
উত্তর: গ
১৮. মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি কে?
ক) বিদ্যাপতি
খ) ভারতচন্দ্র
গ) চন্ডীদাস
ঘ) মুকুন্দরাম
উত্তর: ঘ
১৯. বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি ও রামায়ণের প্রথম মহিলা অনুবাদক কে?
ক) বাল্মিকী
খ) চন্দ্রাবতী
গ) স্বর্ণকুমারী দেবী
ঘ) সন্ধ্যাকর নন্দী
উত্তর: খ
২০. বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের কাল-
ক) ৬৫০ থেকে ১০০০ খ্রি.
খ) ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রি.
গ) ৬৫০ থেকে ৯৫০ খ্রি.
ঘ) ৯০০ থেকে ১২০০ খ্রি.
উত্তর: খ
২১. বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা কোনটি?
ক) ছোটগল্প
খ) নাটক
গ) মহাকাব্য
ঘ) কাব্য
উত্তর: ঘ
২২. চর্যাপদ কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
ক) ১৯০৯ সালে
খ) ১৯১০ সালে
গ) ১৯০৭ সালে
ঘ) ১৯২৩ সালে
উত্তর: গ
২৩. চর্যাপদ কোন ধর্মাবলম্বীদের সাহিত্য?
ক) সনাতন হিন্দু
খ) শিব
গ) মুসলমান
ঘ) সহজিয়া বৌদ্ধ
উত্তর: ঘ
২৪. বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি কিন্তু বাংলা ভাষায় একটি পদও রচনা করেননি, কে?
ক) চন্ডীদাস
খ) বিদ্যাপতি
গ) শ্রীচৈতন্যদেব
ঘ) জ্ঞানদাস
উত্তর: খ
২৫. মর্সিয়া শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক) উর্দু
খ) ফারসি
গ) বাংলা
ঘ) আরবি
উত্তর: ঘ
২৬. মৈমনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক কে?
ক) আশরাফ সিদ্দিকী
খ) দীনেশচন্দ্র সেন
গ) চন্দ্রকুমার দে
ঘ) মনসুর বয়াতি
উত্তর: গ
২৭. যুগ সন্ধিক্ষণের কবি বলা হয় কাকে?
ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে
খ) রামরাম বসুকে
গ) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে
ঘ) অক্ষয়কুমার দত্তকে
উত্তর: গ
২৮. চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত হয় বলে পন্ডিতগণ মনে করেন?
ক) বাংলা ভাষায়
খ) সংস্কৃত ভাষায়
গ) সান্ধ্য ভাষায়
ঘ) প্রাকৃত ভাষায়
উত্তর: গ
২৯. মঙ্গলকাব্যের প্রাচীনতম ধারা কোনটি?
ক) মনসামঙ্গল
খ) চন্ডীমঙ্গল
গ) সারদামঙ্গল
ঘ) অন্নদামঙ্গল
উত্তর: ক
৩০. ‘ইউসুফ-জুলেখা’ কাব্যের রচয়িতা কে?
ক) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
খ) কালিদাস
গ) শাহ মুহম্মদ সগীর
ঘ) চন্ডীদাস
উত্তর: গ
৩১. বিখ্যাত মৈমনসিংহ গীতিকা কবে প্রথম প্রকাশিত হয়?
ক) ১৯১৭ সালে
খ) ১৯০৭ সালে
গ) ১৯২৩ সালে
ঘ) ১৯৩১ সালে
উত্তর: গ
৩২. আরাকান রাজসভার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কে ছিলেন?
ক) বাহরাম খান
খ) দৌলত কাজী
গ) কোরেশী মাগন ঠাকুর
ঘ) আলাওল
উত্তর: ঘ
৩৩. মধ্যযুগের শেষ কবি কে?
ক) ভারতচন্দ্র
খ) কালিদাস
গ) বড়–চন্ডীদাস
ঘ) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
উত্তর: ক
৩৪. ১৮০০ সালের পূর্বে বাংলা সাহিত্যের প্রধান গৌরবময় সাহিত্য কোনটি?
ক) বৈষ্ণব সাহিত্য
খ) নাথ সাহিত্য
গ) চর্যাপদ
ঘ) মনসামঙ্গল
উত্তর: ক
৩৫. ‘রামায়ণ’ রচনা করেন-
ক) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
খ) স্বামী বিবেকানন্দ
গ) রামচন্দ্র
ঘ) বাল্মীকি
উত্তর: গ
তথ্যসূত্র:
১. মনিরুজ্জামান, বাংলা সাহিত্য : অতীত ও উত্তরকাল (বাংলা একাডেমি, মে ২০০৩)
২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্যের স্বরূপ (বৈশাখ ১৩৪৫)
৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আধুনিক সাহিত্য (বৈশাখ ১৩১৪)
৪. হুমায়ূন আজাদ, লাল নীল দীপাবলী বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬)
৫. ড. মাহবুবুল হক, চর্যাগীতি পাঠ (পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স, জুলাই ২০০৯)
৬. ক্ষেত্র গুপ্ত, বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস (কলকাতা ২০০১)
৭. ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্য পরিচয় (কলকাতা ২০০৮)
৮. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)