BCS Bangla Lecture – 15

ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, নমুনা প্রশ্ন

ধাতু

বাংলা ভাষায় বহু ক্রিয়াপদ আছে যে সব ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া-বিভক্তি বাদ দিলে যা থাকে তাই ধাতু বা ক্রিয়ামূল। এক কথায়, ক্রিয়ার যে অংশকে বিচ্ছিন্ন বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে ধাতু বলে। ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়। যথা –

ক) ক্রিয়ামূল বা ধাতু এবং

খ) ক্রিয়া বিভক্তি।

যেমন – ‘করে’ একটি ক্রিয়াপদ। এতে দুটো অংশ রয়েছে (র্ক + এ)। এখানে ‘র্ক’ ধাতু এবং ‘এ’ বিভক্তি।

সুতরাং ক্রিয়ামূল/ধাতু হলো ‘র্ক’ আর ক্রিয়া বিভক্তি হলো ‘এ’।

দ্রষ্টব্য: বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ আর ধাতুরূপ একই। যেমন –

(তুই) র্ক, যা, খা, কাট্, র্ধ, পড়্, র্মা, দেখ্, লেখ্ ইত্যাদি। এগুলো ধাতু আবার বর্তমান কালের তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞার ক্রিয়াপদ।

ধাতুর প্রকারভেদ:

ধাতু বা ক্রিয়ামূল তিন প্রকার। যথা –

১. মৌলিক ধাতু
২. সাধিত ধাতু
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু

১. মৌলিক ধাতু: যে সব ধাতু বিশ্লেষণ করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক ধাতু বলে। এদেরকে সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুও বলা হয়।বাংলা ভাষার মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

বাংলা ধাতু: যে সব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় আসেনি অর্থাৎ প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসব ধাতুর আগমন ঘটেছে, তাদেরকে বাংলা ধাতু বলে। যেমন –

আঁক্, কহ্, কাট্, র্ক, কাঁদ্, কিন্, খা, গড়্, ঘষ্, দেখ্, র্ধ, পড়্, বাঁধ্, বুঝ্, রাখ্, শুন্, থাক্, হাস্ ইত্যাদি।

সংস্কৃত ধাতু: বাংলা ভাষায় যে ক্রিয়ামূল বা ধাতু সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, সেগুলোকে সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন –

অঙ্ক্, কথ্, কৃৎ্, কৃ, ক্রন্দ্, ক্রী, খাদ্, গঠ্, ঘৃষ্, দৃশ্, ধৃ, পঠ্, বন্ধ্, বুধ্, রক্ষ্, শ্রু, স্থা, হস্ ইত্যাদি।

বিদেশি ধাতু: প্রধানত হিন্দি এবং কিছু আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যে সব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলোকে বিদেশি ধাতু বলে। যেমন –

আঁট্, খাট্, চেঁচ্, জম্, ঝুল্, টান্, টুট্, র্ড, র্ফি, চাহ্, বিগড়্, ভিজ্, ঠেল্, ডাক্, লটক্ ইত্যাদি।

দ্রষ্টব্য, কতগুলো ধাতু/ক্রিয়ামূল আছে যাদের ক্রিয়ামূলের মূল ভাষা নির্ণয় করা কঠিন, এ ধরনের ধাতুকে অজ্ঞাতমূল ধাতু বলে। যেমন – হের ঐ দুয়ারে দাঁড়িয়ে কে? এ বাক্যে ‘র্হে’ ধাতুটি কোন ভাষা থেকে আগত তা জানা যায় না। সুতরাং এটি অজ্ঞাতমূল ধাতু।

২. সাধিত ধাতু: মৌলিক ধাতু কিংবা কোনো নাম শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন –  দেখা (দেখ্ + আ), বলা (বল্ + আ), হাতা (হাত + আ) ইত্যাদি। দ্রষ্টব্য, সাধিত ধাতুর সাথে কাল ও পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।

যেমন – মা শিশুকে গান শোনায়। এভাবে – হাসায়, বসায়, দেখায় ইত্যাদি। শোনায় = (শোন্ + আ + য়), এখানে – ‘শোন্’ ধাতু, ‘আ’ প্রত্যয় এবং ‘য়’ বর্তমান কালের সাধারণ নাম পুরুষের ক্রিয়া বিভিক্তি।

সাধিত ধাতুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

নাম ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতুটি গঠিত হয়, তাকে নাম ধাতু বলে। যেমন –

চমক + আ = চমকা (বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে)
হাত + আ = হাতা (অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নষ্ট করো না)
বিষ + আ = বিষা (সারা শরীর বিষিয়ে গেল)
ঝমঝম + আ = ঝমঝমা (বৃষ্টির ঝমঝমানি আমাদের অতিষ্ট করে তোলে)

প্রযোজক বা ণিজন্ত ধাতু: মৌলিক ধাতুর পরে প্রেরণার্থে (অপরকে নিয়োজিত করা অর্থে) ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক/ণিজন্ত ধাতু গঠিত হয়। এক্ষেত্রে কর্তা নিজে না করে অন্যের দ্বারা কোন কাজ করায়। যেমন –

পড়্ + আ = পড়া (তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন)।
দেখ্ + আ = দেখা (মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন)
বল্ + আ = বলা (আমি ওকে দিয়ে গল্প বলাই)
খা + আ = খাওয়া (মা শিশুকে খাওয়ান)

কর্মবাচ্যের ধাতু: মৌলিক ধাতুর সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু গঠিত হয়। এটি বাক্যমধ্যস্থ কর্মপদের অনুসারী ক্রিয়ার ধাতু। যেমন –

দেখ্ + আ = দেখা (কাজটি ভালো দেখায় না)
র্হা + আ = হারা (যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর)
বিক্ + আ = বিকা (পানির দামে জিনিস বিকায়)

৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে র্ক, দে, খা, ছাড়্, কাট্, র্ধ, হ, পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয় তাই যৌগিক/সংযোগমূলক ধাতু। যেমন – হিসাব কর, জবাব দে, হাল ছাড়, সাঁতার কাট, গলা ধর, ভাল হ, দুঃখ পা ইত্যাদি।

নিম্নের কর্-ধাতু যোগে কিছু যৌগিক ধাতুর ব্যবহার দেওয়া হলো:

১. বিশেষ্যের সাথে: ভয় কর, গুণ কর, লজ্জা কর

২. বিশেষণের সাথে: ভাল কর, মন্দ কর, সুখী কর

৩. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের সাথে: ক্রয় কর, দান কর, রান্না কর, দর্শন কর

৪. ক্রিয়াজাত বিশেষণের সাথে: সঞ্চিত কর, স্থগিত কর

৫. ক্রিয়া-বিশেষণের সাথে: তাড়াতাড়ি কর, জলদি কর, একত্র কর

৬. অব্যয়ের সাথে: না কর, হাঁ কর, ছি ছি কর, হায় হায় কর

৭. ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে: ভন ভন কর, টন টন কর, খাঁ খাঁ কর

৮. ধ্বন্যাত্মক শব্দসহ ক্রিয়া বিশেষণ গঠনে: চট কর, ধাঁ কর, হন হন কর

ধাতুর রূপ: রূপ বা আকৃতিগত দিক বিবেচনা করলে বাংলা ধাতুর দুটি রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

ক) অসম্পূর্ণ ধাতু এবং

খ) সম্পূর্ণ ধাতু।

ক) অসম্পূর্ণ ধাতু: অসম্পূর্ণ ধাতুর সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। এই ধাতুগুলোর সকল কালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) রূপ পাওয়া যায় না, এই সব ধাতুর অসম্পূর্ণ রূপ অন্য ধাতুর সাহায্যে সম্পূর্ণ করে নিতে হয়। এই ধাতুগুলোকে পঙ্গুধাতুও বলা হয়। এ ধাতুগুলো সংস্কৃত ও প্রাচীন সাধুভাষায় প্রচলিত। যেমন –

বট্-ধাতু: বটে, বটেন, বট, বটিস, বটি (বর্তমান কালে) এই কয়টি রূপের প্রচলন আছে। যেমন –

  • “একা দেখি কুলবধূ,
  • কে বট আপনি?”
  • কথাটা খানিক সত্য বটে।

আছ্-ধাতু: আছে, আছেন, আছিস, আছি, আছ (বর্তমান কালে) ছিল, ছিলেন, ছিলি, ছিলাম, ছিলে (অতীত কালে) এই কয়টি রূপ প্রচলিত। যেমন –

  • কেমন আছিস?
  • কোথায় ছিলি?

আ-ধাতু: আইল-এল, আইলেন-এলেন, আইলে-এলে, আইলি-এলি, আইলাম-এলাম, আয় (অনুজ্ঞা) এই কয়টি রূপ প্রচলিত। যেমন –

  • “কোথাকার জাদুকর এলি এখানে!”
  • “আইল রাক্ষসকুল প্রভঞ্জন বেগে।”

যা-ধাতু: বাংলায় গমনার্থক ‘যা’ এবং সংস্কৃতে ‘গম্’ ধাতু এক হয়ে গেছে। যেমন – (যায়, যাইত, যাও, যাব, যাবে, যাবি) আবার (গিয়াছে, গেল, গেলে, গিয়া, গিয়ে) ইত্যাদি।

নহ্-ধাতু: আছে অর্থে ‘হ’ ধাতুর পূর্বে (ন) শব্দযোগে ‘নহ্’ ধাতু গঠিত হয়। ‘নহ্’ ধাতুর রূপ শুধু সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমানে প্রচলিত আছে। যেমন – আমি/আমরা নহি, তুমি/তোমরা নহ, সে/তারা নহে, (অসমাপিকা – নহিলে) এ কয়টি রূপ প্রচলিত। ‘ন’ ধাতু দ্বারা এর অন্যান্য রূপ – নাই, নেই, নও, নয়, নন (অসমাপিকা – নইলে) ইত্যাদি। যেমন –

  • ‘হেথা নয় হেথা নয়,
  • অন্য কোথা,
  • অন্য কোন খানে।’

নাহ্-ধাতু: পুরুষ ও বচনভেদে এর একই রূপ। পুরাতন সাধু ভাষায় ও পদ্যে ‘নাহি’, বর্তমানে সাধুভাষায় ‘নাই’ এবং চলিত ভাষায় ‘নেই/নি’।

র্না ও হের-ধাতু: এ দুটো ধাতু কেবল পদ্যেই ব্যবহৃত হয়। যেমন –

  • “মরণ জ্বালা সইতে নারি”
  • “হেরিনু প্রভাতে”।

খ) সম্পূর্ণ ধাতু: যে সব ধাতু সব ধরনের রূপের সমন্বয়ে বাংলা ভাষায় প্রচলিত অথবা যেসব ধাতু কোনো কাল বা পুরুষে অন্য ধাতুর সাহায্য গ্রহণ করে না, তাকে সম্পূর্ণ ধাতু বলে। বাংলা ভাষায় এ ধরনের ধাতুর সংখ্যাই অনেক। প্রায় ১৫০০ বা তার চেয়ে কিছু বেশি। এর অধিকাংশই বর্তমানে লোপ পেয়েছে। বাংলা ভাষায় এ সমস্ত ধাতুকে সর্বমোট ২০ টি গণে ভাগ করা হয়েছে।

ধাতুর গণ: গণ শব্দের মৌলিক অর্থ হলো গণনাগত ভাগ/সাংখ্যিক বিভাগ/শ্রেণি। ‘ধাতুর গণ’ বলতে ধাতুগুলোর বানানের ধরনকে বোঝায়। এ জন্য ধাতুর গণ নির্ধারণে দুটো বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন –

ক) ধাতুটি কয়টি অক্ষরে গঠিত এবং

খ) ধাতুর প্রথম বর্ণে সংযুক্ত স্বরবর্ণটি কী।বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সমস্ত ধাতুগুলোকে ২০ টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা –

১. হ- আদিগণ: হ (হওয়া), ল (লওয়া), ক্ষ (ক্ষওয়া/ক্ষয় পাওয়া)

২. খা- আদিগণ: খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া)

৩. দি- আদিগণ: দি (দেওয়া), নি (নেওয়া)

৪. শু- আদিগণ: শু (শোয়া), ধু (ধোয়া), চু (চোঁয়ানো)

৫. র্ক- আদিগণ: কর (করা), কম (কমা), গড় (গড়া)

৬. কহ্- আদিগণ: কহ (কহা), সহ (সহা), বহ (কহা)

৭. কাট্- আদিগণ: কাট (কাটা), গাঁথ (গাঁথা), বাঁধ (বাঁধা)

৮. গাহ্- আদিগণ: গাহ (গাওয়া), চাহ (চাওয়া)

৯. লিখ্- আদিগণ: লিখ (লেখা), কিন (কেনা), জিত (জেতা)

১০. উঠ্- আদিগণ: উঠ (ওঠা), শুন (শোনা), উড় (ওড়া)

১১. লাফা- আদিগণ: লাফা (লাফানো), বাজা (বাজানো)

১২. নাহা- আদিগণ: নাহা (স্নান করা), গাহা (গাওয়া)

১৩. ফিরা- আদিগণ: ফিরা (ফিরে আসা), ছিটা (ছিটানো)

১৪. ঘুরা- আদিগণ: ঘুরা (ঘুরো আসা), লুকা (লুকানো)

১৫. ধোয়া- আদিগণ: ধোয়া (ধুয়ে ফেলা), খোঁচা (খোঁচা মারা)

১৬. দৌড়া- আদিগণ: দৌড়া (দৌড়ানো), পৌঁছা (গন্তব্যে আসা)

১৭. চটকা- আদিগণ: চটকা (মর্দন করা), ধমকা (ধমক দেওয়া)

১৮. বিগড়া- আদিগণ: বিগড়া (বিকৃত করা), হিঁচড়া (বলপূর্বক টানা)

১৯. উলটা- আদিগণ: উলটা (উলটিয়ে ফেলা), দুমড়া (বাকানো)

২০. ছোবলা- আদিগণ: ছোবলা (ছোবল মারা)কোদলা (কোপানো)

 

প্রকৃতি

মৌলিক শব্দের যে অংশকে কোনোভাবেই বিভক্ত বা বিশ্লেষণ করা যায় না, অথবা কোনো পদ বা শব্দ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি সরিয়ে নিলে যে অংশ পাওয়া যায়, তাকে প্রকৃতি বলে। মোটকথা, শব্দ বা ক্রিয়ার মূলকে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা –

(১) নাম-প্রকৃতি

(২) ক্রিয়া-প্রকৃতি

১. নাম-প্রকৃতি: বিভক্তি ও প্রত্যয়হীন নাম শব্দকে নামপ্রকৃতি/সংজ্ঞাপ্রকৃতি বা প্রাতিপাদিক বলে। যেমন –

  • ফুল + এল = ফুলেল,
  • চোর + আ = চোরা,
  • ঢাকা + আই = ঢাকাই। এখানে ফুল, চোর, ঢাকা শব্দগুলো নামপ্রকৃতি।

২. ক্রিয়া-প্রকৃতি: ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু। ধাতুর সাথে প্রত্যয় এবং পুরুষ ও কালবাচক বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয়। আর ক্রিয়ামূল বা ধাতুকেই ক্রিয়াপ্রকৃতি/ধাতুপ্রকৃতি বলে। যেমন –

  • চল্ + অন = চলন,
  • নাচ্ + উনে = নাচুনে,
  • জম্ + আ = জমা। এখানে চল্, নাচ্, জম্ শব্দগুলো ক্রিয়াপ্রকৃতি।

উপধা: ধাতু বা নাম-প্রকৃতির অন্ত্যধ্বনির আগের ধ্বনিকে ‘উপধা’ বলে। যেমন – ‘পঠ্’ ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় (প্ + অ + ঠ্)। এখানে ‘ঠ’ অন্ত্যধ্বনি এবং ‘অ’ উপধা। আবার, ঢাকা শব্দের বিশ্লেষিত রূপ (ঢ + আ + ক + আ)। এখানে ‘আ’ অন্ত্যধ্বনি এবং ‘ক’ উপধা।

টি: ধাতুর আদিস্বরের পরবর্তী সমুদয় ধ্বনিকে ‘টি’ বলে। যেমন – ‘পঠ্’ ধাতুর ‘অঠ্’ হচ্ছে টি।

 

প্রত্যয়

যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি নামপ্রকৃতি ও ক্রিয়াপ্রকৃতির পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা –

(১) কৃৎ-প্রত্যয়

(২) তদ্ধিত-প্রত্যয়

১. কৃৎ-প্রত্যয়: ক্রিয়াপ্রকৃতির পরে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে কৃৎপ্রত্যয়/ধাতুপ্রত্যয় বলে। কৃৎ প্রত্যয় সাধিত পদটিকে কৃদন্ত পদ বলা হয়। যেমন – চল্ + অন্ত = চলন্ত। এখানে ‘চল্’ ধাতু/ক্রিয়াপ্রকৃতি, ‘অন্ত’ কৃৎ প্রত্যয় এবং ‘চলন্ত’ কৃদন্ত পদ।

২. তদ্ধিত-প্রত্যয়: নামপ্রকৃতির পরে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে তদ্ধিতপ্রত্যয়/শব্দপ্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত পদটিকে তদ্ধিতান্ত পদ বলা হয়। যেমন – লাজ + উক = লাজুক। এখানে ‘লাজ’ নামপ্রকৃতি, ‘উক’ তদ্ধিত প্রত্যয় এবং ‘লাজুক’ তদ্ধিতান্ত পদ।

অপশ্রুতি: ধাতু বা শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বরগত অল্প-বিস্তর পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনকে স্বরাগত পরিবর্তন বা অপশ্রুতি বলে। অপশ্রুতি তিনভাবে প্রকাশ পায়। যথা –

১. গুণ: এই প্রক্রিায়ায় ই/ঈ-স্থলে এ, উ/ঊ-স্থলে ও এবং ঋ-স্থলে র্অ হয়। যেমন –

  • চিন + আ = চেনা,
  • নী + আ = নেয়া/নেওয়া,
  • ধু + আ = ধোয়া,
  • দুল + অনা = দোলনা,
  • কৃ + অন = করণ,
  • কৃ + তা = কর্তা ইত্যাদি।

২. বৃদ্ধি: এই প্রক্রিয়ায় অ-স্থলে আ, ই/ঈ-স্থলে ঐ, উ/ঊ-স্থলে ঔ এবং ঋ-স্থলে র্আ হয়। যেমন –

  • পচ + অক = পাচক,
  • অলস + য = আলস্য,
  • নিশা + অ = নৈশ,
  • শিশু + অ = শৈশব,
  • যুব + অন = যৌবন,
  • ভ‚ত + ইক = ভৌতিক,
  • কৃ + ঘ্যণ = কার্য,
  • স্মৃ + অক = স্মারক ইত্যাদি।

৩. সম্প্রসারণ: এই প্রক্রিয়ায় ব-স্থলে উ, য-স্থলে ই, র-স্থলে ঋ হয়। যেমন –

  • বচ + ক্ত = উক্ত,
  • যজ + ক্তি = ইষ্টি,
  • গ্রহ + ত = গৃহীত ইত্যাদি।

অনুবন্ধ/ইৎ: প্রকৃতির সাথে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়ের যে অংশ লোপ পায় তাকে অনুবন্ধ বা ইৎ বলে। যেমন – মা + তৃচ = মাতৃ > মাতা, গম + ক্ত = গত। উপরিউক্ত উদাহরণে ‘তৃচ’ প্রত্যয় থেকে ‘চ’ এবং ‘ক্ত’ প্রত্যয় থেকে ‘ক’ লোপ পেয়েছে। সুতরাং ‘চ’ ও ‘ক’ ইৎ।

কৃৎ প্রত্যয়: কৃৎ প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা –

ক) বাংলা কৃৎ প্রত্যয় এবং

খ) সংস্কৃত বা তৎসম কৃৎ প্রত্যয়।

ক) বাংলা কৃৎ প্রত্যয়: বাংলা যে সকল কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বলে। বাংলা কৃৎ প্রত্যয়যোগে আধুনিক বাংলা ভাষায় বহু খাঁটি বাংলা শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। মোটকথা, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের সাথে যে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলি বাংলা কৃৎ প্রত্যয়। যেমন –

১. অন/ওন-প্রত্যয়: কাঁদন, দোলন, নাচন, বাঁধন, খাওন, দেওন, ঝাড়ন

২. অনা-প্রত্যয়: খেলনা, বাজনা, ঢাকনা, রাঁধনা > রান্না, কাঁদনা > কান্না

৩. অনি>উনি-প্রত্যয়: রাঁধনি > রাঁধুনি, চিরনি > চিরুনি, নাচনি > নাচুনি, ছাঅনি > ছাউনি

৪. অন্ত/অন্তি/উন্তি-প্রত্যয়: বাড়ন্ত, ডুবন্ত, জীবন্ত, উঠন্তি, নাচুন্তি

৫. আ-প্রত্যয়: পড়া, রাঁধা, শুনা, খাওয়া, করা, জানা

৬. আই-প্রত্যয়: চড়াই, সিলাই> সেলাই, বাছাই, লড়াই, যাচাই

৭. আন-প্রত্যয়: চালান, মানান, খাটান

৮. আনো-প্রত্যয়: জানানো, ভাসানো, করানো, দেখানো

৯. আনি-প্রত্যয়: জানানি, শুনানি, উড়ানি, ভাঙানি

১০. আরি/উরি-প্রত্যয়: কাটারি, পূজারি, ডুবুরি

১১. আল-প্রত্যয়: মাতাল, মিশাল

১২. ই-প্রত্যয়: ভাজি, বেড়ি, কাশি, হাঁচি

১৩. ইয়া/ইয়ে-প্রত্যয়: মরিয়া > মরে, খাইয়া > খেয়ে, দেখিয়া > দেখে, বলিয়া > বলিয়ে> বলে, গাইয়ে, খাইয়ে, নাচিয়ে

১৪. ইলে/ইতে/ইবা-প্রত্যয়: করিলে > করলে, আসিলে > আসলে, দেখিতে > দেখতে, করিতে > করতে, খাইবা > খাবা, যাইবা > যাবা

১৫. উ-প্রত্যয়: ঝাড়–, ডাকু। কখনো কখনো উ-প্রত্যয় কৃদন্ত পদে দ্বিত্ব হয়। যেমন – ডুব্ + উ = ডুবুডুবু, উড়্ + উ = উড়–উড়–

১৬. উয়া/ওয়া/ও-প্রত্যয়: পড়–য়া, পড়ো, উড়–য়া, উড়ো, বাঁচোয়া> বাঁচো, লাগোয়া > লাগো।

১৭. তা/তি-প্রত্যয়: ফিরতা >ফেরতা, পড়তা, ঘাটতি, বাড়তি, ঝাটতি, চলতি, উঠতি

১৮. কা/কি-প্রত্যয়: টপকা, ফসকা, মুড়কি।

 

খ) সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়: সংস্কৃত যে সব কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় সংস্কৃত বা তৎসম কৃৎ প্রত্যয়। মূলত, তৎসম ধাতুর সাথে এ সকল প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় জানতে হলে অপশ্রুতি (গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ), অনুবন্ধ/ইৎ, টি, উপধা সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যেমন –

১. অনট-প্রত্যয়: (‘ট’ ইৎ হয় ‘অন’ থাকে)। যেমন –

  • নী + অনট (অন) = নয়ন,
  • শ্রু + অনট = শ্রবণ,
  • বচ্ + অনট = বচন,
  • গম্ + অনট = গমন,
  • স্থা + অনট = স্থান

২. ক্ত-প্রত্যয়: (‘ক’ ইৎ হয় ‘ত’ থাকে)। যেমন –

  • খ্যা + ক্ত (ত) = খ্যাত,
  • জ্ঞা + ক্ত = জ্ঞাত,
  • কৃ + ক্ত = কৃত,
  • ধৃ + ক্ত = ধৃত

ক) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্বর ই-কার হয়। যেমন –

  • পঠ্ + ক্ত (ত) = পঠিত,
  • লিখ্ + ক্ত = লিখিত,
  • শিক্ষা + ক্ত = শিক্ষিত,
  • শঙ্ক্ + ক্ত = শঙ্কিত

খ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্থিত চ/জ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন –

  • সিচ্ + ক্ত (ত) = সিক্ত,
  • ভুজ্ + ক্ত = ভুক্ত,
  • মুচ্ + ক্ত = মুক্ত,
  • বচ্ + ক্ত = উক্ত (ব থেকে উ সম্প্রসারণ হয়েছে)

গ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্য ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যেমন –

  • গম্ + ক্ত = গত (ক্ত-প্রত্যয়ের ‘ত’ ধাতুর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং ‘ম’ লোপ পেয়েছে),
  • হন্ + ক্ত = হত, জন্ + ক্ত = জাত

ঘ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। যেমন –

  • গ্রন্থ + ক্ত = গ্রথিত,
  • র্চু + ক্ত = চূর্ণ,
  • ছিদ্ + ক্ত = ছিন্ন,
  • জন্ + ক্ত = জাত,
  • দা + ক্ত = দত্ত,
  • দহ্ + ক্ত = দগ্ধ,
  • দুহ্ + ক্ত = দুগ্ধ, ,
  • বপ্ + ক্ত = উপ্ত,
  • মুহ্ + ক্ত = মুগ্ধ,
  • যুধ্ + ক্ত = যুদ্ধ,
  • লভ্ + ক্ত = লব্ধ,
  • স্বপ্ + ক্ত = সুপ্ত,
  • সৃজ্ + ক্ত = সৃষ্ট,
  • ব্যধ্ + ক্ত = বিদ্ধ,
  • ভ্রন্শ্ + ক্ত = ভ্রষ্ট,
  • ইষ্ + ক্ত = ইষ্ট,
  • নশ্ + ক্ত = নষ্ট,
  • ভজ্ + ক্ত = ভক্ত,
  • ভিদ্ + ক্ত = ভিন্ন,
  • মস্জ্ + ক্ত = মগ্ন,
  • রুজ্ + ক্ত = রুগ্ণ।

৩. ক্তি-প্রত্যয়: (‘ক’ ইৎ হয় ‘তি’ থাকে)। যেমন – স্মৃ + ক্তি (তি) = স্মৃতি।

ক) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর উপধা অ-কারের বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ আ-কার হয়। যেমন –

  • শ্রম্ + ক্তি (তি) = শ্রান্তি,
  • শম্ + ক্তি = শান্তি (সন্ধিসূত্রে ম থেকে ন হয়েছে)।

খ) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্থিত চ/জ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন –

  • মুচ্ + ক্তি (তি) = মুক্তি,
  • ভজ্ + ক্তি = ভক্তি,
  • বচ্ + ক্তি = উক্তি (ব থেকে উ সম্প্রসারণ হয়েছে )।

গ) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্য ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যেমন –

  • গম্ + ক্তি (তি) = গতি (ক্তি-প্রত্যয়ের ‘তি’ ধাতুর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং ‘ম’ লোপ পেয়েছে),
  • মন্ + ক্তি (তি) = মতি,
  • রম্ + ক্তি (তি) = রতি

ঘ) ক্তি-প্রত্যয় যোগে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। যেমন – দৃশ্ + ক্তি (তি) = দৃষ্টি

নিপাতনে সিদ্ধ:

  • গৈ + ক্তি = গীতি,
  • সিধ্ + ক্তি = সিদ্ধি,
  • বুধ্ + ক্তি = বুদ্ধি,
  • শক্ + ক্তি = শক্তি।

৪. তব্য-প্রত্যয়:

  • দা + তব্য = দাতব্য,
  • গম্ + তব্য = গন্তব্য,
  • বচ্ + তব্য = বক্তব্য,
  • দৃশ্ + তব্য = দ্রষ্টব্য,
  • কৃ + তব্য = কর্তব্য,
  • পঠ্ + তব্য = পঠিতব্য,
  • মন্ + তব্য = মন্তব্য

৫. অনীয়-প্রত্যয়:

  • কৃ + অনীয় = করণীয়,
  • রক্ষ্ + অনীয় = রক্ষণীয়,
  • স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয়,
  • পূজ্ + অনীয় = পূজনীয়,
  • বৃ + অনীয় = বরণীয়

৬. তৃচ-প্রত্যয়: (‘চ’ ইৎ হয় ‘তৃ > তা’ থাকে)। যেমন –

  • দা + তৃচ (তৃ > তা) = দাতৃ > দাতা,
  • মা + তৃচ = মাতৃ > মাতা,
  • নী + তৃচ = নেতৃ > নেতা

বিশেষ নিয়মে:

  • যুধ + তৃচ (তা) = যোদ্ধা।

৭. ণক-প্রত্যয়: (‘ণ্’ ইৎ হয় ‘অক’ থাকে)। যেমন –

  • নী + ণক (অক) = নায়ক,
  • পঠ্ + ণক = পাঠক,
  • গৈ + ণক = গায়ক,
  • লিখ্ + ণক = লেখক,
  • দা + ণক = দায়ক,
  • কৃ + ণক = কারক

৮. ঘ্যণ-প্রত্যয়: (‘ঘ, ণ’ ইৎ হয়, য-ফলা থাকে)। যেমন –

  • কৃ + ঘ্যণ = কার্য,
  • ধৃ + ঘ্যণ = ধার্য,
  • দৃশ্ + ঘ্যণ = দৃশ্য

৯. য-প্রত্যয়: য-প্রত্যয় যুক্ত হলে আ-কারান্ত ধাতু এ-কারান্ত হয় এবং য-প্রত্যয় ‘য়’ হয়। যেমন –

  • দা (দে) + য (য়) = দেয়,
  • হা + য = হেয়,
  • পা + য = পেয়

বিশেষ নিয়ম: ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর য-প্রত্যয়ের পরিবর্তন হয় না। যেমন –

  • গম্ + য = গম্য,
  • লভ্ + য = লভ্য,
  • বিদ্ + য = বিদ্য,
  • কৃ + য = কৃত্য

১০. ণিন-প্রত্যয়: (‘ণ’ ইৎ হয় ‘ইন > ঈ’ থাকে)। যেমন –

  • গ্রহ + ণিন (ঈ) = গ্রাহী,
  • পা + ণিন = পায়ী,
  • বদ্ + ণিন = বাদী,
  • স্থা + ণিন = স্থায়ী,
  • যুজ্ + ণিন = যোগী

১১. অল-প্রত্যয়: (‘ল’ ইৎ হয় ‘অ’ থাকে)। যেমন –

  • জি + অল (অ) = জয়,
  • ক্ষি + অল = ক্ষয়,
  • ভী + অল = ভয়

ব্যতিক্রম: হন্ + অল = বধ।

১২. ঘঞ-প্রত্যয়: (‘ঘ, ঞ’ ইৎ হয়, ‘অ’ থাকে)। যেমন –

  • বস্ + ঘঞ (অ) = বাস,
  • যুজ্ + ঘঞ (অ) = যোগ,
  • ক্রুধ্ + ঘঞ (অ) = ক্রোধ,
  • ভিদ্ + ঘঞ (অ) = ভেদ,
  • খদ্ + ঘঞ (অ) = খেদ

বিশেষ নিয়মে: ত্যজ্ + ঘঞ = ত্যাগ, পচ্ + ঘঞ = পাক, শুচ্ + ঘঞ = শোক।

১৩. ইষ্ণু-প্রত্যয়:

  • চল্ + ইষ্ণু = চলিষ্ণু,
  • ক্ষি + ইষ্ণু = ক্ষয়িষ্ণু,
  • সহ্ + ইষ্ণু = সহিষ্ণু,
  • বৃধ্ + ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু

১৪. বর-প্রত্যয়:

  • ঈশ্ + বর = ঈশ্বর,
  • ভাস্ + বর = ভাস্বর,
  • নশ্ + বর = নশ্বর,
  • স্থা + বর = স্থাবর

১৫. শানচ-প্রত্যয়: (‘শ, চ’ ইৎ হয় ‘আন > মান’ থাকে)। যেমন –

  • দীপ্ + শানচ (আন > মান) = দীপ্যমান,
  • চল্ + শানচ = চলমান,
  • বৃধ + শানচ = বর্ধমান,
  • যজ্ + শানচ = যজমান

১৬. আলু-প্রত্যয়:

  • দয়্ + আলু = দয়ালু,
  • কৃপ্ + আলু = কৃপালু,
  • শ্রৎ-ধা + আলু = শ্রদ্ধালু,
  • নি-দ্রা + আলু = নিদ্রালু

তদ্ধিত প্রত্যয়: তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা –

ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

খ) সংস্কৃত/তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয় এবং

গ) বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়: বাংলা যে সকল তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। খাঁটি বাংলা মৌলিক শব্দের পরে এ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন –

১. আ-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন –

ক) অবজ্ঞার্থে/তুচ্ছার্থে: চোরা, কেষ্টা

খ) সদৃশ অর্থে: বাঘা, হাতা, ঠেঙা

গ) সমষ্টি অর্থে: বিশা, বাইশা > বাইশে

ঘ) জাত ও আগত অর্থে: দখিনা > দখিনে (হাওয়া), পশ্চিমা, চিনা

ঙ) বিদ্যমানার্থে: জলা, তেলা, লুনা > লোনা, নীলা

চ) বৃহদার্থে: ডিঙা

ছ) আদরার্থে: রমা, পাগলা

২. আই-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ক) ভাবার্থে: বড়াই, চড়াই

খ) আদরার্থে: কানাই, নিমাই

গ) লৈঙ্গিক শব্দের বিপরীত বোঝাতে: বোনাই, নন্দাই, জেঠাই

ঘ) সমগুণবাচক বিশেষ্য অর্থে: মিঠাই

ঙ) জাত অর্থে: ঢাকাই, পাবনাই

৩. আমি/আমো-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ক) ভাবার্থে: বাঁদরামি, পাকামো, ফাজলামো

খ) বৃত্তি/জীবিকা অর্থে: ঠকামো, ঘরামি

গ) নিন্দাজ্ঞাপন অর্থে: জেঠামি, ছেলেমি, ন্যাকামি

৪. আর/আরি/আরু-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ক) পেশা অর্থে: ডাক্তার, কুম্ভ > কুম + আর = কুমার, কর্ম > কাম + আর = কামার, সুতা + আর = সুতার > ছুতার

খ) বৃত্তি/জীবিকা অর্থে: ভিখারি, শাঁখারি

গ) সদৃশ অর্থে: মাঝারি, বোমারু, ডুবারু, রকমারি

৫. আন/আনি/আনো-প্রত্যয়: চোখানি, নাকানি, তলানি, জুতান, জুতানো, যোগান, হাতানো

৬. আল/আলা/আলি-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।

ক) সংযোগ অর্থে: ধারাল, আঠাল

খ) পরিধেয় অর্থে: মাথাল

গ) অধিবাসী অর্থে: বাল + আল = বালাল > বাউল, বঙ্গ + আল = বঙ্গাল > বাঙ্গাল > বাঙাল

ঘ) ভাবার্থে: মিতালি, চতুরালি

ঙ) সদৃশ অর্থে: নিদালি, ঠাকুরালি, বর্ণালি, নাগরালি

চ) কর্ম বুঝাতে: গোয়ালা > গয়লা, লাঠিয়াল

৭. ই-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ক) ভাবার্থে: বাহাদুরি, উমেদারি, পোদ্দারি

খ) বৃত্তি বা জীবিকা অর্থে: ডাক্তারি, ব্যাপারি

গ) মালিক অর্থে: জমিদারি, দোকানি

ঘ) জাত ও আগত বুঝাতে: রেশমি, বাদামি, পশমি, গোলাপি

ঙ) সম্বন্ধ অর্থে: সরকারি

চ) দক্ষতা অর্থে: ঢাকি, হিসাবি, করাতি, ঢুলি

ছ) অস্ত্যর্থ/বিদ্যমানার্থে: দাগি, তেজি, দামি, জেদি

জ) ভাষা, জাতি. দেশ ও ধর্ম বুঝাতে: বাঙালি, ইংরেজি, ইসলামি

৮. অড়>ওড়/ড়া/ড়ি>উড়ি/উড়িয়া>উড়ে-প্রত্যয়: তুখড় > তুখোড়, চামড়া, শাশড়ি > শাশুড়ি, আঁকড়ি, হাটুরিয়া > হাটুরে, সাপুরিয়া > সাপুরে, কাঠুরিয়া > কাঠুরে

৯. উয়া-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ও-প্রত্যয় হয়। যেমন –

ক) রোগগ্রস্থ অর্থে: জ্বরুয়া > জ্বরো, বাতুয়া > বেতো

খ) যুক্ত অর্থে: টাক + উয়া (ও) = টেকো

গ) জাত অর্থে: ধান + উয়া (ও) = ধেনো

ঘ) সংশ্লিষ্ট অর্থে: মাঠ + উয়া (ও) = মেঠো

ঙ) উপজীবিকা অর্থে: মাছ + উয়া (ও) = মাছুয়া > মেছো

চ) বিশেষণ অর্থে: দাঁত + উয়া (ও) = দেঁতো, কুঁজো

ছ) উপকরণে নির্মিত অর্থে: খড় + উয়া (ও) = খড়ো

১০. ইয়া/এ-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ক) তৎকালীনতা বুঝাতে: সেকেলে, ভাদরিয়া > ভাদরে > ভাদুরে

খ) উপকরণ বোঝাতে: পাথরিয়া > পাথুরে, মাটিয়া > মেটে,

গ) উপজীবিকা অর্থে: জালিয়া > জেলে

ঘ) নৈপুণ্য বোঝাতে: খুনিয়া > খুনে, নাইয়া > নেয়ে, দেমাকে

ঙ) অব্যয়জাত বিশেষণ বোঝাতে: টনটনে, কনকনে, চকচকে

১১. ট/টা/টি/টিয়া>টে-প্রত্যয়: জমাট, ভরাট, চিপ > চেপ + টা = চেপ্টা, নেওটা, মুখটি, মাথাটি, ঘোলাটিয়া > ঘোলাটে, তামাটিয়া > তামাটে, ভাড়াটিয়া > ভাড়াটে

১২. ক/কা/কি/কিয়া>কে-প্রত্যয়: ঢোলক, ধমক (ক্ষুদ্রার্থে), ছোটকি > ছুটকি (ভাইয়ের স্ত্রী অর্থে), দমকা, হালকা, ছিঁচকিয়া > ছিঁচকে, শতকিয়া > শতকে, পুঁচকিয়া > পুঁচকে

১৩. তা/তি/তুতো/আইত>আত-প্রত্যয়: নামতা, নুনতা > নোনতা, ঘাটতি, চাকতি, খুড়তুতো, মাসতুতো, পোআইত > পোয়াত, সেবাইত > সেবাত, সঙ্গাইত > সঙ্গাত > সঙাত

১৪. অল/লা/উলি-প্রত্যয়: ধকল, দিঘল, মেঘলা, একলা, আধলা, আধুলি, গোধু + উলি = গোধুলি

১৫. আচ/আচি-প্রত্যয়: কানাচ, ছোঁয়াচ, ঘামাচি, ব্যাঙাচি

১৬. নি-প্রত্যয়: কামরনি, গয়লানি, ডাক্তারনি, জমিদারনি, দারোগানি

খ) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়: সংস্কৃত যে সব তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় সংস্কৃত বা তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয়। মূলত, তৎসম শব্দে সাথে এ সকল প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় জানতে হলে অপশ্রুতি (গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ), অনুবন্ধ/ইৎ, টি, উপধা সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কেননা এ সবের জন্য শব্দ ও প্রত্যয়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের পরিবর্তন আসে। যেমন –

১. ষ্ণ (অ)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ্’ ইৎ হয় ’অ’ থাকে)। বিভিন্ন অর্থে এর ব্যবহার। যেমন –

ক) অপত্য বা বংশধর অর্থে:

  • মনু + ষ্ণ (অ) = মানব,
  • যদু + ষ্ণ = যাদব,
  • পুত্র + ষ্ণ (অ) = পৌত্র

খ) উপাসক অর্থে:

  • জিন + ষ্ণ (অ) = জৈন,
  • বুদ্ধ + ষ্ণ = বৌদ্ধ

গ) ভাবার্থে:

  • পুরুষ + ষ্ণ (অ) = পৌরুষ,
  • কিশোর + ষ্ণ = কৈশোর

ঘ) সম্পর্ক অর্থে:

  • পৃথিবী + ষ্ণ (অ) = পার্থিব,
  • দেব + ষ্ণ = দৈব

ঙ) কুশল/দক্ষ অর্থে:

  • ব্যাকরণ + ষ্ণ (অ) = বৈয়াকরণ

চ) বিকার/বিকৃত অর্থে:

  • তিল + ষ্ণ (অ) = তৈল

ছ) অবস্থা অর্থে:

  • শিশু + ষ্ণ (অ) = শৈশব,
  • জীবন + ষ্ণ = যৌবন

জ) স্বার্থে:

  • চোর + ষ্ণ (অ) = চৌর,
  • কুত‚হল + ষ্ণ = কৌতুহল

নিপাতনে সিদ্ধ:

  • সূর্য + ষ্ণ = সৌর।

২. ষ্ণ্য (য)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘য’ থাকে)। যেমন –

  • মনু + ষ্ণ্য (য) = মনুষ্য,
  • সুন্দর + ষ্ণ্য = সৌন্দর্য,
  • শূর + ষ্ণ্য = শৌর্য,
  • পর্বত + ষ্ণ্য = পার্বত্য,
  • বিচিত্র + ষ্ণ্য = বৈচিত্র্য,
  • সেনা + ষ্ণ্য = সৈন্য

৩. ষ্ণি (ই)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ই’ থাকে)। যেমন –

  • রাবন + ষ্ণি (ই) = রাবণি,
  • দশরথ + ষ্ণি = দশরথি,
  • সুমিত্রা + ষ্ণি = সৌমিত্রি

৪. ষ্ণিক (ইক)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ইক’ থাকে)। যেমন –

  • সাহিত্য + ষ্ণিক (ইক) = সাহিত্যিক,
  • বিজ্ঞান + ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক,
  • নগর + ষ্ণিক = নাগরিক,
  • অকস্মাৎ + ষ্ণিক = আকস্মিক

৫. ষ্ণেয় (এয়)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘এয়’ থাকে)। যেমন –

  • অগ্নি + ষ্ণেয় (এয়) = আগ্নেয়,
  • বিমাতা + ষ্ণেয় = বৈমাত্রেয়

৬. ষ্ণায়ন (আয়ন)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘আয়ন’ থাকে)। যেমন –

  • নগর + (ষ্ণায়ন) আয়ন = নগরায়ন,
  • বৎস + ষ্ণায়ন = বাৎস্যায়ন,
  • নর + ষ্ণায়ন = নারায়ণ,
  • দ্বীপ + ষ্ণায়ন = দ্বৈপায়ন

৭. ষ্ণীয় (ঈয়)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ঈয়’ থাকে)। যেমন –

  • জল + ষ্ণীয় (ঈয়) = জলীয়,
  • বায়ু + ষ্ণীয় = বায়বীয়,
  • বর্ষ + ষ্ণীয় = বর্ষীয়,
  • দেশ + ষ্ণীয় = দেশীয়,
  • বংশ + ষ্ণীয় = বংশীয়

বিশেষ নিয়মে:

  • পর + ষ্ণীয় = পরকীয়,
  • স্ব + ষ্ণীয় = স্বকীয়,
  • রাজা + ষ্ণীয় = রাজকীয়

৮. ইত-প্রত্যয়:

  • কুসুম + ইত = কুসুমিত,
  • তরঙ্গ + ইত = তরঙ্গিত,
  • মুকুল + ইত = মুকুলিত,
  • একত্র + ইত = একত্রিত,
  • ক্ষুধা + ইত = ক্ষুধিত

৯. ‘য’ প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের পরে স্থিত অ, আ, ই এবং ঈ-এর লোপ হয়। যেমন –

  • সম + য = সাম্য,
  • কবি + য = কাব্য,
  • মধুর + য = মাধুর্য,
  • প্রাচী + য = প্রাচ্য

ব্যতিক্রম: সভা + য = সভ্য (‘সাভ্য’ নয়)

১০. ইমন-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ইমা-প্রত্যয় হয়। যেমন –

  • নীল + ইমন (ইমা) = নীলিমা,
  • গুরু + ইমন = গরিমা,
  • দীর্ঘ + ইমন = দ্রাঘিমা

১১. ইল-প্রত্যয়:

  • পঙ্ক + ইল = পঙ্কিল,
  • ফেন + ইল = ফেনিল,
  • ঊর্মি + ইল = ঊর্মিল,
  • শ্রী + ইল = শ্রীল,
  • জটা + ইল = জটিল

১২. ইষ্ঠ-প্রত্যয়:

  • গুরু + ইষ্ঠ = গরিষ্ঠ,
  • লঘু + ইষ্ঠ = লঘিষ্ট

১৩. ইম-প্রত্যয়:

  • অগ্র + ইম = অগ্রিম,
  • অন্ত + ইম = অন্তিম,
  • পশ্চ + ইম = পশ্চিম,
  • আদি + ইম = আদিম

১৪. ইন/ঈন-প্রত্যয়:

  • জ্ঞান + ইন = জ্ঞানিন,
  • গুণ + ইন = গুণিন,
  • সুখ + ইন = সুখিন,
  • মান + ইন = মানিন,
  • কুল + ঈন = কুলীন,
  • নব + ঈন = নবীন,
  • সর্বজন + ঈন = সর্বজনীন ইত্যাদি।

দ্রষ্টব্য: ইন-প্রত্যয়ের পরিবর্তিত কিছু রূপ। যেমন –

ক) একবচনে ইন-প্রত্যয় ঈ-প্রত্যয় হয়। যেমন –

  • জ্ঞান + ইন (ঈ) = জ্ঞানী,
  • গুণ + ঈ = গুণী,
  • সুখ + ঈ = সুখী,
  • ধন + ঈ = ধনী

খ) স্ত্রী লিঙ্গে ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের পরে ঈ-যুক্ত হয়ে ইনী-প্রত্যয় হয়। যেমন –

  • জ্ঞান + ইনী = জ্ঞানিনী,
  • গুণ + ইনী = গুণিনী

গ) ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের পরে তৎসম শব্দ থাকলে ইন-প্রত্যয়ের ‘ন্’ লোপ পায়। যেমন –

  • জ্ঞানিগণ,
  • গুণিগণ,
  • সুখিগণ,
  • মানিজন

১৫. ত/তা/ত্ব/ত্য/ত্র-প্রত্যয়:

  • বন্ধু + তা = বন্ধুতা,
  • শত্রু + তা = শত্রুতা,
  • সৎ + তা = সততা,
  • মহৎ + ত্ব = মহত্ত্ব,
  • গুরু + ত্ব = গুরুত্ব,
  • বন্ধু + ত্ব = বন্ধুত্ব,
  • দক্ষিণ + ত্য = দাক্ষিণাত্য,
  • পশ্চাৎ + ত্য = পাশ্চাত্য,
  • সর্ব + ত্র = সর্বত্র,
  • এক + ত্র = একত্র,
  • অন্ত + ত = অন্তত,
  • অংশ + ত = অংশত,
  • মূল + ত = মূলত

১৬. তর/তম/তন-প্রত্যয়:

  • মধুর + তম = মধুরতম,
  • সুন্দর + তম = সুন্দরতম,
  • প্রিয় + তম = প্রিয়তম,
  • প্রিয় + তর = প্রিয়তর,
  • দীর্ঘ + তম = দীর্ঘতম,
  • মহৎ + তম = মহত্তম,
  • চিরম + তন = চিরন্তন,
  • পুরা + তন = পুরাতন,
  • পূর্ব + তন = পূর্বতন

১৭. নীন-প্রত্যয়: (‘ন’ ইৎ হয়, ‘ঈন’ থাকে)। যেমন –

  • কুল + নীন (ঈন) = কুলীন,
  • নব + নীন = নবীন,
  • সর্বজন + নীন = সর্বজনীন,
  • সর্বাঙ্গ + নীন = সর্বাঙ্গীন,
  • বিশ্বজন + নীন = বিশ্বজনীন

১৮. বিন-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ‘বী’ হয়। যেমন –

  • মেধা + বিন (বী) = মেধাবী,
  • মায়া + বিন = মায়াবী,
  • তেজ + বিন = তেজস্বী,
  • যশ + বিন = যশস্বী

১৯. ঈয়স-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ঈয়ান-প্রত্যয় হয়। যেমন –

  • লঘু + ঈয়স (ঈয়ন) = লঘীয়ান,
  • গুরু + ঈয়স = গরীয়ান,
  • বলবৎ + ঈয়স = বলীয়ান,
  • বৃদ্ধ + ঈয়স = বর্ষীয়ান

২০. বতুপ (বান)/মতুপ (মান)-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে যথাক্রমে ‘বান’ ও ‘মান’ হয়। যেমন –

  • গুণ + বতুপ = গুণবান,
  • দয়া + বতুপ = দয়াবান,
  • শ্রী + মতুপ = শ্রীমান,
  • বুদ্ধি + মতুপ = বুদ্ধিমান

২১. ময়ট-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ‘ময়’ হয়। যেমন –

  • মধু + ময়ট (ময়) = মধুময়,
  • পৃথিবী + ময়ট = পৃথিবীময়,
  • রূপ + ময়ট = রূপময়

২২. শ/শালী-প্রত্যয়:

  • শক্তি + শালী = শক্তিশালী,
  • সমৃদ্ধি + শালী = সমৃদ্ধিশালী,
  • প্রভাব + শালী = প্রভাবশালী,
  • কর্ক + শ = কর্কশ,
  • প্রায় + শ = প্রায়শ,
  • ক্রম + শ = ক্রমশ

 

গ) বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়: বিদেশি ভাষা থেকে আগত যে সমস্ত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেগুলোকে বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। এগুলো বাংলা নিজস্ব শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বহু মিশ্র/সঙ্কর শব্দের সৃষ্টি করেছে। নিম্নে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের নিয়ম ও উদাহরণ আলোচনা করা হলো।

হিন্দি তদ্ধিত প্রত্যয়:

১. আনা (য়ানা)/আনি (য়ানি)-প্রত্যয়: মুনশীআনা/মুনশীয়ানা, বিবিয়ানা, গরিবানা, বাবুয়ানি, হিন্দুয়ানি

২. ওয়ালা-প্রত্যয়:বাড়িওয়ালা > বাড়িয়ালা, দিল্লীওয়ালা, মাছওয়ালা, দুধওয়ালা

৩. ওয়ান-প্রত্যয়: গাড়োয়ান, দারোয়ান, কোচওয়ান

৪. পনা/পানা/পারা-প্রত্যয়: ছেলেপনা, গিন্নীপনা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, চাঁদপানা, কুলোপানা, পাগলপারা

৫. সা/সে/সি-প্রত্যয়:পানসা >পানসে, কালসা >কালসে,রূপসা, রূপসি, মাকড়সা, ভাপসা > ভেপসা

 

ফারসি তদ্ধিত প্রত্যয়:

৬. গর/কর-প্রত্যয়: কারিগর, সওদাগর, বাজিকর

৭. দার-প্রত্যয়: খবরদার, দোকানদার, দেনাদার, পাহারাদার

৮. বাজ/বাজি-প্রত্যয়: কলমবাজ, ধোঁকাবাজ, গলাবাজ, ধড়িবাজ, কলমবাজি, চালবাজি

৯. বন্দি/বন্দ-প্রত্যয়:জবানবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দ, সারিবন্দি, নজরবন্দ

১০. সই-প্রত্যয়: মানানসই, চলনসই, টেকসই, জুতসই (‘সই’ প্রত্যয়টি ‘মতো’ অর্থে ব্যবহৃত)।

দ্রষ্টব্য: টিপসই ও নামসই শব্দ দুটো সই-প্রত্যয়যুক্ত শব্দ নয়। এটি ‘সহি’ (স্বাক্ষর) শব্দ থেকে উৎপন্ন।

 

নমুনা প্রশ্ন


১. কোনটি অসম্পূর্ণ ধাতু?

ক) কৃ

খ) মাগ্

গ) আছ্

ঘ) টুট্

উত্তরঃ গ


২. কোনটি সংস্কৃত ধাতু?

ক) বুঝ্

খ) পড়্

গ) কহ্

ঘ) পঠ্

উত্তরঃ ঘ


৩. কোনটি বিদেশি ধাতু?

ক) ডাক্

খ) কৃ

গ) কাঁদ্

ঘ) হাস্

উত্তরঃ ক


৪. ‘এখনও সাবধান হও’ এ বাক্যে কোন প্রকার ধাতু পাওয়া যায়?

ক) বিদেশি ধাতু

খ) সাধিত ধাতু

গ) নাম ধাতু

ঘ) সংযোগমূলক ধাতু

উত্তরঃ ঘ


৫. ‘কাজটি ভাল দেখায় না’ এ বাক্যে কোন প্রকার ধাতু ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) প্রযোজক ধাতু

খ) কর্মবাচ্যের ধাতু

গ) সংযোগমূলক ধাতু

ঘ) নাম ধাতু

উত্তরঃ খ


৬. কোনটি মাইকেলী নাম ধাতু?

ক) উত্তরিলা

খ) নিরবিলা

গ) বেতা

ঘ) ক+খ

উত্তরঃ ঘ


৭. যে সব ধাতু বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, রূপ গঠনের দিক থেকে ন্যূনতম একক সেগুলোকে বলা হয় – 

ক) মৌলিক ধাতু

খ) সাধিত ধাতু

গ) যৌগিক ধাতু

ঘ) সংযোগমূলক ধাতু

উত্তরঃ ক


৮. বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পর ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে বলে-

ক) প্রযোজক ধাতু

খ) নাম ধাতু

গ) সংযোগমূলক ধাতু

ঘ) কর্মবাচ্যের ধাতু

উত্তরঃ খ


৯. “যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর।” এখানে হারায় কোন ধাতু?

ক) নাম ধাতু

খ) কর্মবাচ্যের ধাতু

গ) সংযোগমূলক ধাতু

ঘ) মৌলিক ধাতু

উত্তরঃ খ


১০. “সে নিজে করে না আর একজনকে দিয়ে করায়।” এ বাক্যটিতে ‘করায়’ কোনটির উদাহরণ?

ক) সংযোগমূলক ধাতু

খ) প্রযোজক ধাতু

গ) কর্মবাচ্যের ধাতু

ঘ) নামধাতু

উত্তরঃ খ


১১. সম্ভাবনা অর্থে যৌগিক ক্রিয়া গঠনে ‘উঠ্’ ধাতুর ব্যবহার কোনটি?

ক) আমার আর থাকা হয়ে উঠল না

খ) এসব কথা আমার সহ্য হয়ে ওঠে না

গ) লোকটি হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল

ঘ) ঋণের বোঝা ভারী হয়ে উঠেছে

উত্তরঃ ঘ


১২. কোনটি নাম ধাতু?

ক) টকা

খ) পাড়া

গ) দেখা

ঘ) বলা

উত্তরঃ ক


১৩. আদ্য স্বরের পরবর্তী সমুদয় ধ্বনিকে কী বলে?

ক) উপধা

খ) গুণ

গ) ইৎ

ঘ) টি

উত্তরঃ ঘ


১৪. গুণের নিয়মে ‘উ’ স্থলে কোনটি হয়?

ক) এ

খ) ও

গ) ঔ

ঘ) ঐ

উত্তরঃ খ


১৫. কোনটি ‘অনট্’ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দ?

ক) নয়ন

খ) খ্যাত

গ) গঠিত

ঘ) ঝরনা

উত্তরঃ ক


১৬. ‘ধার্য’ শব্দের প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?

ক) √ধৃ + য

খ) √ধৃ + ঘ্যণ

গ) √ধৃ + র্য

ঘ) √ধৃ + য্য

উত্তরঃ খ


১৭. প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয়ের সময় প্রত্যয়ের যে অংশ লুপ্ত হয় তাকে কী বলে?

ক) টি

খ) গুণ

গ) উপধা

ঘ) ইৎ

উত্তরঃ ঘ


১৮. বৃদ্ধির নিয়মে ‘ঋ’ পরিবর্তিত হয়ে কী হয়?

ক) ঋত

খ) আর

গ) অর

ঘ) এর

উত্তরঃ খ


১৯. ‘মুক্ত’ শব্দটির প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?

ক) √মুক্+ক্ত

খ) √মুক্+ত

গ) √মুচ্+ক্ত

ঘ) √মুচ্+তি

উত্তরঃ গ


২০. কৃৎ প্রত্যয় কোথায় যুক্ত হয়?

ক) ধাতুর পরে

খ) প্রকৃতির পরে

গ) প্রাতিপদিকের পরে

ঘ) শব্দের পরে

উত্তরঃ ক


২১. কোনটি বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ?

ক) পানসা

খ) নীলিমা

গ) লঘিষ্ঠ

ঘ) ডিঙা

উত্তরঃ ক


২২. ‘গীতি’ শব্দটির প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?

ক) গৈ+ক্তি

খ) গম্+তি

গ) গীত্+ই

ঘ) গান্+ক্তি

উত্তরঃ ক


২৩. কোনটি নিপাতনে সিদ্ধ কৃদন্ত শব্দ?

ক) বুদ্ধি

খ) পাঠক

গ) কারক

ঘ) কাটতি

উত্তরঃ ক


২৪. ‘মাধুর্য’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় হবে-

ক) মধু+ষ্ণ

খ) মধুর+য

গ) মধু+ষ্ণিক

ঘ) মধু+র

উত্তরঃ খ


২৫. ‘বন্দি’ প্রত্যয়টি কোন ভাষার?

ক) হিন্দি

খ) ফারসি

গ) আরবি

ঘ) সংস্কৃত

উত্তরঃ খ


২৬. ‘শোক’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কোনটি?

ক) √শুচ্+ঘঞ

খ) √শুচ্+অক

গ) √শুচ্+নক

ঘ) √শো+ক

উত্তরঃ ক


২৭. ‘শ্রমী’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কী?

ক) √শ্রম্+ঈ

খ) √শ্রম+ই

গ) √শ্রম+ইন্

ঘ) √শ্রম+ণিন

উত্তরঃ গ


২৮. কোনটি বাংলা কৃৎ প্রত্যয় নয়?

ক) তি

খ) আল

গ) না

ঘ) ক্তি

উত্তরঃ ঘ


২৯. নিপাতনে সিদ্ধ কৃদন্ত পদ কোনটি?

ক) শক্তি

খ) মতি

গ) মাতা

ঘ) শ্রমী

উত্তরঃ ক


৩০. কোনটি ‘অপত্য’ অর্থে গঠিত তদ্ধিতান্ত পদ?

ক) দাশরথি

খ) আগ্নেয়

গ) কুলীন

ঘ) মহত্ত্ব

উত্তরঃ ক


৩১. কোনটি ‘নৈপুণ্য’ অর্থে তদ্ধিতান্ত পদ?

ক) দেমাকে

খ) জেলে

গ) ডাক্তারী

ঘ) মিঠাই

উত্তরঃ ক


৩২. নতুন নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয় কোনটি?

ক) উপসর্গ

খ) প্রত্যয়

গ) কারক

ঘ) সমাস

উত্তরঃ গ


৩৩. কোনটি ব্যতিক্রম?

ক) বধ

খ) জয়

গ) লেখক

ঘ) দেয়

উত্তরঃ ক


৩৪. শব্দের মূলকে বলে-

ক) কারক

খ) প্রকৃতি

গ) প্রত্যয়

ঘ) বৃদ্ধি

উত্তরঃ খ


৩৫. ‘দর্শন’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কোনটি?

ক) √দর্শ+অন

খ) √দৃশ্+অনট

গ) √দর্শ+ন

ঘ) √দর+শন

উত্তরঃ খ


৩৬. ‘কর্তব্য’ এর প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?

ক) √কর+তব্য

খ) √কৃ+তব্য

গ) √কৃৎ+তব্য

ঘ) √কৃত+তব্য

উত্তরঃ খ


৩৭. কোনটি শূন্য প্রত্যয়ের শব্দ?

ক) হত

খ) ভয়

গ) জয়

ঘ) ঘুর

উত্তরঃ ঘ


৩৮. নাম বা শব্দের উত্তরে যে সকল প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলে-

ক) অনুসর্গ

খ) উপসর্গ

গ) তদ্ধিত প্রত্যয়

ঘ) কৃৎ প্রত্যয়

উত্তরঃ গ


৩৯. নিচের কোন শব্দটি তদ্ধিত প্রতয়যোগে গঠিত?

ক) নায়ক

খ) চলন্ত

গ) মেধাবী

ঘ) গায়ক

উত্তরঃ গ


৪০. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে কোনটি ব্যতিক্রম?

ক) জুতসই

খ) চলনসই

গ) টিপসই

ঘ) মানানসই

উত্তরঃ গ


৪১. কোন শব্দে প্রত্যয় ‘উপজীবিকা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) গেছো

খ) মেছো

গ) টেকো

ঘ) গেঁয়ো

উত্তরঃ খ


৪২. বিশেষ নিয়মে সাধিত তদ্ধিত প্রত্যয় কোনটি?

ক) বায়বীয়

খ) দেশীয়

গ) রাজকীয়

ঘ) জলীয়

উত্তরঃ গ


৪৩. বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত শব্দ নয় কোনটি?

ক) আফিংখোর

খ) শিক্ষানবিশ

গ) রূপময়

ঘ) দারোয়ান

উত্তরঃ গ


৪৪. ‘জ্ঞানবান’ শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?

ক) জ্ঞান + বান

খ) জ্ঞান + বতুপ

গ) জ্ঞান + মতুপ

ঘ) জ্ঞানী + মতুপ

উত্তরঃ খ


৪৫. ‘মাধ্যমিক’ শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?

ক) মধ্যম + ষ্ণিক

খ) মধ্য + ষ্ণিক

গ) মাধ্যমিক + ষ্ণ

ঘ) মাধ্য + ইক

উত্তরঃ ক


৪৬. দর্শনীয় শব্দটির সঠিক প্রকৃতি-প্রত্যয় হলো – 

ক) দৃশ্য + অনীয়

খ) দৃশ + নীয়

গ) দৃশ + অনীয়

ঘ) দৃষ্টি + নীয়

উত্তরঃ গ


৪৭. ‘মাতা, দাতা’ এখানে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে?

ক) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়

খ) সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়

গ) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

ঘ) বাংলা কৃৎ প্রত্যয়

উত্তরঃ খ


৪৮. কোন শব্দে বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে?

ক) মাথাল

খ) ন্যাকামি

গ) বাগিচা

ঘ) মধুময়

উত্তরঃ গ


৪৯. কোন বাক্যে অজ্ঞাতমূল ধাতুর ব্যবহার হয়েছে?

ক) হেরিনু প্রভাতে

খ) আমি ওকে দিয়ে গল্প বলাই

গ) যা কিছু হারায়, সব তোর দোষ

ঘ) বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে

উত্তরঃ ক


৫০. কোনটি বিদেশি ধাতু?

ক) হস

খ) হাস

গ) কাট

ঘ) ডর

উত্তরঃ ঘ


তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, দ্বিতীয় খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৪. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৫. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৬. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৭. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৮. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৯. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
১০. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)

BCS Bangla Lecture – 14

শব্দগঠন, শব্দের শ্রেণিবিভাগ, দ্বিরুক্ত শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, নমুনা প্রশ্ন

শব্দগঠন

অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টির দ্বারা শব্দ গঠিত হয়। অর্থহীন কোনো ধ্বনি শব্দ হয় না; কারণ তা মানুষের বোধগম্য নয়। শব্দের অর্থ – বৈচিত্র্যের জন্যে নানাভাবে তার রূপান্তর সাধিত হয়। এভাবে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার-উপযোগী করে তোলার জন্যে শব্দ তৈরি করার প্রক্রিয়াকে শব্দগঠন বলে। শব্দগঠন প্রধানত প্রত্যয়, উপসর্গ ও সমাস এ তিনটি উপায়ে হয়ে থাকে।

শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করে: ‘হার’ শব্দের পূর্বে ‘প্র’ উপসর্গ যোগ করলে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ ‘প্রহার’ (প্র + হার) পাওয়া যায়। এরূপ –  আহার, বিহার, উপহার, সংহার, পরিহার। তাছাড়া বিভিন্ন উপসর্গযোগে শব্দ গঠিত হয়। যেমন: অনাচার, কুশাসন, অধিকার, প্রদীপ, বকলম ইত্যাদি।

শব্দের শেষে প্রত্যয় যোগ করে: ‘ঢাকা’ শব্দের শেষে ‘আই’ প্রত্যয় যোগ করলে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ ‘ঢাকাই’ (ঢাকা + আই) পাওয়া যায়। এরূপ – জলা (জল+আ), রোগা (রোগ+ আ), নাচন (নাচ+অন) ইত্যাদি।

সমাসের সাহায্যে একাধিক শব্দকে এক শব্দে পরিণত করা: চৌ রাস্তার সমাহার = চৌরাস্তা, মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র, বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু ইত্যাদি।

সন্ধির সাহায্যে শব্দগঠন:বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, ইতি + আদি = ইত্যাদি। তপঃ + বন = তপোবন, অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান, পরি + ছেদ = পরিচ্ছেদ ইত্যাদি। সন্ধির নিয়মের শব্দগুলো মূলত উপরের তিনটি গঠন থেকে আসে।

দ্বিরুক্তির সাহায্যে শব্দগঠন: ঝিরঝির, ধনদৌলত, তালাচাবি, ভালো ভালো, মিটির মিটির ইত্যাদি।

পদ পরিবর্তনের সাহায্যে শব্দগঠন: সুন্দর (বিণ,) + য (প্র.) = সৌন্দর্য (বি.), মানব (বি.) + ইক (প্র.) = মানবিক (বিণ.), দীর্ঘ (বিণ.) + য (প্র.) = দৈর্ঘ্য (বি.) ইত্যাদি। এটা মূলত প্রত্যয়ের নিয়মে হয়ে থাকে।

বচন ও পদাশ্রিত নির্দেশকের সাহায্যে শব্দগঠন: কবিকুল, কুসুমদাম, সাহেবান, পণ্ডিতবর্গ (বচনের নিয়মে); একটি, গোটা সাতেক, আমগুলো, লাঠিগাছা (পদাশ্রিত নির্দেশকের নিয়মে) ইত্যাদি।

শব্দের শ্রেণিবিভাগ

গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ: গঠনগতভাবে শব্দ দুই প্রকার। যথা –

১. মৌলিক শব্দ: যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা যায় না বা যে শব্দগুলো ব্যাকরণের নিয়মে গঠিত হয়নি, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। এ শব্দগুলোকে সিদ্ধ শব্দ বা স্বয়ংসিদ্ধ শব্দও বলা হয়। মৌলিক শব্দগুলোই হচ্ছে ভাষার মূল উপকরণ। যেমন – গোলাপ, নাক, লাল, তিন, হাত, পা, মা, ফুল, বই ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দ: যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায় বা যে শব্দগুলো ব্যাকরণের নিয়মে গঠিত হয়েছে, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন –

ক) সমাসযোগে:

  • নীল যে আকাশ = নীলাকাশ
  • চাঁদ রূপ মুখ = চাঁদমুখ
  • জায়া ও পতি = দম্পতি

খ) উপসর্গযোগে:

  • উপহার (উপ + হার)
  • গরমিল (গর + মিল)
  • প্রতিদিন (প্রতি + দিন)

গ) প্রত্যয়যোগে:

  • ঢাকাই = ঢাকা + আই
  • সরস্বতী = সরস্ + বতী
  • ডুবুরি = ডুব্ + উরি

এছাড়াও সন্ধি, বিভক্তি, পদ পরিবর্তন, দ্বিরুক্তি, বহুবচন ও বাক্য সংকোচনের মাধ্যমে বাংলা শব্দ সাধিত হয়। যেমন –

  • সন্ধি :  ইত্যাদি, হিমালয়, মরূদ্যান
  • পদ পরিবর্তন : সুন্দর > সৌন্দর্য, বিচিত্র > বৈচিত্র্য
  • দিরুক্ত শব্দ : কুহু কুহু, জ্বর জ্বর, ঝিম ঝিম
  • বহুবচন : গ্রন্থাবলি, কবিকুল, সাহেবান

 

অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ: অর্থগতভাবে শব্দ তিন প্রকার। যথা –

১. যৌগিক শব্দ: যে সকল শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক/প্রচলিত অর্থ একই রকম বা যে শব্দগুলো প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থানুসারে হয়, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন –


মূল শব্দ : গায়ক

বুৎপত্তিগত অর্থ : গৈ + ণক

ব্যবহারিক অর্থ : গান করে যে


মূল শব্দ : কর্তব্য

বুৎপত্তিগত অর্থ : কৃ + তব্য

ব্যবহারিক অর্থ : যা করা উচিত


মূল শব্দ : বাবুয়ানা

বুৎপত্তিগত অর্থ : বাবু + আনা

ব্যবহারিক অর্থ : বাবুর ভাব


মূল শব্দ : দৌহিত্র

বুৎপত্তিগত অর্থ : দুহিতা + ষ্ণ্য

ব্যবহারিক অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি


মূল শব্দ : মধুর

বুৎপত্তিগত অর্থ : মধু + র

ব্যবহারিক অর্থ : মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত


মূল শব্দ : চিকামারা

বুৎপত্তিগত অর্থ : চিকা + মারা

ব্যবহারিক অর্থ : দেওয়ালের লিখন


মূল শব্দ : মিতালি

বুৎপত্তিগত অর্থ : মিতা + আলি

ব্যবহারিক অর্থ : মিতার ভাব বা বন্ধুত্ব


 

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ: প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে যে শব্দ মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে অর্থাৎ যে শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ এক নয়, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন –


মূল শব্দ : হস্তী

বুৎপত্তিগত অর্থ : হস্ত আছে যার

ব্যবহারিক অর্থ : পশু


মূল শব্দ : গবেষণা

বুৎপত্তিগত অর্থ : গরু খোঁজা

ব্যবহারিক অর্থ : গভীরভাবে অধ্যয়ন


মূল শব্দ : বাঁশি

বুৎপত্তিগত অর্থ : বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু

ব্যবহারিক অর্থ : বাদ্যযন্ত্র বাঁশি


মূল শব্দ : তৈল

বুৎপত্তিগত অর্থ : তিলজাত স্নেহ পদার্থ

ব্যবহারিক অর্থ : যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত  স্নেহ পদার্থ


মূল শব্দ : সন্দেশ

বুৎপত্তিগত অর্থ : সংবাদ

ব্যবহারিক অর্থ : মিষ্টান্ন


মূল শব্দ : প্রবীণ

বুৎপত্তিগত অর্থ : প্রকৃষ্টরূপে বীণাবাদক

ব্যবহারিক অর্থ : বয়স্ক ব্যক্তি


মূল শব্দ : হরিণ

বুৎপত্তিগত অর্থ : হরণ করে যে

ব্যবহারিক অর্থ : পশু


মূল শব্দ : পাঞ্জাবি

বুৎপত্তিগত অর্থ : পাঞ্জাবের অধিবাসী

ব্যবহারিক অর্থ : পোশাক বিশেষ


মূল শব্দ : ঝি

বুৎপত্তিগত অর্থ : নিজ কন্যা

ব্যবহারিক অর্থ : চাকরানী


মূল শব্দ : কুশল

বুৎপত্তিগত অর্থ : এক প্রকার তৃণ

ব্যবহারিক অর্থ : কল্যাণ বা মঙ্গল


 

৩. যোগরূঢ় শব্দ: সমাসনিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ এক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। যেমন  –


মূল শব্দ : পঙ্কজ

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : পঙ্কে জন্মে যা

বিশিষ্ট অর্থ : পদ্মফুল


মূল শব্দ : রাজপুত

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : রাজার পুত্র

বিশিষ্ট অর্থ : জাতি বিশেষ


মূল শব্দ : মহাযাত্রা

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : মহা সমারোহে যাত্রা

বিশিষ্ট অর্থ : মৃত্যু


মূল শব্দ : জলধি

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : জল ধারণ করে যে

বিশিষ্ট অর্থ : সমুদ্র


মূল শব্দ : আদিত্য

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : অদিতির পুত্র

বিশিষ্ট অর্থ : সূর্য


মূল শব্দ : জলদ

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : জল দেয় যে

বিশিষ্ট অর্থ : মেঘ


মূল শব্দ : দশানন

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : দশ আনন আছে যার

বিশিষ্ট অর্থ : রামায়ণে বর্ণিত রাবণ


মূল শব্দ : বারহাতি

সমাসনিষ্পন্ন অর্থ : বার হাত পরিমাণ যার

বিশিষ্ট অর্থ : শাড়ি বিশেষ


 

উৎসগত শেণিবিভাগ: উৎস অনুসারে শব্দ পাঁচ প্রকার। যথা –

(১) তৎসম শব্দ

(২) অর্ধ-তৎসম শব্দ

(৩) তদ্ভব শব্দ

(৪) দেশি শব্দ।

(৫) বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দ: যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সে সব শব্দকে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বলে। তৎসম একটি পরিভাষিক শব্দ। যেমন – চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, জন্ম, সাগর, ভবন, ফুল, ভোজন, চক্ষু, সন্ধ্যা, ঋতু ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে সাধারণত ণ, ষ, ঋ, ক্ষ, র-ফলা (   ্র), য-ফলা (  ্য ), রেফ (র্ ), ঋ-কার (  ু ), ঊ-কার (  ূ ), ঈ-কার    (  ী ) ইত্যাদি যুক্ত শব্দ বেশি হয়। মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। যেমন –

জন্ম, সাগর, সিন্ধু, রবি, জল
বন্ধু, কেশর, পদ্ম, ফুল, জাল।

শয়ন, শ্বশুর, সিংহ, মানব, গমন
পথ, বনরব, তাপস, নদ, গগন।

স্নেহ, সন্তান, বৎস, ভুবন, বধূ
যুদ্ধ, ভবন, সঞ্চয়, ভোজন, মধু।

এছাড়া যে সকল শব্দের তৎসম রূপ ব্যতীত আরেকটি রূপ বাংলায় (অতৎসম শব্দে) প্রচলিত আছে সেগুলো তৎসম শব্দ। যেমন –

তৎসম রূপঅতৎসম রূপ
পৃষ্ঠপিঠ
হস্তহাত
দন্তদাঁত
কর্ণকান
নাসিকানাক
চক্ষুচোখ
নৌকানাও
তাম্রতামা
লৌহলোহা
গ্রামগাঁও
দিবসদিন
রাত্রিরাত
সন্ধ্যাসাঁঝ
চন্দ্রচাঁদ
বৎসরবছর
কন্যামেয়ে
পুত্রছেলে
স্বর্ণসোনা
রৌপ্যরূপা
কর্মকাজ

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ: বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তত আকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে অর্ধ-তৎসম, আধা-সংস্কৃত বা ভগ্ন-তৎসম শব্দ বলে। যেমন – জোছনা, ছেরাদ্দ, গিন্নি, বোষ্টম, কুচ্ছিত ইত্যাদি। নিম্নে আরও কিছু অর্ধ-তৎসম শব্দের উদাহরণ দেওয়া হয়। যেগুলোর মূল সংস্কৃত শব্দের মধ্যে বিদ্যমান।

আঁধার, গেরাম, গিন্নী, মিছে, যতন
ঘেন্না, কায়েত, লোহা, সোনা, রতন।

কেষ্ট, পরান, সত্যি, গতর, চামার
ছেরাদ্দ, পিঠ, কিচ্ছু, হাঁস, কামার।

সুরুজ, খিদে, বদ্যি, তারা, পিত্তির
গেরাস্থ, চোখ, বিষ্টি, ছাতা, মিত্তির।

জোছনা, ওষুধ, পুরুত, গাঁধা, ছিরি
কুচ্ছিত, ষাঁড়, বোষ্টম, বিচ্ছিরি।

উচ্ছিষ্ট, মন্তর, রোদ্দুর, পেন্নাম, শত্তুর
চন্দর, রাত্তির, নেমন্তন্ন, পুত্তুর।

৩. তদ্ভব শব্দ: যে সব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। তদ্ভব শব্দকে খাঁটি বাংলা শব্দ বলে। যেমন –

  • সংস্কৃত-হস্ত,
  • প্রাকৃত-হন্থ,
  • তদ্ভব-হাত,
  • চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ,
  • চর্মকার > চম্মআর > চামার ইত্যাদি।

নিম্নে আরও কিছু তদ্ভব শব্দের উদাহরণ দেওয়া হল।

তৎসম শব্দপ্রাকৃত শব্দতদ্ভব শব্দ
ভক্তভত্তভাত
মৎস্যমচ্ছমাছ
কর্মকারকম্মআরকামার
বঙ্কবংকবাঁক
টক্কটঙ্কাটাকা
অঞ্চলঅংচলআঁচল
বধূবহুবউ
পাষাণপাবনপাহাড়
বংশীবংসীবাঁশি
দুগ্ধদুদ্ধদুধ
ঘটিকঘড়িআঘড়ি
অদ্যঅজ্জআজ

৪. দেশি শব্দ: বাংলাদেশের আদিম অধিবাসিদের (কোল, মুন্ডা, চণ্ডাল , হাঁড়ি) ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত হয়েছে। এ সব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়। এ শব্দের মূল নির্ধারণ করা কঠিন তবে কোন ভাষা থেকে এসেছে তা জানা যায়। যেমন –

  • কুড়ি (বিশ) – কোলভাষা,
  • পেট (উদর) – তামিল ভাষা,
  • চুলা (উনুন) – মুন্ডারি ভাষা। এ রূপ কুলা, গঞ্জ, চোঙ্গা, টোপুর, ডাগর, ডোবা, খেয়া, খোঁচা, ঢাল, নেড়া, ছানা, চুলা ইত্যাদি।

আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া হল।

ডাব, ডাগর, ডাহা, ডোবা, ডিঙ্গা
খড়, খেয়া, খাঁদা, খোঁচা, ঝিঙ্গা।

ঢাল, ঢোল, ঢেউ, ডাল, ঢেঁকি
নেড়া, ভিড়, খুকি, মই, মেকি।

কুলা, চুলা, ছানা, ঝোল, খোড়া
আলু, চাল, ডাঁশ, লাঠি, ঢোঁড়া।

কুড়ি, মুড়ি, ঝাঁটা, পাঁঠা, ডালা
ঝুল, পেট, বোবা, ডাঁটো, কালা।

৫. বিদেশি শব্দ: রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে; এ সব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশি শব্দগুলোর মধ্যে ফারসি, আরবি, ইংরেজি, তুর্কি, পতুর্গিজ, ফরাসি ইত্যাদি প্রধান। এছাড়াও কিছু শব্দ নিচে দেওয়া হলো।

ফারসি শব্দ:

আজকাল, বাদশা, চশমা, কাগজ
ময়দা, জন্তু, জানোয়ার, হাঙ্গামা

গুলিস্তান, পোশাক, কারখানা, হরেকরকম, কারসাজি
পির, চর্বি, মোরগ, গোশত, সাগরেদ

সিপাহি, পালোয়ান, লাগাম, সবুজ, পশম, তোশক, হিন্দু, সরকার
জিন্দা, বদমাশ, মেথর, জবানবন্দি।

আরবি শব্দ:

ইনসান, আল্লাহ, ইমান, ওযু, গোসল, তওবা, তসবি, হজ, জাহাজ
তুফান, হয়রান, শহিদ, জান্নাত, জাহান্নাম

উকিল, আজব, জরিপ, মজবুত, কেচ্ছা, মামলা
কায়দা, কানুন, নবাব, মোক্তার, মুনসেফ, উজির

তামাম, খবর, আদালত, হাজির
হাকিম, দাখিল, দলিল, মেজাজ, খারাপ, খারিজ

কিতাব, দোয়াত, কলম, তারিখ, রায়
মেহনত, শরবত, মজলিস, আলবত, হাজত।

পর্তুগিজ শব্দ:

কেরানি, আয়া, আতা, আচার
ইস্পাত, ইস্ত্রি, কাতান, কামিজ

গির্জা, কামরা, কেদারা, গরাদ
নিলাম, পাচার, পেয়ারা, পেরেক

বোম্বেটে, ফিরিঙ্গি, পিস্তল, ফিতা, বারান্দা
আলমারি, বাসন, গামলা, চাবি, বোমা, বেহালা

বর্গা, মাস্তুল, মিস্ত্রি, যিশু, মাইরি
বালতি, সাবান, তোয়ালে, সাগু, সালসা, কপি, পেঁপে।

তুর্কি শব্দ:

মোগল, বাহাদুর, লাশ
উর্দি, কোতকা, দারোগা, কঞ্চি, তালাশ

কাঁচি, চাবুক, চকমক, ঝকমক
চিক, বাবুর্চি, খান, খোকা, কোরমা

কুর্নিশ, উর্দু, দাদা, নানা, ঠাকুর, বাবা, সওগাত
কুলি, চাকর, বাস, তোপ, কাবু।

হিন্দি শব্দ: কাহিনি, ঝামেলা, পাঠান, পাটোয়ারি, কাছারি, টহল, ছিনতাই, চাচা, বাচ্চা, চানাচুর, চাটনি, জিলাপি, পানি, চাটাই, জায়গা, ভরসা, ঠিকানা, ঢিলা, পানসে, আচ্ছা, খেলনা, ছালুন, সুজি, বেটা।

ফরাসি শব্দ: কার্তুজ, কুপন, ডিপো, ইংরেজ, রেস্তোরাঁ, বুর্জোয়া, ক্যাফে, গ্যারেজ, রেনেসাঁ, আঁতাত, ওলন্দাজ, দিনেমার, মসিঁেয়, মাদাম, কোলাজ (এক ধরনের শিল্পকর্ম), চকলেট।

ইংরেজি শব্দ: আফিম, বোতল, বাক্স, গেলাস, হাসপাতাল, লন্ঠন, লাট, গারদ, সান্ত্রি, ইংরেজি, অফিস, স্কুল, গেরিলা, কাপ্তান, আরদালি, শেমিজ, গেঞ্জি, ম্যালেরিয়া, প্যান্ডেল, বাইবেল, সাইকেল, সার্কেল, প্লেন, মাইক, ফটো, বাস, বোতাম, বোতল।

উর্দু শব্দ: আব্বু, কলিজা, বদলা, হল্লা, ঘাগরা, চুঙ্গি, ছিলিম।

জার্মানি শব্দ: কিন্ডার-গার্টেন, নাৎসি।

মালয়ি শব্দ: কাকাতুয়া, আলতো, কিরিচ (ছোরা), আইলা।

ইতালীয় শব্দ: ম্যাজেন্টা, মাফিয়া, অপেরা, পিয়ানো।

স্প্যানিশ শব্দ: কুইনাইন।

গ্রিক শব্দ: দাম, সুড়ঙ্গ, সেমাই, ইউনানি।

বর্মি শব্দ: লুঙ্গি, ফুঙ্গি।

তিব্বতি শব্দ: লামা।

রুশীয় শব্দ: বলশেভিক, কমরেড, সোভিয়েত, স্পুটনিক।

দক্ষিণ আফ্রিকান শব্দ: জেব্রা, জিরাফ।

অস্ট্রেলীয় শব্দ: বুমেরাং, ক্যাঙ্গারু।

এস্কিমো শব্দ: ইগলু।

ওলন্দাজি শব্দ: ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন, ইস্ক্রুপ।

চীনা শব্দ: চা, চিনি, লিচু, লুচি, সাম্পান।

জাপানি শব্দ: রিকসা, হাসনাহেনা, সুনামি।

সিংহলি শব্দ: সিডর, বেরিবেরি।

ভারতীয় ভাষা থেকে আগত কিছু শব্দ:

গুজরাটি শব্দ: খদ্দর, হরতাল, খাদি, চরকা

পাঞ্জাবি শব্দ: চাহিদা, শিখ/খালসা

তামিল/তেলুগু শব্দ: চুরুট, পেট

মারাঠি শব্দ: বর্গি, চামচা, ঠগ

সাঁওতালি শব্দ: হাঁড়িয়া, টিলা, কাঙাল, কামড়

মৈথিলি: ভেল, মুঝ, তুম

 

মিশ্র শব্দ: কোনো কোনো সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে, এগুলোকে মিশ্র বা সঙ্কর শব্দ বলে। এগুলো নতুন কোনো শব্দ নয় বরং শব্দবন্ধ। যেমন –


আরবি + ফারসি : কেতাদুরস্ত, খয়ের খাঁ, তাজমহল, হারামজাদা

আরবি + ইংরেজি : উকিল-ব্যারিস্টার

আরবি + চিনা : কাবাব-চিনি


ফারসি + আরবি :  আবহাওয়া, কুচকাওয়াজ, খোশমেজাজ, গরম-মশলা, জবর-দখল, দহরম-মহরম,

নিমক-হারাম, নেকনজর, চৌ-হদ্দি

ফারসি + ইংরেজি : কাগজ-পেন্সিল


ইংরেজি + সংস্কৃত : হেডপণ্ডিত, খ্রিষ্টাব্দ, রেলপথ, ভোটকেন্দ্র

আরবি + সংস্কৃত : হিসাবরক্ষক, আইনসম্মত

ফারসি + সংস্কৃত : কাগজপত্র, পর্দাপ্রথা, আরামপ্রিয়


ইংরেজি + ফারসি : হেডমৌলভি, ডাক্তারখানা, জেলখানা, সিলমোহর

ইংরেজি + আরবি : অফিস-আদালত, ডাক্তার-সাহেব


সংস্কৃত + আরবি : ধনদৌলত, নৌবহর, ভোগদখল, হাসিতামাশা

সংস্কৃত + ফারসি : জন্তুজানোয়ার, লজ্জাশরম, যোগসাজস


সংস্কৃত + বাংলা : শ্বেতপাথর

ইংরেজি + বাংলা : পকেটমার, মাস্টারমশাই, স্কুলঘর, হাফহাতা, ফুলমোজা

পর্তুগিজ + বাংলা : খানাডোবা, চাবিকাঠি

ফারসি + বাংলা : দরাজহাত


বাংলা + ফারসি : হাট-বাজার, রাজা-বাদশা

বাংলা + আরবি : কালি-কলম, রাজা-উজির

বাংলা + সংস্কৃত : কাজকর্ম, রাশভারী, পাহাড়-পর্বত

বাংলা + পর্তুগিজ : ছুতোরমিস্ত্রি


দ্বিরুক্ত শব্দ

দ্বিরুক্ত অর্থ দুবার উক্ত হয়েছে এমন। বাংলা ভাষায় কোনো কোনো শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ এক বার ব্যবহার করলে যে অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলো দুবার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে। এ ধরনের শব্দের পরপর দুবার প্রয়োগেই দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হয়।

যেমন – ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে।’ অর্থাৎ ঠিক জ্বর নয়, জ্বরের ভাব অর্থে এই প্রয়োগ।

দ্বিরুক্ত শব্দ তিন প্রকার। যথা –

(১) শব্দের দ্বিরুক্তি

(২) পদের দ্বিরুক্তি

(৩) অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি।

(১) শব্দের দ্বিরুক্তি:

একই শব্দ দুবার উক্তকে শব্দের দ্বিরুক্তি বলে।

  • একই শব্দ দুবার ব্যবহার করা হয় এবং শব্দ দুটি অবিকৃত থাকে। যথা : ভালো ভালো ফল, ফোঁটা ফোঁটা পানি, বড় বড় বই ইত্যাদি।
  • একই শব্দের সঙ্গে সামর্থক আর একটি শব্দ যোগ করে ব্যবহৃত হয়। যথা : ধন-দৌলত, খেলা-ধুলা, লালন-পালন, বলা-কওয়া, খোঁজ-খবর ইত্যাদি।
  • দ্বিরুক্ত শব্দের দ্বিতীয় শব্দটির আংশিক পরিবর্তন হয়। যেমন : মিট-মিট, ফিট-ফিট, বকা-ঝকা, তোড়া-জোড়া, গল্প-সল্প, রকম-সকম ইত্যাদি।
  • সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ যোগে। যেমন : লেন-দেন, দেনা-পাওনা, টাকা-পয়সা, ধনী-গরিব, আসা-যাওয়া ইত্যাদি।

(২) পদের দ্বিরুক্তি:

একই পদ দুবার উক্তকে পদের দ্বিরুক্তি বলে।

  • দুটো পদে একই বিভক্তি প্রয়োগ করা হয়, শব্দ দুটো ও বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন : ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য করতে লাগল। মনে মনে আমিও এ কথাই ভেবেছি। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম।
  • দ্বিতীয় পদের আংশিক ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটে কিন্তু পদের বিভক্তি অবিকৃত থাকে। যেমন : চোর হাতে নাতে ধরা পড়েছে। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। দলে বলে সবাই ছুটে এলো।

দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ

বিশেষ্য পদের বিশেষণ রূপে ব্যবহার:

১. আধিক্য বোঝাতে: রশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান।

২. সামান্য বোঝাতে: আমি জ্বর জ্বর বোধ করছি। তার কবি কবি ভাব গেল না।

৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে: তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছে। তুমি বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলেছ।

৪. ক্রিয়া বিশেষণ: ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।

৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে: তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই।

৬. আগ্রহ বোঝাতে: ও দাদা দাদা বলে কাঁদছে।

বিশেষণ পদের বিশেষণ রূপে ব্যবহার:

১. আধিক্য বোঝাতে: ভালো ভালো আম নিয়ে এসো। ছোট ছোট ডাল কেটে ফেলে।

২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে: গরম গরম জিলাপি, নরম নরম হাত।

৩. সামান্যতা বোঝাতে: উড়– উড়– ভাব, কালো কালো চেহারা।

সর্বনাম পদের ব্যবহার:

বহু বচন বা আধিক্য বোঝাতে: সে সে লোক গেল কোথায়? কে কে এল? কেউ কেউ বলে।

ক্রিয়াবাচক পদের ব্যবহার:

১. বিশেষণ রূপে: এ দিকে রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব গেল না।

২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে: দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল।

৩. ক্রিয়া বিশেষণ: দেখে দেখে যেও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কী ভাবে?

৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে: ডেকে ডেকে হয়রান হয়েছি।

অব্যয় পদের ব্যবহার:

১. ভাবের গভীরতা বোঝাতে: তার দুঃখ দেখে সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি কী করেছ?

২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে: বার বার সে কামান গর্জে উঠল।

৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে: ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে।

৪. বিশেষণ বোঝাতে: পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।

৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা: ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।

 

(৩) অনুকার দ্বিরুক্তি:

কোনো কিছুর স্বাভাবিক ধ্বনি বা কাল্পনিক ধ্বনির অনুকরণে গঠিত শব্দের দুবার প্রয়োগের নাম ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার দ্বিরুক্তি। ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি দ্বারা বহুত্ব ও আধিক্য বোঝায়। ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি শব্দ কয়েকটি উপায়ে গঠিত হয়। যেমন:

১. মানুষের ধ্বনির অনুকার: ভেউ ভেউ, ট্যা ট্যা, হি হি ইত্যাদি।

২. জীবজন্তুর ধ্বনির অনুকার: ঘেউ ঘেউ, মিউ মিউ, কুহু কুহু, কা কা ইত্যাদি।

৩. বস্তুর ধ্বনির অনুকার : ঘচাঘচ, মড় মড়, ঝম ঝম, হু হু ইত্যাদি।

৪. অনুভূতিজাত কাল্পনিক : ঝিকিমিকি, ঠা ঠা, কুট কুট, মিন মিন, পিট পিট, ঝি ঝি, ঝিম ঝিম ইত্যাদি।

অনুকার দ্বিরুক্তি গঠন:

১. একই শব্দের অবিকৃত প্রয়োগ: ধব ধব, ঝন ঝন, পট পট।

২. প্রথম শব্দটির শেষে ‘আ’ যোগ করে: গপাগপ, টপাটপ, পটাপট।

৩. দ্বিতীয় শব্দটির শেষে ‘ই’ যোগ করে: ধরাধরি, ঝমঝমি, ঝনঝনি।

৪. যুগ্মরীতিতে গঠিত ধ্বন্যাত্মক শব্দ: কিচির মিচির, টাপুর টুপুর, হাপুস হুপুস।

৫. আনি-প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য দ্বিরুক্তি: ছটফটানি, বকবকানি।

ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্ত শব্দের ব্যবহার:

১. বিশেষ্য: বৃষ্টির ঝমঝমানি আমাদের অস্থির করে তোলে।

২. বিশেষণ: ‘নামিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়।’

৩. ক্রিয়া: কলকলিয়ে উঠল সেথায় নারীর প্রতিবাদ।

৪. ক্রিয়া বিশেষণ: ‘চিকচিক করে বালি কোথা নাহি কাদা।’

যুগ্মরীতিতে দ্বিরুক্ত শব্দের গঠন:

একই শব্দ ঈষৎ পরিবর্তন করে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠনের রীতিকে বলে যুগ্মরীতি। যুগ্মরীতিতে দ্বিরুক্ত গঠনের কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যেমন:

১. শব্দের আদি স্বরের পরিবর্তন করে: চুপচাপ, মিটমাট, জারিজুরি।

২. শব্দের অন্ত্যস্বরের পরিবর্তন করে: মারামারি, হাতাহাতি, সরাসরি, জেদাজেদি।

৩. দ্বিতীয় বার ব্যবহারের সময় ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনে: ছটফট, নিশপিশ, ভাতটাত।

৪. সমার্থক বা একার্থক সহচর শব্দ যোগে: চালচলন, রীতিনীতি, বনজঙ্গল, ভয়ডর।

৫. ভিন্নার্থক শব্দ যোগে: ডালভাত, তালাচাবি, পাথঘাট, অলিগলি।

৬. বিপরীতার্থক শব্দ যোগে: ছোট-বড়, আসা-যাওয়া, জন্ম-মৃত্যু, আদান-প্রদান।

বিশিষ্টার্থক বাগধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ:

  • ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো। (সতর্কতা)
  • ভুলগুলো তুই আনরে বাছা বাছা। (ভাবের প্রগাঢ়তা)
  • থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে। (কালের বিস্তার)
  • লোকটা হাড়ে হড়ে শয়তান। (আধিক্য)

 

সংখ্যাবাচক শব্দ

সংখ্যা মানে গণনা বা গণনা দ্বারা লব্ধ ধারণা। সংখ্যা গণনার মূল একক ‘এক’ এবং গাণিতিক প্রতীক ‘অঙ্ক’। যেমন – এক টাকা, দশ টাকা। এক টাকাকে এক এক করে দশ বার নিলে হয় দশ টাকা। উল্লেখ্য, ‘তিন টাকা’ বলতে এক টাকার তিনটি একক বা এককের সমষ্টি বোঝায়। আমাদের একক হল ‘এক’। সুতরাং এক + এক + এক = তিন। এভাবে আমরা এক থেকে একশ পর্যন্ত গণনা করতে পারি। এক থেকে একশ পর্যন্ত এভাবে গণনার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘দশ গুণোত্তর’ পদ্ধতি।

সংখ্যাবাচক শব্দ চার প্রকার:

১. অঙ্কবাচক বা সংখ্যাবাচক

২. পরিমাণবাচক বা গণনাবাচক

৩. ক্রমবাচক বা পূরণবাচক

৪. তারিখবাচক

১. অঙ্কবাচক: যে সব চিহ্ন অঙ্ক বা সংখ্যা প্রকাশে সমষ্টিগত ধারণা দেয় তাদেরকে অঙ্কবাচক শব্দ বলে। যেমন – ১, ২, ৩, ৮, ১০, ২৫, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০ ইত্যাদি অঙ্কবাচক শব্দ।

২. পরিমাণ বা গণনাবাচক: একাধিক বার একই একক গণনা করলে যে সমষ্টি পাওয়া যায় তাকে পরিমাণ বা গণনাবাচক শব্দ বলে। যেমন – সপ্তাহ বলতে আমরা সাত দিনের সমষ্টি বুঝিয়ে থাকি। সপ্ত (সাত) অহ (দিন) = সপ্তাহ। এখানে দিন একটি একক। সুতরাং সাতটি দিন বা সাতটি একক মিলে হয়েছে সপ্তাহ। এ রূপ – হালি, ডজন, পক্ষ, মাস, বছর, দশক, শতাব্দী, যুগ ইত্যাদি।

পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা:চৌথা/সিকি/পোয়া, তেহাই, অর্ধ/আধা, এক তৃতীয়াংশ, এক অষ্টমাংশ, এক পঞ্চমাংশ, তিন চতুথাংশ ইত্যাদি দ্বারা পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা বুঝায়। এক এককের (৩/৪) কে পরবর্তী সংখ্যার পৌনে বলা হয়। যেমন – পৌনে তিন = (২ এর ৩/৪), পৌনে পাঁচ = (৪ এর ৩/৪) ইত্যাদি। পৌনে অর্থ পোয়া অংশ বা এক চতুর্থাশ (১/৪) কম।

পূর্ণসংখ্যার আধিক্য: সোয়া, সাড়ে, ১ এর ১/২ = দেড়, ২ এর ১/২ = আড়াই, নয় গুণ = নং, ত্রিশ গুণ = ত্রিশং, বিশ গুণ = বিশং ইত্যাদি দ্বারা পূর্ণসংখ্যার আধিক্য বুঝায়।

৩. ক্রমবাচক সংখ্যা: একই সারি, দল বা শ্রেণিতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যার ক্রম বা পর্যায় বোঝাতে ক্রম বা পুরণবাচক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। যেমন –

দ্বিতীয় লোকটিকে ডাক। এখানে গণনায় এক জনের পরের লোকটিকে বোঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় লোকটির আগের লোকটিকে বলা হয় ‘প্রথম’ এবং প্রথম লোকটির পরের লোকটিকে বলা হয় দ্বিতীয়। যেমন –

তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, দশম, একাদশ, ষোড়শ, ঊনবিংশ, বিংশ, ত্রিংশ, চত্বারিংশ, ত্রিচত্বারিংশ, পঞ্চাশতম, ষষ্ঠিতম, সপ্ততিতম, অশীতিতম, নবতিতম, নবনবতিতম, শততম,সার্ধশত, সহস্রতম ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ‘পয়লা ডাক’ তারিখবাচক শব্দ নয়, ক্রমবাচক শব্দ। কারণ ‘পয়লা ডাক’ ডাকা হয় নিলামে। প্রমিত বাংলায় বিংশ পর্যন্ত ক্রমবাচক বিশেষণের ব্যবহার রয়েছে।

৪. তারিখবাচক শব্দ: বাংলা মাসের তারিখ বোঝাতে যে সংখ্যাবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে তারিখবাচক শব্দ বলে। যেমন – পহেলা বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ, এগারই কার্তিক ইত্যাদি। তারিখবাচক শব্দের প্রথম চারটি অর্থাৎ (পহেলা, দোসরা, তেসরা, চৌঠা) হিন্দি নিয়মে সাধিত হয়। বাকি শব্দ বাংলার নিজস্ব ভঙ্গিতে গঠিত। তারিখবাচক শব্দের ৫-১৮ শেষে ‘ই’ প্রত্যয় এবং ১৯-৩২ শেষে ‘এ’ প্রত্যয় বসে।

নিচে বাংলা অঙ্কবাচক, গণনাবাচক, পূরণবাচক ও তারিখবাচক সংখ্যাগুলো দেওয়া হল:

অঙ্ক
বাচক
গণনা
বাচক
পূরণ
বাচক
তারিখ
বাচক
একপ্রথমপহেলা
দুইদ্বিতীয়দোসরা
তিনতৃতীয়তেসরা
চারচতুর্থচৌঠা
পাঁচপঞ্চমপাঁচই
ছয়ষষ্ঠছউই
সাতসপ্তমসাতই
আটঅষ্টমআটই
নয়নবমনউই
১০দশদশমদশই
১১এগারএকাদশএগরই
১২বারদ্বাদশবারই
১৩তেরত্রয়োদশতেরই
১৪চৌদ্দচতুর্দশচোদ্দই
১৫পনেরপঞ্চদশপনেরই
১৯উনিশঊনবিংশউনিশে
২০বিশ/কুড়িবিংশবিশে
২১একুশএকবিংশএকুশে
২২বাইশদ্বাবিংশবাইশে
২৫পঁচিশপঞ্চবিংশপঁচিশে
২৯ঊনত্রিশঊনত্রিংশঊনত্রিশে
৩০ত্রিশত্রিংশত্রিশে
৩১একত্রিশএকত্রিংশএকত্রিশে
৩২বত্রিশদ্বাত্রিংশবত্রিশে

নমুনা প্রশ্ন

 


১. ‘মহাশয়’ শব্দটি গঠিত হয়েছে-

ক) সমাসের মাধ্যমে

খ) সন্ধির মাধ্যমে

গ) উপসর্গের মাধ্যমে

ঘ) প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে

উত্তরঃ খ


২. ‘মনুষ্য’ শব্দটি কীভাবে গঠিত হয়েছে?

ক) প্রত্যয়ের মাধ্যমে

খ) সন্ধির মাধ্যমে

গ) সমাসের মাধ্যমে

ঘ) উপসর্গের মাধ্যমে

উত্তরঃ ক


৩. ‘সমাজ > সামাজিক’ কীভাবে শব্দটি গঠিত হয়েছে?

ক) প্রত্যয় যোগে

খ) সমাস যোগে

গ) পদ পরিবর্তনের মাধ্যমে

ঘ) সন্ধিযোগে

উত্তরঃ গ


৪. ‘জানালা’ শব্দটি কোন ভাষা হতে আগত?

ক) ফারসি

খ) পর্তুগিজ

গ) আরবি

ঘ) হিন্দি

উত্তরঃ খ


৫. ‘তেলাপোকা’ কোন জাতীয় শব্দ?

ক) সংস্কৃত

খ) দেশি

গ) ফারসি

ঘ) খাঁটি বাংলা

উত্তরঃ ঘ


৬. কোনটি খাঁটি বাংলা শব্দ?

ক) দেওর

খ) কুলা

গ) গঞ্জ

ঘ) ডাব

উত্তরঃ ক


৭. কোনটি ওলন্দাজ ভাষার শব্দ?

ক) চাবি

খ) তুরুপ

গ) বদমাস

ঘ) খদ্দর

উত্তরঃ খ


৮. কোনটি দেশি শব্দ?

ক) গৃহিণী

খ) চামার

গ) ডাব

ঘ) ভবন

উত্তরঃ গ


৯. ‘বালিশ’ শব্দটি কোন ভাষা হতে আগত?

ক) পাঞ্জাবি

খ) ফারসি

গ) পর্তুগিজ

ঘ) তুর্কি

উত্তরঃ খ


১০. ‘বেগম’ শব্দটি কোন ভাষা হতে অগত?

ক) আরবি

খ) তুর্কি

গ) হিন্দি

ঘ) পাঞ্জাবি

উত্তরঃ খ


১১. কোনটি পর্তুগিজ শব্দ?

ক) কার্তুজ

খ) আমদানি

গ) আলমারি

ঘ) ডিপো

উত্তরঃ গ


১২. ‘হারিকিরি’- শব্দটি কোন ভাষার?

ক) জাপানি

খ) পাঞ্জাবি

গ) ইংরেজি

ঘ) ফরাসি

উত্তরঃ ক


১৩. ‘রফতানি’ শব্দটি বাংলায় এসেছে কোন ভাষা থেকে?

ক) ফারসি

খ) ফরসি

গ) আরবি

ঘ) পর্তুগিজ

উত্তরঃ ক


১৪. ‘তরমুজ’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে আসছে?

ক) ফারসি

খ) আরবি

গ) তুর্কি

ঘ) বাংলা

উত্তরঃ ক


১৫. ‘চশমা’ কোন ভাষা হতে আগত শব্দ?

ক) তুর্কি

খ) জাপানি

গ) হিন্দি

ঘ) ফারসি

উত্তরঃ ঘ


১৬. ‘নবাব’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?

ক) ফার্সি

খ) হিন্দি

গ) আরবি

ঘ) জাপানি

উত্তরঃ গ


১৭. রূঢ়ি শব্দ কোনটি?

ক) দৌহিত্র

খ) তৈল

গ) রাজপুত

ঘ) মধুর

উত্তরঃ খ


১৮. ‘দারোগা দরগার কফি ক্যাফে’ এ বাক্যটিতে আছে যথাক্রমে –

ক) তুর্কি-ফরাসি-ইংরেজি-ফারসি

খ) তুর্কি-ফারসি-ইংরেজি-ফরাসি

গ) পর্তুগিজ-ফারসি-ফরাসি-ইংরেজি

ঘ) ফারসি-তুর্কি-ফরাসি-ইংরেজি

উত্তরঃ খ


১৯. ‘চৌ-হদ্দি’ শব্দটি কোন ভাষার শব্দ মিলে হয়েছে?

ক) বাংলা + ফারসি

খ) সংস্কৃত + ফারসি

গ) ফারসি + আরবি

ঘ) সংস্কৃত + আরবি

উত্তরঃ গ


২০. ‘কিন্ডার গার্টেন’ শব্দটি কোন ভাষার?

ক) ইংরেজি

খ) জাপানি

গ) জার্মানি

ঘ) ফরাসি

উত্তরঃ গ


২১. কোনটি মিশ্র শব্দ?

ক) কৃষ্টি-সৃষ্টি

খ) হাট-বাজার

গ) হালাল-হারাম

ঘ) নামায-রোযি

উত্তরঃ খ


২২. ‘ম্যালেরিয়া’ শব্দটি কোন ভাষায়?

ক) মেক্সিকান

খ) ইতালি

গ) ইংরেজি

ঘ) পর্তুগিজ

উত্তরঃ গ


২৩. কোনটি ইংরেজি শব্দ?

ক) তারিখ

খ) লুঙ্গি

গ) বোতল

ঘ) ডিপো

উত্তরঃ গ


২৪. গরাদ-গারদ-লুণ্ঠন-লন্ঠন শব্দগুলো কোন ভাষার?

ক) পর্তুগিজ-ইংরেজি-সংস্কৃত-ইংরেজি

খ) পর্তুগিজ-ইংরেজি-সংস্কৃত-বাংলা

গ) পর্তুগিজ-ইংরেজি-সংস্কৃত-ফারসি

ঘ) পর্তুগিজ-ইংরেজি-সংস্কৃত-ফরাসি

উত্তরঃ ক


২৫. ‘কাপ্তান’ শব্দটি কোন ভাষার?

ক) জাপানি

খ) ফরাসি

গ) ইংরেজি

ঘ) ফারসি

উত্তরঃ গ


২৬. ‘হরতাল’ শব্দটি কোন ভাষার শব্দ?

ক) ওলন্দাজ

খ) হিন্দি

গ) গুজরাটি

ঘ) তুর্কি

উত্তরঃ গ


২৭. কোনটি দেশি শব্দ নয়?

ক) কুলা

খ) পেট

গ) ঢেঁকি

ঘ) হাত

উত্তরঃ ঘ


২৮. ‘প্যাগোডা’ কোন ভাষার শব্দ?

ক) পর্তুগিজ

খ) বর্মি

গ) চীনা

ঘ) ইতালি

উত্তরঃ ক


২৯. ‘গিন্নী’ কোন শ্রেণির শব্দ?

ক) খাঁটি বাংলা

খ) তৎসম

গ) দেশি

ঘ) অর্ধ তৎসম

উত্তরঃ ঘ


৩০. কোনটি মিশ্র শব্দ নয়?

ক) চাবিকাঠি

খ) পকেটমার

গ) হাসনাহেনা

ঘ) সিলমোহর

উত্তরঃ গ


৩১. কোনটি যোগরূঢ় শব্দ?

ক) গবেষণা

খ) মহাযাত্রা

গ) বাঙালি

ঘ) বাবুয়ানা

উত্তরঃ খ


৩২. ‘কালিকলম’ শব্দটি কোন শব্দদ্বয়ের মিশ্রণে হয়েছে?

ক) বাংলা-আরবি

খ) সংস্কৃত-আরবি

গ) বাংলা-ফারসি

ঘ) আরবি-ফারসি

উত্তরঃ ক


৩৩. কোনটি মৌলিক শব্দ?

ক) গোলাপ

খ) নীলাকাশ

গ) তৈল

ঘ) মধুর

উত্তরঃ ক


৩৪. প্রত্যয় সাধিত শব্দ কোনটি?

ক) সুশ্রী

খ) জেলে

গ) মহাত্মা

ঘ) সফল

উত্তরঃ খ


৩৫. যেসব শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ অভিন্ন, তাকে বলে – 

ক) রূঢ়ি শব্দ

খ) যোগরূঢ় শব্দ

গ) যৌগিক শব্দ

ঘ) মৌলিক শব্দ

উত্তরঃ গ


৩৬. ‘জলধি’ কোন শ্রেণির শব্দ?

ক) যৌগিক

খ) রূঢ়

গ) যোগরূঢ়

ঘ) রূঢ়ি

উত্তরঃ গ


৩৭. কোনটি রূঢ় শব্দ?

ক) কর্তব্য

খ) হস্তী

গ) পঙ্কজ

ঘ) মহাযাত্রা

উত্তরঃ খ


৩৮. কোনটি যৌগিক শব্দ?

ক) মিতালি

খ) পাঞ্জাবি

গ) বাবুয়ানা

ঘ) ক + গ

উত্তরঃ ঘ


৩৯. দাপ্তরিক কোন শব্দটি ইংরেজি ভাষা থেকে আসছে?

ক) আইন

খ) এজেন্ট

গ) দাখিল

ঘ) মুচলেকা

উত্তরঃ খ


৪০. কোনটি সাধিত শব্দ নয়?

ক) গরমিল

খ) চাঁদমুখ

গ) লাল

ঘ) চোরা

উত্তরঃ গ


৪১. অনার্যদের সৃষ্ট শব্দগুলো কী শব্দ?

ক) তৎসম

খ) দেশি

গ) বিদেশি

ঘ) তদ্ভব

উত্তরঃ খ


৪২. ফিরিঙ্গি ও বুর্জোয়া কোন ভাষার শব্দ?

ক) পর্তুগিজ ও ফরাসি

খ) পর্তুগিজ ও ফারসি

গ) ফরাসি ও ইংরেজি

ঘ) তুর্কি ও পর্তুগিজ

উত্তরঃ ক


৪৩. কোনটি যুগ্মরীতির দ্বিরুক্ত শব্দ নয়?

ক) ডাল ভাত

খ) কুহুকুহু

গ) অলিগলি

ঘ) মিটমাট

উত্তরঃ খ


৪৪. কোনটি পদাত্মক দ্বিরুক্তি?

ক) ভালো ভালো

খ) মিটমাট

গ) লেনদেন

ঘ) মনে মনে

উত্তরঃ ঘ


৪৫. ভিন্নার্থক শব্দযোগে গঠিত দ্বিরুক্তি কোনটি?

ক) তালাচাবি

খ) ছোট-বড়

গ) চুপচাপ

ঘ) সরাসরি

উত্তরঃ ক


৪৬. যুগ্মরীতিতে গঠিত ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি কোনটি?

ক) মিটির মিটির

খ) টাপুর টুপুর

গ) অলিগলি

ঘ) ক+খ

উত্তরঃ খ


৪৭. ‘নাবিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়’ বাক্যটিতে ব্যবহৃত দ্বিরুক্ত শব্দ কোন পদ?

ক) বিশেষ্য

খ) বিশেষণ

গ) ক্রিয়া

ঘ) ক্রিয়া বিশেষণ

উত্তরঃ খ


৪৮. ভিন্নার্থক শব্দ যোগে যুগ্মরীতির দ্বিরুক্ত শব্দ কোনটি?

ক) জন্ম-মৃত্যু

খ) অলিগলি

গ) ভাতটাত

ঘ) চালচলন

উত্তরঃ খ


৪৯. কোনটি মানুষের ধ্বনির অনুকার?

ক) মিন মিন

খ) ভেউ ভেউ

গ) হু হু

ঘ) ঘেউ ঘেউ

উত্তরঃ খ


৫০. ‘বৃষ্টি পড়ে টাটুর টুপুর’ এ বাক্যে দ্বিরুক্তি কী প্রকাশ করছে?

ক) পৌনঃপুনিকতা

খ) অনুভূতি

গ) বিশেষণ

ঘ) ধ্বনিব্যঞ্জনা

উত্তরঃ ঘ


৫১. ছি! ছি! তুমি এমন কাজ করেছ? এখানে, ছি! ছি! কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) পৌঃপুনিকতা

খ) বিরক্তি

গ) অনুভূতি

ঘ) ভাবের গভীরতা

উত্তরঃ ঘ


৫২. নিচের কোনটি সমার্থক দ্বিরুক্তি?

ক) রাত-দিন

খ) ধন-দৌলত

গ) ফিট-ফাট

ঘ) লেন-দেন

উত্তরঃ খ


৫৩. কোন দ্বিরুক্তিটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ?

ক) শীত শীত

খ) পড়ো পড়ো

গ) শন শন

ঘ) হাতে হাতে

উত্তরঃ গ


৫৪. কোনটি পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা?

ক) ২১/২

খ) ১১/৪

গ) ২১/২

ঘ) ২৩/৪

উত্তরঃ ঘ


৫৫. ‘চৌথা’ কোন বাচক শব্দ?

ক) অঙ্কবাচক

খ) গণনাবাচক

গ) তারিখবাচক

ঘ) পূরণবাচক

উত্তরঃ খ


৫৬. ‘পয়লা ডাক’ এখানে ‘পয়লা’ কোন জাতীয় সংখ্যা?

ক) তারিখবাচক

খ) পূরণবাচক

গ) অঙ্কবাচক

ঘ) সমষ্টিবাচক

উত্তরঃ খ


৫৭. কোনটি পূর্ণ সংখ্যার আধিক্য নয়?

ক) 〖১ 〗⁡〖১/৪〗

খ) 〖২ 〗⁡〖১/২〗

গ) 〖৪ 〗⁡〖৩/৪〗

ঘ)〖 ৩ 〗⁡〖১/২〗

উত্তরঃ গ


৫৮. ‘তেহাই’ কী প্রকাশ করে?

ক) পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা

খ) পূর্ণসংখ্যার আধিক্য

গ) পূর্ণসংখ্যার সমতা

ঘ) পূর্ণসংখ্যা

উত্তরঃ ক


৫৯. নিম্নের কোনটি গণনাবাচক সংখ্যা?

ক) বিংশ

খ) সপ্তাহ

গ) উনিশে

ঘ) চৌঠা

উত্তরঃ খ


৬০. ‘ডজন’ কী বাচক সংখ্যা?

ক) অঙ্কবাচক

খ) সংখ্যাবাচক

গ) পরিমাণবাচক

ঘ) ক্রমবাচক

উত্তরঃ গ


তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)
১১. স্বরোচিষ সরকার, বাংলাদেশের কোষগ্রন্থ ও শব্দসন্ধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১০)
১২. সুব্রত বড়ুয়া, বাংলা পরিভাষার সন্ধানে (বাংলা একাডেমি, মে ২০১৪)
১৩. জালাল ফিরোজ, পার্লামেন্টারি শব্দকোষ (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৯৮)
১৪. নীলিমা ইব্রাহিম, বশীর আল হেলাল ও অন্যান্য, প্রশাসনিক পরিভাষা (বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫)
১৫. মোহাম্মদ হারুন রশিদ, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবি ফারসি উর্দু শব্দের অভিধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১৫)

BCS Bangla Lecture – 13

বিপরীত শব্দ

একটি শব্দ যে অর্থ প্রকাশ করে অন্য একটি শব্দ তার বিপরীত অর্থ প্রকাশ করলে শব্দদুটো পরস্পর বিপরীত অর্থবোধক (Antonym) শব্দ। যেমন: “তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” এ বাক্যে অধম উত্তমের বিপরীত শব্দ। ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা বাড়াতে ও শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ করতে বিপরীত শব্দের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

নিচে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিপরীত শব্দের উদাহরণ দেওয়া হলো।


অনুগ্রহ – নিগ্রহ
অহ্ন – রাত্রি
অখেদ – খেদ
অফুরান – মুষ্টিমেয়
অনুলোম – প্রতিলোম
অগ্রিম – বকেয়া
অনশন – অশন
অমর – মর
অণু – বৃহৎ
অন্ধ – চক্ষুষ্মান
অনাবিল – আবিল
অর্থী – প্রত্যর্থী
অস্তি – নাস্তি
অধিত্যকা – উপত্যকা
অপ্রতিভ – সপ্রতিভ
অবনত – উন্নত
অহিংস – সহিংস
অগোচর – চাক্ষুষ
অভিমানী – নিরভিমান
অপব্যয় – সদ্ব্যয়
অতিবৃষ্টি – অনাবৃষ্টি
অজ্ঞ – বিজ্ঞ
অজ্ঞাত – বিদিত
অভাব – সম্পদ
অন্দর – সদর
অধমর্ণ – উত্তমর্ণ
অচল – সচল
অনুকূল – প্রতিকূল
অন্তর – বাহির
অন্তরঙ্গ – বহিরঙ্গ
অর্থ – অনর্থ
অম্ল – মধুর
অনন্ত – সান্ত


আগম – নির্গম
আহ্লাদ – খেদ
আপ্যায়ন – প্রত্যাখ্যান
আলসে – খাটিয়ে
আসামি – ফরিয়াদি
আটক – ছাড়
আবির্ভূত – তিরোহিত
আনকোরা – পুরোনো
আঁটসাঁট – ঢলঢলে
আদিষ্ট – নিষিদ্ধ
আবাহন – বিসর্জন
আগ্রহ – উপেক্ষা
আবদ্ধ – মুক্ত
আকস্মিক – চিরন্তন
আঁটি – শাঁস
আকর্ষণ – বিকর্ষণ
আদ্র – শুষ্ক
আমির – ফকির


ই/ঈ

ইতর – ভদ্র
ইষ্ট – অনিষ্ট
ইস্তফা – যোগদান
ইন্দ্রিয় – অতীন্দ্রিয়
ইদানীং – তদানীং
ইহা – উহা
ঈদৃশ – তাদৃশ
ঈশ্বর – নিরীশ্বর
ঈষাণ – নৈর্ঋত
ঈর্ষা – প্রীতি


উ/ঊ/ঋ

উদ্ভাসিত – ম্রিয়মান
উচাটন – প্রশান্ত
উন্মীলন – নির্মীলন
উগমর – মনমরা
উদ্ধৃত্ত – ঘাটতি
উন্মুখ – বিমুখ
উত্তরণ – অবতরণ
উত্তরীয় – অন্তরীয়
উজাড় – ভরপুর
উদ্ধার – হরণ
উঠন্ত – পড়ন্ত
উতরানো – তলানো
উপরোধ – অনুরোধ
উত্তল – অবতল
উদ্যতি – বিরতি
উৎকণ্ঠা – স্বস্তি
উৎকর্ষ – অপকর্ষ
উৎকৃষ্ট – অপকৃষ্ট
উজাড় – ভরপুর
উৎসাহ – নিরুৎসাহ
উদার – সংকীর্ণ
উত্থান – পতন
ঊর্ধ্ব – অধ


এ/ঐ

এঁড়ে – বকনা
এখন – তখন
একান্ন – পৃথগন্ন
এলোমেলো – গোছানো
ঐহিক – পারত্রিক
ঐশ্বর্য – দারিদ্র্য


ও/ঔ

ঔদার্য – কার্পণ্য
ঔজ্জ্বল্য – ম্লানিমা


ক/খ

কলুষ – পুণ্য
কঞ্জুস – দরাজদিল
কিংকর – প্রভু
ক্লেশ – আরাম
কটু – মিষ্ট
কুৎসা – প্রশংসা
কৃপণ – বদান্য
কৌতূহলী – নিস্পৃহ
কর্মকর্তা – কর্মচারী
কুলীন – অন্ত্যজ
ক্রোধ – প্রীতি
কুঞ্জন – সরলতা
কুঞ্চন – প্রসারণ
ক্ষিপ্র – মন্থর
ক্ষীয়মাণ – বর্ধমান
ক্ষীণ – পুষ্ট
খল – সরল
খিড়কি – সিংহদ্বার
খাতক – মহাজন
খুচরা – পাইকারি
খানিক – বেশ


গ/ঘ

গৌরব – লাঘব
গলগ্রহ – প্রতিপাল্য
গত – অনাগত
গরীয়ান – লঘীয়ান
গূঢ় – ব্যক্ত
গৌণ – মুখ্য
গোপন – প্রকাশ
গোপনীয় – প্রকাশ্য
গতি – স্থিতি
গোরা – কালা
গরিষ্ঠ – লঘিষ্ঠ
ঘর – বার
ঘাতক – পালাতক
ঘাত – প্রতিঘাত
ঘাটতি – বাড়তি
ঘৃণিত – সমাদৃত


চ/ছ

চুনোপুটি – রুই-কাতলা
চড়াই – উৎরাই
চিরায়ত – সাময়িক
চূর্ণ – অখণ্ড
ছানা – ধড়ি
ছলনা – সততা
ছায়া – কায়া


জ/ঝ

জরিমানা – বখশিশ
জিন্দাবাদ – মুর্দাবাদ
জ্বলন – নির্বাণ
জ্যেষ্ঠ – কনিষ্ঠ
জড় – চেতন
জরা – যৌবন
জনাকীর্ণ – জনবিরল
জলচর – স্থলচর
ঝলমলে – মিটমিটে
ঝুনা – কাঁচা
ঝগড়া – ভাব


ট/ঠ

টানা – পোড়েন
টিমটিমে – জ্বলজ্বলে
টিলা – খন্দ
ঠিকা – স্থায়ী
ঠগ – সাধু
ঠুনকো – মজবুত


ড/ঢ

ডাগর – ছোট
ডগমগ – মনমরা
ডানপিটে – শান্ত
ডোবা – ভাসা
ডাঙা – জল
ঢোসা – হালকা


ত/থ

ত্বরিত – শ্লথ
তন্ময় – মন্ময়
তুষ্ট – রুষ্ট
ত্যাগ – ভোগ
তোলা – নামানো
তামসিক – রাজসিক
তদ্রুপ – যদ্রুপ
তুহিন – উষ্ণতা
তেলতেলে – খসখসে
তন্দ্রা – জাগরণ
ত্রাস – সাহস
তীব্র – মৃদু
ত্যাজ্য – গ্রাহ্য
তেজি – মন্দা
ত্বরান্বিত – বিলম্বিত
থোকা থোকা – একটা একটা
থেঁতো – আস্ত
থাকা – চাওয়া


দ/ধ

দর্শক – প্রদর্শক
দস্যু – ঋষি
দারক – দুহিতা
দরদি – নির্মম
দিগ্গজ – মহামূর্খ
দাবি – ছাড়
দুর্বার – নির্বার
দুর্লভ – সুলভ
দৃঢ় – শিথিল
দুষ্কৃত – সুকৃত
দেব – দৈত্য
দৈব – দুর্দৈব
দুর্বিষহ – সুসহ
দেবর – ভাসুর
দোস্ত – দুশমন
দরাজ – সংকীর্ণ
দেহী – বিদেহী
দাতা – গ্রহীতা
ধৃত – মুক্ত
ধুপ – ছায়া
ধেড়ে – কচি


নিরাকার – সাকার
নির্বাণ – অনির্বাণ
নির্মল – পঙ্কিল
নূতন – পুরাতন
নতুন – পুরোনো
নন্দিত – নিন্দিত
নিত্য – নৈমিত্তিক
নৈঃশব্দ – সশব্দ
নশ্বর – অবিনশ্বর
নালায়েক – লায়েক


প/ফ

প্রকৃতি – বিকৃতি
পালক – পালিত
প্রছন্ন – ব্যক্ত
প্রসন্ন – বিষণ্ন
প্রমুক্ত – বন্দি
প্রতিযোগী – সহযোগী
পদস্থ – নিম্নস্থ
প্রশ্বাস – নিশ্বাস
পূজক – পূজ্য
প্রসাদ – রোষ
পাংশু – সতেজ
প্রখর – স্নিগ্ধ
প্রাংশু – বামন
প্রবৃত্তি – নিবৃত্তি
প্রবণতা – ঔদাসীন্য
প্রাচীন – অর্বাচীন
পরকীয় – স্বকীয়
ফতে – পরাজয়
ফাজিল – চুপচাপ
ফাঁপা – নিরেট


ব/ভ

বিশ্লেষণ – সংশ্লেষণ
বাউণ্ডুলে – সংসারী
বিজয় – পরাজয়
বিতর্কিত – তর্কাতীত
বিকল – সচল
বিন্দু – রাশি
ব্যষ্টি – সমষ্টি
বিলাপ – হাস্য
বিশেষ – সামান্য
বিনীত – উদ্ধত
বিনয় – ঔদ্বত্য
বিকি – কিনি
বাদী – বিবাদী
বিশ্রী – সুশ্রী
বিদ্যমান – অন্তর্হিত
বিপন্ন – নিরাপদ
বিবাদ – বন্ধুতা
বহুল – বিরল
বাহুল্য – সংক্ষেপ
বর্ধিষ্ণু – ক্ষয়িষ্ণু
বাহ্য – অভ্যন্তর
ভগ্ন – পূর্ণ
ভ্রম – জ্ঞান
ভক্ত – বিরাগী
ভাটি – উজান


মিলন – বিরহ
মূর্ত – বিমূর্ত
মরমি – নিষ্ঠুর
মনীষা – নির্বোধ
মহার্ঘ – সুলভ
মুখরতা – মৌনতা
মুখর – মৌন
মেঘলা – ফর্সা
মত্ত – নির্লিপ্ত
মতৈক্য – মতানৈক্য
মাগনা – কষ্টার্জিত


য/র/ল

যতি – সংযমী
যমী – অসংযমী
যজমান – পুরোহিত
যৌথ – একক
যোজক – প্রণালি
রম্য – কুৎসিত
রজত – স্বর্ণ
রদ – চালু
রিক্ত – পূর্ণ
রমণীয় – কুৎসিত
লঘু – গুরু
লগ্ন – চ্যুত
লেজা – মুড়া
লেখক – পাঠক
লেনা – দেনা
লব – হর
লাজুক – নির্লজ্জ
লিপ্ত – নির্লিপ্ত


শ/ষ

শিব – অশিব
শাসক – শাসিত
শোষণ – পরিপালন
শবল – একবর্ণা
শিখর – নিম্নদেশ
শয়তান – ফেরেশতা
শড়া – টাটকা
শাক্ত – বৈষ্ণব
শর্বরী – দিবস
শুক্লপক্ষ – কৃষ্ণপক্ষ
শূন্য – পূর্ণ
শ্যামল – গৌরাঙ্গ
শাসন – সোহাগ
শিথিল – সুদৃঢ়
শহিদ – গাজি
ষণ্ডা – দূর্বল


স/হ

সংশ্লিষ্ট – বিশ্লিষ্ট
স্ববাস – প্রবাস
সংশয় – নিশ্চয়
সিধা – উল্টা
সদর্থক – নঞর্থক
স্তুতি – নিন্দা
স্বতন্ত্র – পরতন্ত্র
সমবেত – ছত্রভঙ্গ
সন্ধি – বিগ্রহ
স্থানু – চলিষ্ণু
স্থাবর – জঙ্গম
সুষুপ্ত – জাগরিত
সফেদ – লোহিত
সৌখিন – পেশাদার
সুষম – অসম
সংযুক্ত – বিযুক্ত
সমক্ষ – পরোক্ষ
সচেষ্ট – নিশ্চেষ্ট
হরণ – পূরণ
সুশীল – দুঃশীল
সৌরমাস – চন্দ্রমাস
স্মৃতি – বিস্মৃতি
সদাকার – কদাকার
হত – জীবিত
হতবুদ্ধি – স্থিতবুদ্ধি


নমুনা প্রশ্ন

১. অনুগ্রহ শব্দের বিপরীত শব্দ –

ক) বিগ্রহ

খ) নিগ্রহ

গ) কৃপা

ঘ) বিরক্ত

উত্তরঃ খ

২. ‘কালেভদ্রে’ শব্দের বিপরীত শব্দ – 

ক) সামান্য

খ) ক্বদাচিৎ

গ) অনবরত

ঘ) মাঝে মাঝে

উত্তরঃ গ

৩. ‘যাযাবর’ শব্দের বিপরীত শব্দ – 

ক) সংযমী

খ) গৃহী

গ) সন্ন্যাসী

ঘ) সংসারী

উত্তরঃ খ

৪. কোনটি অশুদ্ধ?

ক) স্থাবর : জঙ্গম

খ) ভূত : ভবিষ্যত

গ) শবল : একবর্ণা

ঘ) সন্ধি : বিযুক্ত

উত্তরঃ ঘ

৫. কোনটি শুদ্ধ?

ক) বিশেষ : অশেষ

খ) শাসন : সোহাগ

গ) হলাহল : জীবিত

ঘ) ফাজিল : নিরাপদ

উত্তরঃ খ

৬. কোনটি ঠিক নয়?

ক) প্রকৃতি : বিকৃতি

খ) প্রচ্ছন্ন : ব্যক্ত

গ) দরাজ : দুশমন

ঘ) দস্যু : ঋষি

উত্তরঃ গ

৭. ‘ঝাটতি’ এর বিপরীত শব্দ – 

ক) তাড়াতাড়ি

খ) নিন্দা

গ) বিলম্ব

ঘ) অতৃপ্তি

উত্তরঃ গ

৮. ‘সংশয়’ শব্দের বিপরীত শব্দ – 

ক) বিস্ময়

খ) নিশ্চয়

গ) নির্ভয়

ঘ) সোহাগ

উত্তরঃ খ

৯. ‘আঁটি’ এর বিপরীত শব্দ – 

ক) আঁশ

খ) চামড়া

গ) ফল

ঘ) শাঁস

উত্তরঃ ঘ

১০. ‘আকিঞ্চন’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) পশ্চাৎ

খ) প্রতিকূল

গ) প্রসারণ

ঘ) গোছানো

উত্তরঃ গ

১১. ‘আবির্ভাব’ এর বিপরীত শব্দ কী? 

ক) বিসর্জন

খ) তিরোভাব

গ) তিরোহিত

ঘ) পুরোভাব

উত্তরঃ খ

১২. ‘গুপ্ত’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) প্রকাশ্য

খ) ব্যাপ্ত

গ) মুখ্য

ঘ) লাঘব

উত্তরঃ ক

১৩. ‘অপকার’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) কার

খ) অনাকার

গ) অধিকার

ঘ) উপকার

উত্তরঃ ঘ

১৪. ‘কৃত্রিম’ এর বিপরীত শব্দ –

ক) অস্বাভাবিক

খ) স্বাভাবিক

গ) প্রকৃত

ঘ) হাস্যকর

উত্তরঃ খ

১৫. ‘গৌরব’ এর বিপরীত শব্দ হলো – 

ক) বর্জন

খ) ত্যাগ

গ) লাঘব

ঘ) পতন

উত্তরঃ গ

১৬. ‘অনন্ত’ এর বিপরীত শব্দ হবে –

ক) অন্ত্য

খ) নন্ত

গ) সান্ত

ঘ) শান্ত

উত্তরঃ গ

১৭. ‘শাঁস’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) ঘাস

খ) আঁশ

গ) আঁটি

ঘ) মৃত্যু

উত্তরঃ গ

১৮. ‘শ্যামল’ শব্দটির বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) সবুজ

খ) কাল

গ) রঙ্গিন

ঘ) গৌরাঙ্গ

উত্তরঃ ঘ

১৯. ‘পরকীয়’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) স্বকীয়

খ) বিরহ

গ) মিলন

ঘ) স্বতন্ত্র

উত্তরঃ ক

২০. ‘উত্তমর্ণ’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) আমর্ণ

খ) নিম্নমর্ণ

গ) অধমর্ণ

ঘ) উদ্ধত

উত্তরঃ গ

২১. ‘উর্বর’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) ঊষর

খ) অনুর্বর

গ) ক+খ

ঘ) উষর

উত্তরঃ গ

২২. ‘ক্ষীয়মান’ শব্দটির বিপরীত শব্দ কোনটি?

ক) ক্রমমান

খ) বর্ধমান

গ) ধাবমান

ঘ) লঘুমান

উত্তরঃ খ

২৩. কোনটি ‘জঙ্গম’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ?

ক) অস্থাবর

খ) স্থাবর

গ) মঙ্গল

ঘ) ঘুমন্ত

উত্তরঃ খ

২৪. ‘নিদ্রিত’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) অনিদ্রিত

খ) জাগ্রত

গ) সুপ্ত

ঘ) ঘুমন্ত

উত্তরঃ খ

২৫. ‘আবাহন’ শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?

ক) পশ্চাৎ

খ) প্রতিকূল

গ) প্রসারণ

ঘ) বিসর্জন

উত্তরঃ ঘ

২৬. ‘ঈদৃশ’ এর বিপরীত শব্দ-

ক) উদৃশ

খ) সিদৃশ

গ) বিদৃশ

ঘ) তাদৃশ

উত্তরঃ ঘ

২৭. ‘জরা’ এর বিপরীত শব্দ কোনটি?

ক) চেতন

খ) বুড়া

গ) যৌবন

ঘ) ভোঁতা

উত্তরঃ গ

২৮. ‘প্রতিযোগী’ শব্দটির বিপরীত শব্দ কী?

ক) অনুযোগী

খ) অপযোগী

গ) সহযোগী

ঘ) উপযোগী

উত্তরঃ গ

২৯. ‘অনুরক্ত’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) রক্ত

খ) বিরক্ত

গ) প্রতিরক্ত

ঘ) অপরক্ত

উত্তরঃ খ

৩০. ‘ঔদার্য’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) বিনয়

খ) কার্পণ্য

গ) বিনীত

ঘ) ঔদ্ধত্য

উত্তরঃ খ

৩১. ‘গোপন’ এর বিপরীত শব্দ হলো – 

ক) বর্জন

খ) প্রকাশ্য

গ) লাঘব

ঘ) প্রকাশ

উত্তরঃ ঘ

৩২. ‘কৃত্রিম’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) অস্বাভাবিক

খ) স্বাভাবিক

গ) অকৃত্রিম

ঘ) খ + গ

উত্তরঃ ঘ

৩৩. ‘ঐহিক’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) বাহ্যিক

খ) অভ্যন্তরীণ

গ) পারত্রিক

ঘ) গোত্রিক

উত্তরঃ গ

৩৪. ‘ঠুনকো’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) ঢিলা

খ) মজবুত

গ) মুখ্য

ঘ) লাঘব

উত্তরঃ খ

৩৫. ‘প্রাচীন’ এর বিপরীত শব্দ কী?

ক) অর্বাচীন

খ) তিরোভাব

গ) অচিন

ঘ) আধুনিক

উত্তরঃ ক

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত¡ (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর ১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)
১১. স্বরোচিষ সরকার, বাংলাদেশের কোষগ্রন্থ ও শব্দসন্ধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১০)

BCS Bangla Lecture – 12

উপসর্গ, পদাশ্রিত নির্দেশক, বচন, লৈঙ্গিক শব্দ, নমুনা প্রশ্ন

উপসর্গ

বাংলা ভাষায় কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলো একটি অর্থবোধক শব্দের আগে বসে। ভাষায় ব্যবহৃত এ সব অব্যয়সূচক শব্দাংশের নাম উপসর্গ (Prefix)।

যেমন –  ‘কাজ’ একটি শব্দ। এর আগে ‘অ’ অব্যয়টি যুক্ত হলে হয় ‘অকাজ’; যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এভাবে ‘হার’ শব্দের শুরুতে উপসর্গ যুক্ত করলে – আহার, প্রহার, উপহার, বিহার, সংহার, পরিহার ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়।

এ উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকে। বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে : বাংলা, তৎসম (সংস্কৃত) এবং বিদেশি উপসর্গ।

বাংলা উপসর্গ

বাংলা উপসর্গ মোট ২১ টি। অ, অঘা, অজ, অনা (অন), আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন (উনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা। বাংলা উপসর্গ সাধারণত বাংলা শব্দের পূর্বেই যুক্ত হয়। নিচে এদের প্রয়োগ দেখানো হলো –


উপসর্গ – অ 

নিন্দিত – অকেজো, অচেনা, অপয়া

অভাব – অচিন, অজানা, অথৈ

ক্রমাগত – অঝোর


উপসর্গ – অঘা

বোকা – অঘারাম, অঘাচণ্ডী


উপসর্গ – অজ

নিতান্ত (মন্দ) –  অজপাড়াগাঁ, অজমূর্খ, অজপুকুর


উপসর্গ – অনা

অভাব – অনাবৃষ্টি, অনাদর

ছাড়া – অনাচার

অশুভ – অনামুখো


উপসর্গ – আ

অভাব – আকাঁড়া, আধোয়া, আলুনি

বাজে, নিকৃষ্ট – আগাছা


উপসর্গ – আড়

বক্র – আড়চোখ

আধা, প্রায় – আড়ক্ষ্যাপা, আড়পাগলা

বিশিষ্ট – আড়গড়া, আড়কাঠি


উপসর্গ – আন

না – আনকোরা

বিক্ষিপ্ত – আনচান, আনমনা


উপসর্গ – আব

অর্থদ্যোতকতা – অস্পষ্টতা

উদাহরণ – আবছায়া, আবডাল


উপসর্গ – ইতি

পুরোনো – ইতিকথা, ইতিহাস


উপসর্গ – উনা (উন)

কম – উনপাঁজুরে


উপসর্গ – কদ

নিন্দিত – কদবেল, কদর্য, কদাকার


উপসর্গ – কু

কুৎসিত/অপকর্ষ – কুঅভ্যাস, কুকথা, কুনজর, কুসঙ্গ


উপসর্গ – নি 

নাই – নিখোঁজ, নিলাজ, নিরেট, নিটোল


উপসর্গ – পাতি

ক্ষুদ্র – পাতিহাঁস, পাতিলেবু, পাতকুয়ো


উপসর্গ – বি

ভিন্নতা/নাই – বিভূঁই


উপসর্গ – ভর

পূর্ণতা – ভরপেট, ভরদুপুর, ভরপুর


উপসর্গ – রাম

বড়/উৎকৃষ্ট – রামছাগল, রামদা, রামশিঙ্গা


উপসর্গ – স

সঙ্গে – সলাজ, সঠিক, সরব, সজোর


উপসর্গ – সা

উৎকৃষ্ট –  সাজোয়ান


উপসর্গ – সু

উত্তম – সুনজর, সুখবর, সুদিন, সুনাম


উপসর্গ – হা

অভাব – হাপিত্যেশ, হাভাতে, হাঘরে


তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ

তৎসম উপসর্গ ২০ টি। প্র, পরা, অপ, সম, নি, অনু, অব, নির (নিঃ), দুর (দুঃ), বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ। সংস্কৃত উপসর্গ তৎসম শব্দের আগে বসে। নিচে এদের প্রয়োগ দেখানো হলো –


উপসর্গ – প্র

প্রকৃষ্ট/সম্যক (সম্পূর্ণ)  – প্রভাব, প্রচলন, প্রস্ফুটিত

খ্যাতি – প্রসিদ্ধ, প্রতাপ

আধিক্য – প্রগাঢ়, প্রচার, প্রবল, প্রসার

গতি – প্রবেশ, প্রস্থান

ধারা-পরম্পরা –  প্রপৌত্র, প্রশাখা, প্রশিষ্য


উপসর্গ – পরা

আতিশয্য (প্রচুর) – পরাক্রান্ত, পরায়ণ

বিপরীত – পরাজয়


উপসর্গ – অপ

বিপরীত – অপমান, অপচয়, অপবাদ

নিকৃষ্ট – অপসংস্কৃতি, অপকর্ম, অপসৃষ্টি

স্থানান্তর – অপসারণ, অপহরণ

বিকৃত – অপমৃত্যু


উপসর্গ – সম

সম্যক –  সম্পূর্ণ, সমৃদ্ধ, সমাদর

সম্মুখে – সমাগত, সম্মুখ


উপসর্গ – নি

নিষেধ – নিবৃত্তি

নিশ্চয় –  নিবারণ, নির্ণয়

আতিশয্য – নিদাঘ (উত্তাপ), নিদারুণ

অভাব – নিষ্কলুষ, নিষ্কাম


উপসর্গ – অনু

পশ্চাৎ – অনুশোচনা, অনুগামী, অনুকরণ

সাদৃশ্য – অনুবাদ, অনুকার

পৌনঃপুন্য – অনুক্ষণ, অনুশীলন, অনুদিন

সঙ্গে – অনুকূল, অনুকম্পা


উপসর্গ – অব

হীনতা – অবজ্ঞা, অবমাননা

নিম্নে/অধোমুখিতা – অবতরণ, অবরোহণ

অল্পতা – অবশেষ, অবেলা, অবসান


উপসর্গ – নির

অভাব – নিরক্ষর, নিরাশ্রয়, নির্ধন, নির্জীব

নিশ্চয় – নির্ধারণ, নির্ণয়, নির্ভর

বাহির – নির্গত, নিঃসরণ, নির্বাসন


উপসর্গ – দুর

মন্দ –  দুর্ভাগ্য, দুর্দশা, দুর্নাম

কষ্টসাধ্য – দুর্লভ, দুর্গম, দুরতিক্রম্য


উপসর্গ – বি

বিশেষ – বিশুদ্ধ, বিজ্ঞান, বিবস্ত্র, বিধৃত

অভাব – বিনিদ্র, বিবর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিফল

গতি – বিচরণ, বিক্ষেপ


উপসর্গ – অধি

আধিপত্য – অধিকার, অধিপতি, অধিবাসী,

উপরি –  অধিরোহণ, অধিষ্ঠান


উপসর্গ – সু

উত্তম – সুকণ্ঠ, সুকৃতি, সুপ্রিয়, সুনীল

সহজ – সুগম, সুসাধ্য, সুলভ

আতিশয্য – সুচতুর, সুকঠিন, সুনিপুণ, সুতীক্ষ্ন


উপসর্গ – উৎ

ঊর্ধ্বমুখিতা – উদ্যম, উন্নীত, উদগ্রীব, উত্তোলন

আতিশয্য – উচ্ছেদ, উত্তপ্ত, উৎফুল্ল, উৎসুক

প্রস্তুতি – উৎপাদন, উচ্চারণ

অপকর্ষ – উৎকোচ, উচ্ছৃঙ্খল, উৎকট


উপসর্গ – পরি

বিশেষ – পরিপক্ব, পরিপূর্ণ, পরিবর্তন

সম্যক – পরীক্ষা, পরিমাণ

চতুর্দিক – পরিক্রমণ, পরিমণ্ডল


উপসর্গ – প্রতি

সদৃশ – প্রতিমূর্তি, প্রতিধ্বনি

বিরোধ – প্রতিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বী

পৌনঃপুন্য – প্রতিদিন, প্রতিমাস

অনুরূপ – প্রতিঘাত, প্রতিদান, প্রত্যুপকার


উপসর্গ – অতি

আতিশয্য – অতিকায়, অত্যাচার, অতিশয়

অতিক্রম –  অতিমানব, অতিপ্রাকৃত


উপসর্গ – অভি

সম্যক – অভিব্যক্তি, অভিজ্ঞ, অভিভূত

গমন – অভিযান, অভিসার

সম্মুখ –  অভিমুখ, অভিবাদন


উপসর্গ – অপি 

বন্ধন –  অপিনিহিতি, অপিনদ্ধ


উপসর্গ – উপ

সামীপ্য – উপকূল, উপকণ্ঠ

সদৃশ – উপদ্বীপ, উপবন

ক্ষুদ্র – উপগ্রহ, উপসাগর, উপনেতা

বিশেষ –  উপনয়ন, উপভোগ


উপসর্গ – আ

পর্যন্ত – আকণ্ঠ, আমরণ, আসমুদ্র,

ঈষৎ – আরক্ত, আভাস

বিপরীত – আদান, আগমন


দ্রষ্টব্য

বাংলা উপসর্গের মধ্যে ‘আ, সু, বি, নি’ এ চারটি উপসর্গ তৎসম শব্দেও পাওয়া যায়। বাংলা ও সংস্কৃত উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য হলো, যে শব্দটির সঙ্গে উপসর্গ যুক্ত হয় সে শব্দটি বাংলা হলে উপসর্গটি বাংলা, আর সে শব্দটি তৎসম হলে সে উপসর্গটিও তৎসম হয়।

যেমন – আকাশ, সুনজর, বিনাম, নিলাজ বাংলা শব্দ। অতএব উপসর্গ ‘আ, সু, বি, নি’ বাংলা। আর আকণ্ঠ, সুতীক্ষ্ন, বিপক্ষ ও নিদাঘ তৎসম শব্দ। কাজেই এ সব শব্দের উপসর্গ ‘আ, সু, বি, নি’ তৎসম উপসর্গ।

বিদেশি উপসর্গ

ফারসি উপসর্গ


উপসর্গ – কার 

কাজ – কারখানা, কারসাজি, কারচুপি, কারবার, কারদানি


উপসর্গ – দর 

মধ্যস্থ/অধীন – দরপাট্টা, দরপত্তনী


উপসর্গ – না

না – নালায়েক, নারাজ, নাবালক, নামঞ্জুর, নাখোশ


উপসর্গ – নিম

আধা/অর্ধ –  নিমরাজি


উপসর্গ – ফি

প্রতি – ফি-মার, ফি-বছর, ফি-হপ্তা, ফি-রোজ


উপসর্গ – বদ

মন্দ – বদনাম, বদহজম, বদরাগী, বদমেজাজ


উপসর্গ – বে

না – বেআদব, বেমালুম, বেশরম, বেকায়দা, বেতার, বেকার


উপসর্গ – বর

বাইরে/মধ্যে – বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরবাদ, বরখেলাপ


উপসর্গ – ব

সহিত – বকলম, বনাম


উপসর্গ – কম

স্বল্প – কমবখ্ত, কমজোর

আরবি উপসর্গ


উপসর্গ – আম

সাধারণ – আমদরবার, আমমোক্তার


উপসর্গ – খাস

বিশেষ – খাসমহল, খাসদরবার, খাসখবর


উপসর্গ – লা

না – লাখেরাজ, লাওয়ারিশ, লাপাত্তা


উপসর্গ – গর

অভাব – গররাজি, গরমিল, গরহাজির


উপসর্গ – খয়ের

ভাল/উৎকৃষ্ট – খয়ের খাঁ


উপসর্গ – বাজে

মন্দ/নিকৃষ্ট – বাজে কাজ, বাজে কথা

ইংরেজি উপসর্গ


উপসর্গ – ফুল

পূর্ণ – ফুল-বাবু, ফুল-প্যান্ট, ফুল-হাতা


উপসর্গ – হাফ

আধা – হাফ-হাতা, হাফ-প্যান্ট, হাফ-টিকেট


উপসর্গ – হেড

প্রধান – হেড-মাস্টার, হেড-পণ্ডিত, হেড-মৌলভি


উপসর্গ – সাব

অধীন – সাব-অফিস, সাব-জজ, সাব-ইন্সপেক্টর

উর্দু-হিন্দি উপসর্গ


উপসর্গ – হর

প্রতি/প্রত্যেক – হররোজ, হরহামেশা, হরবেলা


উপসর্গ – হরেক

বিভিন্ন – হরেক-রকম, হরেক-মাল

পদাশ্রিত নির্দেশক

কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয় বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে, এগুলোকে পদাশ্রিত অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। বাংলায় নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক প্রত্যয় ইংরেজি Definite Article ‘The’-এর স্থানীয়। বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকের বিভিন্নতা প্রযুক্ত হয়।

(ক) এক বচনে: টা, টি, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়।

যেমন –  টাকাটা, বাড়িটি, কাপড়খানা, বইখানি, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি ইত্যাদি।

(খ) বহু বচনে: গুলি, গুলা, গুলো, গুলিন প্রভৃতি নির্দেশক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়।

যেমন – মানুষগুলি, লোকগুলো, আমগুলো, পটলগুলি ইত্যাদি।

(গ) কোনো সংখ্যা বা পরিমাণের স্বল্পতা বোঝাতে টে, টু, টুক, টুকু, টুকুন, টো, গোটা ইত্যাদির প্রয়োগ হয়।

যেমন – চারটে ভাত, পানিটুক, দুধটুকু, দুধটুকুন, দুটো ভাত, গোটা চারেক আম, একটু কথা ইত্যাদি।


পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার

১. (ক) ‘এক’ শব্দের সঙ্গে টা, টি যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন  – একটি দেশ, সে যেমনই হোক দেখতে।

কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন – তিনটি টাকা, দশটি বছর।

(খ) নিরর্থকভাবেও নির্দেশক টা, টি-র ব্যবহার লক্ষণীয়।

যেমন – সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি। ন্যাকামিটা এখন রাখ।

(গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা, টি যুক্ত হলে তা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়।

যেমন – ওটি যেন কার তৈরি? এটা নয় ওটা আন। সেইটেই ছিল আমার প্রিয় কলম।

(ঘ) ‘টা’ কিছুটা অবজ্ঞার ভাব প্রকাশ করে এবং ‘টি’ কিছুটা পরিশীলিত ভাব প্রকাশ করে।

যেমন – লোকটা পাগল। লোকটি যথেষ্ট ভদ্র। অবজ্ঞার ভাব থাকায় ‘চোরটা’ হয় কিন্তু ‘অধ্যাপকটা’ হয় না।

২. ‘গোটা’ বচনবাচক শব্দের আগে বসে এবং খান, খানা, খানি পরে বসে। এগুলো নির্দেশক ও অনির্দেশক দুই অর্থেই প্রযোজ্য। ‘গোটা’ শব্দ আগে বসে এবং সংশ্লিষ্ট পদটি নির্দিষ্টতা না বুঝিয়ে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন –

– গোটা দেশটাই ছারখার হয়ে গেছে।

– গোটা দুই কমলালেবু আছে।

– গোটা সাতেক আম এনো।

– একখানা/একখান বই কিনে নিও (অনির্দিষ্ট)।

– দু খানা কম্বল চেয়েছিলাম (নির্দিষ্ট)।

কিন্তু কবিতায় বিশেষ অর্থে ‘খানি’ নির্দিষ্টার্থে ব্যবহৃত হয়। যথা –  ‘আমি অভাগা এনেছি বহিয়া নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি।

৩. টাক, টুক, টুকু, টো ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা ও অনিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়।

যেমন – পোয়াটাক দুধ দাও (অনির্দিষ্টতা) সবটুকু ওষুধই খেয়ে ফেলো (নির্দিষ্টতা)।

৪. বিশেষ অর্থে, নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ: কেতা, তা, পাটি ইত্যাদি। যেমন –

  • কেতা: এ তিন কেতা জমির দাম দশ হাজার টাকা মাত্র। দশ টাকার পাঁচ কেতা নোট।
  • তা: দশ তা কাগজ দাও।
  • পাটি: আমার এক পাটি জুতো ছিঁড়ে গেছে।

বচন

‘বচন’ একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ সংখ্যার ধারণা। ব্যাকরণে বিশেষ্য বা সর্বনামের সংখ্যাগত ধারণা প্রকাশের উপায়কে বলে বচন। বাংলা ভাষায় বচন দু প্রকার: একবচন ও বহুবচন।

একবচন: যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী, বস্তু বা ব্যক্তির একটিমাত্র সংখ্যার ধারণা হয় তাকে একবচন বলে। যেমন – সে এলো। মেয়েটি স্কুলে যায় নি।

বহুবচন: যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী, বস্তু বা ব্যক্তির একের অধিক অর্থাৎ বহুসংখ্যার ধারণা হয় তাকে বহুবচন বলে। যেমন – তারা গেলো। মেয়েরা এখনও আসেনি।

কেবল বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের বচনভেদ হয়। কোনো কোনো সময় টা, টি, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি যোগ করে বিশেষ্যের একবচন নির্দেশ করা হয়। যেমন – গরুটা, বাছুরটা, কলমটা, খাতাখানা, বইখানি, লাঠিগাছা, মালাগাছি ইত্যাদি।

বাংলায় বহুবচন প্রকাশের জন্য রা, এরা, গুলা, গুলো, দিগ, দের প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয় এবং তৎসম সাধুরীতিতে সব, সকল, সমুদয়, কুল, বৃন্দ, বর্গ, নিচয়, রাজি, রাশি, পাল, দাম, নিকর, মালা, আবলি প্রভৃতি সমষ্টিবোধক শব্দ ব্যবহৃত হয়।

প্রাণিবাচক-অপ্রণিবাচক এবং ইতর প্রাণিবাচক ও উন্নত প্রাণিবাচক শব্দভেদে বিভিন্ন ধরনের বহুবচনবোধক প্রত্যয় ও সমষ্টিবোধক শব্দ যুক্ত হয়। যেমন –

(ক) কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের সঙ্গে ‘রা’ বহুবচনের ব্যবহার পাওয়া যায়। যেমন – ছাত্ররা খেলা দেখতে গেছে। তারা সকলেই লেখাপড়া করে। শিক্ষকেরা জ্ঞান দান করেন।

সময় সময় কবিতা বা অন্যান্য প্রয়োজনে অপ্রাণী ও ইতর প্রাণিবাচক শব্দেও রা, এরা যুক্ত হয়। যেমন – ‘পাখিরা আকাশে উড়ে দেখিয়া হিংসায় পিপীলিকারা বিধাতার কাছে পাখা চায়।’ কাকেরা এক বিরাট সভা করল।

(খ) গুলা, গুলো, গুলি প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে যুক্ত হয়। যেমন – অতগুলো কুমড়া দিয়ে কী হবে? আমগুলো টক। টাকাগুলো দিয়ে দাও। ময়ূরগুলো পুচ্ছ নাড়িয়ে নাচছে।

উল্লেখ্য, তুচ্ছার্থে মানুষের ক্ষেত্রে ‘মানুষগুলো’ ব্যবহৃত হয়। এটি প্রমিত বাংলায় ব্যবহৃত কথ্য বহুবচন প্রত্যয়।

উন্নত প্রাণিবাচক তথা মনুষ্য শব্দের বহুবচনে ব্যবহুত শব্দ:
গণ – দেবগণ, নরগণ, জনগণ।
বৃন্দ – সুধীবৃন্দ, ভক্তবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ।
মন্ডলী – শিক্ষকমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী।
বর্গ  – পন্ডিতবর্গ , মন্ত্রীবর্গ।

প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক শব্দে বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ:
কুল – কবিকুল, পক্ষিকুল, মাতৃকুল, বৃক্ষকুল।
সকল – পর্বতসকল, মনুষ্যসকল।
সব – ভাইসব, পাখিসব।
সমূহ – বৃক্ষসমূহ, মনুষ্যসমূহ।

অপ্রাণিবাচক শব্দে ব্যবহৃত বহুবচনবোধক শব্দ:

আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, নিচয়, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি, দাম, ভার, কলাপ, গ্রাম, চয়, জাল, দল, মন্ডল, সমুদয়। যেমন – পুস্তকাবলি, কবিতাগুচ্ছ, কুসুমদাম, কমলনিকর, মেঘপুঞ্জ, পর্বতমালা, বালিরাশি, কুসুমনিচয়, ক্রিয়াকলাপ, গুণগ্রাম, রিপুচয়, জটাজাল, তারাদল, কেশদাম, তারামন্ডল, গ্রন্থসমুদয়।

দ্রষ্টব্য: পাল ও যূথ শব্দ দুটো কেবল জন্তুর বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যেমন – রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে। হস্তিযূথ মাঠের ফসল নষ্ট করছে।

বহুবচনের প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য

(ক) বিশেষ্য শব্দের একবচনের ব্যবহারে অনেক সময় বহুবচন বোঝানো হয়। যেমন –

  • সিংহ বনে থাকে (একবচন ও বহুবচন দুটো বোঝায়)।
  • পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয় (বহুবচন)।
  • বাজার লোক জমেছে (বহুবচন)।
  • বাগানে ফুল ফুটেছে (বহুবচন)।

(খ) একবচনাত্মক বিশেষ্যের আগে অজস্র, বিস্তর, বহু, নানা, ঢের, প্রচুর, বেশ, অঢেল, অনেক, বিপুল, হরেক ইত্যাদি বহুত্ববোধক শব্দ বিশেষণ হিসেবে প্রয়োগ করেও বহুবচন বোঝানো হয়। যেমন –

  • অজস্র লোক,
  • অনেক ছাত্র,
  • বিস্তর টাকা,
  • বহু মেহমান,
  • নানা কথা,
  • ঢের খরচ,
  • অঢেল টাকা-পয়সা ইত্যাদি।

(গ) অনেক সময় বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগেও বহু বচন সাধিত হয়। যেমন –

  • হাঁড়ি হাঁড়ি সন্দেশ।
  • কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
  • বড় বড় মাঠ।
  • লাল লাল ফুল।

(ঘ) বিশেষ নিয়মে সাধিত বহুবচন। যেমন –

  • মেয়েরা কানাকানি করছে।
  • এটাই করিমদের বাড়ি।
  • রবীন্দ্রনাথরা প্রতি দিন জন্মায় না।
  • সকলে সব জানে না।

(ঙ) কতিপয় বিদেশি শব্দে সে ভাষার অনুসরণে বহুবচন হয়।

  • আন-যোগে: বুজুর্গ-বুজুর্গান, সাহেব-সাহেবান।
  • আত-যোগে: কাগজ-কাগজাত।

দ্রষ্টব্য: একই সঙ্গে দুবার বহুবচনবাচক প্রত্যয় বা শব্দ ব্যবহৃত হয় না। একে বাহুল্য দোষ বলে। যেমন –

  • সব মানুষই অথবা মানুষেরা মরণশীল (শুদ্ধ)।
  • সকল মানুষেরাই মরণশীল (ভুল)।

লৈঙ্গিক শব্দ

সব ভাষায় লিঙ্গভেদে শব্দভেদ আছে। অনুরূপভাবে বাংলা ভাষায় বহু বিশেষ্য পদ রয়েছে যাদের কোনোটিতে পুরুষ ও কোনোটিতে স্ত্রী বোঝায়। যে শব্দে পুরুষ বোঝায় তাকে পুরুষবাচক শব্দ আর যে শব্দে স্ত্রী বোঝায় তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন: বাপ-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে; এখানে বাপ, ভাই ও ছেলে পুরুষবাচক শব্দ আর মা, বোন ও মেয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ।

তৎসম পুরুষবাচক বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে পুরুষবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত এবং স্ত্রীবাচক বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে স্ত্রীবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। যেমন – বিদ্বান লোক এবং বিদুষী নারী। কিন্তু বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের এ নিয়ম মানা হয় না। যেমন – সংস্কৃতে ‘সুন্দর বালক ও সুন্দরী বালিকা’ বাংলায় ‘সুন্দর বালক ও সুন্দর বলিকা।

বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রী বাচক শব্দ মূলত দুভাগে বিভক্ত:

(ক) পতি ও পত্নীবাচক: আব্বা-আম্মা, চাচা-চাচি, কাকা-কাকি, জেঠা-জেঠি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নান্দাই-ননদ, দেওর-জা, ভাই-ভাবি, দাদা-বৌদি, বাবা-মা, মামা-মামি ইত্যাদি।

(খ) পুরুষ ও স্ত্রীবাচক: খোকা-খুকি, পাগল-পাগলি, বামন-বামনি, ভেড়া-ভেড়ি, মোরগ-মুরগি, বালক-বালিকা, দেওর-ননদ, ভাই-বোন ইত্যাদি।

বাংলা স্ত্রী প্রত্যয়:
পুরুষবাচক শব্দের সঙ্গে কতকগুলো প্রত্যয় যোগ করে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন করা হয়। এগুলো হল: ই, নি, আনি, ইনী, ন।
যেমন –

  • বেঙ্গমা-বেঙ্গমি, ভাগনা/ভাগনে-ভাগনি,
  • কামার-কামারনি, জেলে-জেলেনি,
  • কুমার-কুমারনি,
  • ধোপা-ধোপানি,
  • মজুর-মজুরনি,
  • ভিখারী-ভিখারিনী,
  • ঠাকুর-ঠাকুরানি,
  • মেথর-মেথরানি,
  • চাকর-চাকরানি,
  • কাঙাল-কাঙালিনী,
  • গোয়ালা-গোয়ালিনী,
  • বাঘ-বাঘিনী ইত্যাদি,
  • ঠাকুর-ঠাকরুন/ঠাকুরানি,
  • ঠাকুর-ঠাকুরাইন,
  • অভাগা-অভাগি/অভাগিনী,
  • ননদাই-ননদিনী/ননদি ইত্যাদি।

অনেক সময় আলাদা আলাদা শব্দে পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক বোঝায়। যেমন:

  • বাবা-মা, ভাই-বোন,
  • কর্তা-গিন্নী,
  • ছেলে-মেয়ে,
  • সাহেব-বিবি,
  • জামাই-মেয়ে,
  • বর-কনে,
  • দুলহা-দুলাইন/দুলহিন,
  • বেয়াই-বেয়াইন,
  • তাঐ-মাঐ,
  • বাদশা-বেগম,
  • শুক-শারি ইত্যাদি।

সংস্কৃত স্ত্রী প্রত্যয়:
তৎসম পুরুষবাচক শব্দের পরে আ, ঈ, আনী, নী, ইকা প্রভৃতি প্রত্যয়যোগে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন –

(ক) সাধারণ অর্থে : মৃত-মৃতা, বিবাহিত- বিবাহিতা, মাননীয়-মাননীয়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রিয়-প্রিয়া, প্রথম-প্রথমা, চতুর-চতুরা, চপল-চপলা, নবীন-নবীনা, কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা, মলিন-মলিনা, নিশাচর-নিশাচরী, ভয়ংকর-ভয়ংকরী, রজক-রজকী, কিশোর-কিশোরী, সুন্দর-সুন্দরী, চতুর্দশ-চতুর্দশী, ষোড়শ-ষোড়শী ইত্যাদি।

(খ) জাতি বা শ্রেণিবাচক অর্থে: অজ-অজা, কোকিল-কোকিলা, শিষ্য-শিষ্যা, ক্ষত্রিয়া, শূদ্র-শূদ্রা, সিংহ-সিংহী, ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী, মানব-মানবী, বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী, কুমার-কুমারী, ময়ূর-ময়ূরী ইত্যাদি।

(গ) ইকা-প্রত্যয় যোগে: বালক-বালিকা, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সেবক-সেবিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ইত্যাদি। কিন্তু গণক-গণকী, নর্তক-নর্তকী, চাতক-চাতকী, রজক-রজকী, (বাংলায়) রজকিনী।

(ঘ) আনী, ঈনী, নী-প্রত্যয় যোগে: ইন্দ্র-ইন্দ্রানী, মাতুল-মাতুলানী, আচার্য-আচার্যানী, মায়াবী-মায়াবিনী, কুহক-কুহকিনী, যোগী-যোগিনী, মেধাবী-মেধাবিনী, দুঃখ-দুঃখিনী ইত্যাদি।

যে সব পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘তা’ রয়েছে, স্ত্রীবাচক বোঝাতে সে সব শব্দে ‘ত্রী’ হয়। যেমন  – নেতা-নেত্রী, কর্তা-কর্ত্রী, শ্রোতা-শ্রোত্রী, ধাতা-ধাত্রী।

পুরুষবাচক শব্দের শেষে অত্, বান্, মান্, ঈয়ান থাকলে যথাক্রমে অতী, বতী, মতি, ঈয়াসী হয়। যথা: সৎ-সতী, মহৎ-মহতী, গুণবান-গুণবতী, রুপবান-রুপবতী, শ্রীমান-শ্রীমতী, বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী, গরীয়ান-গরীয়সী।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকা

নিত্য স্ত্রীবাচক বাংলা শব্দ: এগুলোর পুরুষবাচক শব্দ নেই। যেমন – সতীন, সৎমা, এয়ো, দাই, সধবা, রূপসি, সজনি, অঙ্গনা, খাতুন, কলঙ্কিনী, বাঈজি, ডাইনি, পেত্নি, শাঁখচুন্নি, বারবনিতা।

নিত্য স্ত্রীবাচক তৎসম শব্দ: সতীন, সৎমা, সধবা, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, অসূর্যম্পশ্যা, অরক্ষণীয়া, সপপত্নী, রজঃস্বলা।

বিদেশী স্ত্রীবাচক শব্দ: খান-খানম, মরদ-জেনানা, মালেক-মালেকা, মুহতারিম-মুহতারিমা, সুলতান- সুলতানা, হুজুর-হুজুরাইন।

নিত্য পুরুষবাচক শব্দ: কবিরাজ, ঢাকী, কৃতদার, অকৃতদার, রাষ্ট্রপতি, সেনাপতি, দলপতি, বিচারপতি, সভাপতি, পুরোহিত, কাপুরুষ, যোদ্ধা, নবী, রাসুল, মোল্লা, জল্লাদ, গুণ্ডা, লম্পট।

কতকগুলো বাংলা শব্দে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই বোঝায়। যেমন – জন, জনতা, পাখি, শিশু, সন্তান, শিক্ষিত, গুরু, বঁধু, মানুষ, গরু।

কিছু পুরুষ বাচক শব্দের দুটো করে স্ত্রীবাচক শব্দ রয়েছে। যথা –

  • দেবর-ননদ (দেবরের বোন) এবং জা (দেবরের স্ত্রী),
  • ভাই-বোন এবং ভাবী (ভাইয়ের স্ত্রী),
  • শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী (পেশা অর্থে) এবং শিক্ষকপত্নী (শিক্ষকের স্ত্রী),
  • বন্ধু-বান্ধবী (মেয়ে বন্ধু) এবং বন্ধুপত্নী  (বন্ধুর স্ত্রী),
  • দাদা-দিদি (বড় বোন) এবং বৌদি (দাদার স্ত্রী),
  • শূদ্র-শূদ্রা (শূদ্র জাতীয় স্ত্রীলোক) এবং শূদ্রানী (শূদ্রের স্ত্রী) ইত্যাদি।

ক্ষুদ্রার্থে ইকা-প্রত্যয় যোগ হয়। যেমন:

  • নাটক-নাটিকা,
  • মালা-মালিকা,
  • গীত-গীতিকা,
  • পুস্তক-পুস্তিকা,
  • একাঙ্ক-একাঙ্কিকা,
  • ব্যাকরণ-ব্যাকরণিকা,
  • চয়ন-চয়নিকা ইত্যাদি।

আনী-প্রত্যয় যোগে কোনো কোনো সময় অর্থের পার্থক্য ঘটে। যেমন –

  • অরণ্য-অরণ্যানী (বৃহৎ অরণ্য),
  • হিম-হিমানী (জমানো বরফ),
  • বন-বনানী (বড় বন) ইত্যাদি।

নী-প্রত্যয় যোগে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দে অবজ্ঞা অর্থ প্রকাশ পায়। যেমন –

  • ডাক্তারনী, মাস্টারনী, জমিদারনী, দারোগানী।

কুল-উপাধিরও স্ত্রীবাচকতা রয়েছে। যেমন:

  • ঘোষ (পুরুষ)-ঘোষজা (কন্যা অর্থে),
  • ঘোষাজায়া (পত্নী অর্থে)।

বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দের বিশেষণ স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন:

  • সুন্দর বলদ-সুন্দর গাই,
  • সুন্দর ছেলে-সুন্দর মেয়ে,
  • মেজ খুড়ো-মেজ খুড়ি ইত্যাদি।

বিধেয় বিশেষণ অর্থাৎ বিশেষ্যের পরবর্তী বিশেষণও স্ত্রীবাচক হয় না। যেমন –

  • মেয়েটি পাগল হয়ে গেছে (পাগলি হয়ে গেছে হবে না)
  • আসমা ভয়ে অস্থির (অস্থিরা হবে না)।

বিশেষ নিয়মে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দের উদাহরণ। যেমন –

  • সম্রাট – সম্রাজ্ঞী,
  • রাজা-রানি,
  • যুবক-যুবতী,
  • শ্বশুর-শ্বশ্রূ,
  • নর-নারী,
  • বন্ধু-বান্ধবী,
  • দেবর-জা,
  • শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী,
  • স্বামী-স্ত্রী,
  • পতি-পত্নী,
  • সভাপতি-সভানেত্রী ইত্যাদি।

নমুনা প্রশ্ন

১. অজমূর্খ শব্দের ‘অজ’ কোন জাতের উপসর্গ?

ক) সংস্কৃত

খ) বাংলা

গ) বিদেশি

ঘ) তৎসম

উত্তরঃ খ

২. খাঁটি বাংলা উপসর্গ যোগে সৃষ্ট শব্দ –

ক) আকণ্ঠ

খ) অবেলা

গ) অপমান

ঘ) অতিশয়

উত্তরঃ খ

৩. উপসর্গ কোনটি?

ক) থেকে

খ) অতি

গ) আমি

ঘ) যথা

উত্তরঃ খ

৪. অপমান শব্দের ‘অপ’ উপসর্গটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে –

ক) বিপরীত

খ) নিকৃষ্ট

গ) বিকৃত

ঘ) অভাব

উত্তরঃ ক

৫. ‘লাপাত্তা’ শব্দের উপসর্গটি এসেছে – 

ক) আরবি থেকে

খ) হিন্দি থেকে

গ) ফারসি থেকে

ঘ) বাংলা থেকে

উত্তরঃ ক

৬. কোন শব্দে বিদেশি উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে –

ক) আনমনা

খ) নিমরাজি

গ) অবহেলা

ঘ) নিখুঁত

উত্তরঃ খ

৭. ‘নিদাঘ’ শব্দটিতে কোন প্রকারের উপসর্গ আছে – 

ক) খাঁটি বাংলা

খ) হিন্দি

গ) ফারসি

ঘ) তৎসম

উত্তরঃ ঘ

৮. ‘নিমরাজি’ শব্দের ‘নিম’ উপসর্গটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) সহিত

খ) হ্যাঁবোধক

গ) অল্প

ঘ) আধা

উত্তরঃ ঘ

৯. ‘লক্ষ লক্ষ হাঘরে দুর্গত’ এখানে ‘হা’ উপসর্গটি কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) পূর্ণতা

খ) উৎকৃষ্ট

গ) মন্দ

ঘ) অভাব

উত্তরঃ ঘ

১০. কোন শব্দে উপসর্গটি ‘সহিত’ অর্থ প্রকাশ করে?

ক) বরদাস্ত

খ) বকলম

গ) নারাজ

ঘ) বেতার

উত্তরঃ খ

১১. কোনটি তৎসম উপসর্গ?

ক) নিলাজ

খ) সুনজর

গ) বিপক্ষ

ঘ) বিভূঁই

উত্তরঃ গ

১২. উপসর্গের কী নেই?

ক) অর্থদ্যোতকতা

খ) অর্থ পরিবর্তনের ক্ষমতা

গ) অর্থসংকোচন ক্ষমতা

ঘ) অর্থবাচকতা

উত্তরঃ ঘ

১৩. কোনটি ফারসি উপসর্গ?

ক) গর

খ) বর

গ) রাম

ঘ) অঘা

উত্তরঃ খ

১৪. ‘উৎপন্ন’ শব্দটি কীভাবে গঠিত হয়েছে?

ক) উপসর্গের মাধ্যমে

খ) সন্ধির মাধ্যমে

গ) সমাসের মাধ্যমে

ঘ) প্রত্যয়ের মাধ্যমে

উত্তরঃ ক

১৫. কোনটি আরবি উপসর্গ?

ক) গর

খ) না

গ) ফি

ঘ) নিম

উত্তরঃ ক

১৬. কোনটি বাংলা উপসর্গ?

ক) আড়

খ) পরা

গ) সম

ঘ) নির

উত্তরঃ ক

১৭. ‘উৎকর্ষ’ শব্দটি গঠিত হয়েছে-

ক) প্রত্যয় দ্বারা

খ) উপসর্গ দ্বারা

গ) প্রত্যয় ও উপসর্গ দ্বারা

ঘ) সমাস দ্বারা

উত্তরঃ গ

১৮. নির্দেশক সর্বনামের পরে ‘টা/টি’ যুক্ত হলে তা কী হয়?

ক) অনির্দিষ্ট

খ) উৎকৃষ্ট

গ) সুনির্দিষ্ট

ঘ) নিকৃষ্ট

উত্তরঃ গ

১৯. বিশেষ অর্থে নির্দিষ্টতা বুঝায় কোনটি?

ক) সবটুকু ওষুধ

খ) এক পাটি জুতো

গ) গোটা সাতেক আম

ঘ) দশটি বছর

উত্তরঃ খ

২০. যে প্রত্যয় নির্দিষ্টতা বুঝায় তার নাম কী?

ক) সংখ্যা

খ) পদাশ্রিত নির্দেশক

গ) লিঙ্গ

ঘ) উপসর্গ

উত্তরঃ খ

২১. পদাশ্রিত নির্দেশক আলোচিত হয়-

ক) বাক্যতত্ত্বে

খ) রূপতত্ত্বে

গ) ধ্বনিতত্ত্বে

ঘ) অর্থতত্ত্বে

উত্তরঃ খ

২২. পদাশ্রিত নির্দেশক কোন পদ?

ক) ক্রিয়া

খ) অব্যয়

গ) সর্বনাম

ঘ) বিশেষ্য

উত্তরঃ খ

২৩. ‘এক’ শব্দের সঙ্গে টা, টি যুক্ত হলে তা কী হয়?

ক) নির্দিষ্টতা

খ) অনির্দিষ্টতা

গ) নিরর্থক

ঘ) অবজ্ঞা

উত্তরঃ খ

২৪. ‘ন্যাকামিটা এখন রাখ।’ এ বাক্যে পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার হয়েছে-

ক) নিরর্থকভাবে

খ) নির্দেশকভাবে

গ) অনির্দেশকভাবে

ঘ) ক+গ

উত্তরঃ ক

২৫. “সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি।” এবাক্যে ‘টি’ কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

ক) নিরর্থকভাবে

খ) নির্দিষ্টতা অর্থে

গ) অনির্দিষ্টতা অর্থে

ঘ) সার্থকভাবে

উত্তরঃ ক

২৬. কোনটিতে প্রয়োগভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকের বিভিন্নতা প্রযুক্ত হয়?

ক) ক্রিয়া

খ) বচন

গ) কারক

ঘ) লিঙ্গ

উত্তরঃ খ

২৭. ‘রা’ বিভক্তির ব্যবহার কোন ধরনের শব্দের সঙ্গে পাওয়া যায়?

ক) প্রাণিবাচক

খ) অপ্রাণিবাচক

গ) সংখ্যাবাচক

ঘ) উন্নত প্রাণিবাচক

উত্তরঃ ঘ

২৮. কোন পদের শব্দের বচনভেদ হয় না?

ক) বিশেষ্য

খ) অব্যয়

গ) সর্বনাম

ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তরঃ খ

২৯. বিশেষ্য শব্দের একবচনের ব্যবহারেও অনেক সময় বহুবচন বোঝানো হয়, যেমন – 

ক) বাগানে ফুল ফুটেছে

খ) সকলে সব জানে না

গ) মানুষেরা মরণশীল

ঘ) কবিরা ভাবুক

উত্তরঃ ক

৩০. বিদেশি ভাষার অনুসরণে বহুবচন হয়েছে কোনটি?

ক) কাগজ-কগজাত

খ) হস্তি-হস্তিযূথ

গ) মানুষ-মানুষসকল

ঘ) নারী-নারীমহল

উত্তরঃ ক

৩১. ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে কোনটি যুক্ত হয়?

ক) রা

খ) বৃন্দ

গ) দাম

ঘ) গুলো

উত্তরঃ ঘ

৩২. কেবল জন্তুর বহুবচনে ব্যবহৃত হয় কোনটি?

ক) পাল

খ) মালা

গ) রাজি

ঘ) নিকর

উত্তরঃ ক

৩৩. কেবল অপ্রাণিবাচক শব্দে ব্যবহৃত বহুবচনবোধক শব্দ কোনটি?

ক) কুল

খ) সকল

গ) নিকর

ঘ) সব

উত্তরঃ গ

৩৪. কোন শব্দে ক্ষুদ্রার্থে ‘ইকা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে – 

ক) মালিকা

খ) বালিকা

গ) অধ্যাপিকা

ঘ) সেবিকা

উত্তরঃ ক

৩৫. কোন শব্দটির পুরুষবাচক শব্দ নেই?

ক) বেগম

খ) এয়ো

গ) শারি

ঘ) খানম

উত্তরঃ খ

৩৬. ‘ঘোষজা’ কোন অর্থে স্ত্রীবাচক?

ক) পত্নী অর্থে

খ) কন্যা অর্থে

গ) বোন অর্থে

ঘ) বৃহৎ অর্থে

উত্তরঃ খ

৩৭. কোনটি পুরুষবাচক শব্দ?

ক) ঠাকরুন

খ) দুলহিন

গ) বেয়াইন

ঘ) বেঙ্গমা

উত্তরঃ ঘ

৩৮. নীচের কোনটি ব্যতিক্রম?

ক) বুজুর্গান

খ) ঘোষজা

গ) বিবাহিতা

ঘ) দুলাইন

উত্তরঃ ক

৩৯. নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ নয় কোনটি?

ক) কুলটা

খ) জেনানা

গ) সতীন

ঘ) বাইজি

উত্তরঃ খ

৪০. লিঙ্গান্তর হয় না এমন শব্দ কোনটি?

ক) সাহেব

খ) কবিরাজ

গ) বেয়াই

ঘ) সঙ্গী

উত্তরঃ খ

৪১. ‘বিধবা’ শব্দের বিপরীত লিঙ্গ কী?

ক) সধবা

খ) বিপত্নীক

গ) অধবা

ঘ) সপত্নীক

উত্তরঃ খ

৪২. কোনটি ভিন্নার্থক স্ত্রীবাচক শব্দ?

ক) কাঠি

খ) পুস্তিকা

গ) বনানী

ঘ) মালিকা

উত্তরঃ গ

৪৩. ‘শুক’ শব্দের স্ত্রীবাচক রূপ কোনটি?

ক) শুখি

খ) শারি

গ) সারী

ঘ) শুখী

উত্তরঃ খ

৪৪. বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

ক) নেত্রী

খ) কর্মী

গ) প্রিয়া

ঘ) মহিলা পুলিশ

উত্তরঃ ক

৪৫. কোনটি নিত্য পুরুষবাচক শব্দ?

ক) কাপুরুষ

খ) কবি

গ) বাদশা

ঘ) নেতা

উত্তরঃ ক

৪৬. ক্ষুদ্রার্থে গঠিত কোনটি?

ক) গীতিকা

খ) চাতকী

গ) সতীন

ঘ) মানবী

উত্তরঃ ক

৪৭. কোনটি প্রত্যয়যোগে গঠিত স্ত্রীবাচক শব্দ?

ক) বোন

খ) মা

গ) মামি

ঘ) কনে

উত্তরঃ গ

৪৮. কোনটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ নয়?

ক) এয়ো

খ) বেগম

গ) দাই

ঘ) সৎমা

উত্তরঃ খ

৪৯. কোন শব্দ দ্বারা স্ত্রী ও পুরুষ দুটো বোঝায়?

ক) ঢাকী

খ) কবিরাজ

গ) শিক্ষিত

ঘ) ক + গ

উত্তরঃ গ

৫০. ‘ইকা’ যোগে ক্ষুদ্রার্থে গঠিত শব্দ – 

ক) সেবিকা

খ) একাঙ্কিকা

গ) বালিকা

ঘ) গায়িকা

উত্তরঃ খ

৫১. কোনটি পতি ও পত্নীবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়?

ক) পাগল-পাগলি

খ) দেওর-ননদ

গ) দেওর-জা

ঘ) বামন-বামনী

উত্তরঃ গ

৫২. কোনটি নিত্য পুরুষবাচক শব্দ?

ক) বাবা

খ) সন্তান

গ) ঢাকী

ঘ) কুলটা

উত্তরঃ গ

৫৩. বৃহদার্থে ‘আনী’ যোগ হয়েছে কোনটিতে?

ক) ডাক্তারনি

খ) অভাগিনী

গ) ইন্দ্রানী

ঘ) হিমানী

উত্তরঃ ঘ

৫৪. ‘য’ ফলা লোপ পেয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গঠিত হয়েছে কোনটি?

ক) রজকী

খ) বৈষ্ণী

গ) মৎসী

ঘ) যোগী

উত্তরঃ গ

৫৫. কোনটি দ্বারা শুধু স্ত্রীবাচকতা বোঝায়?

ক) দিদি

খ) গীতিকা

গ) হিমানী

ঘ) সধবা

উত্তরঃ ঘ

৫৬. কোনটি দ্বারা পুরুষ-স্ত্রী উভয়ই বোঝায়?

ক) যোদ্ধা

খ) নবি

গ) শিশু

ঘ) কবি

উত্তরঃ গ

৫৭. ‘কুলি’ শব্দের স্ত্রীবাচক রূপ কী?

ক) কুলিনী

খ) কুলিরস্ত্রী

গ) মহিলা কুলি

ঘ) কামিন

উত্তরঃ ঘ

৫৮. বিশেষ নিয়মে সাধিত স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?

ক) সম্রাট সম্রাজ্ঞী

খ) দুঃখী- দুঃখিনী

গ) ঠাকুর-ঠাকুরুন

ঘ) মালা-মালিকা

উত্তরঃ ক

৫৯. শূদ্র জাতীয় স্ত্রীলোককে বলে – 

ক) শূদ্র

খ) শূদ্রা

গ) শূদ্রানী

ঘ) খ + গ

উত্তরঃ ঘ

৬০. বাংলায় কতকগুলো তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের পরে আবার স্ত্রীবাচক প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়, এরূপ উদাহরণ – 

ক) গরীয়ান-গরীয়সী

খ) অভাগা-অভাগিনী

গ) মানী-মানিনী

ঘ) রজক-রজকী

উত্তরঃ খ

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খন্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর ১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)
১১. স্বরোচিষ সরকার, বাংলাদেশের কোষগ্রন্থ ও শব্দসন্ধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১০)

BCS Bangla Lecture – 11

সমার্থক শব্দ

সমার্থক মানে একার্থক বা অনুরূপ অর্থবিশিষ্ট। বাংলা শব্দভাণ্ডারের বেশ কিছু শব্দ অন্য একটি শব্দের অনুরূপ অর্থ প্রকাশ করে, এরূপ শব্দকে সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ (Synonym) বলে। সমার্থক শব্দ সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও মননশীলতার ভূষণ। এর মাধ্যমে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। রচনায় শাব্দিক বৈচিত্র্য আসে এবং বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। নিচে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সমার্থক শব্দের উদাহরণ দেওয়া হলো।

অন্ধকার
আঁধার, আন্ধার, তিমির, তমসা, শর্বর, নভাক, নিরালোক, অমা


অন্ন
ভাত, ওদন, আহার, তণ্ডুল, খাবার, ভোজ্য, আহার্য, রসদ, অন্নজল, দানাপানি, খানা


আলো
কর, কিরণ, রশ্মি, প্রভা, বিভা, আভা, দীপ্তি, অংশু, ময়ূখ, উদ্ভাস, দ্যুতি, ভাতি, ঔজ্জ্বল্য, রওশন, নুর, চাকচিক্য, জৌলুস, জ্যোতি, ভাস, প্রদ্যোত, ছটা


আকাশ
আসমান, অম্বর, গগন, নভঃ, ব্যোম, অন্তরীক্ষ, সুরপথ, ইথার, দ্যুলোক, ছায়ালোক, নীলিমা, শূন্যলোক, খ, অভ্র, নভস্তল, নভোমণ্ডল, ত্রিদিব, তারাপথ


আগুন
অগ্নি, অনল, পাবক, বহ্নি, হুতাশন, বৈশ্বানর, বায়ুসখা, শিখা, দহন, জ্বলন, শিখিন, বিশ্বপা, কৃশানু, আতশ, আগ, বীতিহোত্র, সপ্তাংশু, অর্চি


ঈশ্বর
আল্লাহ, খোদা, জগদীশ, জগৎপতি, ধাতা, বিধাতা, বিভু, বিধি, ভগবান, সৃষ্টিকর্তা, স্রষ্টা, বিশ্বপতি, পরমাত্মা, ইলাহি, প্রভু, ঈশ, মাবুদ, ব্রহ্মা, পরমেশ, অন্তর্যামী, জগন্নাথ, জগন্ময়, প্রজাপতি, রক্ষক, মনিব, আদিনাথ, পৃথ্বীশ, অমরেশ, লোকনাথ, নিরঞ্জন, পরেশ, মওলা, পতিতপাবন, দেবতা, অমর, দেব, সুর, ত্রিদশ, অজর, ঠাকুর, অধিপতি, ঈশ্বর, বিধায়ক, মালিক, নাথ, সবিতা


কালো
কৃষ্ণ, কুৎসিত, অসিত, শ্যাম, শ্যামল


কাক
বায়স, বলিভুক, পরভৃৎ, বৃক, বলিপুষ্ট, অন্যভৃৎ, কাকল


কবুতর
পায়রা, কপোত, পারাবত, প্রাসাদকুক্কুট, গৃহবাজ, গেরবাজ, লক্কা, নোটন


কপাল
ললাট, ভাল, ভাগ্য, অলিক, নিয়তি, অদৃষ্ট


কন্যা
নন্দিনী, তনয়া, দুহিতা, মেয়ে, দুলালি, বেটি, আত্মজা, তনুজা, ঝি, বালিকা, ঝিয়ারি, পুত্রী, দারিকা, পুত্রিকা, কুমারী, স্বজা, সুতা, কনে, খুকি, অঙ্গজা


কোকিল
পরভৃত, পিক, পরপুষ্ট, অন্যপুষ্ট, অন্যভৃত, কাকপুষ্ট, মধুবন, মধুসখ, মধুস্বর, কলকণ্ঠ, কাকপুচ্ছ, কুহুকণ্ঠ, কলঘোষ


গৃহ
ঘর, আলয়, নিলয়, নিকেতন, সদন, বাড়ি, আবাস, নিবাস, বাটি, কুঠুরি, কুঠি, কুটির, আগার, ধাম, ভবন, আশ্রয়, বাসস্থান, গেহ, কোঠা, কামরা, কাটরা, মহল, প্রকোষ্ঠ, রুম, কেবিন, খোপ, চেম্বার, হল, ঘুপসি, অট্টালিকা, প্রাসাদ


ঘোড়া
অশ্ব, ঘোটক, তুরঙ্গম, তুরঙ্গ, তুরগ, মরুদ্রথ, টাঙন, হয়, বাজী, বাহনশ্রেষ্ঠ, হ্রেষী, বামী, বড়বা


চুল
অলক, কুন্তল, চিকুর, কবরী, কেশ, কেশর, কচ, শিরোজ, শিরোরুহ, মূর্ধজ, কৃশলা


চাঁদ
চন্দ্র, নিশাকর, বিধু, শশধর, শশাঙ্ক, মৃগাঙ্ক, সুধাংশু, হিমাংশু, সিতাংশু, কলাভৃৎ, কলানিধি, কলাধর, শশী, সোম, সুধাকর, কুমুদনাথ, নিশানাথ, নিশাকর,নিশাকান্ত, নিশাপতি, ইন্দু, হিমকর, সুধানিধি, সুধাকর, রজনীকান্ত, দ্বিজরাজ, দ্বিজপতি, দ্বিজেন্দ্র, রাকেশ, তারাপতি, তারানাথ, তারাধিপ, রাকা, সিতকর, পূর্ণেন্দু, বালেন্দু, মাহতাব, তমোহর


চোখ
অক্ষি, চক্ষু, নয়ন, নেত্র, লোচন, আঁখি, ঈক্ষণ, দৃষ্টি, দৃক


জল
অম্বু, জীবন, নীর, পানি, সলিল, বারি, উদক, পয়, অম্ভ, অর্ণ, বারুণ, অপ, তোয়, পুষ্কর, সুধা, শম্বর, ইলা


ঢেউ
ঊর্মি, বীচি, কল্লোল, উল্লোল, হিল্লোল, লহরি, তরঙ্গ, উপচেপড়া, জোয়ার, জলকল্লোল, কটাল, ঘূর্ণি, মৌজ, উৎকলিকা, জলোচ্ছ্বাস, জলস্ফীতি


তীর
ক‚ল, তট, বেলাভূমি, ধার, কিনারা, পুলিন, চড়া, বেলা, সৈকত, বালুকাবেলা, পার, পাড়, আড়া, কচ্ছ, তড়, চর, ডাঙা, পাটক, প্রতীর


দিন
দিবস, দিবা, দিনমান, অহ্ন, অহ, অহন, বাসর, বার, রোজ, সাবন, চব্বিশঘণ্টা, অষ্টপ্রহর


দোকান
বিপণি, আপণ, পসার, পণ্যগৃহ, পণ্যশালা


দেহ
গাত্র, গা, তনু, শরীর, কায়া, অঙ্গ, কলেবর, বপু, গতর, ভোগায়তন, প্রত্যঙ্গ, উপাঙ্গ, অবয়ব


ধন
অর্থ, বিত্ত, বিভব, বিভূতি, সম্পদ, সম্পত্তি, নিধি, ঐশ্বর্য, টাকা


নর
পুরুষ, মানব, জন, লোক, ব্যক্তি, মরদ, মর্দ, যুবক, জোয়ান


নারী
অবলা, কামিনী, ভামিনী, মহিলা, স্ত্রীলোক, রমণী, রমা, মেয়েছেলে, মেয়েলোক, ললনা, অঙ্গনা, জেনানা, কান্তা, সীমন্তিনী, মানবী, আওরৎ, যোষিৎ, বালা, যুবতী, প্রমদা, তিলোত্তমা, সুস্মিতা, সুচিস্মিতা, রামা, বামা, সুন্দরী, লক্ষ্মী, অনসূয়া, অপ্সরী, আয়তি, পোয়াতি


নদী
তটিনী, স্রোতস্বতী, স্রোতস্বিনী, স্রোতবহ, তরঙ্গিনী, প্রবাহিণী, নির্ঝরিণী, সমুদ্রদয়িতা, সমুদ্রকান্তা, কল্লোলিনী, শৈবালিনী, সরিৎ, গাঙ, নদ, মন্দাকিনী, গিরি-নিস্রাব, অপগা, দ্রবন্তী, ধুনী, পয়স্বিনী


পর্বত
অচল, অদ্রি, গিরি, পাহাড়, ভূধর, শৈল, নগ, অগ, পৃথ্বীধর, শৃঙ্গ, শিখরী, মহীধর, ভূভৃৎ, ধরাধর, ক্ষিতিধর, নগাধিপ, সানুমান, বলাহক


পিতা
আব্বা, বাবা, বাপ, জনক, জনিতা, জন্মদাতা, আব্বু, ফাদার, পাপা, ড্যাড


পুত্র
ছেলে, তনয়, তনুজ, নন্দন, সুত, দারক, বেটা, দুলাল, খোকা, পুত্তুর, আত্মজ, অঙ্গজ, স্বজ, কুমার


পৃথিবী
অবনী, ধরা, ধরণি, ধরিত্রী, বসুন্ধরা, বসুধা, বসুমতি, ভূ, মেদিনী, দুনিয়া, জগৎ, ভুবন, বিশ্ব, পৃথ্বী, মর্ত্য, ধরাতল, মহি, ক্ষিতি, ব্রহ্মাণ্ড, অখিল, উর্বী, ইলা, ইরা, অদিতি, ভূতল, ভূলোক, ধরাধাম, জাহান, ক্ষৌণি


পদ্ম
পঙ্কজ, কুমুদ, শালুক, শতদল, অরবিন্দ, নলিনী, নলিন, রাজিব, তামরস, উৎপল, কমল, কুবলয়, সরসিজ, সরোজ, ইন্দিবর,পুষ্কর, কোকনদ, পুণ্ডরীক, কৈরব,কুবল, শ্রীপর্ণ, সলিলজ, বিসকুসুম, বিসজ, কঞ্জ, নীরজ, অম্বুজ


পাখি
বিহগ, বিহঙ্গ, বিহঙ্গম, পক্ষী, খগ, দ্বিজ, শকুন্ত, খেচর, চিড়িয়া,পতত্রি, পতগ, পতঙ্গ, গরুড়, পত্রী, পাখপাখালি, খগম


ফুল
পুষ্প, প্রসূন, রঙ্গন, কুসুম, মুঞ্জরি, সুমন


বন
অরণ্য, কুঞ্জ, অটবি, জঙ্গল, কানন, বাগান, বাগিচা, বনানী, বাদাড়, ঝোপ, বিপিন, কান্তার,দাব


বিদ্যুৎ
তড়িৎ, চপলা, চঞ্চলা, অশনি, ক্ষণপ্রভা, দামিনী, সৌদামিনী, বিজলি, শম্পা, অনুভা, ইরম্মদ


বাতাস
হাওয়া, বায়ু, পবন, সমীর, সমীরণ, মরুৎ, বাত, প্রভঞ্জন, অনিল, গন্ধবহ, বায়, পবমান,সদাগতি,নভঃপ্রাণ, শব্দবহ, বহ্নিমিত্র, খগ


বৃক্ষ
পাদপ, গাছ, তরু, বিটপী, মহীরূহ, শাখী, শিখরী, পর্ণী, উদ্ভিদ, পল্লবী, দ্রুম, স্কন্ধী, ভূপদ, গাছগাছালি, বনস্পতি, তরুবর, ক্ষিতিজ


মাতা
গর্ভধারিণী, প্রসূতি, মা, জননী, আম্মা, জন্মদাত্রী, জনিত্রী, জনিকা, জনি, অম্বা, অম্বিকা, আই, প্রজনিকা, সবিত্রী


ময়ূর
কেকী, শিখী, শিখণ্ডী, কলাপী, বর্হী


মৃত্যু
ইন্তেকাল, চিরবিদায়, দেহত্যাগ, পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, পরলোক-গমন, দেহান্ত, লোকান্তর-গমন, মরণ, নাশ, বিনাশ, নিধন, সংহার, অন্ত, নিপাত, ইহলীলা-সংবরণ, ওফাৎ, মহানিদ্রা, মহাপ্রয়াণ, কালনিদ্রা, পটলতোলা, ভাবলীলা-সাঙ্গ, প্রাণত্যাগ, মহাযাত্রা


মেঘ
বারিদ, জলধর, জলদ, নীরদ, ঘন, অভ্র, অম্বুবাহী, অম্বুদ, অম্বুধর, জীমূত, বারিবাহ, কাদম্বিনী, পয়োদ,পয়োধি, পয়োধর, তোয়দ, তোয়ধর, পর্জন্য, বলাহক, নীরধর, উদধি, দেয়া


যুদ্ধ
বিগ্রহ, রণ, লড়াই, সংগ্রাম, সংঘর্ষ, সংঘাত, সমর, জিহাদ, আহব, যোধন, জঙ্গ,প্রতিদারণ, যুঝ, অনীক


রাজা
নৃপতি, নৃপ, নরপতি, ভূপতি, ভূপাল, ভূপ, মহিপাল, মহিনাথ, মহীন্দ্র, মহিপ, মহিপতি, মহীশ, দণ্ডধর, নরেন্দ্র, নরাধিপ, নরেশ, অধীশ্বর, সম্রাট, শাহেনশা, ক্ষিতিপ, ক্ষিতীশ, ক্ষিতিপাল, রাজাধিরাজ, জাঁহাপনা, রাজড়া, পাতশা, বাদশা, রাজন্য, অধীশ, অধিপ, অধিভূ, শাসক, নৃপবর, অবনীশ, ঔষ্ণীক, ছত্রপতি, ক্ষৌণীশ


রাত
নিশি, নিশা, নিশীথ, নিশীথিনী, রজনী, তমা, তামসী, নক্ত, ক্ষপা, ত্রিযামা, নিশুতি, যামী, যামিনী, যামবতী, শর্বরী, বিভাবরী, ক্ষণদা, রাত্রি, তারকিণী


শত্রু
অরি, বৈরী, রিপু, অরাতি, প্রতিপক্ষ, বিপক্ষ, দুশমন, বিদ্বেষী,অমিত্র, বিরোধী


সাদা
শুভ্র, শুক্ল, শ্বেত, শুচি, সিত, বিশদ, ধবল, সফেদ


সূর্য
আদিত্য, তপন, দিনপতি, দিননাথ, দিবাকর, দিবানাথ,দিবাবসু, দিনেশ, দিনমণি, দিনকর, প্রভাকর, ভাস্কর, ভানু, মার্তণ্ড, রবি, সবিতা, বিভাবসু, বিভাকর, অর্যমা, বিবস্বান, অংশুমান, অংশুমালী, কিরণমালী, ময়ূখমালী, অর্ক, বালার্ক, পূষা, পূষন, সূর, মিহির, অরুণ, ঊষাপতি, আফতাব,খগ,সুতপা, সুরুজ, তমোহর


স্ত্রী
বউ, বধূ, পত্নী, সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গী, অর্ধাঙ্গিনী, দয়িতা, জায়া, গৃহিনী, গিন্নি, দার, ভার্যা, কলত্র, বনিতা, ঘরনি, ইলা


স্বর্গ
বেহেশত, অমরাবতী, দেবালয়, দিব্যলোক, দেবপুরী, দেবলোক, দেবভূমি, ইন্দ্রলোক, ইন্দ্রালয়, ইন্দ্রপুরী, পুণ্যলোক, অমৃতলোক, ঊর্ধ্বলোক, সুরলোক, ত্রিদিব, ত্রিদশালয়, সুরপুর, জান্নাত, অমরলোক, অমরালয়, অমরধাম, সুখাধার, আনন্দলোক, হেভেন


সাপ
অহি, আশীবিষ, নাগ, ফণি, ভুজঙ্গ, ভুজঙ্গম, ভুজগ, সর্প, বিষধর, ফণাধর, পন্নগ, দ্বিজিহ্ব, কাকোদর,অকর্ণ, উরগ, উরঙ্গ, উরঙ্গম, দ্বিরসন


সিংহ
কেশরী, হর্যক্ষ, মৃগরাজ, মৃগেন্দ্র, পশুরাজ, রক্তজিহ্ব, সিংহী


সমুদ্র
অর্ণব, জলধি, জলনিধি,পয়োধি,পারাবার, বারীশ, বারীন্দ্র, বারিধি, অম্বুধি, অম্বুনিধি, অম্বুনাথ, অম্বুরাশি,উদধি, তোয়ধি, রত্নাকর, সাগর, সিন্ধু, দরিয়া, পাথার, অকূল, সায়র, নীলাম্বু, দ্বীপী, নদীকান্ত, প্রচেতা, সরিৎপতি, অম্ভোধি, অম্ভোনিধি


সুন্দর
মনোরম, মনোহর, শোভন, সুদৃশ্য, চারু, রমণীয়, রম্য, কমনীয়, কান্তিমান, কান্তিময়, লাবণ্যময়, সুদর্শন, সুকান্ত, কান্তিময়, সুচারু, শোভা, শোভাময়, সুরম্য, সুশ্রী, সুশোভন, চমৎকার, মঞ্জুল, নয়নাভিরাম, ললিত, সুকুমার, চোখজুড়ানো, অপরূপ


স্বর্ণ
সোনা, সুবর্ণ, কাঞ্চন, কনক, হিরণ, হিরণ্য, হেম


হাত
কর, বাহু, ভুজ, হস্ত, পাণি


হাতি
কুঞ্জর, করী, গজ, দিগ্গজ, মাতঙ্গ, হস্তী, দ্বিপ,দন্তী, বারণ, ঐরাবত, দ্বিরদ, নাগ,করেণু, পিল, রদী, রদনী, মাকনা, ইরম্মদ, দন্তাবল


হরিণ
মৃগ, ঋষ্য, সুনয়ন, সারঙ্গ, কুরঙ্গ, কুড়ঙ্গম, শম্বর, এণ


নমুনা প্রশ্ন

১. ‘হস্তী’ কোন শব্দের সমার্থক?

ক) দ্বিপ

খ) দ্বীপ

গ) মৃগ

ঘ) দীপ

উত্তরঃ ক

২. ‘শম্বর’ শব্দের অর্থ কী?

ক) ঘোড়া

খ) হরিণ

গ) উট

ঘ) গাঁধা

উত্তরঃ খ

৩. কোনটি ব্যতিক্রম?

ক) অসিত

খ) শ্যামল

গ) কৃষ্ণ

ঘ) শিখী

উত্তরঃ ঘ

৪. ‘গাভী’ শব্দের সমার্থক –

ক) তনু

খ) ধেনু

গ) নিধি

ঘ) পিক

উত্তরঃ খ

৫. ‘ফুল’ শব্দের সমার্থক কোনটি?

ক) রঙ্গন

খ) অটবী

গ) রাজন্য

ঘ) বিপিন

উত্তরঃ ক

৬. কোনটি ভিন্নার্থক – 

ক) জলধি

খ) অর্ণব

গ) জলদ

ঘ) পারাবার

উত্তরঃ গ

৭. ‘সূর্য’ শব্দের সমার্থক – 

ক) কাঞ্চন

খ) মার্তণ্ড

গ) সুকান্ত

ঘ) হিরণ

উত্তরঃ খ

৮. ‘পৃথিবী’ এর প্রতিশব্দ নয় কোনটি?

ক) অখিল

খ) অদিতি

গ) বসুধা

ঘ) আদিত্য

উত্তরঃ ঘ

৯. ‘কূল’ এর সমার্থক শব্দ – 

ক) পুলিন

খ) বারুণ

গ) সরিৎ

ঘ) সাবন

উত্তরঃ ক

১০. ‘শিষ্টাচার’ এর সমার্থক শব্দ – 

ক) নিষ্ঠা

খ) সদাচার

গ) সততা

ঘ) সংযম

উত্তরঃ খ

১১. ‘কুজঝটিকা’ এর প্রতিশব্দ – 

ক) কুহেলি

খ) প্রভাময়

গ) অন্ধকার

ঘ) গোধূলি

উত্তরঃ ক

১২. সমার্থক যুগ্ম শব্দ নির্ণয় কর?

ক) আকাশ-বাতাস

খ) কালি-কলম

গ) দিন-দিন

ঘ) হাসি-খুশি

উত্তরঃ ঘ

১৩. কোনটি ‘সাপ’ শব্দের প্রতিশব্দ?

ক) ভুজঙ্গ

খ) করী

গ) মাতঙ্গ

ঘ) কুঞ্জর

উত্তরঃ ক

১৪. ‘ময়ূর’ এর সমার্থক শব্দ হল-

ক) শিখরী

খ) আহব

গ) বামা

ঘ) কলাপী

উত্তরঃ ঘ

১৫. ‘কুল’ শব্দের সমার্থক শব্দ নয় কোনটি?

ক) সামাজ

খ) তট

গ) কৌলীন্য

ঘ) গৃহ

উত্তরঃ খ

১৬. ‘অশ্ব’-এর সমার্থক শব্দ-

ক) তুরঙ্গ

খ) তুরঙ্গম

গ) ঘোটক

ঘ) সবগুলো

উত্তরঃ ঘ

১৭. ‘করী’ শব্দের অর্থ কী?

ক) হরিণ

খ) পাখি

গ) হাতি

ঘ) মূল্য

উত্তরঃ গ

১৮. ‘স্কন্ধ’ শব্দটির প্রতিশব্দ কোনটি?

ক) অংশ

খ) অংস

গ) অংষ

ঘ) সবগুলো

উত্তরঃ খ

১৯. ‘বাণী’ শব্দের অর্থ যদি বাক্য হয় তবে ‘বানি’ শব্দের অর্থ কী?

ক) কথা

খ) পারিশ্রমিক

গ) তীর

ঘ) বন্যা

উত্তরঃ খ

২০. কোন শব্দটি ভিন্নার্থক?

ক) কামিনী

খ) রামা

গ) অঙ্গনা

ঘ) চারু

উত্তরঃ ঘ

২১. কোন শব্দটি ভিন্নার্থক?

ক) বিহগ

খ) বিহঙ্গ

গ) গরুড়

ঘ) ভূজঙ্গ

উত্তরঃ ঘ

২২. কোন শব্দটির অর্থ শ্মশ্রু?

ক) দাঁড়ী

খ) দাড়ি

গ) দাঁড়ি

ঘ) দ্বাড়ি

উত্তরঃ খ

২৩. ‘চুল’ এর সমার্থক শব্দ কোনটি?

ক) লোচন

খ) কুন্তল

গ) উষ্ণীষ

ঘ) উর্ণা

উত্তরঃ খ

২৪. ‘সূর্য’ এর সমার্থক শব্দ কোনটি?

ক) অর্চি

খ) অর্ণব

গ) সবিতা

ঘ) কুমুদরঞ্জন

উত্তরঃ গ

২৫. ‘সূর্য’ এর সমার্থক শব্দ –  

ক) বিবস্মান

খ) মরুৎ

গ) উরগ

ঘ) ক্ষিতি

উত্তরঃ ক

২৬. ‘জাঙ্গাল’ এর প্রতিশব্দ –

ক) স্তূপ

খ) আবর্জনা

গ) বাঁধ

ঘ) জঙ্গল

উত্তরঃ গ

২৭. ‘হাহাকার’ এর সমার্থক শব্দ – 

ক) বিলাপ

খ) আহাজারি

গ) রোনাজারি

ঘ) অশ্রু

উত্তরঃ খ

২৮. ‘রাত’ ও ‘ক্ষীণ’ শব্দ দুটির বিকল্প শব্দ – 

ক) যামিনী, আত্মা

খ) বিভাবরী, শীর্ণ

গ) নিশীথ, হৃদয়

ঘ) রজনী, অনুগ্রহ

উত্তরঃ খ

২৯. ‘মৎকুণ’ শব্দের সমার্থক শব্দ – 

ক) গরু

খ) উকুন

গ) খরগোশ

ঘ) ছারপোকা

উত্তরঃ ঘ

৩০. ‘নীর’ শব্দের সমার্থক শব্দ – 

ক) অগ্নি

খ) চন্দ্র

গ) গৃহ

ঘ) জল

উত্তরঃ ঘ

৩১. ‘মরুৎ’ শব্দের সমার্থক শব্দ – 

ক) পানি

খ) বাতাস

গ) মাটি

ঘ) মরুদ্যান

উত্তরঃ খ

৩২. ‘বসুমতি’ শব্দটির সমার্থক – 

ক) ধরিত্রী

খ) ফুল

গ) গিরি

ঘ) কানন

উত্তরঃ ক

৩৩. ‘দৌরাত্ম্য’ শব্দের সমার্থক শব্দ – 

ক) উপদ্রব

খ) উম্মাদ

গ) উত্তেজনা

ঘ) উজ্জ্বল

উত্তরঃ ক

৩৪. ‘হস্তী’ এর সমার্থক শব্দ – 

ক) তুরগ

খ) কুঞ্জর

গ) শম্বর

ঘ) বাজী

উত্তরঃ খ

৩৫. ‘নৈকট্য’ শব্দের প্রতিশব্দ কোনটি – 

ক) আকাঙ্ক্ষা

খ) আসক্তি

গ) আসত্তি

ঘ) অনুরাগ

উত্তরঃ গ

৩৬. ‘রাত্রি’ এর শব্দের সমার্থক শব্দ কোনটি – 

ক) শর্বরী

খ) শম্পা

গ) কবরী

ঘ) শশী

উত্তরঃ ক

৩৭. কোন শব্দটি ‘ঘর’ শব্দটির সমার্থক নয়?

ক) আবাস

খ) নিকেতন

গ) ধরণী

ঘ) সদন

উত্তরঃ গ

৩৮. ‘সূর্য’ শব্দটির সমার্থক কোনটি নয়?

ক) ভানু

খ) রবি

গ) ভাস্কর

ঘ) দ্বিজরাজ

উত্তরঃ ঘ

৩৯. ‘বাতাস’ এর প্রতিশব্দ কোনটি?

ক) প্রভঞ্জন

খ) অপ

গ) অম্বু

ঘ) অদ্রি

উত্তরঃ ক

৪০. কোনটি ‘অগ্নি’ এর প্রতিশব্দ?

ক) বৈশ্বানর

খ) কৃশানু

গ) হুতাশন

ঘ) সবগুলোই

উত্তরঃ ঘ

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর ১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)
১১. জামিল চৌধুরী, বাংলা বানান অভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৯৪)
১২. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, শুদ্ধিকরণ (প্রফেসর’স প্রকাশন, ২০০৬)
১৩. স্বরোচিষ সরকার, বাংলাদেশের কোষগ্রন্থ ও শব্দসন্ধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১০)
১৪. জামিল চৌধুরী, বাংলা বানান অভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৯৪)

 

 

BCS Bangla Lecture – 10

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম, ণত্ব ও ষত্ব বিধান, নমুনা প্রশ্ন

প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

১. তৎসম শব্দ

১.১. তৎসম শব্দের বানানের অপরিবর্তনীয়তা
এই নিয়মে বর্ণিত ব্যতিক্রম ছাড়া তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের নির্দিষ্ট বানান অপরিবর্তিত থাকবে।

১.২. ই ঈ বা উ ঊ

যেসব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং তার কার চিহ্ন (  ি  ু ) হবে।

যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, চুল্লি, তরণি, ধমনি, ধরণি, নাড়ি, পঞ্জি, পদবি, পল্লি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, যুবতি, রচনাবলি, লহরি, শ্রেণি, সরণি, সূচিপত্র, উর্ণা, উষা।

১.৩. রেফ (র্ )
রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না।যেমন: অর্জ্জন, কর্ম্ম, কার্ত্তিক, কার্য্য, মূর্চ্ছা, সূর্য্য ইত্যাদির পরিবর্তে অর্জন, কর্ম, কার্তিক, কার্য, মূর্ছা, সূর্য ইত্যাদি হবে।

১.৪.   ং, ঙ 

সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (  ং ) হবে।

যেমন: অহম্ + কার = অহংকার,এভাবে ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন।

সন্ধিবদ্ধ না হলে ঙ স্থানে   ং হবে না।

যেমন: অঙ্ক, অঙ্গ, আকাক্সক্ষা, আতঙ্ক, কঙ্কাল, গঙ্গা, বঙ্কিম, বঙ্গ, লঙ্ঘন, শঙ্কা, শৃঙ্খলা, সঙ্গে, সঙ্গী।

১.৫. ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দ

সংস্কৃত ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ-কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোতে হ্রস্ব ই-কার হয়।

যেমন: গুণী – গুণিজন, প্রাণী – প্রাণিবিদ্যা, মন্ত্রী – মন্ত্রিপরিষদ।

তবে এগুলোর সমাসবদ্ধ রূপে ঈ-কারের ব্যবহারও চলতে পারে।

যেমন: প্রাণী – প্রাণীবিদ্যা, মন্ত্রী – মন্ত্রীপরিষদ, গুণী – গুণীজন।

ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের সঙ্গে (ত্ব তা) প্রত্যয় যুক্ত হলে ই-কার হবে।

যেমন: কৃতী – কৃতিত্ব, মন্ত্রী – মন্ত্রিত্ব, দায়ী – দায়িত্ব, প্রতিযোগী – প্রতিযোগিতা, সহযোগী – সহযোগিতা।

১.৬. বিসর্গ (  ঃ )

শব্দের শেষে বিসর্গ (  ঃ ) থাকবে না।

যেমন: ইতস্তত, কার্যত, ক্রমশ, পুনঃপুন, প্রথমত, প্রধানত, প্রয়াত, প্রায়শ, ফলত, বস্তুত, মূলত।

এছাড়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শব্দমধ্যস্থ বিসর্গ-বর্জিত রূপ গৃহীত হবে। যেমন: দুস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পৃহ, নিশ্বাস, বিশ্বাস, নিস্তেজ।

২. অতৎসম শব্দ

২.১. ই ঈ উ ঊ

সকল অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই উ এবং এদের-কার চিহ্ন (  ি  ু ) ব্যবহৃত হবে।

যেমন:আরবি, আসামি, ইংরেজি, ইমান, ইরানি, উনিশ, ওকালতি, কাহিনি, কুমির, কেরামতি, খুশি, খেয়ালি, গাড়ি, গোয়ালিনি,

চাচি, জমিদারি, জাপানি, জার্মানি, টুপি, তরকারি, দাড়ি, দাদি, দাবি, দিঘি, দিদি, নানি, নিচু, পশমি, পাখি, পাগলামি, পাগলি, পিসি,

ফরাসি, ফরিয়াদি, ফারসি, ফিরিঙ্গি, বর্ণালি, বাঁশি, বাঙালি, বাড়ি, বিবি, বুড়ি, বেআইনি, বেশি, বোমাবাজি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে),

মামি, মালি, মাসি, মাস্টারি, রানি, রুপালি, রেশমি, শাড়ি, সরকারি, সোনালি, হাতি, হিজরি, হিন্দি, হেঁয়ালি। চুন, পুজো, পুব, মুলা,

মুলো।

পদশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে।

যেমন: ছেলেটি, লোকটি, বইটি।

সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ ও যোজক পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে।

যেমন: এটা কী বই? কী আনন্দ! কী আর বলব? কী করছ? কী করে যাব? কী খেলে? কী জানি? কী দুরাশা! তোমার কী! কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে! কী পড়ো? কী যে করি! কী বাংলা কী ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী।

কীভাবে, কীরকম, কীরূপে, কীসের প্রভৃতি শব্দেও ঈ-কার হবে। যেসব প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না হবে, সেসব বাক্যে ব্যবহৃত ‘কি’ হ্রস্ব ই-কার দিয়ে লেখা হবে।

যেমন: তুমি কি যাবে? সে কি এসেছিল?

২.২. এ, অ্যা

বাংলায় এ বর্ণ বা -েকার দিয়ে এ এবং অ্যা এই উভয় ধ্বনি নির্দেশিত হয়।

যেমন: কেন, কেনো (ক্রয় করো), খেলা, খেলি, গেল, গেলে, গেছে, দেখা, দেখি, জেনো, যেন।

তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যেগুলোর  ্য  া – কার যুক্ত রূপ বহুল পরিচিত।

যেমন: ব্যাঙ, ল্যাঙ, ল্যাঠা। এসব শব্দে (  ্য  া ) অপরিবর্তিত থাকবে।

বিদেশি শব্দে ক্ষেত্র অনুযায়ী অ্যা বা  ্য  া – কার ব্যবহৃত হবে।

যেমন: অ্যাকাউন্ট, অ্যান্ড (ধহফ), অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাংক, ভ্যাট, ম্যানেজার, হ্যাট।

২.৩. ও

বাংলা অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও-এর মতো হয়। শব্দশেষের এসব অ-ধ্বনি ও-কার দিয়ে লেখা যেতে পারে।

যেমন:
কালো, খাটো, ছোটো, ভালো;

এগারো, বারো, তেরো, পনেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো;

করানো, খাওয়ানো, চড়ানো, চরানো, চালানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, বসানো, শেখানো, শোনানো, হাসানো, কুড়ানো, নিকানো, বাঁকানো, বাঁধানো, ঘোরালো, জোরালো, ধারালো, প্যাঁচানো;

করো, চড়ো, জেনো, ধরো, পড়ো, বলো, বসো, শেখো, করাতো, কেনো, দেবো, হতো, হবো, হলো;

মতো, কোনো;

ভবিষ্যত অনুজ্ঞায় শব্দের আদিতেও ও-কার লেখা যেতে পারে।

যেমন: কোরো, বোলো, বোসো।

২.৪.  ং, ঙ

শব্দের শেষে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে সাধারণভাবে অনুস্বার (  ং ) ব্যবহৃত হবে।

যেমন: গাং, ঢং, পালং, রং, রাং, সং।

তবে অনুস্বারের সঙ্গে স্বর যুক্ত হলে ঙ হবে।

যেমন: বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের।

বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দে অনুস্বার থাকবে।

২.৫. ক্ষ, খ
অতৎসম শব্দ খিদে, খুদ, খুদে, খুর (গবাদি পশুর পায়ের শেষ প্রান্ত), খেত, খ্যাপা ইত্যাদি লেখা হবে।

২.৬. জ, য

বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে।

যেমন: কাগজ, জাদু, জাহাজ, জুলুম, জেব্রা, বাজার, হাজার।

ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে বিকল্পে ‘য’ লেখা যেতে পারে।

যেমন: আযান, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্যিন, যোহর, রমযান, হযরত। তবে হজ, মসজিদ, জুমুয়া ‘জ’ দিয়ে লিখতে হবে।

২.৭. মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন

অতৎসম শব্দের বানানে‘ণ’ ব্যবহার করা হবে না।

যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গভর্নর, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, রানি, সোনা, হর্ন।

তৎসম শব্দে ট ঠ ড ঢ এর পূর্বে যুক্ত নাসিক্যবর্ণ ‘ণ’ হয়।

যেমন: কণ্টক, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড। কিন্তু অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ এর আগে কেবল ‘ন’ হবে।

যেমন: লন্ঠন (সংস্কৃত), গুন্ডা (দেশি), ঝান্ডা, ঠান্ডা (হিন্দি) ডান্ডা (তদ্ভব)।

২.৮. শ, ষ, স

বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

যেমন:
পোশাক, বেহেশ্ত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, শৌখিন, শার্ট, আপস, জিনিস, মসলা, সন, সাদা, সাল (বৎসর), স্মার্ট, হিসাব;

স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্ট্রিট, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর;

ইসলাম, তসলিম, মুসলমান, মুসলিম, সালাত, সালাম, এশা, শাওয়াল (হিজরি মাস), শাবান (হিজরি মাস)।

ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি s ধ্বনির জন্য স এবং sh, sion, ssion, tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে।

যেমন: পাসপোর্ট, বাস, ক্যাশ, টেলিভিশন, মিশন, সেশন, রেশন, স্টেশন।

যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান পরিবর্তিত হয়ে স ছ-এর রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ-এর ব্যবহার থাকবে।

যেমন: তছনছ, পছন্দ, মিছরি, মিছিল।

২.৯. বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ

বাংলায় বিদেশি শব্দের আদিতে বর্ণ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। এগুলো যুক্তবর্ণ দিয়ে লিখতে হবে।

যেমন: স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিং।

তবে অন্য ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করা যায়।

যেমন: মার্কস, শেকসপিয়র, ইসরাফিল।

২.১০. হস-চিহ্ন

হস-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে।

যেমন: কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক।

তবে যদি অর্থবিভ্রান্তি বা ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন: উহ্, যাহ্, বাহ্।

২.১১. ঊর্ধ্ব-কমা

ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে।

যেমন: বলে (বলিয়া), হয়ে, দুজন, চাল (চাউল), আল (আইল)।

বিবিধ

৩.১. সমাসবদ্ধ শব্দ

সমাসবদ্ধ শব্দগুলো যথাসম্ভব একসঙ্গে লিখতে হবে।

যেমন: সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমণ্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সংকল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র।

বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ শব্দগুলোকে এক বা একাধিক হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়।

যেমন: মা-মেয়ে, মা-ছেলে, বেটা-বেটি, বাপ-বেটা, জল-স্থল-আকাশ, কিছু-না-কিছু।

৩.২. বিশেষণ পদ

বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না।

যেমন: সুনীল আকাশ, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন, সুগন্ধ ফুল, লাল গোলাপ, ভালো দিন, সুন্দরী মেয়ে।

৩.৩. না-বাচক শব্দ

না-বাচক না এবং নি-এর প্রথমটি (না) স্বতন্ত্র পদ হিসেবে এবং দ্বিতীয়টি (নি) সমাসবদ্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

যেমন: করি না, কিন্তু করিনি।

এছাড়া শব্দের পূর্বে না-বাচক উপসর্গ ‘না’ উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

যেমন: নাবালক, নারাজ, নাহক।

অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে না-এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়।

যেমন: না-গোনা পাখি, না-বলা বাণী, না-শোনা কথা।

৩.৪. অধিকন্তু অর্থে ‘ও’

অধিকন্তু অর্থে ব্যবহৃত ‘ও’ প্রত্যয় শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণরূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে।

যেমন: আজও, আমারও, কালও, তোমারও।

৩.৫. নিশ্চয়ার্থক ‘ই’

নিশ্চয়ার্থক ‘ই’ শব্দের সঙ্গে কার-চিহ্ন রূপে যুক্ত না হয়ে পূর্ণরূপে শব্দের পরে যুক্ত হবে।

যেমন: আজই, এখনই।

ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম

৪.১. ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নাম এই নিয়মের আওতাভুক্ত নয়।

ণত্ব ও ষত্ব বিধান

ণত্ব বিধান

ব্যবহারের নিয়ম:

১. ট-বর্গীয় ধ্বনির (ট ঠ ড ঢ) সাথে সবসময় মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয়।

যেমন: ঘণ্টা, কণ্টক, নির্ঘণ্ট, বণ্টন, কণ্ঠ, লুণ্ঠন, উৎকণ্ঠা, অকুণ্ঠ, কাণ্ড, দণ্ড, মণ্ডল, পাণ্ডব ইত্যাদি।

২. ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা ও রেফ), ষ, ক্ষ এর পরে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয়।

যেমন: ঋণ, তৃণ, মসৃণ, অরণ্য, ধারণ, পূরণ, প্রণীত, প্রণালি, যন্ত্রণা, বর্ণ, স্বর্ণ, পূর্ণিমা, ভীষণ, ভাষণ, অন্বেষণ,সহিষ্ণু, ক্ষণিক, ভক্ষণ, নিরীক্ষণ, দক্ষিণ ইত্যাদি। (ব্যতিক্রম: প্রনষ্ট, নির্নিমেষ, নিরন্ন, মৃন্ময়, অহর্নিশ)

৩. ঋ, র, ষ, ক্ষ এর পরে স্বরধ্বনি, য য় হ  ং এবং ক-বর্গীয় (ক খ গ ঘ ঙ) ও প-বর্গীয় (প ফ ব ভ ম) ধ্বনি থাকলে তার পরে মূর্ধন্য-ণ হয়।

যেমন: কৃপণ, গৃহায়ণ, গৃহিণী, হরিণ, পরায়ণ, অপরাহ্ণ, রুক্মিণী, রামায়ণ, অর্পণ, পূর্বাহ্ণ,নির্বাণ, ব্রাহ্মণ, প্রাঙ্গণ, শ্রবণ, ভ্রমণ, বক্ষ্যমাণ,  ক্ষুণ্ন, লক্ষ্মণ, পরিবহণ ইত্যাদি। (ব্যতিক্রম: আয়ুষ্মান, গরীয়ান, চক্ষুষ্মান, নির্গমন, পূষন, বহির্গমন, বর্ষীয়ান, রঙ্গন, শ্রীমান, পরিনষ্ট, হরিনাম, রূপবান, নিষ্পন্ন, পরান্ন)

৪. কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়। এগুলো স্বতঃসিদ্ধ অর্থাৎ কোনো নিয়মের অন্তর্ভূক্ত নয়। যেমন:

চাণক্য মাণিক্য গণ             বাণিজ্য লবণ মণ

বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা।

কল্যাণ শোণিত মণি           স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী

ফণি অণু বিপণী গণিকা।

আপণ লাবণ্য বাণী              নিপুণ ভণিতা পাণি

গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ।

চিক্কণ নিক্বণ তূণ                কফোণি বণিক গুণ

গণনা পিণাক পণ্য বাণ।
কণা কিণাঙ্ক ঘুণ উৎকুণ
শণশোণ ফণামৎকুণ।

৫. যে সব শব্দে ণত্ব বিধান হয় না অর্থাৎ দন্ত্য-ন ব্যবহৃত হয়।

ক) ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত থ দ ধ) সাথে।

যেমন: অন্ত, প্রান্ত, গ্রন্থ, পন্থা, ক্রন্দন, ছন্দ, বন্ধন, অন্ধ ইত্যাদি।

খ) বাংলা ক্রিয়াপদে।

যেমন: করেন, যান, খান, মরেন, ধরেন, করুন, মারেন ইত্যাদি।

গ) সমাসসাধিত শব্দে।

যেমন: ত্রিনয়ন, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার, পরনিন্দা, সর্বনাম, নির্গমন, অগ্রনায়ক, অগ্রনেতা, ছাত্রনিবাস ইত্যাদি।

ঘ) অর্ধতৎসম, তদ্ভব (প্রাকৃতজ), দেশি ও বিদেশি শব্দে।

যেমন: অঘ্রান, বামুন, কিষান, নেমন্তন্ন, গভর্নর, জবানবন্দি, কুপন, নমুনা, গিন্নী, সোনা, কান, নুন, হর্ন, কুরআন, কেরানি, গ্রিন, কুর্নিশ, পরান, ঘেন্না, যাতনা, কানন, আয়রন, কর্নেল ইত্যাদি।

ঙ) শব্দের শুরুতে (ণত্ব ও ণিজন্ত বাদে)।

যেমন: নয়ন, নাক, নায়ক, নুন ইত্যাদি।

চ) ণ-বর্ণের পরে ‘ন’ দিয়ে গঠিত শব্দে।

যেমন: বর্ণনা, গণনা, পাণিনি ইত্যাদি।

ষত্ব বিধান

ব্যবহারের নিয়ম:

১. ট, ঠ বর্ণদ্বয়ের সাথে মূর্ধন্য-ষ হয়।

যেমন: কষ্ট, স্পষ্ট, ওষ্ঠ, কাষ্ঠ, সৃষ্টি, বৃষ্টি, কৃষ্টি, যথেষ্ট, প্রচেষ্টা, জৈষ্ঠ্য, কনিষ্ঠ, লঘিষ্ঠ ইত্যাদি।

২. ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা ও রেফ) এর পরে মূর্ধন্য-ষ হয়।

যেমন: ঋষি, কৃষক, কৃষি, তৃষ্ণা, বর্ষা, বার্ষিক, হর্ষ, মহাকর্ষ, আকর্ষণ, মুমূর্ষু, শীর্ষক, চিকীর্ষা ইত্যাদি।(ব্যতিক্রম: কৃশ, কৃশকায়, কৃশাঙ্গ, দৃশ্য)

৩. অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনির (ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ) পরে মূর্ধন্য-ষ হয়।

যেমন: ভবিষ্যৎ, চক্ষুষ্মান, জ্যোতিষ্ক, বিষ, আবিষ্কার, চতুষ্পদ, আয়ুষ্কাল, জিগীষা, বৈষয়িক, দূষণ ইত্যাদি। (ব্যতিক্রম: দিশা, দেশ, বিশ, বিস)

৪. ই-কারান্ত এবং উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতগুলো শব্দে মূর্ধন্য-ষ হয়।

যেমন: অভিষেক, সুষুপ্ত, প্রতিষ্ঠান, বিষম, সুষমা, অনুষঙ্গ, নিষ্পাপ, বিনষ্ট, পরিষদ, পরিষ্কার, অনুষ্ঠান ইত্যাদি। (ব্যতিক্রম: বিসংবাদ, বিসদৃশ)

৫. পুরুষবাচক সম্ভাষণসূচক শব্দে এ-কারের পর মূর্ধন্য-ষ হয়।

যেমন: কল্যাণীয়েষু, সুজনেষু, শ্রদ্ধাস্পদেষু, বন্ধুবরেষু, স্নেহাস্পদেষু, প্রিয়বরেষু ইত্যাদি।

স্ত্রীবাচক সম্ভাষণসূচক শব্দে আ-কারের পর দন্ত্য-স হয়।

যেমন: কল্যাণীয়াসু, সুপ্রিয়াসু, সুজনীয়াসু, প্রিয়বরাসু, স্নেহাস্পদাসু, শ্রদ্ধাষ্পদাসু ইত্যাদি।

৬. কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ষ হয়। এগুলো স্বতঃসিদ্ধ অর্থাৎ কোনো নিয়মের অন্তর্ভূক্ত নয়। যেমন:

আষাঢ় ঈষৎ উষ্ণ উষা কোষ
ওষধি কর্ষণ ঘর্ষণ তুষার রোষ।

পুরুষ পরুষ পুষ্প প্রত্যুষ পাষাণ
পৌষ বিষ ভূষণ ভাষ্যশোষণ।

বিশেষ্য বিশেষণ মহিষ বৃষ মেষ
বিষাণ মূষিক ভাষণ ষণ্ড শেষ।

ভাষা মাষা তোষণ কলুষ আভাষ
ষট সরিষা ষড় দ্বেষ অভিলাষ।

হ্রেষা ষোড়শ ঊষর নিকষ দোষ
বাষ্প পোষণ পোষ্য ও প্রদোষ।

৭. যে সকল শব্দে ষ-ত্ব বিধান হয় না অর্থাৎ দন্ত্য-স ও তালব্য-শ ব্যবহৃত হয়।

ক) বিদেশি ভাষা থেকে আগত সকল শব্দে।

যেমন: পোশাক, পোস্ট, মাস্টার, স্টোর, জিনিস, ফটোস্ট্যাট, মুশকিল, মজলিস, চশমা, খোশ, রসিদ, স্টুডিও, রেস্টুরেন্ট, স্টাফ, স্টেশন, শহিদ, সালাম, শরবত ইত্যাদি।

খ) সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে।

যেমন: অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।

গ) বিসর্গ সন্ধিতে অ, আ-ধ্বনির পরে।

যেমন: পুরস্কার, নমস্কার, ভাস্কর, বৃহস্পতি, তস্কর, মনস্কামনা, আস্পদ, অসম ইত্যাদি।

নমুনা প্রশ্ন

১. কোন বানানটি শুদ্ধ নয়?

ক) নীহারিকা

খ) নিরীক্ষণ

গ) রূপালী

ঘ) চিক্কণ

উত্তরঃ গ

২. কোন শব্দটির বানান ভুল?

ক) প্রাণিজগত

খ) প্রতিযোগিতা

গ) লণ্ঠন

ঘ) স্টেশন

উত্তরঃ গ

৩. কোনটি শুদ্ধ?

ক) দৌরাত্ম

খ) দৌরাত্ব্য

গ) দৌরাত্ব্য

ঘ) দৌরাত্ম্য

উত্তরঃ ঘ

৪. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক) শুণ্য

খ) পুণ্য

গ) গূণ্য

ঘ) মাণ্য

উত্তরঃ খ

৫. অশুদ্ধ বানান কোনটি?

ক) মূর্ধন্য

খ) ব্যাকরণ

গ) নিষুতি

ঘ) পাষান

উত্তরঃ ঘ

৬. শুদ্ধ বানান নির্দেশ কর?

ক) মুহুর্মুহু

খ) মুহুর্মুহ

গ) মুহূর্মুহূ

ঘ) মুহর্মুহু

উত্তরঃ ক

৭. শুদ্ধ বানানের শব্দগুচ্ছ –

ক) সমীচিন, হরিতকী, বাল্মিকি

খ) সমীচীন, হরীতকী, বাল্মীকি

গ) সমিচীন, হরিতকি, বাল্মিকী

ঘ) সমীচীন, হরিতকী, বাল্মীকি

উত্তরঃ খ

৮. অশুদ্ধ বানান কোনটি?

ক) মুমূর্ষু

খ) শশিভূষণ

গ) সৌজন্য

ঘ) নৈঋত

উত্তরঃ ঘ

৯. শুদ্ধ বানান কোনটি?

ক) আকাঙ্খা

খ) শিরচ্ছেদ

গ) ভৌগোলিক

ঘ) দুরাবস্থা

উত্তরঃ গ

১০. অশুদ্ধ বানান নির্ণয় কর?

ক) শ্রদ্ধাঞ্জলি

খ) অভ্যন্তরীণ

গ) আবিস্কার

ঘ) শাশ্বত

উত্তরঃ গ

১১. কোন বানানটি শুদ্ধ নয়?

ক) পুরস্কার

খ) অভিসেক

গ) বিষম

ঘ) সুষম

উত্তরঃ খ

১২. কোন বানানটি অশুদ্ধ নয়?

ক) পূর্বাহ্ন

খ) পোষাক

গ) ধূলিসাৎ

ঘ) রেস্টুরেণ্ট

উত্তরঃ গ

১৩. নিচের কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক. শষ্য

খ. সষ্য

গ. শশ্য

ঘ. শস্য

উত্তরঃ ঘ

১৪. কোন বানানটি অশুদ্ধ?

ক. ভূত

খ. কিম্ভূত

গ. অদ্ভূত

ঘ. প্রভূত

উত্তরঃ গ

১৫. শুদ্ধ বানান কোনটি?

ক. গড্ডালিকা

খ. গড্ডলিকা

গ. গড্ডলীকা

ঘ. গড্ডালীকা

উত্তরঃ খ

১৬. কোন বানানটি সঠিক?

ক. অনুনয়

খ. অনুণয়

গ. অণুনয়

ঘ. অনূনয়

উত্তরঃ ক

১৭. কোনটি শুদ্ধ বানান?

ক. কথপোকথন

খ. কথোপকথন

গ. কোথপোকথন

ঘ. কথপকোথন

উত্তরঃ খ

১৮. ‘তারল্যতা’ শব্দটি অশুদ্ধ কেন?

ক. প্রত্যয়জনিত কারণে

খ. উপসর্গজনিত কারণে

গ. সন্ধিজনিত কারণে

ঘ. কারকজনিত কারণে

উত্তরঃ ক

১৯. কোনটি শুদ্ধ বানান?

ক. ইতিমধ্যে

খ. ইতঃমধ্যে

গ. ইতোমধ্যে

ঘ. ইতিপূর্বে

উত্তরঃ গ

২০. কোনটি শুদ্ধ শব্দ?

ক. স্বশুর

খ. শ্বসুর

গ. শশুর

ঘ. শ্বশুর

উত্তরঃ ঘ

২১. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক. প্রসংশা

খ. আষাড়

গ. ব্যঘাত

ঘ. বর্ণনা

উত্তরঃ ঘ

২২. নিচের কোন শব্দটির বানান ভুল?

ক. কর্ণেল

খ. প্রাণিজগত

গ. স্টেশন

ঘ. প্রতিযোগিতা

উত্তরঃ ক

২৩. কোন বানানটি সঠিক?

ক. ক্ষীণজীবী

খ. ক্ষীণজিবী

গ. ক্ষীনজীবি

ঘ. ক্ষীণজীবি

উত্তরঃ ক

২৪. কোনটি সঠিক বানান?

ক. নিশিথিনী

খ. নীশিথিনী

গ. নিশীথিনী

ঘ. নিশিথিনি

উত্তরঃ গ

২৫. সঠিক বানান – 

ক. দুর্ভিক্ষ

খ. দূর্ভিক্ষ

গ. দুর্ভিক্ষ্য

ঘ. দূর্ভিক্ষ্য

উত্তরঃ ক

২৬. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক. বিভিষিকা

খ. বিভীষিকা

গ. বীভিষিকা

ঘ. বীভিষীকা

উত্তরঃ খ

২৭. কোন বানানটি সঠিক?

ক. নিরিক্ষণ

খ. নীরিক্ষন

গ. নীরীক্ষন

ঘ. নিরীক্ষণ

উত্তরঃ ঘ

২৮. অশুদ্ধ শব্দ-

ক. দূরন্ত

খ. বসন্ত

গ. ডুবন্ত

ঘ. অনন্ত

উত্তরঃ ক

২৯. নির্ভুল বানান-

ক. স্বায়ত্ব

খ. স্বয়ত্ব

গ. স্বায়ত্ত

ঘ. স্বসত্ব

উত্তরঃ গ

৩০. শুদ্ধ বানান-

ক. ব্যধি

খ. ব্যাক্তি

গ. ব্যার্থ

ঘ. ব্যভিচার

উত্তরঃ ঘ

৩১. কোনটি শুদ্ধ?

ক) কৃতি

খ) কিট

গ) রথী

ঘ) সুধি

উত্তরঃ গ

৩২. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক) ভূল

খ) ভূক্ত

গ) ভূবন

ঘ) দূর্বা

উত্তরঃ ঘ

৩৩. কোন শব্দে ণত্ব বিধান প্রযোজ্য নয়?

ক) সন্ধিসাধিত

খ) প্রত্যয়সাধিত

গ) উপসর্গসাধিত

ঘ) সমাসসাধিত

উত্তরঃ ঘ

৩৪. কোন শব্দে স্বভাবত মূর্ধন্য-ণ হয়েছে?

ক) কারণ

খ) ভীষণ

গ) বণিক

ঘ) ক্ষণিক

উত্তরঃ গ

৩৫. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক) উচ্ছাস

খ) উচ্ছ্বাস

গ) উচ্ছ্বাষ

ঘ) উচ্চাস

উত্তরঃ খ

৩৬. অশুদ্ধ বানান কোনগুলো – 

ক) অদ্ভ‚ত, দ্বারস্ত, প্রহসণ

খ) আহ্নিক, দরুন, ইতস্তত

গ) দারিদ্র্য, আশিস, উদীচী

ঘ) কৃতী, ক্ষুণ্ন, নৈর্ব্যক্তিক

উত্তরঃ ক

৩৭. কোনটিতে স্বভাবত মূর্ধন্য-ষ হয়েছে – 

ক) বিষম

খ) সুষমা

গ) তোষণ

ঘ) নষ্ট

উত্তরঃ গ

৩৮. কোনটি সমসূত্রের নয়?

ক) ঋষি

খ) সুষমা

গ) কৃষক

ঘ) বর্ষণ

উত্তরঃ খ

৩৯. কোন বানানটি শুদ্ধ?

ক) পিপিলিকা

খ) পিপীলিকা

গ) পিপিলীকা

ঘ) পীপিলিকা

উত্তরঃ খ

৪০. ণ-ত্ব বিধান কোন ধরনের শব্দে প্রযোজ্য?

ক. তৎসম

খ. দেশি

গ. বিদেশি

ঘ. তদ্ভব

উত্তরঃ ক

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর ১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)
১১. জামিল চৌধুরী, বাংলা বানান অভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৯৪)
১২. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, শুদ্ধিকরণ (প্রফেসর’স প্রকাশন, ২০০৬)
১৩. স্বরোচিষ সরকার, বাংলাদেশের কোষগ্রন্থ ও শব্দসন্ধান (বাংলা একাডেমি, মে ২০১০)
১৪. জামিল চৌধুরী, বাংলা বানান অভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৯৪)

BCS Bangla Lecture – 9

ধ্বনি পরিবর্তন, সন্ধি, নমুনা প্রশ্ন

ধ্বনির পরিবর্তন

ভাষা পরিবর্তনশীল। ভাষার পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। সাধারণত উচ্চারণে সহজলভ্যতা, আঞ্চলিকতা ও দ্রুত উচ্চারণের জন্য আমরা ধ্বনির পরিবর্তন করে থাকি। উচ্চারণের সময় সহজীকরণের প্রবণতায় শব্দের মূল ধ্বনির যেসব পরিবর্তন ঘটে তাকে ধ্বনির পরিবর্তন বলে। ধ্বনির মধ্যে প্রধানত চার ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন – লোপ (Deletion), আগম (Addition), রূপান্তর (Alteration) এবং বিপর্যাস (Transposition)। নিম্নে ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়মগুলো বর্ণনা করা হলো।

স্বরধ্বনির পরিবর্তন

১. স্বরাগম: শব্দের আদি, অন্ত্য ও মধ্যবর্তী স্থানে স্বরধ্বনির আগমনকে স্বরাগম বলে। স্বরাগমকে তিনভাবে দেখানো যায়। যথা-

(ক) আদি স্বরাগম: শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনির আগমন।

যেমন – স্কুল > ইস্কুল, স্পৃহা> আস্পৃহা, স্ত্রী > ইস্ত্রী, স্তাবল > আস্তাবল, স্টেশন > ইস্টিশন, স্পর্ধা > আস্পর্ধা।

(খ) মধ্য স্বরাগম/বিপ্রকর্ষ/স্বরভক্তি: শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন।

যেমন – রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম, প্রীতি > পিরীতি, মুক্তা > মুকুতা, গ্রাম > গেরাম, শ্লোক > শোলোক, মুরগ > মুরোগ> মোরগ।

(গ) অন্ত্য স্বরাগম: শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগমন।

যেমন – দিশ্> দিশা, সত্য > সত্যি, দুষ্ট > দুষ্টু, পোখত্> পোক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি।

২. স্বরলোপ/সম্প্রকর্ষ: শব্দের আদি, অন্ত্য ও মধ্যবর্তী স্থানে স্বরধ্বনির লোপকে স্বরলোপ বলে। স্বরলোপ বস্তুত স্বরাগমের বিপরীত প্রক্রিয়া। স্বরলোপকে তিনভাগে দেখানো যায়। যথা –

(ক) আদি স্বরলোপ: শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনির লোপ।

যেমন – আছিল > ছিল, আনোনা > নোনা, উদ্ধার>উধার > ধার, অলাবু > লাবু> লাউ, এড়ণ্ড > রেড়ী।

(খ) মধ্য স্বরলোপ: শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনির লোপ।

যেমন – সুবর্ণ > স্বর্ণ, কলিকাতা > কলকাতা, অগুরু > অগ্রু।

(গ) অন্ত্য স্বরলোপ: শব্দের শেষে স্বরধ্বনি লোপ পাওয়া।

যেমন – রাশি > রাশ, চারি > চার, অগ্নি > আগুন, আশা > আশ।

৩. স্বরসঙ্গতি (Vowel Harmony): একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। সমীভবন প্রক্রিয়ার সাথে স্বরসঙ্গতির মিল রয়েছে। তবে স্বরসঙ্গতি স্বরের মধ্যে প্রযোজ্য আর সমীভবন ব্যঞ্জনে প্রয়োগ হয়ে থাকে। স্বরসঙ্গতি কয়েক ভাবে হয়ে থাকে। যথা –

(ক) প্রগত: আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বরের পরিবর্তন।

যেমন – শিকা > শিকে, তুলা > তুলো, বিকাল > বিকেল, উঠান > উঠোন, মুলা > মুলো।

(খ) পরাগত: অন্ত্যস্বরের কারণে আদিস্বরের পরিবর্তন।

যেমন – দেশি > দিশি, দেই > দিই, আসো > এসো, আখো > এখো।

(গ) মধ্যগত: আদিস্বর ও অন্ত্যস্বর কিংবা অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বরের পরিবর্তন।

যেমন – বিলাতি > বিলিতি, ভিখারি > ভিখিরি, জিলাপি > জিলিপি।

(ঘ) অন্যোন্য: আদি ও অন্ত্য দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হয়।

যেমন – মোজা > মুজো, খোকা > খুকু, ধোঁকা > ধুঁকো।

(ঙ) চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি: গিলা > গেলা, মিঠা > মিঠে, ইচ্ছা > ইচ্ছে, মিলামিশা > মেলামেশা।

(চ) বিশেষ নিয়মে স্বরসঙ্গতি: উড়–নি > উড়নি, এখনি > এখুনি।

৪. অপিনিহিতি (Apenthesis): পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে।

যেমন – আজি > আইজ, রাখিয়া > রাইখ্যা, চারি > চাইর, মারি > মাইর, সাধু > সাউধ, বাক্য > বাইক্য, সত্য > সইত্য।

৫. অসমীকরণ (Dissimilation): একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে যখন স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন তাকে অসমীকরণ বলে।

যেমন – ধপ ধপ > ধপাধপ, টপ টপ > টপাটপ, খপ খপ > খপাখপ।

ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন

৬. সমীভবন/ব্যঞ্জনসঙ্গতি (Assimilation): শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্পবিস্তর সমতা লাভ করাকে সমীভবন বলে। সমীভবন মূলত তিন প্রকার। যথা –

(ক) প্রগত: পূর্ববর্র্তী ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন।

যেমন – পদ্ম > পদ্দ, চক্র > চক্ক, বিদ্যা > বিদ্দা, পক্ব > পক্ক, লগ্ন > লগ্গ।

(খ) পরাগত: পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন। বাংলায় সংস্কৃত সন্ধির বেশির ভাগই এ শ্রেণির।

যেমন – তৎ + জন্য > তজ্জন্য, উৎ + মুখ > উন্মুখ, তৎ + হিত = তদ্ধিত, ছিদ্ + ন > ছিন্ন, পাঁচ + শো > পাঁশ্শো, কাঁদ্ + না = কান্না।

(গ) অন্যোন্য: পরস্পরের প্রভাবে দুটো ধ্বনিই পরিবর্তিত হয়।

যেমন – সত্য > সচ্চ, বিদ্যা > বিজ্জা, উদ্শিষ্ট > উচ্ছিষ্ট।

৭. বিষমীভবন (Dissimilation): দুটি সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। এটি সমীভবনের বিপরীত প্রক্রিয়া।

যেমন – লাল > নাল, শরীর > শরীর, আরমারি > আলমারি, অভিভাবক > অবিভাবক, রবার > রবাট, ইসরার > ইসরাজ।

৮. ব্যঞ্জনচ্যুতি: পাশাপাশি সম উচ্চারণের দুটো ব্যঞ্জনধ্বনির একটি লোপ পাওয়াকে ব্যঞ্জনচ্যুতি/ধ্বনিচ্যুতি বলে।

যেমন – বউদিদি > বউদি, বড়দাদা > বড়দা, ছোটদাদা > ছোটদা।

৯. ব্যঞ্জনবিকৃতি: শব্দের মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনির আবির্ভাবকে ব্যঞ্জনবিকৃতি বলে।

যেমন – কবাট > কপাট, ধোবা > ধোপা, ধাইমা > দাইমা।

১০. অন্তর্হতি/ব্যঞ্জনলোপ: পদের মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়াকে অন্তর্হতি বলে।

যেমন – ফাল্গুন > ফাগুন, ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা, মজদুর > মজুর, কদম্ব > কদম, দাড়িম্ব > ডালিম, স্ফটিক > ফটিক।

১১. ধ্বনি বিপর্যয়/ধ্বনি বিপর্যাস (Metathesis): শব্দের মধ্যে দুটো ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে।

যেমন – বাক্স > বাস্ক, রিক্সা > রিস্কা, লাফ > ফাল, পিশাচ > পিচাশ, তলোয়ার>তরোয়াল।

১২. দ্বিত্বব্যঞ্জন/ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা (Long consonent): কখনও কখনও জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় একে দ্বিত্বব্যঞ্জন বলে।

যেমন – পাকা > পাক্কা, সকাল > সক্কাল, চাকা > চাক্কা, ছোট > ছোট্ট, শাবাশ > শাব্বাশ।

১৩. নাসিক্যভবন (Nasalization): নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি লোপের ফলে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি অনুনাসিক হওয়াকে নাসিক্যভবন বলে।

যেমন – সন্ধ্যা > সাঁঝ, দন্ত > দাঁত, কণ্টক > কাঁটা, সিন্দুর > সিঁদুর, অঞ্চল > আঁচল, চন্দ্র > চাঁদ, বন্ধন > বাঁধন।

১৪. অভিশ্রুতি (Umlaut): অপিনিহিতি প্রক্রিয়ায় যে ই বা উ-ধ্বনি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের আগে বসে; সেই ই বা উ-ধ্বনি যখন পাশাপাশি স্বরধ্বনিকে প্রভাবিত করে এবং নিজেও তার সাথে মিশে পরিবর্তিত হয়ে যায় তখন তাকে অভিশ্রুতি বলে। সকল সাধুভাষার ক্রিয়াপদ অভিশ্রুতির মাধ্যমে চলিত রূপ লাভ করে। অন্যভাবে বলা যায়, বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে অভিশ্রুতি বলে।

যেমন – বলিয়া >বইল্যা > বলে, হাঁটুয়া >হাঁউটা> হেঁটো, করিয়া >কইর‌্যা > করে, মাছুয়া >মাউছা> মেছো। এখানে মাঝেরগুলো অপিনিহিতি এবং পরেরগুলো অভিশ্রুতির উদাহরণ।

সন্ধি

সন্ধি শব্দের অর্থ সংযোগ বা মিলন। এর অপর নাম ধ্বনিসংযোগ। সন্নিহিত দুটো ধ্বনির মিলনের নামই সন্ধি। ইংরেজি Euphony কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে সন্ধি। বর্তমানে ইংরেজিতে সন্ধির প্রতিশব্দ হিসেবে Assimilation-কেই বেশি ব্যবহার করা হয়।

সন্ধির উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য:
উচ্চারণে সহজপ্রবণতা ও ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদনই সন্ধির মূল উদ্দেশ্য। সন্ধির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
ক) পাশাপাশি উভয় বর্ণের মিলনে একটি নতুন বর্ণের সৃষ্টি হয়।
খ) একটি বর্ণ লোপ পায়।
গ) একটি বর্ণ বদলে যায়।
ঘ) দুটি বর্ণ মিলে একটি বর্ণে মিলিত হয়।

সন্ধির প্রকারভেদ:
বাংলা ভাষায় সন্ধি প্রধানত দুই রকমের। যথা:
ক) খাঁটি বাংলা শব্দের সন্ধি (স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি)
খ) তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের সন্ধি (স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি)
উল্লেখ্য, তৎসম শব্দের সন্ধিই মূলত বর্ণ সংযোগের নিয়ম।

স্বরসন্ধি

স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে।

স্বরধ্বনি চেনার উপায়:
১. অ/আ + অ/আ = আ  (  া ) হয়।

যেমন – নর + অধম = নরাধম, হিম + আলয় = হিমালয়, যথা + অর্থ = যথার্থ, কারা + আগার = কারাগার।

২. অ/আ + ই/ঈ = এ (  ে) হয়।

যেমন – শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা, যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট, পরম + ঈশ = পরমেশ, মহা + ঈশ = মহেশ।

৩. অ/আ + উ/ঊ = ও  (   ে  া  ) হয়।

যেমন – সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়, যথা + উচিত = যথোচিত, গৃহ + ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব, গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।

৪. অ/আ + এ/ঐ = ঐ (  ৈ) হয়।

যেমন – জন + এক = জনৈক, সদা + এব = সদৈব, মত + ঐক্য = মতৈক্য, মহা + ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য।

৫. অ/আ + ও/ঔ = ঔ (  ৌ ) হয়।

যেমন – বন + ওষধি = বনৌষধি, মহা + ওষধি = মহৌষধি, পরম + ঔষধ = পরমৌষধ, মহা + ঔষধ = মহৌষধ।

৬. অ/আ + ঋ = ‘অর’ হয় এবং র রেফ (র্ ) রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে যুক্ত হয়।

যেমন – দেব + ঋষি = দেবর্ষি, মহা + ঋষি = মহর্ষি।

৭. অ/আ + ঋত = ‘আর’ হয় এবং র রেফ (র্ ) রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে যুক্ত হয়।

যেমন – শীত + ঋত = শীতার্ত, তৃষ্ণা + ঋত = তৃষ্ণার্ত।

৮. ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ (  ী ) হয়।

যেমন – অতি + ইত = অতীত, পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, সতী + ইন্দ্র = সতীন্দ্র, সতী + ঈশ = সতীশ।

৯. ই/ঈ + ই/ঈ ভিন্ন অন্য স্বর = (ই/ঈ) স্থলে য (  ্য ) হয়।

যেমন – অতি + অন্ত = অত্যন্ত, অতি + উক্তি = অত্যুক্তি, প্রতি + ঊষ = প্রত‚্যষ, মসি + আধার = মস্যাধার, প্রতি + এক = প্রত্যেক, নদী + অম্বু = নদ্যম্বু।

১০. উ/ঊ + উ/ঊ = ঊ (  ূ ) হয়।

যেমন – মরু + উদ্যান = মরূদ্যান, বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব, বধূ + উৎসব = বধূৎসব, ভ‚ + ঊর্ধ্ব = ভ‚র্ধ্ব

১১. উ/ঊ + উ/ঊ ভিন্ন অন্য স্বর = (উ/ঊ) স্থলে ব ( ব ) হয়।

যেমন – সু + অল্প = স্বল্প, অনু + ইত = অন্বিত, তনু + ঈ = তন্বী, অনু + এষণ = অন্বেষণ।

১২. ঋ + ঋ ভিন্ন অন্য স্বর = (ঋ) স্থলে ‘র’ হয়।

যেমন – পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়, পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ।

১৩. এ/ঐ + এ/ঐ ভিন্ন অন্য স্বর = (এ) স্থানে ‘অয়’ এবং (ঐ) স্থানে ‘আয়’ হয়।

যেমন – নে + অন = নয়ন, শে + অন = শয়ন, নৈ + অক = নায়ক, গৈ + অক = গায়ক।

১৪. ও/ঔ + ও/ঔ ভিন্ন অন্য স্বর = (ও) স্থানে ‘অব’ এবং (ঔ) স্থানে ‘আব’ হয়।

যেমন – পো + অন = পবন, গো + এষণা = গবেষণা, পো + ইত্র = পবিত্র, পৌ + অক = পাবক, নৌ + ইক = নাবিক, ভৌ + উক = ভাবুক।

ব্যঞ্জনসন্ধি

স্বরে-ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে ও ব্যঞ্জনে-ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। এ দিক থেকে ব্যঞ্জনসন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – ক. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি। খ. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি। গ. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।

ক. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি:

১. স্বরধ্বনি + ছ = ‘চ্ছ’ হয়।

যেমন – এক + ছত্র = একচ্ছত্র, কথা + ছলে = কথাচ্ছলে, পরি + ছদ = পরিচ্ছদ।

খ. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি:

১. ক্ চ্ ত্ ট্ প্ + স্বরধ্বনি = যথাক্রমে (গ্ জ্ ড্/ড়্ দ্ ব্) তথা বর্গীয় তৃতীয় ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়।

যেমন – দিক + অন্ত = দিগন্ত, ণিচ + অন্ত = ণিজন্ত, তৎ + অবধি = তদবধি, ষট + আনন = ষড়ানন, সুপ + অন্ত = সুবন্ত।

গ. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি:

১. ত/দ + চ/ছ = ত/দ স্থানে ‘চ্’ হয়।

যেমন – শরৎ + চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র, উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ।

২. ত/দ + জ/ঝ = ত/দ স্থানে ‘জ্’ হয়।

যেমন – বিপদ + জাল = বিপজ্জাল, সৎ + জন = সজ্জন, কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা।

৩. ত/দ + ট/ঠ = ত/দ স্থানে ‘ট্’ হয়।

যেমন – বৃহৎ + টীকা = বৃহট্টীকা, তৎ + টীকা = তট্টীকা।

৪. ত/দ + ড/ঢ = ত/দ স্থানে ‘ড্’ হয়।

যেমন – উৎ + ডীন = উড্ডীন, উৎ + ডয়ন = উড্ডয়ন, বৃহৎ + ঢক্কা = বৃহড্ঢক্কা।

৫. ত/দ + ন/ম = ত/দ স্থানে ‘ন’ হয়।

যেমন – জগৎ + নাথ = জগন্নাথ, তদ + মধ্যে = তন্মধ্যে, মৃৎ + ময় = মৃন্ময়।

৬. ত/দ + ল = ত/দ স্থানে ‘ল্’ হয়।

যেমন – উৎ + লাস = উল্লাস, উৎ + লেখ = উল্লেখ।

৭. ত/দ + শ = ত/দ স্থানে ‘চ্’ এবং শ এর স্থানে ‘ছ্’ হয়, অর্থাৎ (চ্ছ) হয়।

যেমন – উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস, তদ + শক্তি = তচ্ছক্তি।

৮. ত/দ + হ = ত/দ স্থানে ‘দ্’ এবং হ স্থানে ‘ধ্’ হয়, অর্থাৎ (দ্ধ) হয়।

যেমন – উৎ + হার = উদ্ধার, পদ + হতি = পদ্ধতি।

৯. দ/ধ + ক/প/স = দ/ধ স্থানে ‘ৎ’ হয়।

যেমন – হৃদ + পিণ্ড = হৃৎপিণ্ড, ক্ষুধ + পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা, তদ + সম = তৎসম।

১০. চ/জ + ন = ‘ন’ স্থানে ‘ঞ’ হয়।

যেমন – যাচ + না = যাচ্ঞা, যজ + ন = যজ্ঞ, রাজ + নী = রাজ্ঞী।

১১. বর্গের প্রথম ধ্বনি ( ক চ ট ত প) + বর্গের তৃতীয় (গ জ ড দ ব) ও চতুর্থ (ঘ ঝ ঢ ধ ভ) ধ্বনি এবং (য র ল ব হ) বর্ণ = বর্গের প্রথম ধ্বনি তৃতীয় ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়।

যেমন – বাক + দান = বাগদান, উৎ + যোগ = উদ্যোগ, তৎ + রূপ = তদ্রুপ, দিক + গজ = দিগগজ, ষট + যন্ত্র = ষড়যন্ত্র।

১২. বর্গের প্রথম ধ্বনি ( ক চ ত ট প) + ন/ম = বর্গের প্রথম ধ্বনি পঞ্চম ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়।

যেমন – দিক + নির্ণয় = দিঙ্নির্ণয়, তৎ + মধ্যে = তন্মধ্যে, চিৎ + ময় = চিন্ময়।

১৩. ম + যে কোন বর্গীয় ধ্বনি = ‘ম’ এর স্থানে সে বর্গের পঞ্চম বর্ণ।

যেমন – সম + তাপ = সন্তাপ, সম + ন্যাস = সন্ন্যাস, শম + কা = শঙ্কা। কিন্তু আধুনিক বাংলায় ‘ম’ এর পরে কণ্ঠ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘ম’ এর স্থানে প্রায়ই ‘ঙ’ না হয়ে অনুস্বার ( ং ) হয়।

যেমন – সম + গত = সংগত, অহম + কার = অহংকার, সম + খ্যা = সংখ্যা।

১৪. ম + অন্তস্থ ( য র ল ব)/উষ্ণ (শ ষ স হ) বর্ণ = ‘ম’ এর স্থানে অনুস্বার ( ং ) হয়।

যেমন – সম + রক্ষণ = সংরক্ষণ, সম + লাপ = সংলাপ, সম + হার = সংহার, সম + শয় = সংশয় (ব্যতিক্রম – সম + রাট = সম্রাট)।

১৫. ষ + ত/থ = ত/থ স্থানে যথাক্রমে ট/ঠ হয়।

যেমন – বৃষ + তি = বৃষ্টি, ষষ + থ = ষষ্ঠ, আকৃষ + ত = আকৃষ্ট।

১৬. বিশেষ নিয়মে সাধিত কতগুলো ব্যঞ্জনসন্ধি।

যেমন – উৎ + স্থান = উত্থান, উৎ + স্থাপন = উত্থাপন, সম + কৃত = সংস্কৃত (সংস্কৃতি), সম + কার = সংস্কার, পরি + কার = পরিষ্কার (পরিষ্কৃত)।

বিসর্গসন্ধি

পূর্বপদের বিসর্গের সাথে পরপদের স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধিকে বিসর্গ সন্ধি বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ ‘র’ এবং ‘স’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো বিসর্গ ( ঃ )। বিসর্গ সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –

ক) র- জাত বিসর্গ (র- এর পরিবর্তে বিসর্গ)। যেমন – অন্তর…অন্তঃ, প্রাতর…প্রাতঃ, পুনর…পুনঃ, অহর…অহঃ।
খ) স- জাত বিসর্গ (স- এর পরিবর্তে বিসর্গ)। যেমন – নমস…নমঃ, পুরস…পুরঃ, শিরস…শিরঃ, মনস…মনঃ, তিরস…তিরঃ, তপস…তপঃ।

বিসর্গসন্ধি + স্বরসন্ধি:

১. ‘অ’ ধ্বনি + বিসর্গ (  ঃ ) + ‘অ’ ধ্বনি = তিনটি মিলে ও-কার (  ো ) হয়।

যেমন – ততঃ + অধিক = ততোধিক, শতঃ + অধিক = শতোধিক, মনঃ + অভিলাষ = মনোভিলাষ।

বিসর্গসন্ধি + ব্যঞ্জনসন্ধি:

১. অ-কারের পরস্থিত স-জাত বিসর্গ + বর্গীয় তৃতীয়/চতুর্থ/পঞ্চম বর্ণ অথবা (হ য ব র ল) = অ-কার ও স-জাত বিসর্গের পরিবর্তে ও-কার হয়।

যেমন – তিরঃ + ধান = তিরোধান, মনঃ + হর = মনোহর, মনঃ + জগৎ = মনোজগৎ।

২. অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গ + বর্গীয় তৃতীয়/চতুর্থ/পঞ্চম বর্ণ অথবা ‘হ য ব র ল’ অথবা স্বরধ্বনি = বিসর্গের স্থানে র্‘’ হয়।

যেমন – অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান, অহঃ + অহ = অহরহ, অন্তঃ + গত = অন্তর্গত, পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত, পুনঃ + আয় = পুনরায়।

৩. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের পরে বিসর্গ + বর্গীয় তৃতীয়/চতুর্থ/পঞ্চম বর্ণ অথবা ‘হ য ব র ল’ অথবা অ/আ = বিসর্গের স্থানে র্‘’ হয়।

যেমন – নিঃ + আকার = নিরাকার, আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ, দুঃ + যোগ = দুর্যোগ।
ব্যতিক্রম – ই/উ স্বরের পরে বিসর্গ + র = বিসর্গ লোপ পায় এবং বিসর্গের পূর্ববর্তী হ্রস্ব স্বর দীর্ঘ হয়।

যেমন – নিঃ + রব = নীরব, নিঃ + রস = নীরস, এরূপ – নীরোগ, নীরত, নীরক্ত।

৪. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের পরে বিসর্গ + ক খ প ফ = বিসর্গের স্থানে ‘ষ’ হয়।

যেমন – নিঃ + কাম = নিষ্কাম, দুঃ + কর = দুষ্কর, বহিঃ + কার = বহিষ্কার, আবিঃ + কার = আবিষ্কার, চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ।

৫. অ/আ ধ্বনির পরে বিসর্গ + ক খ প ফ = বিসর্গের স্থানে ‘স’ হয়।

যেমন – নমঃ + কার = নমস্কার, পুরঃ + কার = পুরস্কার, তিরঃ + কার = তিরস্কার, পদঃ + খলন = পদস্খলন।

৬. বিসর্গ (  ঃ ) + চ/ছ = বিসর্গের স্থানে ‘শ’ হয়।

যেমন – নিঃ + চয় = নিশ্চয়, শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ।

৭. বিসর্গ (  ঃ ) + ট/ঠ = বিসর্গের স্থানে ‘ষ’ হয়।

যেমন – নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর, ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার।

৮. বিসর্গ (  ঃ ) + ত/থ = বিসর্গের স্থানে ‘স’ হয়।

যেমন – দুঃ + তর = দুস্তর।

৯. বিসর্গ (  ঃ ) + যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি (স্ত, স্থ, স্প) = বিসর্গ লোপ পায়।

যেমন – নিঃ + স্তব্ধ = নিস্তব্ধ, দুঃ + স্থ = দুস্থ, নিঃ + স্পন্দ = নিস্পন্দ।

১০. কতিপয় সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না।

যেমন – অধঃপাত = অধঃ + পাত, অধঃপতন = অধঃ + পতন, দুঃখ = দুঃ + খ, অন্তঃকরণ = অন্তঃ + করণ, প্রাতঃকাল = প্রাতঃ + কাল, মনঃকষ্ট = মনঃ + কষ্ট, শিরঃপীড়া = শিরঃ + পীড়া, অতঃপর = অতঃ + পর, নিঃসংশয় = নিঃ + সংশয়, দুঃশাসন = দুঃ + শাসন।

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি

সন্ধির প্রচলিত নিয়ম না মেনে যে সন্ধি হয় তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যে শব্দগুলো বাংলা নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না অর্থাৎ যে শব্দগুলোর সংস্কৃত নিয়মই বাংলা ভাষায় প্রযোজ্য; ব্যাকরণের ভাষায় তা-ই নিপাতনে সিদ্ধ।

স্বরসন্ধি

কুলটা = কুল + অটাশারঙ্গ = শার + অঙ্গ
গবাক্ষ = গো + অক্ষবিম্বোষ্ঠ = বিম্ব + ওষ্ঠ
গবেশ্বর = গো + ঈশ্বরঅক্ষৌহিণী = অক্ষ + ঊহিণী
প্রেষণ = প্র + এষণগবাস্থি = গো + অস্থি
শারদ = শার + অদগবেন্দ্র = গো + ইন্দ্র
মার্তণ্ড = মার্ত + অণ্ডঅন্যান্য = অন্য + অন্য
পরোক্ষ = পর + অক্ষদশার্ণ = দশ + ঋণ
শুদ্ধোদন = শুদ্ধ + ওদনরক্তোষ্ঠ = রক্ত + ওষ্ঠ
প্রৌঢ় = প্র + ঊঢ়স্বৈর = স্ব + ঈর
স্বীয় = স্ব + ঈয়স্বৈরিণী = স্ব + ঈরিণী

ব্যঞ্জনসন্ধি

মনীষা = মনস্ + ঈষাহিংসা = হিনস্ + আ
তস্কর = তৎ + করহিরণ্ময় = হিরণ্য + ময়
গোষ্পদ = গো + পদউচ্ছন্ন = উৎ + ছন্ন
সিংহ = হিনস্ + অবাগেশ্বরী = বাক্ + ঈশ্বরী
বৃহস্পতি = বৃহৎ + পতিআশ্চর্য = আ + চর্য
পরস্পর = র্প + পরদ্যুলোক = দিব্ + লোক
পতঞ্জলি = পতৎ + অঞ্জলিবিশ্বামিত্র = বিশ্ব + মিত্র
পশ্চার্ধ = পশ্চাৎ + অর্ধএকাদশ = এক্ + দশ
পুংলিঙ্গ = পুমস্ + লিঙ্গপ্রায়শ্চিত্র = প্রায়্ + চিত্র
বনস্পতি = বন্ + পতিষোড়শ = ষট্ + দশ

বিসর্গসন্ধি

অহর্পতি = অহঃ + পতিঅহর্নিশ = অহন >অহঃ + নিশা

নমুনা প্রশ্ন

১. স্নান > সিনান কোন নিয়মে হয়েছে – 

ক) অন্তর্হতি

খ) সম্প্রকর্ষ

গ) স্বরাগম

ঘ) অভিশ্রুতি

উত্তর: গ

২. অন্তর্হতির অপর নাম কি?

ক) ব্যঞ্জনচ্যুতি

খ) ব্যঞ্জনলোপ

গ) ব্যঞ্জনবিকৃতি

ঘ) সমীকরণ

উত্তর: খ

৩. নিচের কোনটি সমীভবনের উদাহরণ?

ক) মোজা > মুজো

খ) সত্য > সচ্চ

গ) সত্য > সইত্য

ঘ) চাকা > চাক্কা

উত্তর: খ

৪. ধ্বনি বিপর্যয়ের উদাহরণ – 

ক) পিশাচ> পিচাশ

খ) মজদুর > মজুর

গ) ইসরার > ইসরাজ

ঘ) ধাইমা > দাইমা

উত্তর: ক

৫. একই স্বরের পুনরাবৃত্তি না করে মাঝখানে স্বরধ্বনি যুক্ত করাকে কী বলে?

ক) অপিনিহিতি

খ) সমীভবন

গ) সম্প্রকর্ষ

ঘ) অসমীকরণ

উত্তর: ঘ

৬. কোনটি স্বরভক্তি?

ক) স্ত্রী > ইস্ত্রী

খ) ধর্ম > ধরম

গ) আজি > আইজ

ঘ) দেশি > দিশি

উত্তর: খ

৭. পদের মাঝে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে কি বলে?

ক) ব্যঞ্জনবিকৃতি

খ) ব্যঞ্জনচ্যুতি

গ) অন্তর্হতি

ঘ) অভিশ্রুতি

উত্তর: গ

৮. Long consonant এর ইংরেজি পরিভাষা – 

ক) যৌগিক স্বর

খ) ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা

গ) যুক্ত ব্যঞ্জন

ঘ) ব্যঞ্জনসঙ্গতি

উত্তর: খ

৯. নিম্নের কোনটিতে স্বরধ্বনির পরিবর্তন হয়?

ক) সমীভবন

খ) সম্প্রকর্ষ

গ) ধ্বনি বিপর্যয়

ঘ) বিষমীভবন

উত্তর: খ

১০. কোনটি ধ্বনি পরিবর্তন?

ক) চাচা > চাচী

খ) স্ত্রী > ইস্ত্রি

গ) চুলা > চুলো

ঘ) নাক > কান

উত্তর: গ

১১. “স্বপ্নালু চোখে স্বপ্ন নাবতো তার।” বাক্যে ‘নাবতো’ ধ্বনি পরিবর্তনের কোন নিয়মে হয়েছে?

ক) সমীভবন

খ) ব্যঞ্জনবিকৃতি

গ) ধ্বনি বিপর্যয়

ঘ) অভিশ্রুতি

উত্তর: খ

১২. ‘ধরনা > ধন্না’ এটি কী ধরনের ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরণ?

ক) স্বরসঙ্গতি

খ) অপিনিহিতি

গ) স্বরভক্তি

ঘ) সমীভবন

উত্তর: ঘ

১৩. নিচের কোনটি স্বরসঙ্গতির উদাহরণ?

ক) জন্ম > জনম

খ) হিসাব > হিসেব

গ) মুক্তা> মুকুতা

ঘ) কন্যা > কইন্যা

উত্তর: খ

১৪. ‘অলাবু থেকে লাবু’ হওয়ার কারণ – 

ক) বর্ণাগম

খ) বর্ণলোপ

গ) বর্ণ বিপর্যয়

ঘ) অন্তর্হতি

উত্তর: খ

১৫. ‘উৎ + মুখ > উন্মুখ’ ধ্বনি পরিবর্তনের কোন নিয়মে – 

ক) সমীভবন

খ) অসমীকরণ

গ) অভিশ্রুতি

ঘ) স্বরভক্তি

উত্তর: ক

১৬. ভুল সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?

ক) আ + চর্য = আশ্চর্য

খ) দিব + লোক = দ্যুলোক

গ) উৎ + ধার = উদ্ধার

ঘ) শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ

উত্তর: গ

১৭. ‘অহরহ’ এর সঠিক বিচ্ছেদ কোনটি?

ক) অহঃ + অহ

খ) অহঃ + রহ

গ) অহ + অহ

ঘ) অহঃ + অহঃ

উত্তর: ক

১৮. ‘ব্যুৎপত্তি’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?

ক) বি + পত্তি

খ) বি + উৎপত্তি

গ) বুদ + পত্তি

ঘ) বুৎ + উৎপত্তি

উত্তর: খ

১৯. ‘সদ্যোজাত’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) সদ্য + জাত

খ) সদ্যঃ + জাত

গ) সদ্যা + জাত

ঘ) সদাঃ + জাত

উত্তর: খ

২০. ‘অকুতোভয়’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কী?

ক) অকুত + ভয়

খ) অকুতো + ভয়

গ) অকুতঃ + ভয়

ঘ) অকুতঃ + অভয়

উত্তর: গ

২১. ‘অভীষ্ট’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কী?

ক) অভি + ইষ্ট

খ) অভী + ঈষ্ট

গ) অভী + ইষ্ট

ঘ) অভি + বিষ্ট

উত্তর: ক

২২. ‘গো + অক্ষ = গবাক্ষ’ কোন প্রকারের সন্ধি?

ক) স্বরসন্ধি

খ) বিসর্গসন্ধি

গ) নিপাতনে সিদ্ধ

ঘ) ব্যঞ্জনসন্ধি

উত্তর: গ

২৩. ‘ষড়ঋতু’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?

ক) ষড় + ঋতু

খ) ষট + ঋতু

গ) ষড়– + ঋতু

ঘ) ষট্ + ঋতু

উত্তর: ঘ

২৪. ‘সংশপ্তক’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) সম + শপ্তক

খ) সং + শপ্তক

গ) সম + সপ্তক

ঘ) সমশ + অপ্তক

উত্তর: ক

২৫. ‘ততোধিক’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?

ক) তত + ধিক

খ) তত + অধিক

গ) ততঃ + অধিক

ঘ) ততঃ + ধিক

উত্তর: গ

২৬. নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কোনটি?

ক) বাক + দান = বাগদান

খ) উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ

গ) পর + পর = পরস্পর

ঘ) সম + সার = সংসার

উত্তর: গ

২৭. পর্যালোচনা শব্দাটির সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) পর্যা + আলোচনা

খ) পরি + আলোচনা

গ) পর + আলোচনা

ঘ) পর্য + আলোচনা

উত্তর: খ

২৮. স্বাগত এর সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) স্বা + গত

খ) সু + গত

গ) সু + আগত

ঘ) স্ব + আগত

উত্তর: গ

২৯. নাবিক এর সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) নো + ইক

খ) নৌ + ইক

গ) নবো + ইক

ঘ) নো + ইক

উত্তর: খ

৩০. পদ্ধতি এর সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) পদ + ধতি

খ) পদ + হতি

গ) পৎ + হতি

ঘ) পথ + ধতি

উত্তর: খ

৩১. সংবিধান এর সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) সং + বিধান

খ) সং + অবিধান

গ) সম + বিধান

ঘ) সন + বিধান

উত্তর: গ

৩২. মনোযোগ এর সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) মন + যোগ

খ) মনঃ + যোগ

গ) মনোঃ + যোগ

ঘ) মন + উৎযোগ

উত্তর: খ

৩৩. দ্যুলোক এর সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) দিব + লোক

খ) দিবা + লোক

গ) দ্বি + লোক

ঘ) দ্বিব + লোক

উত্তর: ক

৩৪. বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি –

ক) পরিষ্কৃত

খ) পতঞ্জলি

গ) নীরব

ঘ) পুরস্কার

উত্তর: ক

৩৫. শয়ন শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) শো + অন

খ) শে + অন

গ) শৈ + অন

ঘ) শে + য়ন

উত্তর: খ

৩৬. কোনটি নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি?

ক) উত্থাপন

খ) পরিষ্কার

গ) কুলটা

ঘ) একাদশ

উত্তর: ঘ

৩৭. ততোধিক কোন প্রকারের সন্ধি?

ক) বাংলা স্বরসন্ধি

খ) ব্যঞ্জনসন্ধি

গ) বিসর্গ সন্ধি

ঘ) তৎসম স্বরসন্ধি

উত্তর: গ

৩৮. দুর্দশা এর সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) দুর + দশা

খ) দুর্দ + শা

গ) দুঃ + দশা

ঘ) দুরঃ + দশা

উত্তর: গ

৩৯. ‘স্বয়ংবরা’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হলো – 

ক) স্বয়ং + বরা

খ) স্বয়ম্ + বরা

গ) স্বয় + বরা

ঘ) স্বয়ন্ + বরা

উত্তর: খ

৪০. ‘পর্যবেক্ষণ’ এর সন্ধিবিচ্ছেদ – 

ক) পরি + বেক্ষণ

খ) পর + অবেক্ষণ

গ) পর্য + বেক্ষণ

ঘ) পরি + অবেক্ষণ

উত্তর: ঘ

৪১. কোনটি নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গসন্ধি নয় –

ক) অহরহ

খ) গীর্পতি

গ) অহর্নিশ

ঘ) অহর্পতি

উত্তর: ক

৪২. দুরন্ত শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ – 

ক) দুঃ + রন্ত

খ) দু + অন্ত

গ) দুঃ + অন্ত

ঘ) দুর + অন্ত

উত্তর: গ

৪৩. আবির্ভাব শব্দটি গঠিত হয়েছে – 

ক) সমাস দ্বারা

খ) প্রত্যয় দ্বারা

গ) উপসর্গ দ্বারা

ঘ) সন্ধি দ্বারা

উত্তর: ঘ

৪৪. কোনটি বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি নয়?

ক) পুরস্কার

খ) সংস্কার

গ) পরিষ্কৃত

ঘ) সংস্কৃতি

উত্তর: ক

৪৫. নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির উদাহরণ কোনটি?

ক) আ + চর্য = আশ্চর্য

খ) চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ

গ) উৎ + লাস = উল্লাস

ঘ) নিঃ + রত = নীরত

উত্তর: ক

৪৬. উত্তমর্ণ এর সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) উত্তম + অর্ণ

খ) উত্তম + ঋণ

গ) উত্তম + ঋত

ঘ) উত্তম + রণ

উত্তর: খ

৪৭. সন্ধিতে কোনটির মিলন ঘটে?

ক) শব্দের

খ) অর্থের

গ) ধ্বনির

ঘ) কোনোটাই না

উত্তর: গ

৪৮. বিবিয়ানি শব্দটি ব্যাকরণের কোন নিয়ম থেকে আসছে?

ক) সন্ধি

খ) সমাস

গ) প্রত্যয়

ঘ) লিঙ্গ

উত্তর: গ

৪৯. বহ্ন্যুৎসব শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ –

ক) বহ্ন্যু + উৎসব

খ) বহ্নি + উৎসব

গ) বহ্ন্যু + উৎসব

ঘ) বহ্ন্যুৎ + সব

উত্তর: খ

৫০. কোনটি ভুল?

ক) ণিচ + অন্ত = ণিজন্ত

খ) গো + আদি = গবাদি

গ) সম + চয় = সঞ্চয়

ঘ) অন্ত + গত = অন্তর্গত

উত্তর: ঘ

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খন্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৬৮)
৮. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৯. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
১০. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর ১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)

BSC Bangla Lecture – 8

ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ব্যাকরণের প্রাথমিক আলোচনা, ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, নমুনা প্রশ্ন

ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ

ব্যাকরণ (Grammar) বলতে ভাষার অবকাঠামোগত গবেষণা ও উন্নয়নকে বুঝায়। ব্যাকরণ ভাষার সংবিধান। ভাষা ব্যাকরণের প্রাণ। ‘ব্যাকরণ’ শব্দটি তৎসম শব্দ। ব্যাকরণ (বি + আ + কৃ + অন) শব্দটি উপসর্গ ও প্রত্যয়ের নিয়মে গঠিত। ব্যাকরণের বুৎপত্তিগত অর্থ ‘বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’। ভাষাকে ভিত্তি করে ব্যাকরণশাস্ত্র রচিত হয়। ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সাধারণত যে শাস্ত্রে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়তাকে ব্যাকরণ বলে। বাংলা ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অবকাঠামো যে শাস্ত্রে আলোচিত হয় তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।

ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

প্রতিটি ভাষারই মৌলিক অংশ চারটি: ধ্বনি (Sound), শব্দ (Word), বাক্য (Sentence) ও অর্থ (Meaning)। পৃথিবীর সব ভাষার ব্যাকরণে এ চারটি মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয় চারটি: ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology), শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology), বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) ও অর্থতত্ত্ব বা বাগর্থ বিজ্ঞান (Semantics)। এ ছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography), ছন্দোবিজ্ঞান ও অলংকারশাস্ত্র (Prosody & Rhetoric) প্রভৃতিও বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।

  • ধ্বনিতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, যুক্তবর্ণ, বর্ণ সংযোগ, বর্ণ বিশ্লেষণ, ধ্বনির উচ্চারণ বিধি, ণত্ব ও ষত্ব বিধান, ধ্বনি পরিবর্তন, সন্ধি ও বাংলা বানানের নিয়ম।
  • শব্দতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: শব্দের শ্রেণিবিভাগ, সংখ্যাবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, লৈঙ্গিক শব্দ, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ, একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ, পারিভাষিক শব্দ, বচন, পদাশ্রিত নির্দেশক, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার ভাব, বাংলা অনুজ্ঞা, পুরুষ, অতিশায়ন, কারক ও বিভক্তি, অনুসর্গ, উপসর্গ, ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, সমাস, বাগধারা, প্রবাদ প্রবচন, সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ।
  • বাক্যতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: বাক্য প্রকরণ, উদ্দেশ্য ও বিধেয়, বাক্য সংকোচন, বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম, উক্তি, বাচ্য ও বিরাম চিহ্ন।
  • অর্থতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের শ্রেণিবিন্যাস ও অর্থ পরিবর্তন।

ব্যাকরণের প্রাথমিক আলোচনা

  • ধ্বনি (Sound): মানুষের বাক-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজ বা মুখে উচ্চারিত শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে ধ্বনি বলে। ধ্বনি ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, ভাষার মৌখিক রূপ ও ভাষার মূল ভিত্তি বা উপাদান। ভাষা সৃষ্টি হয় ধ্বনির সাহায্যে এবং ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
  • বাগযন্ত্র (Voice Organ): গলনালী, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহবা, তালু, দন্ত, নাসিকা, ওষ্ঠ ইত্যাদি বাক-প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বাগযন্ত্র বলে। ধ্বনি উচ্চারণের মূল উপকরণ ২ টি: জিহবা ও ওষ্ঠ।
  • ধ্বনিমূল (Voice Organ): বাক-প্রত্যঙ্গজাত ধ্বনির সূক্ষ্মতম মৌলিক অংশ বা একককে ধ্বনিমূল বলে।
  • বর্ণ (Letter): ধ্বনির লিখিত রূপ বা ধ্বনি নির্দেশক সাংকেতিক চিহ্নকে বর্ণ বলে। ধ্বনির লিখিত রূপকে হরফ বা লিপিও (Script) বলা হয়।
  • অক্ষর (Syllable): শব্দের মাঝে স্বরধ্বনির অবস্থান বা নিঃশ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একবারে একত্রে উচ্চারিত হয় তাকে অক্ষর বলে। যেমন: ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দে (বিশ্ + শো + বিদ্ + দা + লয়্) এ পাঁচটি অক্ষর আছে। অক্ষর দু প্রকার:
    স্বরান্ত অক্ষর বা মুক্তাক্ষর (Opened Syllable): যে অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন: ভালোবাসি তোমাকে। এ বাক্যর প্রতিটি অক্ষরই মুক্তাক্ষর।
    ব্যঞ্জনান্ত অক্ষর বা বদ্ধাক্ষর (Closed Syllable): যে অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে বদ্ধাক্ষর বলে। যেমন: সোমবার দিন হরতাল। এ বাক্যের প্রতিটি অক্ষরই বদ্ধাক্ষর।
  • বর্ণমালা(Alphabet): বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণগুলির লিখিত সমষ্টিকে বর্ণমালা বলে।
  • বর্ণ সংযোগ: বর্ণে বর্ণে যোগ করাকে বর্ণ সংযোগ বলে। বিভিন্ন বর্ণ সংযোগে শব্দ সৃষ্টি হয়। যেমন: ক + ব্ + ই = কবি।
  • বর্ণ বিশ্লেষণ: শব্দের বর্ণগুলি পৃথক পৃথক করে দেখানোর নাম বর্ণ বিশ্লেষণ। যেমন: বিষ্ণু = ব্ + ই + ষ্ + ণ্ + উ।
  • মাত্রা: বাংলা বর্ণমালার কোনো কোনো বর্ণের উপরে যে রেখা বা কষি দেওয়া হয় তাকে মাত্রা বলে।
  • হসন্ত চিহ্ন: উচ্চারণের সুবিধার্থে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি ‘অ’ যুক্ত করা হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণ যুক্ত না হলে অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে কারযুক্ত বর্ণ আলাদা করলে ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে একটি বিশেষ চিহ্ন দেওয়া হয়, একে হসন্ত বা হলন্ত চিহ্ন বলে। যেমন: ক = ক্ + অ; বি = ব্ + ই।
  • রূপ (Morpheme): শব্দের ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ অংশকে রূপ বলে। এজন্য শব্দতত্ত্ব কে রূপতত্ত্ব বলা হয়।
  • শব্দ (Word): কিছু ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে বা বর্ণ একত্রে বসে যদি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বলে। শব্দ ভাষা ও বাক্যের মূল উপাদান, বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক বা প্রাণ।
  • পদ (Parts of Speech): বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দকেই পদ বলে। যেমন: অনুষ্ঠানে। আমি অনুষ্ঠান দেখেছি। প্রথম উদাহরণে অনুষ্ঠানে ‘এ’ বিভক্তি এসেছে এবং পরবর্তী উদাহরণের প্রতিটি শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং এগুলো পদ।
  • বাক্য (Sentence): যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে। বাক্য ভাষার মূল উপকরণ বা প্রাণ।
  • অর্থ (Meaning): ভাষার আদান-প্রদান বা ভাব বিনিময়ের সাথে অর্থের সম্পর্ক। শব্দ বা বাক্যের অর্থ না বুঝলে মনেব ভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ

  • বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলো প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
    ১. স্বরধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরে কোথাও কোনো প্রকার বাঁধা না পায়, অথবা যে সকল ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় তাদেরকে স্বরধ্বনি (Vowel sound) বলে। আবার কিছু কিছু ধ্বনি আছে যাদের অবস্থান স্বর ও ব্যঞ্জনের মাঝামাঝি এদেরকে অর্ধস্বরধ্বনি (Semi-vowel) বলে। বাংলায় অর্ধস্বরের সংখ্যা চারটি। (ই উ এ ও)।
    ২. ব্যঞ্জনধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরে কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাঁধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, অথবা যে সকল ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্যে উচ্চারিত হয় তাদেরকে ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant sound) বলে।
  • বাংলা ভাষার বর্ণগুলো দুই প্রকার। যথা-
    ১. স্বরবর্ণ: স্বরধ্বনি-দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে স্বরবর্ণ বলে। স্বরবর্ণ মোট ১১ টি। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘কার’ বলা হয়। ‘কার’ যুক্ত স্বরধ্বনির সংখ্যা ১০ টি। ‘অ’ এর কোনো কার নেই। প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে একটি ‘অ’ লুপ্ত অবস্থায় থাকে। এ জন্য ‘অ’-কে নিলীন বর্ণ বলে।
    ২. ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনধ্বনি-দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ মোট ৩৯টি কিন্তু প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৫ টি। (ৎ, ং, ঃ, ঁ) এই চারটি প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণ নয়। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘ফলা’ বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ফলা’ মোট ৬ টি। যেমন- ব ফলা, ম ফলা, ল ফলা, র ফলা, য ফলা, ন ফলা।
  • বাংলা বর্ণমালা:
    বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০ টি সরল বা অসংযুক্ত বর্ণ আছে।
    স্বরবর্ণ- ১১ টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ- ৩৯ টি।
    স্বরবর্ণ: অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ = ১১ টি।
    ব্যঞ্জনবর্ণ: ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ময র ল শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ ং ঃ ঁ = ৩৯ টি।
    স্বরবর্ণ
  • গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বরধ্বনি ২ প্রকার। যেমন-
    ১. মৌলিক স্বরধ্বনি: যে ধ্বনিগুলো একক স্বরের অধিকারী অর্থাৎ যাদেরকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বা একক স্বরধ্বনি বলে। মৌলিক স্বরধ্বনি ৭ টি। (অ আ ই উ এ ও অ্যা)।
    ২. যৌগিক স্বরধ্বনি: যে ধ্বনিগুলো একটি স্বর ও একটি অর্ধস্বরের সমন্বয়ে গঠিত অর্থাৎ যাদেরকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যৌগিক স্বরধ্বনি ২৫ টি। কিন্তু স্বরবর্ণে যৌগিক স্বরের প্রতীকী বর্ণ ২ টি। (ঐ ঔ)। যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর, দ্বৈতস্বর বা দ্বি-স্বর (Diphthong) বলা হয়।
  • উচ্চারণ-কাল ও সময়অনুসারে স্বরধ্বনি ২ প্রকার। যেমন-
    ১. হ্রস্ব-স্বর: অল্প সময়ে যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা যায় তাকে হ্রস্বস্বর বলে। হ্রস্ব স্বর ৪ টি। (অ ই উ ঋ)
    ২. দীর্ঘস্বর: যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণে অধিক সময় লাগে তাকে দীর্ঘস্বর বলে। দীর্ঘ স্বর ৭ টি। (আ ঈ ঊ এ ঐ ও ঔ)
    ব্যঞ্জনবর্ণ
  • উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ৫ প্রকার। যথা-
উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী নামবর্ণসমূহউচ্চারণ-স্থান
কণ্ঠ্য/ জিহবামূলীয় বর্ণক খ গ ঘ ঙজিহবামূল
তালব্য বর্ণচ ছ জ ঝ ঞ শ য য়অগ্রতালু
মূর্ধন্য/পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণট ঠ ড ঢ ণ ষ র ড় ঢ়পশ্চাৎ দন্তমূল
দন্ত্য বর্ণত থ দ ধ ন ল সঅগ্র দন্তমূল
ওষ্ঠ্য বর্ণপ ফ ব ভ মওষ্ঠ/দুই ঠোঁট
  • উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ২ প্রকার। যথা-
    ১. অঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না তাকে বলা হয় অঘোষ (Unvoiced) ধ্বনি ।
    ২. ঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় তাকে বলে ঘোষ (Voiced) ধ্বনি।
  • ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনিগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-
    ১. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে তাকে বলে অল্পপ্রাণ (Unaspirated) ধ্বনি।
    ২. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে তাকে বলে মহাপ্রাণ (Aspirated) ধ্বনি।
    ৩. নাসিক্য ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নাক দিয়ে ফুসফুসতাড়িত বাতাস বের হয় তাকে বলে নাসিক্য (Nasal) ধ্বনি।
  • নিম্নে অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ এবং অঘোষ ও ঘোষ স্পর্শব্যঞ্জন ও নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো ছকে দেখানো হলো:
অঘোষঘোষ
অল্প
প্রাণ
মহা
প্রাণ
অল্প
প্রাণ
মহা
প্রাণ
নাসিক্য
  • উল্লেখ্য, ঃ  (বিসর্গ) হলো ‘হ’ এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। হ এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু ঃ এর উচ্চারণ অঘোষ। তবে ধ্বনিগত প্রতিবেশের কারণে ‘হ’ কখনো অঘোষ আবার কখনো ঘোষবৎ উচ্চারিত হয়। শ, স হলো অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি।
  • ব্যঞ্জনবর্ণের পরিচয়
    ব্যঞ্জনবর্ণে বর্গ বাগুচ্ছ ৫ টি। যেমন- ক-বর্গ, চ-বর্গ, ত-বর্গ, ট-বর্গ ও প-বর্গ। বর্গীয়ধ্বনি ২৫ টি। যেমন- ক খ গ ঘ ঙ, চ ছ জ ঝ ঞ, ট ঠ ড ঢ ণ, ত থ দ ধ ন, প ফ ব ভ ম।
    ব্যঞ্জনবর্ণে স্পৃষ্ট বা স্পর্শধ্বনির (Plosive) সংখ্যা সর্বাধিক ১৬ টি। যেমন- ক খ গ ঘ, ট ঠ ড ঢ, ত থ দ ধ, প ফ ব ভ

 

পরাশ্রয়ী বর্ণং ঃ
অনুনাসিক বা সানুনাসিক বর্ণ
নাসিক্য বর্ণঙ ঞ ণ ন ম
তাড়নজাত বর্ণড় ঢ়
কম্পনজাত বর্ণ
পার্শ্বিক বা তরল বর্ণ
উষ্ম বা শিস বর্ণশ ষ স হ
অন্তঃস্থ বর্ণয র ল ব
ঘৃষ্ট বা ঘর্ষণজাত বর্ণচ ছ জ ঝ

 

  • বর্ণের মাত্রাবিন্যাস
বর্ণপূর্ণ
মাত্রা
অর্ধ
মাত্রা
মাত্রা
হীন
মোট
মাত্রাযুক্ত
স্বর
বর্ণ
৬ টি১ টি৪ টি৭ টি
ব্যঞ্জন
বর্ণ
২৬ টি৭ টি৬ টি৩৩ টি
বর্ণ
মালা
৩২ টি৮ টি১০ টি৪০ টি

 

যুক্তবর্ণ

যুক্তব্যঞ্জনধ্বনির দ্যোতনার জন্য দুটোবা অধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে সংযুক্তবর্ণবা যুক্তব্যঞ্জন (Ligature) গঠিত হয়। একে আবার যুগ্মব্যঞ্জন বা ধ্বনিসংযুক্তি বলে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু যুক্তবর্ণ নিচে দেওয়া হলো:

যুক্তবর্ণউদাহরণ
ক্ষ = ক্ + ষক্ষমা, ক্ষমতা, শিক্ষা
হ্ম = হ্ + মব্রাহ্মণ, ব্রহ্মা, ব্রহ্মপুত্র
জ্ঞ = জ্ + ঞজ্ঞান, সংজ্ঞা, বিজ্ঞান
ঞ্জ = ঞ্ + জঅঞ্জনা, গঞ্জ, জলাঞ্জলি
ঞ্চ = ঞ্ + চবঞ্চনা, মঞ্চ, সঞ্চয়
ঞ্ছ = ঞ্ + ছবাঞ্ছনীয়, বাঞ্ছিত, বাঞ্ছা
ষ্ণ = ষ্ + ণউষ্ণ, তৃষ্ণা, কৃষ্ণ
ষ্ম = ষ্ + মগ্রীষ্ম, উষ্ম, কুষ্মাণ্ড
ঙ্ক = ঙ্ + কঅঙ্ক, কঙ্কাল, লঙ্কা
ঙ্গ = ঙ্ + গঅঙ্গন, মঙ্গল, সঙ্গীত
ত্র = ত্ + রমিত্র, নেত্র, পত্রিকা
ন্ত্র্য = ন্ + ত্ +র্+যস্বাতন্ত্র্য
ত্রু = ত্ +র্+উশত্রু, ত্রুটি
ক্র = ক্ + রচক্র, আক্রমণ, চক্রান্ত
ক্রু = ক্ +র+উক্রুসেড, ক্রুদ্ধ, ক্রুশ
হৃ = হ্ + ঋহৃদয়, সুহৃদ, হৃষ্ট
হ্ণ = হ্ + ণঅপরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ
হ্ন = হ্ + নসায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন, বহ্নি
স্ত = স্ + তস্তব্ধ, স্তর, বিস্তার
স্থ = স্ + থস্থান, অবস্থা, স্বাস্থ্য
স্খ = স্ + খপদস্খলন
ত্থ = ত্ + থউত্থান, উত্থাপন, উত্থিত
ত্ত = ত্ + তউত্তম, পত্তন, বিত্ত
ক্স = ক্ + সবাক্স, রিক্সা, ফ্যাক্স
ক্ম = ক্ + মরুক্মিণী
ক্ষ্ম = ক্ + ষ্ + মযক্ষ্মা, লক্ষ্মী, লক্ষ্মণ
ক্ষ্ন = ক্ + ষ্ + নতীক্ষ্ন
ক্ত = ক্ + তডাক্তার, মোক্তার, বক্তা
ট্ট = ট্+টঠাট্টা, চট্টগ্রাম
ট্র = ট্ + রট্রাক, ট্রাফিক
গ্ন = গ্ + নভগ্নাংশ, ভগ্নী
গ্ণ = গ্ + ণরুগ্ণ
ণ্ড = ণ্ + ডষণ্ডা, কাণ্ড, দণ্ড
ন্ড = ন্ + ডকিন্ডার
ণ্ট = ণ্ + টকণ্টক, ঘণ্টা
ন্ট = ন্ + টপ্রিন্টার, ইন্টার
জ্ব = জ্ + বজ্বালাময়ী
ব্জ = ব্ + জকব্জি, ধব্জা
র্ক =র্অর্ক, বিতর্ক
ত্ন = ত্ + নরত্ন, যত্ন
ত্ম = ত্ + মআত্মা, আত্মীয়
ব্ধ = ব্ + ধউপলব্ধি, ক্ষুব্ধ
ন্তু = ন্ + ত্ + উকিন্তু
স্তু = স্ + ত্ + উপ্রস্তুত
ন্থ = ন্ + থগ্রন্থ
ণ্ন = ণ্ + নঅক্ষুণ্ন, বিষষ্ন
ন্ন = ন্ + নঅন্ন, ভিন্ন
ম্ন = ম্ + ননিম্ন
ম্ম = ম্ + মসম্মতি, সম্মান
ণ্ম = ণ্ + মহিরণ্ময়
ন্ম = ন্ + মউন্মাদ, উন্মুক্ত, উন্মুখ

নমুনা প্রশ্ন

১. ভাষার মূল উপাদান কোনটি?

ক) ধ্বনি

খ) বাক্য

গ) শব্দ

ঘ) বর্ণ

উত্তর: ক

২. বাংলা ব্যাকরণ প্রথম কত সালে প্রকাশিত হয়?

ক) ১৭৩৪ সালে

খ) ১৭৪৩ সালে

গ) ১৮০১ সালে

ঘ) ১৭৭৮ সালে

উত্তর: খ

৩. প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতা –

ক) আসসুম্পসাও

খ) উইলিয়াম কেরি

গ) ব্রাসি হ্যালহেড

ঘ) রামমোহন রায়

উত্তর: গ

৪. বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক কোনটি?

ক) ধ্বনি

খ) শব্দ

গ) বর্ণ

ঘ) অক্ষর

উত্তর: খ

৫. ভাষার মৌলিক ক্ষুদ্রতম একক হল-

ক) শব্দ

খ) ধ্বনি

গ) অক্ষর

ঘ) কণ্ঠ

উত্তর: খ

৬. ব্যাকরণের প্রধান কাজ কোনটি?

ক) ভাষার শৃংখলা

খ) ভাষার উন্নতি

গ) ভাষার নিয়ম প্রতিষ্ঠা

ঘ) ভাষার বিশ্লেষণ

উত্তর: গ

৭. কোন বাঙালি সর্বপ্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন?

ক) রাজা রামমোহন রায়

খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ঘ) এন বি হ্যালহেড

উত্তর: ক

৮. ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কতটি?

ক) দুটি

খ) তিনটি

গ) চারটি

ঘ) পাঁচটি

উত্তর: গ

৯. কোনটি ধ্বনিতত্তে¡র আলোচ্য বিষয় নয়?

ক) সন্ধি

খ) ন-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান

গ) বচন

ঘ) অক্ষর

উত্তর: গ

১০. ‘পূর্ণচ্ছেদ’ বিরাম চিহ্নটি কোন ব্যাকরণ থেকে বাংলা ব্যাকরণে এসেছে?

ক) বাংলা ব্যাকরণ থেকে

খ) হিন্দি ব্যাকরণ থেকে

গ) সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে

ঘ) তৎসম ব্যাকরণ থেকে

উত্তর: গ

১১. বাংলা ব্যাকরণণে ‘বচন ও লিঙ্গ’ আলোচিত হয় কোন বিভাগে?

ক) পদক্রমে

খ) বাক্যতত্ত্বে

গ) ধ্বনিতত্ত্বে

ঘ) রূপতত্ত্বে

উত্তর: ঘ

১২. ‘কারক ও বিভক্তি’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?

ক) ছন্দ প্রকরণে

খ) অর্থতত্ত্বে

গ) বাক্যতত্ত্বে

ঘ) রূপতত্ত্বে

উত্তর: ঘ

১৩. কোনটি পদক্রমের আলোচ্য বিষয় নয়?

ক) উক্তি

খ) বচন

গ) ছেদচিহ্ন

ঘ) বাচ্য

উত্তর: খ

১৪. ‘অনুসর্গ’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?

ক) ধ্বনিতত্ত্ব

খ) রূপতত্ত্ব

গ) অর্থতত্ত্ব

ঘ) বাক্যতত্ত্ব

উত্তর: খ

১৫. ব্যাকরণের মৌলিক আলোচ্য বিয়ষ নয় কোনটি?

ক) অলঙ্কার

খ) ধ্বনি

গ) রূপ

ঘ) অর্থ

উত্তর: ক

১৬. ‘সমাস ও সন্ধি’ আলোচিত হয় যথাক্রমে ব্যাকরণের কোন অংশে?

ক) রূপতত্ত্বে ও ধ্বনিতত্ত্বে

খ) শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বে

গ) ধ্বনিতত্ত্বে ও শব্দতত্ত্ব

ঘ) পদক্রম ও রূপতত্ত্বে

উত্তর: ক

১৭. পদের রূপ পরিবর্তন ব্যাকরণের কোন অংশের আলোচ্য বিষয়?

ক) বাক্যতত্ত্ব

খ) রূপতত্ত্ব

গ) অর্থতত্ত্ব

ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব

উত্তর: ক

১৮. ব্যাকরণ কত প্রকার হতে পারে?

ক) দু প্রকার

খ) তিন প্রকার

গ) চার প্রকার

ঘ) পাঁচ প্রকার

উত্তর: গ

১৯. ব্যাকরণ শব্দের ‘ব্যা’ কোন নিয়মে হয়েছে?

ক) সন্ধি

খ) সমাস

গ) প্রত্যয়

ঘ) উপসর্গ

উত্তর: ক

২০. বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম কোন ব্যাকরণ থেকে এসেছে?

ক) সংস্কৃত

খ) প্রাকৃত

গ) পালি

ঘ) অবহট্ঠ

উত্তর: ক

২১. ‘দিকনির্দেশনা’ শব্দে কয়টি অক্ষর আছে?

ক) ৪ টি

খ) ৫ টি

গ) ৬ টি

ঘ) ৭ টি

উত্তর: খ

২২. বাক্যের প্রাণ বলা হয় কাকে?

ক) বর্ণকে

খ) শব্দকে

গ) ভাষাকে

ঘ) অক্ষরকে

উত্তর: খ

২৩. ব্যাকরণ কী?

ক) ভাষার ভিত্তি

খ) ভাষার সমন্বয়

গ) ভাষার শাসনতন্ত্র

ঘ) ভাষার প্রাণ

উত্তর: গ

২৪. শব্দের ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ অংশকে বলে –

ক) বর্ণ

খ) ধ্বনি

গ) অক্ষর

ঘ) রূপ

উত্তর: ঘ

২৫. ভাষার মূল উপকরণ কোনটি?

ক) বাক্য

খ) শব্দ

গ) অক্ষর

ঘ) ব্যাকরণ

উত্তর: ক

২৬. ব্যাকরণের প্রাণ কী?

ক) শব্দ

খ) ভাষা

গ) ধ্বনি

ঘ) বাক্য

উত্তর: খ

২৭. “ধ্বনি থেকে আঁট বাধা শব্দই ভাষার ইট।” এই ‘ইট’ কে বাংলা ভাষায় কী বলে?

ক) বাক্য

খ) ব্যাকরণ

গ) বর্ণ

ঘ) কথা

উত্তর: গ

২৮. ধ্বনি উচ্চারণের মূল উপকরণ কি কি?

ক)জিহ্বা ও কণ্ঠ

খ) জিহ্বা ও ওষ্ঠ

গ) জিহ্বা ও গলনালী

ঘ) জিহ্বা ও দন্ত

উত্তর: খ

২৯. ‘বিরাম চিহ্ন’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?

ক) পদক্রম

খ) শব্দতত্ত্ব

গ) ধ্বনিতত্ত্ব

ঘ) অভিধানতত্ত্ব

উত্তর: ক

৩০. একাক্ষর শব্দ নয় কোনটি?

ক) যা

খ) যাই

গ) যায়

ঘ) যাক

উত্তর: খ

৩১. চন্দ্রবিন্দু ( ঁ ) এর ইংরেজি পরিভাষা –

ক) Moon-point

খ) Moon-dot

গ) Moon-light

ঘ) Moon-com

উত্তর: খ

৩২. নিম্নের কোনগুলো দন্ত্য বর্ণ?

ক) র, ষ

খ) ল, স

গ) ক, হ

ঘ) য, য়

উত্তর: খ

৩৩. বর্গীয় বর্ণের পরে এবং শিষ বর্ণের পূর্বের বর্ণগুলোকে বলে –

ক) অযোগবাহ বর্ণ

খ) তাড়নজাত বর্ণ

গ) অন্তঃস্থ বর্ণ

ঘ) পার্শ্বিক বর্ণ

উত্তর: গ

৩৪. প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা কতটি?

ক) ৩৯ টি

খ) ৩৫ টি

গ) ৩০ টি

ঘ) ৩৮ টি

উত্তর: খ

৩৫. বাংলা বর্ণমালায় অসংযুক্ত বর্ণের সংখ্যা কতটি?

ক) ৩২ টি

খ) ৫০ টি

গ) ১০ টি

ঘ) ৩৯ টি

উত্তর: খ

৩৬. ‘জ ড দ’ উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কোন প্রকার ধ্বনি?

ক) ঘোষ অল্পপ্রাণ

খ) অঘোষ মহাপ্রাণ

গ) ঘোষ মহাপ্রাণ

ঘ) ঘোষ নাসিক্য

উত্তর: ক

৩৭. তরল বর্ণ কোনটি?

ক) ল

খ) র

গ) ড়

ঘ) হ

উত্তর: ক

৩৮. উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী ‘র ড় ঢ়’ কোন জাতীয় বর্ণ?

ক) কণ্ঠ্য

খ) তালব্য

গ) মূর্ধন্য

ঘ) দন্ত্য

উত্তর: গ

৩৯. ‘ক থেকে ম’ পর্যন্ত বর্ণগুলোকে বলা হয় –

ক) ঘৃষ্ট বর্ণ

খ) স্পর্শ বর্ণ

গ) উষ্ম বর্ণ

ঘ) বর্গীয় বর্ণ

উত্তর: ঘ

৪০. ব্যঞ্জনবর্ণে মোট মাত্রাযুক্ত বর্ণ কতটি?

ক) ৪০ টি

খ) ৭ টি

গ) ৩৩ টি

ঘ) ২৬ টি

উত্তর: গ

৪১. বাংলা বর্ণমালায় সরল বর্ণ কয়টি?

ক) ৩৫ টি

খ) ৪০ টি

গ) ৫০ টি

ঘ) ৩৯ টি

উত্তর: গ

৪২. নিচের কোনগুলো অর্ধ্বস্বর?

ক) ও এ

খ) অ আ

গ) য ব

ঘ) হ ং

উত্তর: ক

৪৩. ‘ত্ম্য, ন্ধ্র’ এখানে যুক্তবর্ণের বিশ্লেষণ –

ক) ত+ন+য, ন+দ+র

খ) ত+ম+য, ন+ধ+র

গ) ত+ম+য, ন+ব+র

ঘ) ত+ণ+য, ন+ব+র

উত্তর: খ

৪৪. বাংলা বর্ণমালায় মাত্রাযুক্ত বর্ণ কয়টি?

ক) ২৬ টি

খ) ১৬ টি

গ) ৩৩ টি

ঘ) ৪০ টি

উত্তর: ঘ

৪৫. নিচের কোনটি পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ?

ক) ষ

খ) স

গ) শ

ঘ) হ

উত্তর: ক

৪৬. উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘ছ থ’ কোন ধরনের বর্ণ?

ক) অঘোষ মহাপ্রাণ

খ) ঘোষ মহাপ্রাণ

গ) ঘোষ অল্পপ্রাণ

ঘ) জিহবামূলীয়

উত্তর: ক

৪৭. ঘোষ মহাপ্রাণ কণ্ঠ্য বর্ণ কোনটি?

ক) স

খ) হ

গ) ঙ

ঘ) গ

উত্তর: খ

৪৮. নাসিকা ও অগ্রতালুর সমন্বয়ে উচ্চারিত বর্ণ?

ক) ঙ

খ) ণ

গ) ঞ

ঘ) ম

উত্তর: গ

৪৯. অন্য বর্ণের সাথে যোগ রেখে যে ধ্বনিগুলোর প্রয়োগ হয় তাকে কী বলে?

ক) অন্তঃস্থ বর্ণ

খ) অযোগবাহ বর্ণ

গ) পরাশ্রয়ী বর্ণ

ঘ) ঘর্ষণজাত বর্ণ

উত্তর: খ

৫০. তাড়নজাত ও কম্পনজাত বর্ণগুলো উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী –

ক) পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ

খ) কণ্ঠ্য বর্ণ

গ) তালব্য বর্ণ

ঘ) ওষ্ঠ্য বর্ণ

উত্তর: ক

তথ্যসূত্র:

১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খন্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৬৮)
১১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)

BCS Bangla Lecture – 7

প্রধান বাংলা সাহিত্যিক (রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী থেকে বর্তমান), নমুনা প্রশ্ন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)

বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, সঙ্গীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ। মূলত কবি হিসেবেই তার প্রতিভা বিশ্বময় স্বীকৃত। তিনি বাংলা ছোটগল্পের জনক। ১৮৬১ সালে ৭ মে (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪১ সালে ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর; মাতা সারদা দেবী; স্ত্রী মৃণালিনী দেবী। পারিবারিকভাবে তিনি ব্রাহ্মণ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ছদ্মনাম ‘ভানুসিংহ’। ১৩ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘হিন্দুমেলার উপহার’ কলকাতার ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রকশিত হয়।

১৮৯১ সালে তিনি ‘সাধনা’ নামে একটি মাসিকপত্র প্রকাশ করেন। ১৮৯৮ সালে জমিদারি দেখাশোনা করার জন্য প্রথম তিনি বাংলাদেশে (কুষ্টিয়ার শিলাইদহ) আসেন। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ নামক ইংরেজিতে অনূদিত কবিতা সংকলনের জন্য এশীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ নামে প্রকাশিত হয়। ইংরেজ কবি W B Yeats গীতাঞ্জলি কাব্যের ভূমিকা লেখেন। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করে।

তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্য ‘বনফুল’ এবং প্রথম রচিত কাব্য ‘কবি-কাহিনী’। প্রথম রচিত উপন্যাস ‘করুণা’ এবং প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’। তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ভিখারিনী’। তাঁর ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প এবং সর্বশেষ ছোটগল্প ‘মুসলমানীর গল্প’। প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’। প্রথম প্রকাশিত নাটক ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। প্রথম প্রকাশিত গীতিনাট্য ‘বাল্মীকি প্রতিভা’। ‘ছড়া’ ও ‘শেষ লেখা’ নামক দুটি কাব্য তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: বনফুল, কবি-কাহিনী, শেষ লেখা, বলাকা, কড়ি ও কোমল, মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, গীতাঞ্জলি, চৈতালী, পূরবী, মহুয়া, পুনশ্চ, আরোগ্য, জন্মদিনে, খেয়া, নৈবেদ্য, গীতালি, শ্যামলী
  • উপন্যাস: শেষের কবিতা (কাব্যধর্মী), গোরা (রাজনৈতিক), বৌ ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি (ঐতিহাসিক), ঘরে বাইরে, দুইবোন, যোগাযোগ, চোখের বালি, চতুরঙ্গ, মালঞ্চ, চার অধ্যায়, নৌকাডুবি, করুণা
  • নাটক: চিত্রাঙ্গদা ও বিসর্জন (কাব্যনাট্য), চণ্ডালিকা, শ্যামা ও মালিনী (চিত্রনাট্য), বাল্মিকী প্রতিভা (গীতিনাট্য), নটীর পূজা (নৃত্যনাট্য), প্রায়শ্চিত্ত (ঐতিহাসিক), রক্তকরবী, বসন্ত, রাজা, ডাকঘর, কালের যাত্রা, প্রকৃতির প্রতিশোধ, ফাল্গুনী, তাসের দেশ
  • প্রহসন: চিরকুমার সভা (সামাজিক), বৈকুণ্ঠের খাতা, শেষ রক্ষা
  • গল্পগ্রন্থ: গল্পগুচ্ছ, গল্পসল্প
  • প্রেমের গল্প: একরাত্রি, সমাপ্তি, নষ্টনীড়, দৃষ্টিদান, ল্যাবরেটরি
  • সামাজিক গল্প: দেনাপাওনা, কাবুলিওয়ালা, ছুটি, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টার, পণরক্ষা, অপরিচিতা
  • অতিপ্রাকৃত গল্প: ক্ষুধিত পাষাণ, জীবিত ও মৃত

প্রবন্ধগ্রন্থ:

  • সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ: প্রাচীন সাহিত্য, লোকসাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য, সাহিত্যের স্বরূপ
  • ভাষাতত্ত্বমূলক প্রবন্ধ: শব্দতত্ত্ব, বাংলা ভাষা পরিচয়
  • রাজনৈতিক প্রবন্ধ: কালান্তর, সভ্যতার সংকট
  • অন্যান্য প্রবন্ধ: বিচিত্র প্রবন্ধ, পঞ্চভূত, মানুষের ধর্ম, আত্মশক্তি
  • আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধ: জীবনস্মৃতি, আত্মপরিচয়
  • পত্রসাহিত্য: ছিন্নপত্র, ভানুসিংহের পত্রাবলি
  • ভ্রমণকাহিনী: য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র, জাপান যাত্রী, রাশিয়ার চিঠি
  • বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ: বিশ্বপরিচয়
  • গানের সংকলন: গীতবিতান

প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮-১৯৪৬)

প্রাবন্ধিক, কবি ও চলিত বাংলা গদ্যরীতির প্রবর্তক। তিনি ১৮৬৮ সালে ৭ আগস্ট যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৬ সালে ২ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পাবনায়। সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি মননশীল প্রবন্ধ লেখক হিসেবে খ্যাত। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন। তিনি ‘বীরবল’ ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করেছেন।

তিনি ১৯১৪ সালে প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’ মাসিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। সবুজপত্রকে কেন্দ্র করে ‘চলিতরীতি’ বাংলা গদ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চলিতরীতিতে লেখা বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও তাঁর রচিত প্রথম গদ্য ‘বীরবলের হালখাতা’ (১৯১৬) সবুজপত্র ও ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা কাব্যসাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক। তিনি নিজস্ব ধারায় সনেট রচনা করেছেন। তাঁর অধিকাংশ ছোটগল্প ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে।

সাহিত্যকর্ম

  • প্রবন্ধগ্রন্থ: তেল নুন লাকড়ি (১৯০৬), বীরবলের হালখাতা, আমাদের শিক্ষা, রায়তের কথা
  • কাব্য: সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৩), পদচারণ
  • গল্পগ্রন্থ: চার ইয়ারী কথা (১৯১৬), আহুতি, নীললোহিত

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)

ঔপন্যাসিক ও অপরাজেয় কথাশিল্পী। তিনি ১৮৭৬ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৮ সালে ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।১৯০৩ সালে তার প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘মন্দির’ এর জন্য তিনি ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ পান। ১৯০৭ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বড়দিদি’ ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তাঁর সাহিত্যখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি তার বড়বোন অনিলা দেবীর ছদ্মনামে ‘নারীর মূল্য’ (১৯২৩) গ্রন্থটি রচনা করেন। তাঁর ‘পথের দাবী’ (১৯২৬) উপন্যাসটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। ১৯৩৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার রচিত শ্রেষ্ঠ ও আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত’ (৪ খন্ড)। এ উপন্যাসের চরিত্র ‘ইন্দ্রনাথ’ বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ কিশোর চরিত্র।

সাহিত্যকর্ম

  • প্রবন্ধগ্রন্থ: তরুণের বিদ্রোহ, স্বদেশ ও সাহিত্য, নারীর মূল্য
  • গল্পগ্রন্থ: মেজদিদি, রামের সুমতি, পরিণীতা, বৈকুণ্ঠের উইল, বিন্দুর ছেলে, নিষ্কৃতি, অরক্ষণীয়া
  • বিখ্যাত ছোটগল্প: মহেশ (সার্থক ছোটগল্প), মন্দির, বিলাসী, মামলার ফল, অভাগীর স্বর্গ
  • উপন্যাস: শেষের পরিচয় ও শুভদা (মরণোত্তর প্রকাশিত), গৃহদাহ (১৯২০; এ গ্রন্থে ত্রিভুজ প্রেমের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে), দেবদাস (১৯১৭), বড়দিদি, শ্রীকান্ত, পথের দাবী, পল্লীসমাজ, দত্তা, শেষপ্রশ্ন, চরিত্রহীন, দেনা-পাওনা, বিরাজ বৌ, পন্ডিতমশাই, বামুনের মেয়ে, চন্দ্রনাথ, বিপ্রদাস
  • নাটক: ষোড়শী, রমা, বিজয়া

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২)

সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি ১৮৮০ সালে ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালে ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস পালন করা হয়। প্রথমে তিনি ‘মিসেস আর এস হোসেন’ নামে সাহিত্যচর্চা করতেন। ১৯০২ সালে কলকাতার ভাগলপুরে থাকা অবস্থায় ‘পিপাসা’ নামক একটি গল্প লেখার মাধ্যমে তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়।

তাঁর লেখাগুলো নবনূর, সওগাত ও মোহাম্মদী পত্রিকায় প্রকাশিত হত। ১৯০৯ সালে তিনি কলকাতার ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি কলকাতায় ‘আঞ্জুমান খাওয়াতিনে ইসলাম’ (মুসলিম মহিলা সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • প্রবন্ধগ্রন্থ: মতিচুর (প্রথম খন্ড ১৯০৪; দ্বিতীয় খন্ড ১৯২২), অবরোধবাসিনী (১৯৩১; শ্রেষ্ঠ রচনা)
  • উপন্যাস: পদ্মরাগ (১৯২৪), Sultana’s Dream (১৯০৮, প্রথমে ইংরেজিতে লিখে নিজেই ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে অনুবাদ করেন)

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯)

বহুভাষাবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ১৮৮৫ সালে ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার বশিরহাট মহাকুমার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৯ সালে ১৩ জুলাই ঢাকায় পরলোক গমন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদুল্লাহ হলের পূর্ব নাম ছিল ‘ঢাকা হল’। তিনি মূলত ভাষাবিজ্ঞানী। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে তিনি প্রথম সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত্ব করেন এবং তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রথম এম.এ. পাশ করেন।

১৯২১ সালে ২ জুন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। তিনি বাংলা একাডেমি ‘বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ সম্পাদনা করেন। ১৯৬০ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার করেন। ১৯৭৭ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মরণোত্তর সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধি দেওয়া হয়।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেন। তার সম্পাদিত পত্রিকা: আঙ্গুর (১৯২০, বাংলা ভাষার প্রথম শিশুপত্রিকা), বঙ্গভূমি (মাসিক সাহিত্য পত্রিকা), তকবির (পাক্ষিক পত্রিকা)। তিনি প্রথম চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে আলোচনা করেন এবং চর্যাপদ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রচিত এটা প্রথম প্রমাণ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ: বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৫৯), বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খন্ড), ভাষা ও সাহিত্য, Eassy on Islam (১৯৪৫), Traditional Culture in East Pakistan (১৯৬১; আবদুল হাই সহযোগে)
  • অনুবাদ: দিওয়ান-ই-হাফিজ, রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম, শিকওয়াহ ও জওয়াবে শিকওয়াহ
  • সম্পাদিত গ্রন্থ: বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (১৯৬৫), পদ্মাবতী, বিদ্যাপতি শতক
  • জীবনীগ্রন্থ: ইকবাল, প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে শেষনবী, অমরকাব্য
  • গল্পগ্রন্থ: রকমারি
  • ব্যাকরণ: বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩৬)

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭)

ভাষাবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ১৮৯০ সালে ২৬ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৭ সালে ২৯ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মূলত ভাষাবিজ্ঞানী। ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি লেকচারার পদে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।

সর্বপ্রথম তিনি চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে স্পষ্ট মতামত প্রকাশ করেন এবং চর্যাপদের ভাষাকে বাংলায় প্রতিপন্ন করেন। ১৯২১ সালে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ সম্বন্ধীয় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Origin and Development of Bengali Language (ODBL) প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশের পরপরই তার সাহিত্যখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ভাষাচার্য’ উপাধি দেন।

সাহিত্যকর্ম

  • গবেষণা ও গ্রবন্ধগ্রন্থ: বাংলা ভাষাতত্ত্বর ভূমিকা (১৯২৯), ভারত সংস্কৃতি, পশ্চিমের যাত্রী, রবীন্দ্র সঙ্গমে, The Origin and Development of Bengali Language (১৯২১)
  • ব্যাকরণ: ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৪৫)

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০)

কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৮৯৪ সালে ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার মুরারিপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ১ সেপ্টেম্বর ব্যারাকপুরের ঘাটশীলা নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস চব্বিশ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর গ্রামে। তিনি মূলত ঔপন্যাসিক। পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁর উপন্যাসের বিষয়বস্তু প্রকৃতি ও দরিদ্র মানুষের জীবন। পথের পাঁচালী (১৯২৯) ও অপরাজিত (১৯৩১) উপন্যাস তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। সত্যজিৎ রায় এ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: পথের পাঁচালী, অপরাজিত, দৃষ্টিপ্রদীপ, আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, দেবযান, ইছামতী, চাঁদের পাহাড়, অভিযাত্রিক
  • গল্পগ্রন্থ: মেঘমাল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল, কিন্নরদল, ছায়াছবি
  • আত্মজীবনী: তৃণাঙ্কুর , স্মৃতির রেখা
  • ভ্রমণকাহিনী: বনে পাহাড়ে, হে অরণ্য কথা কও

গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪)

কবি ও লেখক। তিনি ১৮৯৭ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৪ সালে ১৩ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা। তিনি মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি হিসেবে পরিচিত। তিনি পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে উর্দুকে সমর্থন করেন। তাঁর কাব্যের প্রধান বিষয়বস্তু ইসলামি চেতনা ও প্রেম। ১৯২৪ সালে তাঁর প্রথম কাব্য ‘রক্তরাগ’ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৫২ সালে যশোর সাহিত্য সংঘ কর্তৃক ‘কাব্যসুধাকর’ এবং ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধিতে ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: রক্তরাগ, কাব্য-কাহিনী, সাহারা, হাসনাহেনা, বুলবুলিস্তান, বনিআদম
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: ইসলাম ও কমিউনিজম, আমার চিন্তাধারা
  • উপন্যাস: রূপের নেশা, ভাঙাবুক
  • জীবনীগ্রন্থ: বিশ্বনবী (১৯৪২, তাঁর বিখ্যাত রচনা), মরুদুলাল

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে ২২ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ট্রামের নিচে পড়ে আহত হন এবং হাসপাতালে মারা যান। তাঁর আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি।

কর্মজীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯২৭ সালে তার প্রথম কাব্য ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি ‘দৈনিক স্বরাজ’ পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ সম্পাদনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তাকে ‘ধূসরতার কবি, তিমির হননের কবি ও রূপসী বাংলার কবি’ বলা হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতাকে বলেছেন চিত্ররূপময় কবিতা। বুদ্ধদেব বসু তাকে বলেছেন নির্জনতম কবি। তিনি এডগার এলান পো রচিত ‘টু হেলেন’ কবিতা অবলম্বনে ‘বনলতা সেন’ নামক বিখ্যাত কবিতাটি রচনা করেন। ক্লিনটন বি সিলি জীবনানন্দ দাশের উপর গবেষণা করেছেন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্যগ্রন্থ: বনলতা সেন (১৯৪২), রূপসী বাংলা (১৯৫৭), ঝরাপালক, ধূসর পান্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, বেলা অবেলা কালবেলা
  • উপন্যাস: মাল্যবান (১৯৭৩), সুতীর্থ (১৯৭৪), কল্যাণী (১৯৯৯)
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: কবিতার কথা

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)

কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সুরস্রষ্টা, অভিনেতা ও দার্শনিক। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও মুসলিম রেনেসাঁর কবি। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জৈষ্ঠ্য) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট (বাংলা ১৩৮৩ সনের ১২ ভাদ্র) ঢাকার পি.জি. হাজপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদপ্রাঙ্গণে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার উপাধি ‘বিদ্রোহী কবি’।বাল্যনাম দুখু মিয়া ও তারাখ্যাপা। ছদ্মনাম ধূমকেতু ও ব্যাঙাচি। আধুনিক বাংলা গানের জগতে তিনি ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। তার পিতা কাজী ফকির আহমেদ; মাতা জাহেদা খাতুন। স্ত্রী আশালতা সেনগুপ্তা; ডাকনাম দুলি; বিবাহোত্তর নাম প্রমীলা।

বাল্যকালে লেটো গানের দলে যোগ দেওয়ার পর থেকে তার কবি ও শিল্পী জীবনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯১৯ সালে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’ প্রকাশিত হয়। ১৯২২ সালে সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হলে তাঁর কাব্যখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২২ সালে ধূমকেতু পত্রিকায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার জন্য তিনি গ্রেফতার হন এবং আদালত তাঁকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।

তাঁর সাহিত্যচর্চার সময় মাত্র ২৩ বছর (১৯১৯-১৯৪২)। ১৯৪২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালে ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কলকাতা থেকে প্রথম তাঁকে স্বপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে জাতীয় কবির মর্যাদা, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২) এবং প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’। প্রথম উপন্যাস ‘বাঁধনহারা’। প্রথম নাটক ‘ঝিলিমিলি’। প্রথম গল্প ‘বাউন্ডুলের আত্মকথা’। প্রেমমূলক রচনা ‘শিউলীমালা’। প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ‘যুগবাণী’। প্রথম প্রবন্ধ ‘তুর্কি মহিলার ঘোমটা খোলা’। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুতে ‘রবিহারা’ কবিতাটি রচনা করেন এবং ‘সঞ্চিতা’ কাব্যগ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। ব্রিটিশ সরকার তার অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা, যুগবাণী ও চন্দ্রবিন্দু এ গ্রন্থগুলোকে বাজেয়াপ্ত করে।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: ঝিঙেফুল ও সাত ভাই চম্পা (শিশুতোষ কাব্য), চিত্তনামা ও মরুভাস্কর (জীবনীকাব্য), অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, সিন্ধুহিন্দোল, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, ভাঙার গান, প্রলয়শিখা, পুবের হাওয়া, সর্বহারা, চক্রবাক, জিঞ্জির, সন্ধ্যা, সওগাত, সাম্যবাদী, ফণিমনসা।
  • উপন্যাস: কুহেলিকা, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা
  • গল্পগ্রন্থ: ব্যাথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলীমালা
  • নাটক: আলেয়া, ঝিলিমিলি, পুতুলের বিয়ে, মধুমালা
  • প্রবন্ধ: রাজবন্দীর জবানবন্দী, যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্রমঙ্গল
  • অনূদিত গ্রন্থ: রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ, রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, কাব্যে আমপারা
  • সঙ্গীতগ্রন্থ: বুলবুল, গুলবাগিচা, চন্দ্রবিন্দু, জুলফিকার, চোখের চাতক, গীতি শতদল, সুরলিপি
  • সম্পাদিত পত্রিকা: লাঙল, গণবাণী, নবযুগ, ধূমকেতু

জসিম উদ্দিন (১৯০৩-১৯৭৬)

কবি ও শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশের ‘পল্লীকবি’ হিসেবে পরিচিত। ১৯০৩ সালে ১ জানুয়ারি তিনি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালে ১৩ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের লেকচারার নিযুক্ত হন। কলেজ জীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তার ‘কবর’ কবিতা মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়। ‘কবর’ কবিতাটি প্রথম ‘কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ (১৯২৭)। একমাত্র উপন্যাসের ‘বোবা কাহিনী’ (১৯৬৪)। শ্রেষ্ঠ রচনা ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ (১৯২৯)। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। ‘Field of the Embroidered Quilt’ নামে নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। অনুবাদকের নাম ই.এম. মিলফোর্ড।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: নকশী কাঁথার মাঠ (কাহিনীকাব্য), সুচয়িনী (কাব্য সংকলন), রাখালী, সোজন বাদিয়ার ঘাট, বালুচর, ধানক্ষেত, মাটির কান্না, মা যে জননী কান্দে, কাফনের মিছিল, রঙ্গিলা নায়ের মাঝি
  • স্মৃতিকথা: যাদের দেখেছি, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়
  • আত্মজীবনী: জীবন কথা
  • ভ্রমণকাহিনী: চলে মুসাফির, হলদে পরীর দেশে, যে দেশে মানুষ বড়
  • নাটক: পদ্মাপাড়, বেদের মেয়ে, মধুমালা, পল্লীবধূ
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: হাসু, এক পয়সার বাঁশি, ডালিম কুমার
  • উপন্যাস: বোবা কাহিনী

সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৭৪)

ঔপন্যাসিক, গল্পকার, অনুবাদক, রম্যরচয়িতা ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯০৪ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার করিমগঞ্জে পিতার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান রম্যলেখক। রসালো গল্পরচনায় তিনি বেশ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তিনি ‘সত্যপীর’ ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কর্মজীবন শুরুতে তিনি আফগানিস্তানের কাবুল শহরের শিক্ষাদপ্তরে অধ্যাপনা করেন। ১৯২৬ সালে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেখানেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন।

সাহিত্যকর্ম

  • রম্যরচনা: পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকণ্ঠী
  • উপন্যাস: অবিশ্বাস্য, শবনম
  • গল্পগ্রন্থ: চাচা কাহিনী (১৯৫২), টুনি মেম
  • বিখ্যাত গল্প: রাজা উজির, ধূপছায়া, পাদটীকা, রসগোল্লা
  • ভ্রমণকাহিনী: দেশে বিদেশে (১৯৪৯, কাবুল শহরের কাহিনী)

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬)

কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৯০৮ সালে ২৯ মে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৬ সালে ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) মালবদিয়া গ্রামে। তাঁর পিতৃদত্ত নাম প্রবোধকুমার; ডাক নাম মানিক। বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক হিসেবে তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। লেখালেখিই ছিল তার পেশা; এ জন্য তাকে ‘কলমপেশা মজুর’ বলা হয়। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র ধারার বিরোধিতা করে যে কল্লোল গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে, তিনি সেই কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন।

তিনি ১৯৪৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু এ পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি মাকর্সবাদী লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯২৮ সালে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় ‘অতসী মামী’ গল্প লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যচর্চায় হাতেখড়ি হয়। ১৯৩৫ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জননী’ প্রকাশিত হয়। এটি একটি মনস্তাত্তি¡ক বিশ্লেষণমূলক উপন্যাস। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৩৫)। বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬) ও পুতুলনাচের ইতিকথা’।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: শহরতলী (২ খন্ড), সোনার চেয়ে দামী (২ খন্ড), জননী, দিবারাত্রির কাব্য, পুতুলনাচের ইতিকথা, ইতিকথার পরের কথা, পদ্মানদীর মাঝি, শহরবাসের ইতিকথা, চিহ্ন, চতুষ্কোণ, ধরাবাঁধা জীবন, স্বাধীনতার সাধ, হরফ, হলুদ নদী সবুজ বন, পরাধীন প্রেম
  • গল্পগ্রন্থ: অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প, প্রাগৈতিহাসিক, মিহি ও মোটা কাহিনী, সরীসৃপ, সমুদ্রের স্বাদ, হলুদপোড়া, আজ-কাল-পরশুর গল্প, মাটির মাশুল, ছোট বকুলপুরের যাত্রী, ফেরিওয়ালা

বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪)

কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক। তিনি ১৯০৮ সালে ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৪ সালে ১৮ মার্চ কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ত্রিশের দশকে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কাব্যরীতির সূচনাকারী কবিদের মধ্যে একজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘প্রগতি’ এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘কবিতা’ পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কর্ম। ছাত্রজীবনেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন।

১৯৩০ সালটি তার জীবনের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ বছরই মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর ‘সাড়া’ এবং ‘তিথিডোর’ নামক দুটি উপন্যাস এবং ‘বন্দীর বন্দনা’ কাব্য প্রকাশিত হয়। তখন থেকে তার সাহিত্যখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গদ্যপদ্য মিলিয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: বন্দীর বন্দনা, পৃথিবীর পথে, মর্মবাণী, স্বাগত বিদায়
  • উপন্যাস: সাড়া, তিথিডোর, কালো হাওয়া, নির্জন স্বাক্ষর, বিপন্ন বিস্ময়, পাতাল থেকে আলাপ, গোলাপ কেনো কালো
  • গল্পগ্রন্থ: অভিনয়, রেখাচিত্র, হাওয়া বদল, ভাসো আমার ভেলা
  • নাটক: তপস্বী ও তরঙ্গিনী, মায়া মালঞ্চ
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: কালের পুতুল, স্বদেশ ও সংস্কৃতি, হঠাৎ আলোর ঝলকানি

আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১-১৯৮৮)

প্রগতিশীল লেখক, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি ১৯১১ সালে ১২ মার্চ গাজীপুর জেলার দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৮ সালে ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূচনা ঘটে। ১৯৪৭ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘পরিত্যক্ত স্বামী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৭৪)’ বাংলা সাহিত্যের এক অমর কীর্তি। ‘ভাওয়ালগড়ের উপাখ্যান, পদ্মা মেঘনা যমুনা, সংকর সংকীর্তন’ তার এ উপন্যাস তিনটিকে ত্রয়ী উপন্যাস বলে। তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: পরিত্যক্ত স্বামী, ভাওয়ালগড়ের উপাখ্যান, পদ্মা মেঘনা যমুনা, সংকর সংকীর্তন, দেয়াল
  • গল্পগ্রন্থ: রাজেন ঠাকুরের তীর্থযাত্রা, ল্যাংড়ী, শেষ রাত্রির তারা
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: সোচ্চার উচ্চারণ, লোকায়ত সমাজ ও বাঙালি সংস্কৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস

সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯)

কবি, সমাজনেত্রী ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ১৯১১ সালে ২০ জুন বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৯ সালে ২০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক মহিলা কবি। উপাধি ‘জননী সাহসিকা’। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র কাব্যধারার গীতিকবি। ১৯২৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন তার নাম ছিল ‘সুফিয়া এন হোসেন’। ১৯৩২ সালে তার স্বামী নেহাল হোসেন  যক্ষ্মা রোগে মারা যান।

১৯৩৯ সালে চট্টগ্রামের লেখক কামাল উদ্দিনের সাথে তার দ্বিতীয়বার বিয়ে হলে তিনি ‘সুফিয়া কামাল’ নামগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ‘মহিলা সংগ্রাম কমিটি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে ‘মহিলা পরিষদ’ গঠন করেন। যার বর্তমান নাম ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’। তিনি দেশবিভাগের পূর্বে নারীদের জন্য প্রকাশিত সাময়িকী ‘বেগম’ (১৯৪৭) পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন ‘কচিকাচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার রচিত প্রথম গল্পের নাম ‘সৈনিক বধূ’ (১৯২৩)। প্রথম গল্পগ্রন্থের নাম ‘কেয়ার কাঁটা’। প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘সাঁঝের মায়া’। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৯৭) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী, অভিযাত্রিক, মোর জাদুদের সমাধি পরে, মায়া কাজল, মৃত্তিকার ঘ্রাণ
  • গল্পগ্রন্থ: কেয়ার কাঁটা
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: ইতল বিতল, নওল কিশোরের দরবারে
  • আত্মজীবনী: একালে আমাদের কাল
  • স্মৃতিকথা: একাত্তরের ডায়েরি
  • ভ্রমণকাহিনী: সোভিয়েতে দিনগুলি

শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮)

কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯১৭ সালে ২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সালে ১৪ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। ১৯৫৮ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘জননী’ প্রকাশিত হয়। তার শ্রেষ্ঠ, কালোত্তীর্ণ ও জনপ্রিয় উপন্যাস ‘ক্রীতদাসের হাসি’। ১৯৬৬ সালে ‘ত্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) ও একুশে পদকে (১৯৮৩) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: জাহান্নাম হইতে বিদায়, দুই সৈনিক ও নেকড়ে অরণ্য (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), জননী, ক্রীতদাসের হাসি, রাজা উপাখ্যান, পতঙ্গ পিঞ্জর, জলাঙ্গী, বনি আদম
  • গল্পগ্রন্থ: জন্ম যদি তব বঙ্গে (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), পিঁজরাপোল, প্রস্তর ফলক, ঈশ্বরের প্রতিদ্ব›দ্বী
  • নাটক: আমলার মামলা, তস্কর ও লস্কর
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: সংস্কৃতির চড়াই উৎরাই
  • স্মৃতিকথা: কালরাত্রি খন্ডচিত্র, অস্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ

আহসান হাবীব (১৯১৭-১৯৮৫)

কবি ও সাংবাদিক। তিনি ১৯১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৫ সালে ১০ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তার কাব্যচর্চা শুরু হয়। তিনি সাংবাদিকতা পেশায় আজীবন নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা (তৎকালীন দৈনিক পকিস্তান) পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাত্রিশেষ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে বিবৃতি প্রদান করেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১) ও একুশে পদকে (১৯৭৮) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: রাত্রিশেষ, ছায়াহরিণ, সারাদুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাব, দুহাতে দুই আদিম পাথর, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ
  • উপন্যাস: অরণ্য নীলিমা, রানী খালের সাঁকো, জাফরানী রং পায়রা
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, ছুটির দিন দুপুরে

ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪)

কবি ও শিশুসাহিত্যিক। তাকে মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি বলা হয়। তিনি ১৯১৮ সালে ১০ জুন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৪ সালে ১৯ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মূলত ইসলামি স্বাতন্ত্র্যবাদী কবি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তনের রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি বাংলাকে সমর্থন করেছিলেন। তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থের নাম ‘সাত সাগরের মাঝি’ (১৯৪৪)। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০), একুশে পদক (১৯৭৭) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৮০) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: নৌফেল ও হাতেম (কাব্যনাট্য), মুহূর্তের কবিতা (সনেট সংকলন), হাতেমতায়ী (কাহিনীকাব্য), সাত সাগরের মাঝি, সিরাজাম মুনিরা, কাফেলা, হাবেদা মরুর কাহিনী
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: পাখির বাসা, হরফের ছড়া

সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২-২০০২)

কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯২২ সালে ২৬ মার্চ মাগুরা জেলার আলোকাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে ২৫ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদক। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’ কাব্যকে শ্রেষ্ঠ কাব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক (১৯৮৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (১৯৮৭) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: অনেক আকাশ, একক সন্ধ্যায় বসন্ত, সহসা সচকিত, আমার প্রতিদিনের শব্দ
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (মুহম্মদ আবদুল হাই সহযোগে), পদ্মাবতী (সম্পাদিত গ্রন্থ), কবিতার কথা
  • গল্পগ্রন্থ: সতত স্বাগত, প্রেম যেখানে সর্বস্ব
  • অনুবাদ: ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১)

কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার। তিনি ১৯২২ সালে ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। গভীর রাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার অকাল মৃত্যু হয় এবং তিনি প্যারিসেই সমাহিত হন। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত ঘটে। তাঁর প্রকাশিত প্রথম গল্পের নাম ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’।

১৯৫৫ সালে তিনি ফরাসি তরুণী অ্যান মেরির সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। মিসেস মেরি তার প্রথম ও বিখ্যাত উপন্যাস ‘লালসালু’ (১৯৪৮) ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে এটি ‘Tree Without Roots’ নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি প্রবাসে ইউনেস্কোতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ‘চাঁদের অমাবস্যা ও কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাস দুটি বাংলা সাহিত্যের ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১) এবং মরণোত্তর একুশে পদকে (১৯৮৩) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: লালসালু, চাঁদের অমাবস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো
  • গল্পগ্রন্থ: নয়নচারা, দুই তীর ও অন্যান্য গল্প
  • নাটক: তরঙ্গভঙ্গ (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), বহিপীর, সুড়ঙ্গ

মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১)

শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্যিক ও শহিদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯২৫ সালে ২৭ নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর হাতে অপহৃত ও নিহত হন। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালির চাটখিল উপজেলায়। তিনি মূলত নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এবং ১৯৫৮ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্তে¡ এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৬৫ সালে প্রথম বাংলা টাইপ রাইটার নির্মাণ করেন যা ‘মুনীর অপটিমা’ নামে পরিচিত। ভাষা আন্দোলনের উপর রচিত তার বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ (১৯৬৬)। ১৯৫৩ সালে ‘কবর’ নাটকটি ঢাকা জেলে বসে রচিত হয় এবং রাজবন্দীদের দ্বারা অভিনীত হয়। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে রচিত তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’। তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • নাটক: মানুষ (একাঙ্কিকা), কবর, দন্ডকারণ্য, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য, রক্তাক্ত প্রান্তর (১৯৬২)
  • অনূদিত নাটক: কেউ কিছু বলতে পারে না (জর্জ বার্নাড শ’র You Never Call Tell এর বাংলা অনুবাদ)
    রূপার কৌটা (জন গলজ্ওয়ার্দির The Silver Box এর বাংলা অনুবাদ)
    মুখরা রমণী বশীকরণ (উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের Taming of the Shrew এর বাংলা অনুবাদ)
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: মীর মানস, বাংলা গদ্যরীতি
  • ব্যাকরণ: বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সহযোগে)

সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭)

তরুণ কবি। তিনি ১৯২৬ সালে ১৫ আগস্ট কলকাতার কালিঘাটে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ২১ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে তাঁর অকাল মৃত্যু হয়। তাঁর পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তাকে মূলত কিশোর কবি বলা হয়। তিনি বামপন্থী বিপ্লবী হিসেবে খ্যাত এবং মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি পঞ্চাশের মন্বন্তর উপলক্ষ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে ‘আকাল’ সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেন। তার জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত একমাত্র গ্রন্থ ‘আকাল’ (১৯৪৪)। বয়সের বিবেচনায় তার রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্যগ্রন্থ: ছাড়পত্র (১৯৪৭, তার শ্রেষ্ঠ), ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল, মিঠেকড়া
  • সম্পাদিত গ্রন্থ: আকাল

শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)

কবি ও সাংবাদিক। তিনি ১৯২৯ সালে ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৬ সালে ১৭ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিন্দীর রায়পুর উপজেলার পাড়াতলি গ্রামে। তাকে নাগরিক কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামে তার লেখা ছাপা হয়। বিংশ শতকের ত্রিশের দশকের পঞ্চপাণ্ডদেব পরে তিনিই বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। ১৯৬০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কারসহ (১৯৮২) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, বন্দী শিবির থেকে, নিরালোকে দিব্যরথ, নিজ বাসভূমে, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, দুঃসময়ের মুখোমুখি, শূন্যতায় তুমি শোকসভা, বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে, ইকারুসের আকাশ, উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ, অবিরল জলাভূমি, এক ফোঁটা কেমন অনল, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, সৌন্দর্য আমার ঘরে, অন্ধকার থেকে আলোয়, হরিণের হাড়, হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল, স্বপ্নে ও দুঃস্বপ্নে বেঁচে আছি, ভগ্নস্তূপে গোলাপের হাসি, কৃষ্ণপক্ষে পূর্ণিমার দিকে
  • উপন্যাস: অক্টোপাস, অদ্ভুত আঁধার এক, নিয়ত মন্তাজ, এলো সে অবেলায়
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ, কবিতা এক ধরনের আশ্রয়, একান্ত ভাবনা
  • স্মৃতিকথা: কালো ধুলোয় লেখা, স্মৃতির শহর
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: এলাটিং বেলাটিং, ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো, লাল ফুলকির ছড়া, রঙধনুর সাঁকো
  • অনূদিত গ্রন্থ: মার্কোমিলিয়ানস, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা
  • বিখ্যাত কবিতা: হাতির শুঁড়, টেলেমেকাস (বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে লেখা), ‘বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা’, একটি ফটোগ্রাফ, আসাদের শার্ট, স্বাধীনতা তুমি, তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১)

কবি, প্রাবন্ধিক ও সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ১৯৩৪ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বহেরচর-ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালে ১৯ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মূলত কবি। তাঁর কবিতায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও আবহমান বাংলার অকৃত্রিম ছবি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা ও অধ্যাপনা করেন।

তিনি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সচিব এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্টদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাতনরী হার’ প্রকাশিত হয়। সাহিত্যের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) ও একুশে পদকে (১৯৮৫) ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: আমি কিংবদন্তির কথা বলছি (তার শ্রেষ্ঠ), সাতনরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি

জহির রায়হান (১৯৩৫-১৯৭১)

কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না। ১৯৭১ সালে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শহীদুল্লাহ কায়সারকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে। ১৯৭১ সালে ৩০ ডিসেম্বর তাঁর ভাইকে খুঁজতে ঢাকার মিরপুরে গিয়ে তিনিও নিখোঁজ হন। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তিনি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার।

১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দোলনভিত্তিক তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৬৯)। তাঁর নির্মিত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’। সর্বপ্রথম এ চলচ্চিত্রে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘কখনো আসেনি’ (১৯৬১)। তিনি ‘Stop Genocide’ নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। তাঁর সৃষ্ট তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম উর্দু রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ (১৯৭০)।

তাঁর সৃষ্ট প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’। তাঁর ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিটি শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে ‘নিগার পুরস্কার’ লাভ করে। তিনি ১৯৬৪ সালে ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কার পায়। তিনি উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমি থেকে মরণোত্তর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭২) লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০, তাঁর প্রথম), কয়েকটি মৃত্যু (তাঁর শেষ), তৃষ্ণা, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন
  • চলচ্চিত্র: কখনো আসেনি, সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, বাহানা, বেহুলা, সঙ্গম, জীবন থেকে নেয়া, Let there be Light, A State is Born, Stop Genocide
  • গল্পগ্রন্থ: সূর্যগ্রহণ

সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬)

কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৫ সালে ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৬ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণের জন্য তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। চিত্রনাট্য রচয়িতা ও গীতিকার হিসেবেও তিনি খ্যাত।

১৯৫১ সালে ‘অগত্যা’ পত্রিকায় তার প্রথম লেখা ‘উদয়াস্ত’ গল্প প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ (১৯৫৬)। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ (১৯৬১)। তিনি সবচেয়ে কম বয়সে ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: পরাণের গহীন ভিতর (আঞ্চলিক ভাষায়), রজ্জুপথে চলেছি, একদা এক রাজ্যে, নাভিমূলে ভস্মাধার, বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, অপর পুরুষ, বিরতিহীন উৎসব
  • উপন্যাস: নিষিদ্ধ লোবান ও নীলদংশন (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), দেয়ালের দেশ, অনুপম দিন, ত্রাহি, সীমানা ছাড়িয়ে, মৃগয়ায় কালক্ষেপ, খেলারাম খেলে যা
  • গল্পগ্রন্থ: রক্তগোলাপ, আনন্দের মৃত্যু, জলেশ্বরীর গল্পগুলো
  • কাব্যনাট্য: পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), গণনায়ক, নূরলদীনের সারাজীবন, এখানে এখন, ঈর্ষা
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: সীমান্তের সিংহাসন, হডসনের বন্দুক

আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯)

কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি ১৯৩৬ সালে ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মূলত কবি; পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। তাঁর প্রকৃত নাম ‘মির আবদুস শুকুর আল মাহমুদ’। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে তিনি ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ ও ‘দৈনিক কর্ণফুলী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে পরিচালক পদ থেকে অবসরে যান। তাঁর কবিতার বিশেষত্ব হলো গ্রামীণ জীবন, লোক-ঐতিহ্য ও লোকজ শব্দের ব্যবহার। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক-লোকান্তর’ (১৯৬৩)। শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’ (১৯৬৬)। বিখ্যাত কবিতা ‘নোলক’। ১৯৬৮ সালে তিনি ‘সোনালি কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: লোক-লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন, মায়াবি পর্দা দুলে উঠো, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, বখতিয়ারের ঘোড়া, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, দোয়েল ও দয়িতা, মিথ্যেবাদী রাখাল, দ্বিতীয় ভাঙন
  • গল্পগ্রন্থ: পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবণিক, ময়ূরীর মুখ
  • উপন্যাস: কবি ও কোলাহল (প্রথম), ডাহুকী, নিশিন্দা নারী, আগুনের মেয়ে, কাবিলের বোন, পুরুষ সুন্দর, উপমহাদেশ
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: পাখির কাছে ফুলের কাছে (ছড়া)
  • প্রবন্ধগ্রন্থ: কবির আত্মবিশ্বাস, দিনযাপন, কবিতার বহুদূর

হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪)

কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিদ, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৪৭ সালে ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ) রাড়িখাল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালে ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি জনপ্রিয় তবে অতি বিতর্কিত সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি একজন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ সালে তার প্রথম কাব্য ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ প্রকাশিত হয়। তার ‘নারী (১৯৯২), দ্বিতীয় লিঙ্গ (২০০১) ও পাক সার যমিন সাদ বাদ’ (২০০৩) গ্রন্থ তিনটি বিতর্কের ঝড় তোলে এবং সরকার এ বইগুলোকে বাজয়োপ্ত ঘোষণা করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সাহিত্যকর্ম

  • কাব্য: অলৌকিক ইস্টিমার, জ্বালো চিতাবাঘ, সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু
  • উপন্যাস: ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল, সব কিছু ভেঙে পড়ে, কবি অথবা দন্ডিত অপুরুষ, পাক সার যমিন সাদ বাদ, ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ
  • গল্পগ্রন্থ: যাদুকরের মৃত্যু
  • প্রবন্ধ ও সমালোচনা গ্রন্থ: রবীন্দ্রপ্রবন্ধ, রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা, আঁধার ও আধেয়, সীমাবদ্ধতার সূত্র
    ভাষাবিষয়ক গ্রন্থ কতো নদী সরোবর (বাংলা ভাষার জীবনী), লাল নীল দীপাবলি (বাংলা সাহিত্যের জীবনী), বাক্যতত্ত্ব, বাংলা ভাষার শত্রুমিত্র
  • শিশুতোষ গ্রন্থ: আব্বুকে মনে পড়ে (কিশোর উপন্যাস), ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, বুকপকেটে জোনাকিপোকা

হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২)

কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৪৮ সালে ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১২ সালে ১৯ জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লিতে সমাহিত করা হয়। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। শৈশবে তার নাম ছিল ‘শামসুর রহমান’।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ‘পলিমার কেমিস্ট্রি’ বিষয়ে পি-এইচ,ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯০ সালে তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসরগ্রহণ করেন এবং সার্বক্ষণিক সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ (১৯৭৩)। তাঁর সৃষ্ট দুটি বিখ্যাত চরিত্র ‘মিসির আলি ও হিমু’। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি (১৯৯৫)। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদকসহ (১৯৯৪) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • উপন্যাস: আগুনের পরশমনি, জোছনা ও জননীর গল্প, শ্যামল ছায়া, দেয়াল (এগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), বাদশাহ নামদার (ঐতিহাসিক), নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, দুই দুয়ারী, আমার আছে জল, কৃষ্ণপক্ষ, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃহন্নলা (মিসির আলী সংক্রান্ত), ময়ূরাক্ষী (হিমু সংক্রান্ত), দারুচিনি দ্বীপ (শুভ সংক্রান্ত)
  • চলচ্চিত্র: আগুনের পরশমনি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, শ্যামল ছায়া, ঘেটুপুত্র কমলা, আমার আছে জল
  • আত্মজীবনী: বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল, ফাউন্টেইন পেন, রংপেন্সিল, নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ
    বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী: ওমেগা পয়েন্ট, দ্বিতীয় মানব, ইমা
  • গল্পগ্রন্থ: আনন্দ বেদনার কাব্য, ছায়াসঙ্গী, নিশিকাব্য, এলেবেলে, জলকন্যা
  • নাটক: এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, আয়োময়, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার

সেলিম আল দীন (১৯৪৯-২০০৮)

নাট্যকার, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৪৯ সালে ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার সেরেনখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৮ সালে ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কাছে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি বাংলা ভাষার আধুনিককালের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকার।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। কর্মজীবনে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপনা করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তিনি বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাঙলা নাট্যকোষ’ এর সংকলন ও সম্পাদনা করেন। তার প্রথম রেডিও নাটক ‘বিপরীত তমসায়’ (১৯৬৯) এবং টেলিভিশন নাটক ‘ঘুম নেই’ (১৯৭০)। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৪), একুশে পদকসহ (২০০৭) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাহিত্যকর্ম

  • নটিক: জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন (১৯৭৫), মুনতাসির, শকুন্তলা ও কিত্তনখোলা, (তিনটি মঞ্চনাটক), কেরামত মঙ্গল, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হাতহদাই, নিমজ্জন
  • গবেষণা গ্রন্থ: মহুয়া ও দেওয়ানা মদিনা (ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে)
  • উপন্যাস: অমৃত উপাখ্যান

নমুনা প্রশ্ন

১. রবি ঠাকুর কোন কবির কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন?

ক) জন কিটস

খ) টি এস ইলিয়ট

গ) পি বি শেলি

ঘ) রবার্ট হেরিক

উত্তর: খ

২. কবি শামসুর রাহমান পেশায় ছিলেন-

ক) শিক্ষক

খ) সাংবাদিক

গ) আইনজীবী

ঘ) ব্যাংকার

উত্তর: খ

৩. শামসুর রাহমানের রচনা নয়-

ক) অক্টোপাস

খ) এলো সে অবেলায়

গ) বন্দী শিবির থেকে

ঘ) নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি

উত্তর: ঘ

৪. শামসুর রাহমানের মৃত্যু সন?

ক) ২০০৫

খ) ২০০৩

গ) ২০০৭

ঘ) ২০০৬

উত্তর: ঘ

৫. অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারত সরকারের কোন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন?

ক) পদ্মশ্রী

খ) পদ্মরাগ

গ) পদ্মভূষণ

ঘ) বীরবৌলি

উত্তর: গ

৬. কোন বিষয়ে পুস্তক রচনার জন্য আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ একুশে পদকে ভূষিত হন?

ক) মুক্তিযুদ্ধ

খ) গণঅভ্যুত্থান

গ) রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

ঘ) স্বদেশপ্রেম

উত্তর: গ

৭. আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ-

ক) সাতনরী হার

খ) কমলের চোখ

গ) কখনো রং কখনো সুর

ঘ) আমার সময়

উত্তর: ক

৮. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মূলত কী ছিলেন?

ক) প্রাবন্ধিক

খ) কথাসাহিত্যিক

গ) সাংবাদিক

ঘ) ঔপন্যাসিক

উত্তর: খ

৯. নিচের কোনটি মহাকাব্যিক রচনা?

ক) চিলেকোঠার সেপাই

খ) অন্য ঘরে অন্য স্বর

গ) খোয়াবনামা

ঘ) দোজখের ওম

উত্তর: গ

১০. আল মাহমুদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য কোনটি?

ক) নাট্যকার

খ) কবি

গ) কথাসাহিত্যিক

ঘ) প্রাবন্ধিক

উত্তর: খ

১১. আল মাহমুদের শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

ক) আরব্য রজনীর রাজহাঁস

খ) সোনালি কাবিন

গ) পাখির কাছে ফুলের কাছে

ঘ) কালের কলস

উত্তর: গ

১২. কবি আল মাহমুদের প্রকৃত নাম কী?

ক) মির আব্দুস শুকুর

খ) মির আব্দুস শুক্কুর মাহমুদ

গ) মির আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ

ঘ) মির আবদুল শুকুর মাহমুদ

উত্তর: গ

১৩. সৈয়দ শামসুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের কোন বিষয়ের ছাত্র ছিলেন?

ক) বাংলা

খ) ইতিহাস

গ) সমাজবিজ্ঞান

ঘ) ইংরেজি

উত্তর: ঘ

১৪. সৈয়দ শামসুল হক কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

ক) কুড়িগ্রামে

খ) নেত্রকোনায়

গ) বগুড়ায়

ঘ) পাবনায়

উত্তর: ক

১৫. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কিশোরপাঠ্য উপন্যাস কোনটি?

ক) নিঃসঙ্গ গ্রহচারী

খ) আমার বন্ধু রাশেদ

গ) ফোবিয়ানের যাত্রী

ঘ) একজন অতিমানবী

উত্তর: খ

১৬. কবি দিলওয়ার কী নামে সমধিক পরিচিত?

ক) প্রকৃতির কবি

খ) নাগরিক কবি

গ) গণমানুষের কবি

ঘ) দুঃখবাদী কবি

উত্তর: গ

১৭. ‘চাঁদের অমাবস্যা’ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কোন ধরনে গ্রন্থ?

ক) উপন্যাস

খ) ছোটগল্প

গ) প্রবন্ধ

ঘ) নাটক

উত্তর: ক

১৮. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?

ক) ঢাকায়

খ) প্যারিসে

গ) চট্টগ্রামে

ঘ) কলকাতায়

উত্তর: খ

১৯. ‘লালসালু’ উপন্যাসটি কত সালে প্রকাশিত হয়?

ক) ১৯৪৬

খ) ১৯৪৮

গ) ১৯৩৬

ঘ) ১৯৫০

উত্তর: খ

২০. সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত পত্রিকা কোনটি?

ক) সমকাল

খ) পূর্বাশা

গ) ধূমকেতু

ঘ) কবিতা

উত্তর: ক

২১. বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানের সংকলন করেন-

ক) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

খ) মুহম্মদ এনামুল হক

গ) আহমদ শরীফ

ঘ) মুহম্মদ হাবিবুর রহমান

উত্তর: ক

২২. বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের সম্পাদক কে?

ক) নরেন বিশ্বাস

খ) আহমদ শরীফ

গ) জামিল চৌধুরী

ঘ) মুহম্মদ আবদুল হাই

উত্তর: গ

২৩. বাংলা সাহিত্যের প্রথম শিল্প-সার্থক উপন্যাস কোনটি?

ক) আলালের ঘরের দুলাল

খ) জননী

গ) দুর্গেশনন্দিনী

ঘ) কৃষ্ণকুমারী

উত্তর: গ

২৪. ‘আগুনপাখি’ গ্রন্থটি কার লেখা?

ক) সৈয়দ শামসুল হক

খ) হাসান আজিজুল হক

গ) শামসুর রাহমান

ঘ) শওকত ওসমান

উত্তর: খ

২৫. সুফিয়া কামাল রচিত কাব্যগ্রন্থের নাম-

ক) অবরোধবাসিনী

খ) উদাত্ত পৃথিবী

গ) মাটির ফসল

ঘ) একপথ দুইবাঁক

উত্তর: খ

২৬. ‘চিহ্ন’ উপন্যাসের লেখক-

ক) প্রেমেন্দ্র মিত্র

খ) শওকত ওসমান

গ) জহির রায়হান

ঘ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর: ঘ

২৭. মধুসূদন-পূর্ব হাজার বছরের বাংলা কবিতা কোন ছন্দে লেখা হতো?

ক) মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছন্দ

খ) স্বরবৃত্ত ছন্দ

গ) পয়ার ছন্দ

ঘ) গদ্যছন্দ

উত্তর: গ

২৮. নিচের কোনটি রম্য রচনা?

ক) ধীরে বহে মেঘনা

খ) পঞ্চতন্ত্র

গ) চোখের বালি

ঘ) সাতসমুদ্র

উত্তর: খ

২৯. জসীম উদ্দীনের ভ্রমণ কাহিনীমূলক গ্রন্থ কোনটি?

ক) ইস্তাম্বুল যাত্রীর পথ

খ) চলে মুসাফির

গ) বোবা কাহিনী

ঘ) বিলেতে সাড়ে সাত শ দিন

উত্তর: খ

৩০. ‘বিচ্ছিন্ন প্রতিলিপি’ কাব্যগন্থের রচয়িতা কে?

ক) মাযহারুল ইসলাম

খ) রফিকুল ইসলাম

গ) হুমায়ুন কবির

ঘ) জাহানারা ইমাম

উত্তর: ক

৩১. ‘আবোল তাবোল’ কার লেখা?

ক) উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী

খ) দক্ষিণারঞ্জন মিত্র

গ) সুকুমার রায়

ঘ) সুকুমার বড়ুয়া

উত্তর: গ

৩২. দুঃখ বর্ণনার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় কাকে?

ক) চন্ডীদাস

খ) চন্দ্রাবতী

গ) মুকুন্দরাম

ঘ) ভারতচন্দ্র

উত্তর: গ

৩৩. ‘রাগতালনামা’ সঙ্গীতবিষয়ক কাব্যের রচয়িতা-

ক) শাহ মুহম্মদ সগীর

খ) বিদ্যাপতি

গ) বাহরাম খান

ঘ) আলাওল

উত্তর: ঘ

৩৪. সাধুরীতির প্রথম সার্থক প্রয়োগ হয় কোন গ্রন্থে?

ক) বীরবলের হালখাতা

খ) বেদান্ত

গ) প্রভাবতী সম্ভাষণ

ঘ) বেতাল পঞ্চবিংশতি

উত্তর: খ

৩৫. লালনের জীবনকাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘অচিনপাখি’ এর পরিচালক কে?

ক) ঋত্বিক ঘটক

খ) তানভীর মোকাম্মেল

গ) গৌতম ঘোষ

ঘ) সৈয়দ হাসান ইমাম

উত্তর: খ

৩৬. ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ প্রহসনের রচয়িতা-

ক) মাইকেল মধুসূদন দত্ত

খ) কালীপ্রসন্ন সিংহ

গ) ডি এল রায়

ঘ) দীনবন্ধু মিত্র

উত্তর: ঘ

৩৭. কায়কোবাদ রচিত গীতিকাব্য কোনটি?

ক) তোহফা

খ) কথামালা

গ) অশ্রুমালা

ঘ) স্বপ্নদর্শন

উত্তর: গ

৩৮. ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের রচয়িতা-

ক) বঙ্কিমচন্দ্র

খ) রবীন্দ্রনাথ

গ) শরৎচন্দ্র

ঘ) বিভূতিভূষণ

উত্তর: গ

৩৯. কোন কথাসাহিত্যিক ‘কলম পেশা কেরানি’ হিসেবে পরিচিত?

ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

খ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

গ) অদ্বৈত মল্লবর্মণ

ঘ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর: ক

৪০. ‘প্রগতি ও কবিতা’ পত্রদ্বয়ের সাথে কোন সাহিত্যিকের নাম জড়িত?

ক) জীবনানন্দ দাশ

খ) পেমেন্দ্র মিত্র

গ) বুদ্ধদেব বসু

ঘ) অমিয় চক্রবর্তী

উত্তর: গ

৪১. আবু জাফর শামসুদ্দীন রচিত উপন্যাস-

ক) চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান

খ) সংস্কৃতির ভাঙাসেতু

গ) পদ্মা মেঘনা যমুনা

ঘ) রাজা উপাখ্যান

উত্তর: গ

৪২. শাহ আবদুল করিম রচিত সঙ্গীতগ্রন্থ নয়-

ক) মৃত্তিকার ঘ্রাণ

খ) কালনীর ঢেউ

গ) ভাটির চিঠি

ঘ) গণসঙ্গীত

উত্তর: ক

৪৩. ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যগ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?

ক) ১৯৩৬ সালে

খ) ১৯২২ সালে

গ) ১৯৪৪ সালে

ঘ) ১৯৬২ সালে

উত্তর: গ

৪৪. ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেন-

ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খ) আহসান হাবীব

গ) সৈয়দ আলী আহসান

ঘ) বুদ্ধদেব বসু

উত্তর: গ

৪৫. মুনীর চৌধুরী রচিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-

ক) বাংলা ভাষার ব্যাকরণ

খ) বাংলা ব্যাকরণ

গ) ভাষাপ্রকাশ বাংলা ব্যাকরণ

ঘ) ব্যাকরণ মঞ্জুরী

উত্তর: ক

৪৬. জহির রায়হানের কোন চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে নিগার পুরস্কার লাভ করে?

ক) কখনো আসেনি

খ) সোনার কাজল

গ) জীবন থেকে নেয়া

ঘ) কাচের দেয়াল

উত্তর: ঘ

৪৭. নির্মলেন্দু গুণের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

ক) প্রেমাংশুর রক্ত চাই

খ) চাষাভূষার কাব্য

গ) তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা

ঘ) অলৌকিক ইস্টিমার

উত্তর: ক

৪৮. ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ কিশোর উপন্যাসের রচয়িতা-

ক) আল মাহমুদ

খ) হুমায়ূন আহমেদ

গ) হুমায়ূন আজাদ

ঘ) মহাদেব সাহা

উত্তর: গ

৪৯. হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ কোনটি?

ক) বহুব্রীহি

খ) এলেবেলে

গ) দ্বিতীয় মানব

ঘ) কাঠপেন্সিল

উত্তর: ঘ

৫০. ‘বাংলা নাট্যকোষ’ এর সংকলন ও সম্পাদনা করেন কে?

ক) মমতাজউদ্দিন আহমদ

খ) সেলিম আল দীন

গ) মামুনুর রশীদ

ঘ) আসকার ইবনে শাইখ

উত্তর: খ

তথ্যসূত্র:

১. শামসুজ্জামান খান, সেলিনা হোসেন ও অন্যান্য, চরিতাভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৮৫)
২. হুমায়ূন আজাদ, লাল নীল দীপাবলী বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬)
৩. মনিরুজ্জামান, বাংলা সাহিত্য : অতীত ও উত্তরকাল (বাংলা একাডেমি, মে ২০০৩)
৪. ক্ষেত্র গুপ্ত, বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস (কলকাতা ২০০১)
৫. ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্য পরিচয় (কলকাতা ২০০৮)
৬. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)

BCS Bangla Lecture – 6

প্রধান বাংলা সাহিত্যিক (প্রাচীন যুগ থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববর্তী),
নমুনা প্রশ্ন

প্রধান বাংলা সাহিত্যিক (প্রাচীন যুগ থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববর্তী)

লুইপা

চর্যাপদের কবি ও বৌদ্ধধর্মের একজন প্রবীণ মহাসিদ্ধ। ড. সুকুমার সেনের মতে, তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি। আনুমানিক ৭৩০ থেকে ৮১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। ভারতীয় মহাসিদ্ধের জীবনী নিয়ে লেখা ‘চতুরাশিতি সিদ্ধ’ গ্রন্থে লুইপাকে চুরাশিজন মহাসিদ্ধের একজন বলা হয়েছে। তিনি সিংহলদ্বীপের এক রাজার ছেলে ছিলেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, তিনি ভারতের রাঢ় অঞ্চলের লোক। তিনি চর্যাপদের ১ ও ২৯ নং পদের রচয়িতা। কবি লুইপা রচিত চর্যাপদের ১ নং পদ: “কাআ তরুবর পাঞ্চবি ডাল; চঞ্চল চীত্র পইঠো কাল।”

শবরপা

বৌদ্ধধর্মের চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধের একজন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও চর্যাপদের প্রথম বাঙালি কবি। তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারনাথের মতে, তিনি বাঙ্গাল প্রদেশের পর্বতবাসী একজন ব্যাধ বা শিকারি ছিলেন। তার জীবনকাল আনুমানিক ৬৮০ থেকে ৭৬০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি। তিনি চর্যাপদের ২৮ ও ৫০ নং পদের রচয়িতা। কবি শবরপার ২৮ নং পদ: “উষ্ণা উষ্ণা পাবত তহিঁ সবই সবরী বালী; মোরাঙ্গ পীচ্ছ পরিহাণ সরবী গীবত গুঞ্জরী মালী।”

কাহ্নপা

চর্যাপদের প্রধান কবি ও চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধের একজন। অন্য নাম ‘কৃষ্ণপা বা কৃষ্ণাচার্য’। তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারনাথের মতে, ভারতের বিদ্যানগর নামক স্থানে তাঁর বাসস্থান ছিল। খ্রিস্টীয় ৭ম থেকে ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি তিনি জীবিত ছিলেন। তিনি চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেন। তাঁর রচিত পদসংখ্যা ১৩ টি। তাঁর রচিত চর্যাপদের ২৪ নং পদটি পাওয়া যায়নি।

ভুসুকুপা

চর্যাপদের দ্বিতীয় প্রধান কবি ও বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়ের একজন। প্রকৃত নাম ‘শান্তিদেব’। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লার মতে, তিনি পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা।তাঁর লেখায় বাঙ্গাল দেশ ও বাঙ্গালি কথার উল্লেখ আছে। তিনি নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন। আনুমানিক ৮ম থেকে ৯ম শতাব্দীতে তিনি সৌরাষ্ট্রের ক্ষত্রিয় রাজপুত্র ছিলেন। তিনি চর্যাপদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ লেখেন। তার রচিত পদসংখ্যা ৮ টি। কবি ভুসুকুপার ৬ নং পদ: “অপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী, খনক ন ছাড়াই ভুসুকু অহেরী।”

চন্ডীদাস (১৩৭০-১৪৩০)

মধ্যযুগের প্রথম বাঙালি কবি ও বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাংলা সাহিত্যে চন্ডীদাস তিন জন: বড়– চন্ডীদাস (সবচেয়ে প্রাচীন), দ্বিজ চন্ডীদাস ও দীন চন্ডীদাস (চৈতন্যপরবর্তী যুগের কবি)। শুধু চন্ডীদাস বলতে কাকে বুঝায় তা পন্ডিতগণ আজও নিশ্চিত করতে পারেননি। একে বাংলা সাহিত্যে চন্ডীদাস সমস্যা বলে।

সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তথ্য মতে, চন্ডীদাস বলতে বাংলা সাহিত্যে বড়–চন্ডীদাসকে বুঝায়। বড়–চন্ডীদাসের প্রকৃত নাম ‘অনন্ত’। ‘বড়–’ কবির কৌলিন্য উপাধি। গুরুপ্রদত্ত নাম ‘চন্ডীদাস’। ১৩৭০ সালে তিনি বীরভূমের নানুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪৩০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার রচিত রাধা-কৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন।

বিদ্যাপতি (১৩৭৪-১৪৬০)

বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা ও অবাঙালি কবি। তিনি ১৩৭৪ সালে মিথিলার সীতমারী মহাকুমার বিসফি গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বিদ্যাপতির মাতৃভাষা ‘মৈথিলি’। তিনি একটি বাংলা পংক্তি না লিখেও বাংলা সাহিত্যের মর্যাদাবান কবি।

তাঁর পদাবলি সাহিত্য ‘ব্রজবুলি’ ভাষায় রচিত। বাংলা, প্রাকৃত ও মৈথিলি ভাষার মিশ্রণে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম ভাষার নাম ব্রজবুলি। তিনি এ ভাষার স্রষ্টা। কবি বিদ্যাপতির উপাধি: ‘মিথিলার কোকিল, কবি কণ্ঠহার ও অভিনব জয়দেব’। ‘রাজকণ্ঠের মণিমালা’ তাঁর বিখ্যাত কবিতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ: কীর্তিলতা (ইতিহাস), পুরুষ পরীক্ষা (নীতিশিক্ষা) ইত্যাদি।

শাহ মুহম্মদ সগীর (আনুমানিক ১৪-১৫ শতক)

রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রথম কবি ও মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম বাঙালি মুসলমান কবি। তাঁর জন্ম ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। তাঁর জীবনকাল ১৪ শতকের শেষভাগ থেকে ১৫ শতকের প্রথমভাগের মাঝামাঝি অনুমান করা হয়।

ড. মুহাম্মদ এনামুল হক তাকে চট্টগ্রামের অধিবাসী বলে মনে করেন। তাঁর রচিত প্রথম ও বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ‘ইউসুফ জোলেখা’। গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে (১৩৮৯-১৪১০) তিনি এ কাব্য রচনা করেন। তিনি গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের রাজকর্মচারী ছিলেন।

মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (১৫৪০-১৬০৪)

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি। তাকে দুঃখ বর্ণনার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ১৫৪০ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মেদিনীপুরের জমিদার রঘুনাথ রায়ের নির্দেশে তিনি ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। তিনি চন্ডীমঙ্গল কাব্যধারার প্রধান কবি। জমিদার রঘুনাথ রায় কবিকে ‘কবিকঙ্কণ’ উপাধি দেন।

চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০)

মধ্যযুগের তথা বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি ও রামায়ণের প্রথম মহিলা অনুবাদক। দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, তিনি ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জের পাতোয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং আনুমানিক ১৬০০ সালের দিকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মনসামঙ্গল কাব্যের অন্যতম রচয়িতা দ্বীজ বংশীদাসের কন্যা। তিনি মৈমনসিংহ গীতিকার ‘চন্দ্রাবতী’ উপাখ্যানের নায়িকা হিসেবে অমর হয়ে আছেন।

আলাওল (১৬০৭-১৬৮০)

মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য মুসলমান কবি ও আরাকান রাজসভার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, আনুমানিক ১৬০৭ সালে ফতেহাবাদ (বর্তমান ফরিদপুর) জেলার জামালপুর অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬৮০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কারো কারো মতে, তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাব্যিক আবেগের সাথে বৌদ্ধিক চেতনার মিশ্রণ থাকায় তাকে ‘পন্ডিতকবি’ বলা হয়।

কবি আলাওলের প্রথম ও বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পদ্মাবতী’। তাঁর রচিত মোট কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা সাতটি: পদ্মাবতী (১৬৪৮), তোহফা (নীতিকাব্য),সিকান্দারনামা, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, সপ্ত পয়কর, সতীময়না লোরচন্দ্রানী (তৃতীয় খন্ড ) ও রাগতালনামা (সঙ্গীতবিষয়ক কাব্য)।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর (১৭১২-১৭৬০)

অন্নদামঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সর্বশেষ কবি। তাকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাগরিক কবি বলা হয়। তিনি ১৭১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার পেঁড়ো গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৬০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং যুগ সন্ধিক্ষণ শুরু হয়। তিনি নদীয়ার কৃষ্ণনগর রাজসভার কবি ছিলেন।

নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশে তিনি ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কবিকে ‘রায়গুণাকর’ উপাধি দেন। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্য: সত্যপীরের পাঁচালি, সত্য নারায়ণের পাঁচালি, নগাষ্টক ইত্যাদি।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯)

বাংলা সাহিত্যের যুগ সন্ধিক্ষণের কবি ও সাংবাদিক। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম পরিবেশ সচেতন কবি। তাঁর হাত ধরে মধ্যযুগের গন্ডি পেরিয়ে বাংলা সাহিত্য আধুনিক রূপ লাভ করেছিল। তিনি ১৮১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার কাঞ্চনপল্লি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৫৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের রচনায় মধ্যযুগীয় ও আধুনিক ভাবধারা উভয়ই লক্ষ্য করা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে ‘খাঁটি বাঙালি কবি’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৮৩১ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সম্বাদ প্রভাকর’ পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং ১৮৩৯ সালে এটি দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। ‘সম্বাদ প্রভাকর’ বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রিকা।

উইলিয়াম কেরি (১৭৬১-১৮৩৪)

ইংরেজ ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি, আধুনিক বাংলা গদ্যরীতির পথিকৃৎ ও বাইবেলের প্রথম বাংলা অনুবাদক। তিনি ১৭৬১ সালে ১৭ আগস্ট ইংল্যান্ডের নর্দানটন শায়ারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৩৪ সালে ৯ জুন কলকাতার শ্রীরামপুরে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৭৯৩ সালে ভারতবর্ষে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন এবং ১৮০০ সালে ১০ জানুয়ারি কলকাতায় ‘শ্রীরামপুর মিশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি শ্রীরামপুর মিশনের পাদ্রি বা ধর্মযাজক ছিলেন। ১৮০১ সালে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ও বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নিযুক্ত হন। এ কলেজকে কেন্দ্র করেই আধুনিক বাংলা গদ্যসাহিত্যের যাত্রা শুরু হয়। তিনি পাঠ্যপুস্তকে প্রথম বাংলা গদ্যসাহিত্যের ব্যবহার করেন।

সাহিত্যকর্ম

গদ্যগ্রন্থ: কথোপকথন (১৮০১), ইতিহাসমালা (১৮১২)

ব্যাকরণ: A Grammar of Bengali Language (১৮০১)

রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩১)

হিন্দুধর্মের মহান সংস্কারক, ভাষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও বাঙালি দার্শনিক। তিনি ১৭৭২ সালে ২২ মে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৮৩৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই সমাহিত হন। তিনি ১৮২৮ সালে ‘ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজের মুখ্য প্রচারক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ ও বিধবা বিবাহ প্রচলনের স্বপক্ষে জোর প্রচারণা চালান।

১৮২৯ সালের তার প্রচেষ্টায় লর্ড বেন্টিংক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন। রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় প্রবন্ধ রচনায় প্রথম কৃতিত্ব দেখান এবং পাঠ্যপুস্তকের বাইরে প্রথম বাংলা গদ্যের ব্যবহার করেন। ১৮১৫ সালে তিনি তার ‘বেদান্ত’ প্রবন্ধগ্রন্থে প্রথম সাধু ভাষা ব্যবহার করেন। তিনি বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন।

সাহিত্যকর্ম
প্রবন্ধগ্রন্থ: বেদান্তগ্রন্থ, ভট্টাচার্যের সহিত বিচার, গোস্বামীর সহিত বিচার, প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ
ব্যাকরণ: Bengali Grammar in English Language (১৮২৬), গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৩৩)
সম্পাদিত পত্রিকা: সম্বাদ কৌমুদী, মিরাতুল আখবার

লালন শাহ (১৭৭২-১৮৯০)

বাউল গানের গুরু, শ্রেষ্ঠ বাউল গান রচয়িতা ও গায়ক। তাঁর বাউল গানগুলো বাংলা লোকসাহিত্যের বিশেষ উপাদান। তিনি ১৭৭২ সালে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলার হরিশপুর গ্রামে (মতান্তরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ভাঁড়রা গ্রামে) এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯০ সালে ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে নিজের আখড়ায় পরলোক গমন করেন।

তাঁর প্রকৃত নাম লালন চন্দ্রকর। লালন নিজের সম্পর্কে কখনও কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেন। লালন কোনো জাতিভেদ মানতেন না। তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী; যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। যৌবনকালে তিনি মুসলমান ফকির সিরাজ সাঁইয়ের সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হন।

তিনি অসাম্প্রদায়িক ও আধ্যাত্মিক ভাবধারায় প্রায় দু হাজার গান রচনা করেন। জীবিতাবস্থায় লালনের লেখা গানের কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর পরে তাঁর শিষ্যরা তাঁর রচিত গানগুলো সংগ্রহ করেন। কাঙাল হরিনাথ লালনের প্রিয় শিষ্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের গানের ভক্ত ছিলেন। তিনি লালনের ২৯৮ টি গান সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো থেকে ২০ টি গান ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়াতে লালনের আখড়া অবস্থিত।

সাহিত্যকর্ম

বিখ্যাত গান: আমি অপার হয়ে বসে আছি, সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, বাড়ির পাশে আরশিনগর, সময় গেলে সাধন হবে না, তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে, এসব দেখি কানার হাটবাজার, মিলন হবে কত দিনে, সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন ইত্যাদি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১)

সমাজ সংস্কারক, সংস্কৃত পণ্ডিত, বাঙালি শিক্ষাবিদ ও গদ্যকার। তাঁকে বাংলা গদ্যসাহিত্য ও সাধুরীতির জনক বলা হয়। তিনি শিশু শিক্ষামূলক বাংলা গ্রন্থের পথিকৃৎ। তিনি ১৮২০ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৯ জুলাই ১৮৯১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পৈতৃক পদবি ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। তিনি ‘ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা’ নামে স্বাক্ষর করতেন। ১৮৪০ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি পান।

তিনি বিধবা বিবাহের সপক্ষে এবং বহুবিবাহের বিপক্ষে ছিলেন। ১৮৫৬ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় হিন্দু সমাজে ‘বিধবা বিবাহ আইন’ প্রবর্তিত হয়। ১৮৭০ সালে তিনি তার পুত্র নারায়ণচন্দ্রকে এক বিধবার সাথে বিয়ে দেন। কলকাতার ‘বেথুন কলেজ’ তাঁর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি বাংলা গদ্যে সর্বপ্রথম বিরাম চিহ্নের প্রচলন করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’। এ গ্রন্থে তিনি সর্বপ্রথম বিরাম চিহ্নের সফল প্রয়োগ করেন।

সাহিত্যকর্ম

শিশুতোষ গ্রন্থ: বোধোদয় (১৮৫১), বর্ণ পরিচয় (২ খন্ড, ১৮৫৫)

মৌলিক গ্রন্থ: বিদ্যাসাগর চরিত (১৮৯১, বাংলা ভাষার প্রথম আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ; মরণোত্তর প্রকাশিত), প্রভাবতী সম্ভাষণ (বাংলা গদ্যসাহিত্যের প্রথম শোকগাঁথা), অতি অল্প হইল, আবার অতি অল্প হইল, ব্রজবিলাস, শব্দমঞ্জরী

অনূদিত গ্রন্থ: বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭): হিন্দি ভাষায় লল্লুলাল রচিত ‘বেতাল পচ্চিসী’ এর অনুবাদ।

শকুন্তলা (১৮৫৪): সংস্কৃত ভাষায় কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ এর অনুবাদ।

সীতার বনবাস (১৮৬০): সংস্কৃত ভাষায় বাল্মীকির ‘রামায়ণ’ অবলম্বনে রচিত।

ভ্রান্তিবিলাস (১৮৬৯): শেক্সপিয়ারের ‘Comedy of Errors’ এর অনুবাদ।

বোধোদয় (১৮৫১): ইংরেজি ভাষায় চেম্বার্সের ‘Rudiment of Knowledge’ অবলম্বনে রচিত।

কথামালা (১৮৫৬): গ্রিক ভাষায় ঈশপের ‘ফেবলস’ অবলম্বনে রচিত।

ব্যাকরণ: ব্যাকরণ কৌমুদী (১৮৫৩)

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)

বাংলা সাহিত্যের যুগ প্রবর্তক কবি ও নাট্যকার। তিনি ১৮২৪ সালে ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের তীরে এক জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পিতা রাজনারায়ণ দত্ত; মাতা জাহ্নবী দেবী। ১৩ বছর বয়সে তিনি কলকাতা যান এবং হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।১৮৪৩ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মাইকেল নামধারণ করেন।

হিন্দু কলেজে খ্রিস্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকায় তাকে কলেজ ত্যাগ করতে হয়। ১৮৪৮ সালে ২৪ বছর বয়সে তিনি মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে কলকাতা ত্যাগ করেন। মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি Timothy Penpoem ছদ্মনামে ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন। ১৮৪৯ সালে এ ছদ্মনামে তাঁর প্রথম ইংরেজি কাব্য The Captive Ladie প্রকাশিত হয়। ১৮৫৯ সালে বাংলা ভাষায় তার প্রথম গ্রন্থ ‘শর্মিষ্ঠা’ প্রকাশিত হয়।

১৮৬৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়া বাদ দিয়ে প্যারিস যান এবং ভার্সাই নগরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে বসে তিনি ইতালির কবি পেত্রার্ক ও ইংরেজ কবি শেক্সপিয়ারের অনুকরণে সনেট লেখা শুরু করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
মধুসূদনের পূর্বে বাংলা কবিতায় পয়ার ছন্দ প্রচলিত ছিল। পয়ার ছন্দে এক চরণের পরে অন্য চরণের মিল থাকে। তিনি পয়ার ছন্দপ্রথা ভেঙে দিয়ে বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন। এটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবাহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। মধূসূদন মোট ১০২ টি সনেট রচনা করেছেন।

তাঁর রচিত প্রথম ও বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট ‘বঙ্গভাষা’। মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বলা হয়: বাংলা সাহিত্যের বিপ্লবী ও আধুনিক কবি; অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক; প্রথম আধুনিক ও সার্থক নাট্যকার; বাংলা সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার প্রবর্তক; প্রথম প্রহসন রচয়িতা; প্রথম আধুনিক মহাকাব্য রচয়িতা; প্রথম সার্থক ট্রাজেডি, কমেডি ও পত্রকাব্য রচয়িতা।

সাহিত্যকর্ম

নাটক: শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯): বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক নাটক। এটি কালিদাস রায়কে উৎসর্গ করেন।

পদ্মাবতী (১৮৬০): বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক কমেডি। এ নাটকে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রয়োগ ঘটে।

কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১): বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি।

মায়াকানন: মৃত্যুর পরে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ নাটক।

কাব্য: The Captive Ladie (১৮৪৯): ইংরেজিতে লেখা তার প্রথম কাব্য

তিলোত্তমাসম্ভব (১৮৬০): বাংলায় লেখা তাঁর প্রথম কাহিনীকাব্য। এটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ।

চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬): বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট সংকলন (১০২ টি সনেটের সংকলন)

বীরাঙ্গনা (১৮৬২): বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রকাব্য। এটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে উৎসর্গ করেন।

মেঘনাদবধ (১৮৬১): অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য। এ মহাকাব্যে ৯ টি সর্গ বিদ্যমান। কাহিনীর উৎস বাল্মীকির সংস্কৃত মহাকাব্য ‘রামায়ণ’।

ব্রজাঙ্গনা (১৮৬১): বৈষ্ণব পদাবলির আধুনিক পরিণতি এই কাব্যে বিধৃত হয়েছে। এটি একটি গীতিকাব্য। এটি ব্যতীত তাঁর সকল কাব্য অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা।

প্রহসন: বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০): বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রহসন
একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০)

দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩)

মধুসূদনের সমসাময়িক বাংলা নাটকের অন্যতম রূপকার। তিনি ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক নাটক রচনা না করে বাস্তবধর্মী ও সামজিক নাটক রচনা করেন। তিনি ১৮৩০ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চৌবেড়িয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৭৩ সালে ১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বাল্যনাম ‘গন্ধর্বনারায়ণ’ এবং উপাধি ‘রায়বাহাদুর’। ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লেখা তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নাটক ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০)। নাটকটির প্রথম ইংরেজি অনুবাদক মাইকেল মধুসূদন দত্ত।নাটক ছাড়াও তিনি সমকালীন হিন্দুসমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রহসন রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।

সাহিত্যকর্ম

নাটক: লীলাবতী (সামাজিক), কমলে কামিনী (রোমান্টিক নাটক ও তাঁর শেষ রচনা), নীলদর্পণ, নবীন তপস্বিনী

প্রহসন: সধবার একাদশী (সামাজিক), বিয়ে পাগলা বুড়ো, জামাই বারিক

বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪)

আধুনিক বাংলা গীতিকাব্যের প্রথম ও প্রধান কবি। তিনি রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুরু ছিলেন। ১৮৩৫ সালে ২১ মে তিনি কলকাতার নিমতলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯৪ সালে ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি নয়। নিজ উদ্যোগে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা করেন। প্রকৃতি, রোমান্টিকতা, সঙ্গীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষার ব্যবহার তার কাব্যকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে।

তাঁর প্রথম কাব্য স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮) এবং শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯)। রবীন্দ্রনাথ সারদামঙ্গল কাব্যটি পড়ে প্রভাবিত হয়েছেন এবং বিহারীলালকে বাংলা সাহিত্যে ‘ভোরের পাখি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সাহিত্যকর্ম

কাব্য: স্বপ্নদর্শন, বন্ধুবিয়োগ, বঙ্গসুন্দরী, সারদামঙ্গল, নিসর্গসন্দর্শন, প্রেম প্রবাহিনী, সাধের আসন

সম্পাদিত পত্রিকা: পূর্ণিমা, সাহিত্য সংক্রান্তি, অবোধবন্ধু

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪)

বাংলা সাহিত্যের সার্থক ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। সাহিত্যের রসবোদ্ধাদের নিকট তিনি ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধি এবং হিন্দুদের কাছ থেকে ‘ঋষি’ আখ্যা লাভ করেন। তিনি বাংলা ভাষার তুলনামূলক সমালোচনা সাহিত্যের প্রথম রচয়িতা। তিনি ১৮৩৮ সালে ২৬ জুন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯৪ সালে ৮ এপ্রিল কলকাতায় বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ছদ্মনাম ‘কমলাকান্ত’। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রাজুয়েট এবং পেশায় ছিলেন যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮৫৮ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত (৩৩ বছর) তিনি এ পদে চাকরি করেন। ১৮৫২ সালে তিনি প্রথম ‘সম্বাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় কবিতা লিখে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। বাংলা ভাষায় তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ও বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫)। তিনি বঙ্গদর্শন (১৮৭২) পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।

বঙ্কিমচন্দ্রের পরে তাঁর ভ্রাতা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। তিনি তাঁর ‘সাম্য’ গ্রন্থটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেন। তাঁর কপালকুন্ডলা উপন্যাসের “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ” কপালকুন্ডলার এ সংলাপটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক সংলাপ বলা হয়। তার রচিত মোট বাংলা উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ টি।

সাহিত্যকর্ম

প্রবন্ধগ্রন্থ: লোকরহস্য (১৮৭৪, ব্যঙ্গরচনা), কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫, ব্যঙ্গরচনা), সাম্য (১৮৭৯), কৃষ্ণচরিত্র, বিজ্ঞান রহস্য

কাব্য: ললিতা ও মানস

উপন্যাস: Rajmohon’s Wife (১৮৬২): ইংরেজি ভাষায় রচিত লেখকের প্রথম উপন্যাস।

দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫): লেখকের ও বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস।

কপালকুন্ডলা (১৮৬৬): বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক উপন্যাস।

রজনী (১৮৭৭): বাংলা সাহিত্যের প্রথম মনস্তাত্তি¡ক বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ।

কৃষ্ণকান্তের উইল ও বিষবৃক্ষ: সামাজিক উপন্যাস। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৮৭৮) তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী ও সীতারাম: এয়ী উপন্যাস। ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে তিনি তাঁর ‘বন্দে মাতরম’ সংগীতটি সংযোজন করেন। ‘আনন্দমঠ’ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পটভূমিকায় রচিত দেশপ্রেমমূলক উপন্যাস।

মৃণালিনী: ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাঙালি ও তুর্কি আক্রমণের পটভূমিতে রচিত রাজনৈতিক উপন্যাস।

রাজসিংহ: ঐতিহাসিক উপন্যাস।

চন্দ্রশেখর: এতে মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের সংগ্রামের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
ইন্দিরা, রাধারানী, যুগলাঙ্গুরীয়।

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)

ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৮৪৭ সালে ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১২ সালে ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম গদ্যলেখক। তিনি ‘গাজী মিয়া’ ছদ্মনামে লিখতেন। কাঙাল হরিনাথ তাঁর সাহিত্যগুরু ছিলেন।

কর্মজীবনে তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর ও গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘আজীজন নেহার’ (১৮৭৪), ‘হিতকরী’ (১৮৯০)। তিনি ‘গো-জীবন’ প্রবন্ধগ্রন্থ লেখার জন্য মামলায় জড়িয়ে পড়েন। ১৮৬৯ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘রত্নবতী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর শ্রেষ্ট রচনা ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘বিষাদ সিন্ধু’ (১৮৮৫-১৮৯১)।

সাহিত্যকর্ম

উপন্যাস: রত্নবতী, বিষাদ সিন্ধু (কারবালার কাহিনী অবলম্বনে রচিত ৩ পর্বের উপন্যাস: মহরম পর্ব, উদ্ধার পর্ব ও এজিদ বধ পর্ব), উদাসীন পথিকের মনের কথা (নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী অবলম্বনে রচিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস)

নাটক: বসন্তকুমারী (১৮৭৩, মুসলমান লেখক রচিত প্রথম নাটক), জমিদার দর্পণ (১৮৭৩), বেহুলা গীতাভিনয় (গদ্যে-পদ্যে রচিত)।

প্রহসন: এর উপায় কী? (১৮৭৫, মুসলমান লেখক রচিত প্রথম প্রহসন), ভাই ভাই এইতো চাই, টালা অভিনয়

প্রবন্ধগ্রন্থ: গো-জীবন (১৮৮৯)

আত্মজীবনী:গাজী মিয়ার বস্তানী (ব্যঙ্গ-রসাত্মক)

কাব্য: মোসলেম বীরত্ব (১৯০৭)

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১)

গবেষক, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ ও চর্যাপদের আবিষ্কর্তা। তিনি ১৮৫৩ সালে ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার নৈহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩১ সালে ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মূল নাম ‘হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য’। ১৯০৭ সালে তিনি নেপালের রাজ গ্রন্থশালা (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ উদ্ধার করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় এটাই তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি।

তিনি ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৮৯৮ সালে তিনি ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি এবং ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি-লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯১৬ সালে কলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে আবিষ্কৃত চর্যাপদের ৪টি পুঁথি সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।

সাহিত্যকর্ম

উপন্যস: বেণের মেয়ে, কাঞ্চনমালা

প্রবন্ধগ্রন্থ: বাল্মীকির জয়, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম

সম্পাদিত গ্রন্থ: হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা

কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১)

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বাঙালি মুসলমান কবি ও আধুনিক মহাকাব্য ধারার শেষ কবি। তিনি ১৮৫৭ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ‘কাজেম আল কোরেশী’। তিনি বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম মহাকাব্য ও সনেট রচয়িতা।

১৮৭০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশিত হয়। ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে রচিত তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪)। ১৯৩২ সালে তিনি ‘নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ’ কর্তৃক কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন উপাধি পান।

সাহিত্যকর্ম

গীতিকাব্য: অশ্রুমালা

মহাকাব্য: মহাশ্মশান (৩ খন্ড; ৬০ সর্গে বিভক্ত বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় মহাকাব্য)

কাব্য: বিরহ বিলাপ, কুসুমকানন, শিবমন্দির, অমিয়ধারা, শ্মশানভস্ম

নমুনা প্রশ্ন

১. ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’ কাজী নজরুলের কোন ধরনের রচনা?

ক) উপন্যাস

খ) ছোটগল্প

গ) নাটক

ঘ) প্রবন্ধ

উত্তর: ঘ

২. কাজী নজরুল ইসলাম আমৃত্যু নির্বাক হয়ে যান কত বছর বয়সে?

ক) ৪০ বছরে

খ) ৪২ বছরে

গ) ৪১ বছরে

ঘ) ৪৩ বছরে

উত্তর: ঘ

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন স্কুলটি নজরুলের সাথে যুক্ত?

ক) মনিপুর হাইস্কুল

খ) দরিরামপুর হাইস্কুল

গ) মনিরামপুর হাইস্কুল

ঘ) মির্জাপুর হাইস্কুল

উত্তর: খ

৪. কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্রিকা কোনটি?

ক) নবযুগ

খ) শিখা

গ) সবুজপত্র

ঘ) কল্লোল

উত্তর: ক

৫. কাজী নজরুল ইসলাম কোন তারিখে মৃত্যুবরণ করেন?

ক) ২৫ মে

খ) ১৫ আগস্ট

গ) ২৯ আগস্ট

ঘ) ২২ সেপ্টেম্বর

উত্তর: গ

৬. কাজী নজরুল ইসলাম সম্বন্ধে কোনটি সঠিক?

ক) তিনি চিত্রশিল্পী

খ) মহাকাব্য রচয়িতা

গ) তিনি ক্রিড়াবিদ

ঘ) তিনি অভিনেতা

উত্তর: ঘ

৭. কখন থেকে কবি নজরুল ইসলাম সৃষ্টিশীল সত্তার অধিকারী হয়ে ওঠেন?

ক) গ্রামের মক্তবে পড়ার সময়

খ) লেটো গানের দলে যোগ দেয়ার সময়

গ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়

ঘ) বাঙালি পল্টনে যোগ দেওয়ার পর

উত্তর: খ

৮. বঙ্কিমচন্দ্র যে পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন –

ক) সবুজপত্র

খ) ভারতী

গ) বঙ্গদর্শন

ঘ) দিগদর্শন

উত্তর: গ

৯. বঙ্কিমচন্দ্র পেশায় কী ছিলেন?

ক) শিক্ষক

খ) সাংবাদিক

গ) ম্যাজিস্ট্রেট

ঘ) আইনজীবী

উত্তর: গ

১০. বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস কোনটি?

ক) কৃষ্ণকান্তের উইল

খ) বিষবৃক্ষ

গ) দুর্গেশনন্দিনী

ঘ) কপালকুন্ডলা

উত্তর: গ

১১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম-মৃত্যু সাল কোনটি?

ক) ১৮৩৮-১৮৯৪

খ) ১৮৩৬-১৮৯৬

গ) ১৮২৮-১৮৯৫

ঘ) ১৮৫৮-১৮৯৮

উত্তর: ক

১২. সুফিয়া কামালের রচিত গ্রন্থ কোনটি?

ক) অর্কেস্ট্রা

খ) চোরাবালি

গ) বলাকা

ঘ) কেঁয়ার কাটা

উত্তর: ঘ

১৩. ‘ইতল বিতল’ সুফিয়া কামালের কী জাতীয় রচনা?

ক) স্মৃতিকথা

খ) শিশুতোষ

গ) ভ্রমণকাহিনী

ঘ) কল্পকাহিনী

উত্তর: খ

১৪. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচিত গ্রন্থ কোনটি?

ক) নন্দিত নরকে

খ) মায়াকাজল

গ) মতিচূর

ঘ) পারাপার

উত্তর: গ

১৫. “ধান্য তার বসুন্ধরা যার।” এ কথা কে বলেছেন?

ক) রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গ) কাজী নজরুল ইসলাম

ঘ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

উত্তর: খ

১৬. জীবনানন্দ দাশ রচিত উপন্যাস কোনটি?

ক) কবিতার কথা

খ) মহাপৃথিবী

গ) ধূসর পান্ডুলিপি

ঘ) মাল্যবান

উত্তর: ঘ

১৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশকে কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?

ক) নির্জনতার কবি

খ) চিত্ররূপময় কবি

গ) তিমির হননের কবি

ঘ) নির্বাক কবি

উত্তর: গ

১৮. জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ নয় কোনটি?

ক) সাতভাই চম্পা

খ) সাতটি তারার তিমির

গ) ধুসর পান্ডুলিপি

ঘ) বনলতা সেন

উত্তর: ক

১৯. বিভূতিভূষণ রচিত গ্রন্থ নয় কোনটি?

ক) পথের পাঁচালি

খ) মৌরিফুল

গ) পদ্মাবতী

ঘ) অপরাজিতা

উত্তর: গ

২০. বাংলা ভাষায় রচিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম গ্রন্থ –

ক) ক্যাপটিভ লেডি

খ) কৃষ্ণকুমারী

গ) পদ্মাবতী

ঘ) শর্মিষ্ঠা

উত্তর: ঘ

২১. মধুসূদনের কোন কাব্যে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের সার্থক প্রয়োগ করা হয়?

ক) বীরাঙ্গনা

খ) মায়াকানন

গ) তিলোত্তমাসম্ভব

ঘ) মেঘনাদবধ

উত্তর: গ

২২. মাইকেল মধুসূদন দত্ত কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?

ক) প্যারিসে

খ) মাদ্রাজে

গ) কলকাতায়

ঘ) যশোরে

উত্তর: গ

২৩. সনেটের পর্ব সংখ্যা কতটি?

ক) ১ টি

খ) ২ টি

গ) ৩ টি

ঘ) ৪ টি

উত্তর: খ

২৪. বাল্মীকি-রামায়ণকে নব মূল্যায়নের মাধ্যমে মেঘনাদবধ কাব্যে মধুসূদন হীনরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কোন চরিত্রগুলোকে?

ক) রাবণ-মেঘনাদকে

খ) রাম-ল²ণকে

গ) রাবণ-বিভীষণকে

ঘ) রাম-রাবণকে

উত্তর: খ

২৫. মোতাহের হোসেন চৌধুরী বিশেষভাবে স্বরণীয় কোন আন্দলনের জন্য?

ক) বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন

খ) স্বদেশী আন্দোলন

গ) ফরায়েজি আন্দোলন

ঘ) স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আন্দোলন

উত্তর: ক

২৬. নিচের কোনটি আহসান হাবীবের কাব্যগ্রন্থ নয়?

ক) মেঘ বলে চৈত্রে যাবো

খ) দুই হাতে দুই আদিম পাথর

গ) সারাদুপুর

ঘ) রানী খালের সাঁকো

উত্তর: ঘ

২৭. আহসান হাবীব একাধারে ছিলেন –

ক) সাংবাদিক ও সমালোচক

খ) সাংবাদিক ও শিক্ষক

গ) সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

ঘ) সাংবাদিক ও কবি

উত্তর: ঘ

২৮. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছোটগল্প কোনটি?

ক) সরীসৃপ

খ) টিকটিকি

গ) নাতজামাই

ঘ) অতসী মামী

উত্তর: ঘ

২৯. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈত্রিক বাড়ি ঢাকার কোন জেলায়?

ক) মানিকগঞ্জে

খ) মুন্সিগঞ্জে

গ) নারায়ণগঞ্জে

ঘ) ময়মনসিংহে

উত্তর: খ

৩০. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?

ক) সুবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

খ) বরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

গ) প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘ) প্রবীণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তর: গ

৩১. সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন?

ক) ১৯

খ) ২১

গ) ২৭

ঘ) ২২

উত্তর: খ

৩২. সুকান্ত ভট্টাচার্য কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

ক) ঢাকায়

খ) কলকাতায়

গ) বরিশালে

ঘ) আসামে

উত্তর: খ

৩৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী লেখায় কে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দিয়েছেন?

ক) শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব

খ) শেখ নাসের

গ) শেখ হাসিনা

ঘ) শেখ জামাল

উত্তর: ক

৩৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন –

ক) ১৯৭২ সালে

খ) ১৯৭৩ সালে

গ) ১৯৭৪ সালে

ঘ) ১৯৭৫ সালে

উত্তর: ক

৩৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম তারিখ কোনটি?

ক) ১৭ মে, ১৯২০

খ) ১৭ এপ্রিল, ১৯২০

গ) ১৭ মার্চ, ১৯২০

ঘ) ২৭ মার্চ, ১৯২০

উত্তর: গ

৩৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন?

ক) বাংলা

খ) ইতিহাস

গ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান

ঘ) আইন

উত্তর: ঘ

৩৭. ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে কত সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনী স্থান পেয়েছে?

ক) ১৯৫২

খ) ১৯৫৫

গ) ১৯৭১

ঘ) ১৯৬৯

উত্তর: খ

৩৮. শামসুর রাহমান কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

ক) চট্টগ্রামে

খ) নরসিংদীতে

গ) বগুড়ায়

ঘ) ঢাকায়

উত্তর: ঘ

৩৯. শামসুর রাহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগের ছাত্র ছিলেন?

ক) বাংলা

খ) ইংরেজি

গ) আইন

ঘ) রসায়ন

উত্তর: খ

৪০. মুক্তিযুদ্ধকালে শামসুর রাহমান কোন ছদ্মনামে লিখতেন?

ক) নীললোহিত

খ) জরাসন্ধ

গ) ভানুসিংহ

ঘ) মজলুম আদিব

উত্তর: ঘ

৪১. শামসুর রাহমানের সম্পর্কে নিচের কোন উক্তিটি যথার্থ?

ক) তিনি রোমান্টিক কবি

খ) তিনি বিপ্লবী কবি

গ) তিনি পরিবেশ সচেতন কবি

ঘ) তিনি নাগরিক কবি

উত্তর: ঘ

৪২. মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শামসুর রাহমানের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে –

ক) ৫০ টি

খ) ৬০ টি

গ) ৫৫ টি

ঘ) ৬৫ টি

উত্তর: ঘ

৪৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?

ক) ১২৬৮

খ) ১৪৩৮

গ) ১৩৩৮

ঘ) ১৩৪৮

উত্তর: ঘ

৪৪. কোনটি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস?

ক) বলাকা

খ) শেষের কবিতা

গ) ডাকঘর

ঘ) কালান্তর

উত্তর: খ

৪৫. বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প কোনটি?

ক) হৈমন্তী

খ) ভিখারিনী

গ) দেনাপাওনা

ঘ) ল্যাবরেটরি

উত্তর: গ

৪৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসবাস করেছিলেন কেন?

ক) সাহিত্য সাধনার জন্য

খ) প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার জন্য

গ) জমিদারি দেখাশোনার জন্য

ঘ) দেশবিভাগের জন্য

উত্তর: গ

৪৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কোন মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?

ক) ২৫ বৈশাখ

খ) ২২ শ্রাবণ

গ) ২৯ জ্যৈষ্ঠ

ঘ) ২৩ শ্রাবন

উত্তর: ক

৪৮. রবীন্দ্র কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কোনটি?

ক) প্রকৃতির পটে জীবনকে স্থাপন

খ) ব্যক্তিস্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ

গ) ঈশ্বরের শক্তির প্রকাশ

ঘ) আধ্যাত্মবাদ উপস্থাপন

উত্তর: ক

৪৯. রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালে প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

ক) শেষ লেখা

খ) জন্মদিনে

গ) ক্ষণিকা

ঘ) বলাকা

উত্তর: খ

৫০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা নয় কোনটি?

ক) চার অধ্যায়

খ) রাজসিংহ

গ) চতুরঙ্গ

ঘ) নৌকাডুবি

উত্তর: খ

তথ্যসূত্র:

১. শামসুজ্জামান খান, সেলিনা হোসেন ও অন্যান্য, চরিতাভিধান (বাংলা একাডেমি, জুন ১৯৮৫)

২. হুমায়ূন আজাদ, লাল নীল দীপাবলী বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬)

৩. মনিরুজ্জামান, বাংলা সাহিত্য : অতীত ও উত্তরকাল (বাংলা একাডেমি, মে ২০০৩)

৪. ক্ষেত্র গুপ্ত, বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস (কলকাতা ২০০১)

৫. ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্য পরিচয় (কলকাতা ২০০৮)

৬. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)

৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)