ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, নমুনা প্রশ্ন
ধাতু
বাংলা ভাষায় বহু ক্রিয়াপদ আছে যে সব ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া-বিভক্তি বাদ দিলে যা থাকে তাই ধাতু বা ক্রিয়ামূল। এক কথায়, ক্রিয়ার যে অংশকে বিচ্ছিন্ন বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে ধাতু বলে। ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়। যথা –
ক) ক্রিয়ামূল বা ধাতু এবং
খ) ক্রিয়া বিভক্তি।
যেমন – ‘করে’ একটি ক্রিয়াপদ। এতে দুটো অংশ রয়েছে (র্ক + এ)। এখানে ‘র্ক’ ধাতু এবং ‘এ’ বিভক্তি।
সুতরাং ক্রিয়ামূল/ধাতু হলো ‘র্ক’ আর ক্রিয়া বিভক্তি হলো ‘এ’।
দ্রষ্টব্য: বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ আর ধাতুরূপ একই। যেমন –
(তুই) র্ক, যা, খা, কাট্, র্ধ, পড়্, র্মা, দেখ্, লেখ্ ইত্যাদি। এগুলো ধাতু আবার বর্তমান কালের তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞার ক্রিয়াপদ।
ধাতুর প্রকারভেদ:
ধাতু বা ক্রিয়ামূল তিন প্রকার। যথা –
১. মৌলিক ধাতু
২. সাধিত ধাতু
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
১. মৌলিক ধাতু: যে সব ধাতু বিশ্লেষণ করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক ধাতু বলে। এদেরকে সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুও বলা হয়।বাংলা ভাষার মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
বাংলা ধাতু: যে সব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় আসেনি অর্থাৎ প্রাকৃত ও অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় এসব ধাতুর আগমন ঘটেছে, তাদেরকে বাংলা ধাতু বলে। যেমন –
আঁক্, কহ্, কাট্, র্ক, কাঁদ্, কিন্, খা, গড়্, ঘষ্, দেখ্, র্ধ, পড়্, বাঁধ্, বুঝ্, রাখ্, শুন্, থাক্, হাস্ ইত্যাদি।
সংস্কৃত ধাতু: বাংলা ভাষায় যে ক্রিয়ামূল বা ধাতু সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে, সেগুলোকে সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন –
অঙ্ক্, কথ্, কৃৎ্, কৃ, ক্রন্দ্, ক্রী, খাদ্, গঠ্, ঘৃষ্, দৃশ্, ধৃ, পঠ্, বন্ধ্, বুধ্, রক্ষ্, শ্রু, স্থা, হস্ ইত্যাদি।
বিদেশি ধাতু: প্রধানত হিন্দি এবং কিছু আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যে সব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলোকে বিদেশি ধাতু বলে। যেমন –
আঁট্, খাট্, চেঁচ্, জম্, ঝুল্, টান্, টুট্, র্ড, র্ফি, চাহ্, বিগড়্, ভিজ্, ঠেল্, ডাক্, লটক্ ইত্যাদি।
দ্রষ্টব্য, কতগুলো ধাতু/ক্রিয়ামূল আছে যাদের ক্রিয়ামূলের মূল ভাষা নির্ণয় করা কঠিন, এ ধরনের ধাতুকে অজ্ঞাতমূল ধাতু বলে। যেমন – হের ঐ দুয়ারে দাঁড়িয়ে কে? এ বাক্যে ‘র্হে’ ধাতুটি কোন ভাষা থেকে আগত তা জানা যায় না। সুতরাং এটি অজ্ঞাতমূল ধাতু।
২. সাধিত ধাতু: মৌলিক ধাতু কিংবা কোনো নাম শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন – দেখা (দেখ্ + আ), বলা (বল্ + আ), হাতা (হাত + আ) ইত্যাদি। দ্রষ্টব্য, সাধিত ধাতুর সাথে কাল ও পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।
যেমন – মা শিশুকে গান শোনায়। এভাবে – হাসায়, বসায়, দেখায় ইত্যাদি। শোনায় = (শোন্ + আ + য়), এখানে – ‘শোন্’ ধাতু, ‘আ’ প্রত্যয় এবং ‘য়’ বর্তমান কালের সাধারণ নাম পুরুষের ক্রিয়া বিভিক্তি।
সাধিত ধাতুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
নাম ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতুটি গঠিত হয়, তাকে নাম ধাতু বলে। যেমন –
চমক + আ = চমকা (বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে)
হাত + আ = হাতা (অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নষ্ট করো না)
বিষ + আ = বিষা (সারা শরীর বিষিয়ে গেল)
ঝমঝম + আ = ঝমঝমা (বৃষ্টির ঝমঝমানি আমাদের অতিষ্ট করে তোলে)
প্রযোজক বা ণিজন্ত ধাতু: মৌলিক ধাতুর পরে প্রেরণার্থে (অপরকে নিয়োজিত করা অর্থে) ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক/ণিজন্ত ধাতু গঠিত হয়। এক্ষেত্রে কর্তা নিজে না করে অন্যের দ্বারা কোন কাজ করায়। যেমন –
পড়্ + আ = পড়া (তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন)।
দেখ্ + আ = দেখা (মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন)
বল্ + আ = বলা (আমি ওকে দিয়ে গল্প বলাই)
খা + আ = খাওয়া (মা শিশুকে খাওয়ান)
কর্মবাচ্যের ধাতু: মৌলিক ধাতুর সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু গঠিত হয়। এটি বাক্যমধ্যস্থ কর্মপদের অনুসারী ক্রিয়ার ধাতু। যেমন –
দেখ্ + আ = দেখা (কাজটি ভালো দেখায় না)
র্হা + আ = হারা (যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর)
বিক্ + আ = বিকা (পানির দামে জিনিস বিকায়)
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে র্ক, দে, খা, ছাড়্, কাট্, র্ধ, হ, পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয় তাই যৌগিক/সংযোগমূলক ধাতু। যেমন – হিসাব কর, জবাব দে, হাল ছাড়, সাঁতার কাট, গলা ধর, ভাল হ, দুঃখ পা ইত্যাদি।
নিম্নের কর্-ধাতু যোগে কিছু যৌগিক ধাতুর ব্যবহার দেওয়া হলো:
১. বিশেষ্যের সাথে: ভয় কর, গুণ কর, লজ্জা কর
২. বিশেষণের সাথে: ভাল কর, মন্দ কর, সুখী কর
৩. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের সাথে: ক্রয় কর, দান কর, রান্না কর, দর্শন কর
৪. ক্রিয়াজাত বিশেষণের সাথে: সঞ্চিত কর, স্থগিত কর
৫. ক্রিয়া-বিশেষণের সাথে: তাড়াতাড়ি কর, জলদি কর, একত্র কর
৬. অব্যয়ের সাথে: না কর, হাঁ কর, ছি ছি কর, হায় হায় কর
৭. ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে: ভন ভন কর, টন টন কর, খাঁ খাঁ কর
৮. ধ্বন্যাত্মক শব্দসহ ক্রিয়া বিশেষণ গঠনে: চট কর, ধাঁ কর, হন হন কর
ধাতুর রূপ: রূপ বা আকৃতিগত দিক বিবেচনা করলে বাংলা ধাতুর দুটি রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন –
ক) অসম্পূর্ণ ধাতু এবং
খ) সম্পূর্ণ ধাতু।
ক) অসম্পূর্ণ ধাতু: অসম্পূর্ণ ধাতুর সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। এই ধাতুগুলোর সকল কালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) রূপ পাওয়া যায় না, এই সব ধাতুর অসম্পূর্ণ রূপ অন্য ধাতুর সাহায্যে সম্পূর্ণ করে নিতে হয়। এই ধাতুগুলোকে পঙ্গুধাতুও বলা হয়। এ ধাতুগুলো সংস্কৃত ও প্রাচীন সাধুভাষায় প্রচলিত। যেমন –
বট্-ধাতু: বটে, বটেন, বট, বটিস, বটি (বর্তমান কালে) এই কয়টি রূপের প্রচলন আছে। যেমন –
- “একা দেখি কুলবধূ,
- কে বট আপনি?”
- কথাটা খানিক সত্য বটে।
আছ্-ধাতু: আছে, আছেন, আছিস, আছি, আছ (বর্তমান কালে) ছিল, ছিলেন, ছিলি, ছিলাম, ছিলে (অতীত কালে) এই কয়টি রূপ প্রচলিত। যেমন –
- কেমন আছিস?
- কোথায় ছিলি?
আ-ধাতু: আইল-এল, আইলেন-এলেন, আইলে-এলে, আইলি-এলি, আইলাম-এলাম, আয় (অনুজ্ঞা) এই কয়টি রূপ প্রচলিত। যেমন –
- “কোথাকার জাদুকর এলি এখানে!”
- “আইল রাক্ষসকুল প্রভঞ্জন বেগে।”
যা-ধাতু: বাংলায় গমনার্থক ‘যা’ এবং সংস্কৃতে ‘গম্’ ধাতু এক হয়ে গেছে। যেমন – (যায়, যাইত, যাও, যাব, যাবে, যাবি) আবার (গিয়াছে, গেল, গেলে, গিয়া, গিয়ে) ইত্যাদি।
নহ্-ধাতু: আছে অর্থে ‘হ’ ধাতুর পূর্বে (ন) শব্দযোগে ‘নহ্’ ধাতু গঠিত হয়। ‘নহ্’ ধাতুর রূপ শুধু সাধারণ বা নিত্যবৃত্ত বর্তমানে প্রচলিত আছে। যেমন – আমি/আমরা নহি, তুমি/তোমরা নহ, সে/তারা নহে, (অসমাপিকা – নহিলে) এ কয়টি রূপ প্রচলিত। ‘ন’ ধাতু দ্বারা এর অন্যান্য রূপ – নাই, নেই, নও, নয়, নন (অসমাপিকা – নইলে) ইত্যাদি। যেমন –
- ‘হেথা নয় হেথা নয়,
- অন্য কোথা,
- অন্য কোন খানে।’
নাহ্-ধাতু: পুরুষ ও বচনভেদে এর একই রূপ। পুরাতন সাধু ভাষায় ও পদ্যে ‘নাহি’, বর্তমানে সাধুভাষায় ‘নাই’ এবং চলিত ভাষায় ‘নেই/নি’।
র্না ও হের-ধাতু: এ দুটো ধাতু কেবল পদ্যেই ব্যবহৃত হয়। যেমন –
- “মরণ জ্বালা সইতে নারি”
- “হেরিনু প্রভাতে”।
খ) সম্পূর্ণ ধাতু: যে সব ধাতু সব ধরনের রূপের সমন্বয়ে বাংলা ভাষায় প্রচলিত অথবা যেসব ধাতু কোনো কাল বা পুরুষে অন্য ধাতুর সাহায্য গ্রহণ করে না, তাকে সম্পূর্ণ ধাতু বলে। বাংলা ভাষায় এ ধরনের ধাতুর সংখ্যাই অনেক। প্রায় ১৫০০ বা তার চেয়ে কিছু বেশি। এর অধিকাংশই বর্তমানে লোপ পেয়েছে। বাংলা ভাষায় এ সমস্ত ধাতুকে সর্বমোট ২০ টি গণে ভাগ করা হয়েছে।
ধাতুর গণ: গণ শব্দের মৌলিক অর্থ হলো গণনাগত ভাগ/সাংখ্যিক বিভাগ/শ্রেণি। ‘ধাতুর গণ’ বলতে ধাতুগুলোর বানানের ধরনকে বোঝায়। এ জন্য ধাতুর গণ নির্ধারণে দুটো বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন –
ক) ধাতুটি কয়টি অক্ষরে গঠিত এবং
খ) ধাতুর প্রথম বর্ণে সংযুক্ত স্বরবর্ণটি কী।বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সমস্ত ধাতুগুলোকে ২০ টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা –
১. হ- আদিগণ: হ (হওয়া), ল (লওয়া), ক্ষ (ক্ষওয়া/ক্ষয় পাওয়া)
২. খা- আদিগণ: খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া)
৩. দি- আদিগণ: দি (দেওয়া), নি (নেওয়া)
৪. শু- আদিগণ: শু (শোয়া), ধু (ধোয়া), চু (চোঁয়ানো)
৫. র্ক- আদিগণ: কর (করা), কম (কমা), গড় (গড়া)
৬. কহ্- আদিগণ: কহ (কহা), সহ (সহা), বহ (কহা)
৭. কাট্- আদিগণ: কাট (কাটা), গাঁথ (গাঁথা), বাঁধ (বাঁধা)
৮. গাহ্- আদিগণ: গাহ (গাওয়া), চাহ (চাওয়া)
৯. লিখ্- আদিগণ: লিখ (লেখা), কিন (কেনা), জিত (জেতা)
১০. উঠ্- আদিগণ: উঠ (ওঠা), শুন (শোনা), উড় (ওড়া)
১১. লাফা- আদিগণ: লাফা (লাফানো), বাজা (বাজানো)
১২. নাহা- আদিগণ: নাহা (স্নান করা), গাহা (গাওয়া)
১৩. ফিরা- আদিগণ: ফিরা (ফিরে আসা), ছিটা (ছিটানো)
১৪. ঘুরা- আদিগণ: ঘুরা (ঘুরো আসা), লুকা (লুকানো)
১৫. ধোয়া- আদিগণ: ধোয়া (ধুয়ে ফেলা), খোঁচা (খোঁচা মারা)
১৬. দৌড়া- আদিগণ: দৌড়া (দৌড়ানো), পৌঁছা (গন্তব্যে আসা)
১৭. চটকা- আদিগণ: চটকা (মর্দন করা), ধমকা (ধমক দেওয়া)
১৮. বিগড়া- আদিগণ: বিগড়া (বিকৃত করা), হিঁচড়া (বলপূর্বক টানা)
১৯. উলটা- আদিগণ: উলটা (উলটিয়ে ফেলা), দুমড়া (বাকানো)
২০. ছোবলা- আদিগণ: ছোবলা (ছোবল মারা)কোদলা (কোপানো)
প্রকৃতি
মৌলিক শব্দের যে অংশকে কোনোভাবেই বিভক্ত বা বিশ্লেষণ করা যায় না, অথবা কোনো পদ বা শব্দ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি সরিয়ে নিলে যে অংশ পাওয়া যায়, তাকে প্রকৃতি বলে। মোটকথা, শব্দ বা ক্রিয়ার মূলকে প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা –
(১) নাম-প্রকৃতি
(২) ক্রিয়া-প্রকৃতি
১. নাম-প্রকৃতি: বিভক্তি ও প্রত্যয়হীন নাম শব্দকে নামপ্রকৃতি/সংজ্ঞাপ্রকৃতি বা প্রাতিপাদিক বলে। যেমন –
- ফুল + এল = ফুলেল,
- চোর + আ = চোরা,
- ঢাকা + আই = ঢাকাই। এখানে ফুল, চোর, ঢাকা শব্দগুলো নামপ্রকৃতি।
২. ক্রিয়া-প্রকৃতি: ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু। ধাতুর সাথে প্রত্যয় এবং পুরুষ ও কালবাচক বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয়। আর ক্রিয়ামূল বা ধাতুকেই ক্রিয়াপ্রকৃতি/ধাতুপ্রকৃতি বলে। যেমন –
- চল্ + অন = চলন,
- নাচ্ + উনে = নাচুনে,
- জম্ + আ = জমা। এখানে চল্, নাচ্, জম্ শব্দগুলো ক্রিয়াপ্রকৃতি।
উপধা: ধাতু বা নাম-প্রকৃতির অন্ত্যধ্বনির আগের ধ্বনিকে ‘উপধা’ বলে। যেমন – ‘পঠ্’ ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় (প্ + অ + ঠ্)। এখানে ‘ঠ’ অন্ত্যধ্বনি এবং ‘অ’ উপধা। আবার, ঢাকা শব্দের বিশ্লেষিত রূপ (ঢ + আ + ক + আ)। এখানে ‘আ’ অন্ত্যধ্বনি এবং ‘ক’ উপধা।
টি: ধাতুর আদিস্বরের পরবর্তী সমুদয় ধ্বনিকে ‘টি’ বলে। যেমন – ‘পঠ্’ ধাতুর ‘অঠ্’ হচ্ছে টি।
প্রত্যয়
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি নামপ্রকৃতি ও ক্রিয়াপ্রকৃতির পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা –
(১) কৃৎ-প্রত্যয়
(২) তদ্ধিত-প্রত্যয়
১. কৃৎ-প্রত্যয়: ক্রিয়াপ্রকৃতির পরে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে কৃৎপ্রত্যয়/ধাতুপ্রত্যয় বলে। কৃৎ প্রত্যয় সাধিত পদটিকে কৃদন্ত পদ বলা হয়। যেমন – চল্ + অন্ত = চলন্ত। এখানে ‘চল্’ ধাতু/ক্রিয়াপ্রকৃতি, ‘অন্ত’ কৃৎ প্রত্যয় এবং ‘চলন্ত’ কৃদন্ত পদ।
২. তদ্ধিত-প্রত্যয়: নামপ্রকৃতির পরে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে তদ্ধিতপ্রত্যয়/শব্দপ্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত পদটিকে তদ্ধিতান্ত পদ বলা হয়। যেমন – লাজ + উক = লাজুক। এখানে ‘লাজ’ নামপ্রকৃতি, ‘উক’ তদ্ধিত প্রত্যয় এবং ‘লাজুক’ তদ্ধিতান্ত পদ।
অপশ্রুতি: ধাতু বা শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বরগত অল্প-বিস্তর পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনকে স্বরাগত পরিবর্তন বা অপশ্রুতি বলে। অপশ্রুতি তিনভাবে প্রকাশ পায়। যথা –
১. গুণ: এই প্রক্রিায়ায় ই/ঈ-স্থলে এ, উ/ঊ-স্থলে ও এবং ঋ-স্থলে র্অ হয়। যেমন –
- চিন + আ = চেনা,
- নী + আ = নেয়া/নেওয়া,
- ধু + আ = ধোয়া,
- দুল + অনা = দোলনা,
- কৃ + অন = করণ,
- কৃ + তা = কর্তা ইত্যাদি।
২. বৃদ্ধি: এই প্রক্রিয়ায় অ-স্থলে আ, ই/ঈ-স্থলে ঐ, উ/ঊ-স্থলে ঔ এবং ঋ-স্থলে র্আ হয়। যেমন –
- পচ + অক = পাচক,
- অলস + য = আলস্য,
- নিশা + অ = নৈশ,
- শিশু + অ = শৈশব,
- যুব + অন = যৌবন,
- ভ‚ত + ইক = ভৌতিক,
- কৃ + ঘ্যণ = কার্য,
- স্মৃ + অক = স্মারক ইত্যাদি।
৩. সম্প্রসারণ: এই প্রক্রিয়ায় ব-স্থলে উ, য-স্থলে ই, র-স্থলে ঋ হয়। যেমন –
- বচ + ক্ত = উক্ত,
- যজ + ক্তি = ইষ্টি,
- গ্রহ + ত = গৃহীত ইত্যাদি।
অনুবন্ধ/ইৎ: প্রকৃতির সাথে প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়ের যে অংশ লোপ পায় তাকে অনুবন্ধ বা ইৎ বলে। যেমন – মা + তৃচ = মাতৃ > মাতা, গম + ক্ত = গত। উপরিউক্ত উদাহরণে ‘তৃচ’ প্রত্যয় থেকে ‘চ’ এবং ‘ক্ত’ প্রত্যয় থেকে ‘ক’ লোপ পেয়েছে। সুতরাং ‘চ’ ও ‘ক’ ইৎ।
কৃৎ প্রত্যয়: কৃৎ প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা –
ক) বাংলা কৃৎ প্রত্যয় এবং
খ) সংস্কৃত বা তৎসম কৃৎ প্রত্যয়।
ক) বাংলা কৃৎ প্রত্যয়: বাংলা যে সকল কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বলে। বাংলা কৃৎ প্রত্যয়যোগে আধুনিক বাংলা ভাষায় বহু খাঁটি বাংলা শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। মোটকথা, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের সাথে যে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেগুলি বাংলা কৃৎ প্রত্যয়। যেমন –
১. অন/ওন-প্রত্যয়: কাঁদন, দোলন, নাচন, বাঁধন, খাওন, দেওন, ঝাড়ন
২. অনা-প্রত্যয়: খেলনা, বাজনা, ঢাকনা, রাঁধনা > রান্না, কাঁদনা > কান্না
৩. অনি>উনি-প্রত্যয়: রাঁধনি > রাঁধুনি, চিরনি > চিরুনি, নাচনি > নাচুনি, ছাঅনি > ছাউনি
৪. অন্ত/অন্তি/উন্তি-প্রত্যয়: বাড়ন্ত, ডুবন্ত, জীবন্ত, উঠন্তি, নাচুন্তি
৫. আ-প্রত্যয়: পড়া, রাঁধা, শুনা, খাওয়া, করা, জানা
৬. আই-প্রত্যয়: চড়াই, সিলাই> সেলাই, বাছাই, লড়াই, যাচাই
৭. আন-প্রত্যয়: চালান, মানান, খাটান
৮. আনো-প্রত্যয়: জানানো, ভাসানো, করানো, দেখানো
৯. আনি-প্রত্যয়: জানানি, শুনানি, উড়ানি, ভাঙানি
১০. আরি/উরি-প্রত্যয়: কাটারি, পূজারি, ডুবুরি
১১. আল-প্রত্যয়: মাতাল, মিশাল
১২. ই-প্রত্যয়: ভাজি, বেড়ি, কাশি, হাঁচি
১৩. ইয়া/ইয়ে-প্রত্যয়: মরিয়া > মরে, খাইয়া > খেয়ে, দেখিয়া > দেখে, বলিয়া > বলিয়ে> বলে, গাইয়ে, খাইয়ে, নাচিয়ে
১৪. ইলে/ইতে/ইবা-প্রত্যয়: করিলে > করলে, আসিলে > আসলে, দেখিতে > দেখতে, করিতে > করতে, খাইবা > খাবা, যাইবা > যাবা
১৫. উ-প্রত্যয়: ঝাড়–, ডাকু। কখনো কখনো উ-প্রত্যয় কৃদন্ত পদে দ্বিত্ব হয়। যেমন – ডুব্ + উ = ডুবুডুবু, উড়্ + উ = উড়–উড়–
১৬. উয়া/ওয়া/ও-প্রত্যয়: পড়–য়া, পড়ো, উড়–য়া, উড়ো, বাঁচোয়া> বাঁচো, লাগোয়া > লাগো।
১৭. তা/তি-প্রত্যয়: ফিরতা >ফেরতা, পড়তা, ঘাটতি, বাড়তি, ঝাটতি, চলতি, উঠতি
১৮. কা/কি-প্রত্যয়: টপকা, ফসকা, মুড়কি।
খ) সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়: সংস্কৃত যে সব কৃৎ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় সংস্কৃত বা তৎসম কৃৎ প্রত্যয়। মূলত, তৎসম ধাতুর সাথে এ সকল প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় জানতে হলে অপশ্রুতি (গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ), অনুবন্ধ/ইৎ, টি, উপধা সম্পর্কে জানা আবশ্যক। যেমন –
১. অনট-প্রত্যয়: (‘ট’ ইৎ হয় ‘অন’ থাকে)। যেমন –
- নী + অনট (অন) = নয়ন,
- শ্রু + অনট = শ্রবণ,
- বচ্ + অনট = বচন,
- গম্ + অনট = গমন,
- স্থা + অনট = স্থান
২. ক্ত-প্রত্যয়: (‘ক’ ইৎ হয় ‘ত’ থাকে)। যেমন –
- খ্যা + ক্ত (ত) = খ্যাত,
- জ্ঞা + ক্ত = জ্ঞাত,
- কৃ + ক্ত = কৃত,
- ধৃ + ক্ত = ধৃত
ক) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্বর ই-কার হয়। যেমন –
- পঠ্ + ক্ত (ত) = পঠিত,
- লিখ্ + ক্ত = লিখিত,
- শিক্ষা + ক্ত = শিক্ষিত,
- শঙ্ক্ + ক্ত = শঙ্কিত
খ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্থিত চ/জ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন –
- সিচ্ + ক্ত (ত) = সিক্ত,
- ভুজ্ + ক্ত = ভুক্ত,
- মুচ্ + ক্ত = মুক্ত,
- বচ্ + ক্ত = উক্ত (ব থেকে উ সম্প্রসারণ হয়েছে)
গ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্য ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যেমন –
- গম্ + ক্ত = গত (ক্ত-প্রত্যয়ের ‘ত’ ধাতুর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং ‘ম’ লোপ পেয়েছে),
- হন্ + ক্ত = হত, জন্ + ক্ত = জাত
ঘ) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। যেমন –
- গ্রন্থ + ক্ত = গ্রথিত,
- র্চু + ক্ত = চূর্ণ,
- ছিদ্ + ক্ত = ছিন্ন,
- জন্ + ক্ত = জাত,
- দা + ক্ত = দত্ত,
- দহ্ + ক্ত = দগ্ধ,
- দুহ্ + ক্ত = দুগ্ধ, ,
- বপ্ + ক্ত = উপ্ত,
- মুহ্ + ক্ত = মুগ্ধ,
- যুধ্ + ক্ত = যুদ্ধ,
- লভ্ + ক্ত = লব্ধ,
- স্বপ্ + ক্ত = সুপ্ত,
- সৃজ্ + ক্ত = সৃষ্ট,
- ব্যধ্ + ক্ত = বিদ্ধ,
- ভ্রন্শ্ + ক্ত = ভ্রষ্ট,
- ইষ্ + ক্ত = ইষ্ট,
- নশ্ + ক্ত = নষ্ট,
- ভজ্ + ক্ত = ভক্ত,
- ভিদ্ + ক্ত = ভিন্ন,
- মস্জ্ + ক্ত = মগ্ন,
- রুজ্ + ক্ত = রুগ্ণ।
৩. ক্তি-প্রত্যয়: (‘ক’ ইৎ হয় ‘তি’ থাকে)। যেমন – স্মৃ + ক্তি (তি) = স্মৃতি।
ক) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর উপধা অ-কারের বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ আ-কার হয়। যেমন –
- শ্রম্ + ক্তি (তি) = শ্রান্তি,
- শম্ + ক্তি = শান্তি (সন্ধিসূত্রে ম থেকে ন হয়েছে)।
খ) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্যস্থিত চ/জ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন –
- মুচ্ + ক্তি (তি) = মুক্তি,
- ভজ্ + ক্তি = ভক্তি,
- বচ্ + ক্তি = উক্তি (ব থেকে উ সম্প্রসারণ হয়েছে )।
গ) ক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অন্ত্য ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যেমন –
- গম্ + ক্তি (তি) = গতি (ক্তি-প্রত্যয়ের ‘তি’ ধাতুর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং ‘ম’ লোপ পেয়েছে),
- মন্ + ক্তি (তি) = মতি,
- রম্ + ক্তি (তি) = রতি
ঘ) ক্তি-প্রত্যয় যোগে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। যেমন – দৃশ্ + ক্তি (তি) = দৃষ্টি
নিপাতনে সিদ্ধ:
- গৈ + ক্তি = গীতি,
- সিধ্ + ক্তি = সিদ্ধি,
- বুধ্ + ক্তি = বুদ্ধি,
- শক্ + ক্তি = শক্তি।
৪. তব্য-প্রত্যয়:
- দা + তব্য = দাতব্য,
- গম্ + তব্য = গন্তব্য,
- বচ্ + তব্য = বক্তব্য,
- দৃশ্ + তব্য = দ্রষ্টব্য,
- কৃ + তব্য = কর্তব্য,
- পঠ্ + তব্য = পঠিতব্য,
- মন্ + তব্য = মন্তব্য
৫. অনীয়-প্রত্যয়:
- কৃ + অনীয় = করণীয়,
- রক্ষ্ + অনীয় = রক্ষণীয়,
- স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয়,
- পূজ্ + অনীয় = পূজনীয়,
- বৃ + অনীয় = বরণীয়
৬. তৃচ-প্রত্যয়: (‘চ’ ইৎ হয় ‘তৃ > তা’ থাকে)। যেমন –
- দা + তৃচ (তৃ > তা) = দাতৃ > দাতা,
- মা + তৃচ = মাতৃ > মাতা,
- নী + তৃচ = নেতৃ > নেতা
বিশেষ নিয়মে:
- যুধ + তৃচ (তা) = যোদ্ধা।
৭. ণক-প্রত্যয়: (‘ণ্’ ইৎ হয় ‘অক’ থাকে)। যেমন –
- নী + ণক (অক) = নায়ক,
- পঠ্ + ণক = পাঠক,
- গৈ + ণক = গায়ক,
- লিখ্ + ণক = লেখক,
- দা + ণক = দায়ক,
- কৃ + ণক = কারক
৮. ঘ্যণ-প্রত্যয়: (‘ঘ, ণ’ ইৎ হয়, য-ফলা থাকে)। যেমন –
- কৃ + ঘ্যণ = কার্য,
- ধৃ + ঘ্যণ = ধার্য,
- দৃশ্ + ঘ্যণ = দৃশ্য
৯. য-প্রত্যয়: য-প্রত্যয় যুক্ত হলে আ-কারান্ত ধাতু এ-কারান্ত হয় এবং য-প্রত্যয় ‘য়’ হয়। যেমন –
- দা (দে) + য (য়) = দেয়,
- হা + য = হেয়,
- পা + য = পেয়
বিশেষ নিয়ম: ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর য-প্রত্যয়ের পরিবর্তন হয় না। যেমন –
- গম্ + য = গম্য,
- লভ্ + য = লভ্য,
- বিদ্ + য = বিদ্য,
- কৃ + য = কৃত্য
১০. ণিন-প্রত্যয়: (‘ণ’ ইৎ হয় ‘ইন > ঈ’ থাকে)। যেমন –
- গ্রহ + ণিন (ঈ) = গ্রাহী,
- পা + ণিন = পায়ী,
- বদ্ + ণিন = বাদী,
- স্থা + ণিন = স্থায়ী,
- যুজ্ + ণিন = যোগী
১১. অল-প্রত্যয়: (‘ল’ ইৎ হয় ‘অ’ থাকে)। যেমন –
- জি + অল (অ) = জয়,
- ক্ষি + অল = ক্ষয়,
- ভী + অল = ভয়
ব্যতিক্রম: হন্ + অল = বধ।
১২. ঘঞ-প্রত্যয়: (‘ঘ, ঞ’ ইৎ হয়, ‘অ’ থাকে)। যেমন –
- বস্ + ঘঞ (অ) = বাস,
- যুজ্ + ঘঞ (অ) = যোগ,
- ক্রুধ্ + ঘঞ (অ) = ক্রোধ,
- ভিদ্ + ঘঞ (অ) = ভেদ,
- খদ্ + ঘঞ (অ) = খেদ
বিশেষ নিয়মে: ত্যজ্ + ঘঞ = ত্যাগ, পচ্ + ঘঞ = পাক, শুচ্ + ঘঞ = শোক।
১৩. ইষ্ণু-প্রত্যয়:
- চল্ + ইষ্ণু = চলিষ্ণু,
- ক্ষি + ইষ্ণু = ক্ষয়িষ্ণু,
- সহ্ + ইষ্ণু = সহিষ্ণু,
- বৃধ্ + ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু
১৪. বর-প্রত্যয়:
- ঈশ্ + বর = ঈশ্বর,
- ভাস্ + বর = ভাস্বর,
- নশ্ + বর = নশ্বর,
- স্থা + বর = স্থাবর
১৫. শানচ-প্রত্যয়: (‘শ, চ’ ইৎ হয় ‘আন > মান’ থাকে)। যেমন –
- দীপ্ + শানচ (আন > মান) = দীপ্যমান,
- চল্ + শানচ = চলমান,
- বৃধ + শানচ = বর্ধমান,
- যজ্ + শানচ = যজমান
১৬. আলু-প্রত্যয়:
- দয়্ + আলু = দয়ালু,
- কৃপ্ + আলু = কৃপালু,
- শ্রৎ-ধা + আলু = শ্রদ্ধালু,
- নি-দ্রা + আলু = নিদ্রালু
তদ্ধিত প্রত্যয়: তদ্ধিত প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা –
ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়
খ) সংস্কৃত/তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয় এবং
গ) বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়
ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়: বাংলা যে সকল তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। খাঁটি বাংলা মৌলিক শব্দের পরে এ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন –
১. আ-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন –
ক) অবজ্ঞার্থে/তুচ্ছার্থে: চোরা, কেষ্টা
খ) সদৃশ অর্থে: বাঘা, হাতা, ঠেঙা
গ) সমষ্টি অর্থে: বিশা, বাইশা > বাইশে
ঘ) জাত ও আগত অর্থে: দখিনা > দখিনে (হাওয়া), পশ্চিমা, চিনা
ঙ) বিদ্যমানার্থে: জলা, তেলা, লুনা > লোনা, নীলা
চ) বৃহদার্থে: ডিঙা
ছ) আদরার্থে: রমা, পাগলা
২. আই-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
ক) ভাবার্থে: বড়াই, চড়াই
খ) আদরার্থে: কানাই, নিমাই
গ) লৈঙ্গিক শব্দের বিপরীত বোঝাতে: বোনাই, নন্দাই, জেঠাই
ঘ) সমগুণবাচক বিশেষ্য অর্থে: মিঠাই
ঙ) জাত অর্থে: ঢাকাই, পাবনাই
৩. আমি/আমো-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
ক) ভাবার্থে: বাঁদরামি, পাকামো, ফাজলামো
খ) বৃত্তি/জীবিকা অর্থে: ঠকামো, ঘরামি
গ) নিন্দাজ্ঞাপন অর্থে: জেঠামি, ছেলেমি, ন্যাকামি
৪. আর/আরি/আরু-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
ক) পেশা অর্থে: ডাক্তার, কুম্ভ > কুম + আর = কুমার, কর্ম > কাম + আর = কামার, সুতা + আর = সুতার > ছুতার
খ) বৃত্তি/জীবিকা অর্থে: ভিখারি, শাঁখারি
গ) সদৃশ অর্থে: মাঝারি, বোমারু, ডুবারু, রকমারি
৫. আন/আনি/আনো-প্রত্যয়: চোখানি, নাকানি, তলানি, জুতান, জুতানো, যোগান, হাতানো
৬. আল/আলা/আলি-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ক) সংযোগ অর্থে: ধারাল, আঠাল
খ) পরিধেয় অর্থে: মাথাল
গ) অধিবাসী অর্থে: বাল + আল = বালাল > বাউল, বঙ্গ + আল = বঙ্গাল > বাঙ্গাল > বাঙাল
ঘ) ভাবার্থে: মিতালি, চতুরালি
ঙ) সদৃশ অর্থে: নিদালি, ঠাকুরালি, বর্ণালি, নাগরালি
চ) কর্ম বুঝাতে: গোয়ালা > গয়লা, লাঠিয়াল
৭. ই-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
ক) ভাবার্থে: বাহাদুরি, উমেদারি, পোদ্দারি
খ) বৃত্তি বা জীবিকা অর্থে: ডাক্তারি, ব্যাপারি
গ) মালিক অর্থে: জমিদারি, দোকানি
ঘ) জাত ও আগত বুঝাতে: রেশমি, বাদামি, পশমি, গোলাপি
ঙ) সম্বন্ধ অর্থে: সরকারি
চ) দক্ষতা অর্থে: ঢাকি, হিসাবি, করাতি, ঢুলি
ছ) অস্ত্যর্থ/বিদ্যমানার্থে: দাগি, তেজি, দামি, জেদি
জ) ভাষা, জাতি. দেশ ও ধর্ম বুঝাতে: বাঙালি, ইংরেজি, ইসলামি
৮. অড়>ওড়/ড়া/ড়ি>উড়ি/উড়িয়া>উড়ে-প্রত্যয়: তুখড় > তুখোড়, চামড়া, শাশড়ি > শাশুড়ি, আঁকড়ি, হাটুরিয়া > হাটুরে, সাপুরিয়া > সাপুরে, কাঠুরিয়া > কাঠুরে
৯. উয়া-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ও-প্রত্যয় হয়। যেমন –
ক) রোগগ্রস্থ অর্থে: জ্বরুয়া > জ্বরো, বাতুয়া > বেতো
খ) যুক্ত অর্থে: টাক + উয়া (ও) = টেকো
গ) জাত অর্থে: ধান + উয়া (ও) = ধেনো
ঘ) সংশ্লিষ্ট অর্থে: মাঠ + উয়া (ও) = মেঠো
ঙ) উপজীবিকা অর্থে: মাছ + উয়া (ও) = মাছুয়া > মেছো
চ) বিশেষণ অর্থে: দাঁত + উয়া (ও) = দেঁতো, কুঁজো
ছ) উপকরণে নির্মিত অর্থে: খড় + উয়া (ও) = খড়ো
১০. ইয়া/এ-প্রত্যয়: এটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন –
ক) তৎকালীনতা বুঝাতে: সেকেলে, ভাদরিয়া > ভাদরে > ভাদুরে
খ) উপকরণ বোঝাতে: পাথরিয়া > পাথুরে, মাটিয়া > মেটে,
গ) উপজীবিকা অর্থে: জালিয়া > জেলে
ঘ) নৈপুণ্য বোঝাতে: খুনিয়া > খুনে, নাইয়া > নেয়ে, দেমাকে
ঙ) অব্যয়জাত বিশেষণ বোঝাতে: টনটনে, কনকনে, চকচকে
১১. ট/টা/টি/টিয়া>টে-প্রত্যয়: জমাট, ভরাট, চিপ > চেপ + টা = চেপ্টা, নেওটা, মুখটি, মাথাটি, ঘোলাটিয়া > ঘোলাটে, তামাটিয়া > তামাটে, ভাড়াটিয়া > ভাড়াটে
১২. ক/কা/কি/কিয়া>কে-প্রত্যয়: ঢোলক, ধমক (ক্ষুদ্রার্থে), ছোটকি > ছুটকি (ভাইয়ের স্ত্রী অর্থে), দমকা, হালকা, ছিঁচকিয়া > ছিঁচকে, শতকিয়া > শতকে, পুঁচকিয়া > পুঁচকে
১৩. তা/তি/তুতো/আইত>আত-প্রত্যয়: নামতা, নুনতা > নোনতা, ঘাটতি, চাকতি, খুড়তুতো, মাসতুতো, পোআইত > পোয়াত, সেবাইত > সেবাত, সঙ্গাইত > সঙ্গাত > সঙাত
১৪. অল/লা/উলি-প্রত্যয়: ধকল, দিঘল, মেঘলা, একলা, আধলা, আধুলি, গোধু + উলি = গোধুলি
১৫. আচ/আচি-প্রত্যয়: কানাচ, ছোঁয়াচ, ঘামাচি, ব্যাঙাচি
১৬. নি-প্রত্যয়: কামরনি, গয়লানি, ডাক্তারনি, জমিদারনি, দারোগানি
খ) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়: সংস্কৃত যে সব তদ্ধিত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় সংস্কৃত বা তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয়। মূলত, তৎসম শব্দে সাথে এ সকল প্রত্যয় যুক্ত হয়। বাংলা ভাষায় সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় জানতে হলে অপশ্রুতি (গুণ, বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ), অনুবন্ধ/ইৎ, টি, উপধা সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কেননা এ সবের জন্য শব্দ ও প্রত্যয়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের পরিবর্তন আসে। যেমন –
১. ষ্ণ (অ)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ্’ ইৎ হয় ’অ’ থাকে)। বিভিন্ন অর্থে এর ব্যবহার। যেমন –
ক) অপত্য বা বংশধর অর্থে:
- মনু + ষ্ণ (অ) = মানব,
- যদু + ষ্ণ = যাদব,
- পুত্র + ষ্ণ (অ) = পৌত্র
খ) উপাসক অর্থে:
- জিন + ষ্ণ (অ) = জৈন,
- বুদ্ধ + ষ্ণ = বৌদ্ধ
গ) ভাবার্থে:
- পুরুষ + ষ্ণ (অ) = পৌরুষ,
- কিশোর + ষ্ণ = কৈশোর
ঘ) সম্পর্ক অর্থে:
- পৃথিবী + ষ্ণ (অ) = পার্থিব,
- দেব + ষ্ণ = দৈব
ঙ) কুশল/দক্ষ অর্থে:
- ব্যাকরণ + ষ্ণ (অ) = বৈয়াকরণ
চ) বিকার/বিকৃত অর্থে:
- তিল + ষ্ণ (অ) = তৈল
ছ) অবস্থা অর্থে:
- শিশু + ষ্ণ (অ) = শৈশব,
- জীবন + ষ্ণ = যৌবন
জ) স্বার্থে:
- চোর + ষ্ণ (অ) = চৌর,
- কুত‚হল + ষ্ণ = কৌতুহল
নিপাতনে সিদ্ধ:
- সূর্য + ষ্ণ = সৌর।
২. ষ্ণ্য (য)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘য’ থাকে)। যেমন –
- মনু + ষ্ণ্য (য) = মনুষ্য,
- সুন্দর + ষ্ণ্য = সৌন্দর্য,
- শূর + ষ্ণ্য = শৌর্য,
- পর্বত + ষ্ণ্য = পার্বত্য,
- বিচিত্র + ষ্ণ্য = বৈচিত্র্য,
- সেনা + ষ্ণ্য = সৈন্য
৩. ষ্ণি (ই)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ই’ থাকে)। যেমন –
- রাবন + ষ্ণি (ই) = রাবণি,
- দশরথ + ষ্ণি = দশরথি,
- সুমিত্রা + ষ্ণি = সৌমিত্রি
৪. ষ্ণিক (ইক)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ইক’ থাকে)। যেমন –
- সাহিত্য + ষ্ণিক (ইক) = সাহিত্যিক,
- বিজ্ঞান + ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক,
- নগর + ষ্ণিক = নাগরিক,
- অকস্মাৎ + ষ্ণিক = আকস্মিক
৫. ষ্ণেয় (এয়)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘এয়’ থাকে)। যেমন –
- অগ্নি + ষ্ণেয় (এয়) = আগ্নেয়,
- বিমাতা + ষ্ণেয় = বৈমাত্রেয়
৬. ষ্ণায়ন (আয়ন)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘আয়ন’ থাকে)। যেমন –
- নগর + (ষ্ণায়ন) আয়ন = নগরায়ন,
- বৎস + ষ্ণায়ন = বাৎস্যায়ন,
- নর + ষ্ণায়ন = নারায়ণ,
- দ্বীপ + ষ্ণায়ন = দ্বৈপায়ন
৭. ষ্ণীয় (ঈয়)-প্রত্যয়: (‘ষ্ণ’ ইৎ হয় ‘ঈয়’ থাকে)। যেমন –
- জল + ষ্ণীয় (ঈয়) = জলীয়,
- বায়ু + ষ্ণীয় = বায়বীয়,
- বর্ষ + ষ্ণীয় = বর্ষীয়,
- দেশ + ষ্ণীয় = দেশীয়,
- বংশ + ষ্ণীয় = বংশীয়
বিশেষ নিয়মে:
- পর + ষ্ণীয় = পরকীয়,
- স্ব + ষ্ণীয় = স্বকীয়,
- রাজা + ষ্ণীয় = রাজকীয়
৮. ইত-প্রত্যয়:
- কুসুম + ইত = কুসুমিত,
- তরঙ্গ + ইত = তরঙ্গিত,
- মুকুল + ইত = মুকুলিত,
- একত্র + ইত = একত্রিত,
- ক্ষুধা + ইত = ক্ষুধিত
৯. ‘য’ প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের পরে স্থিত অ, আ, ই এবং ঈ-এর লোপ হয়। যেমন –
- সম + য = সাম্য,
- কবি + য = কাব্য,
- মধুর + য = মাধুর্য,
- প্রাচী + য = প্রাচ্য
ব্যতিক্রম: সভা + য = সভ্য (‘সাভ্য’ নয়)
১০. ইমন-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ইমা-প্রত্যয় হয়। যেমন –
- নীল + ইমন (ইমা) = নীলিমা,
- গুরু + ইমন = গরিমা,
- দীর্ঘ + ইমন = দ্রাঘিমা
১১. ইল-প্রত্যয়:
- পঙ্ক + ইল = পঙ্কিল,
- ফেন + ইল = ফেনিল,
- ঊর্মি + ইল = ঊর্মিল,
- শ্রী + ইল = শ্রীল,
- জটা + ইল = জটিল
১২. ইষ্ঠ-প্রত্যয়:
- গুরু + ইষ্ঠ = গরিষ্ঠ,
- লঘু + ইষ্ঠ = লঘিষ্ট
১৩. ইম-প্রত্যয়:
- অগ্র + ইম = অগ্রিম,
- অন্ত + ইম = অন্তিম,
- পশ্চ + ইম = পশ্চিম,
- আদি + ইম = আদিম
১৪. ইন/ঈন-প্রত্যয়:
- জ্ঞান + ইন = জ্ঞানিন,
- গুণ + ইন = গুণিন,
- সুখ + ইন = সুখিন,
- মান + ইন = মানিন,
- কুল + ঈন = কুলীন,
- নব + ঈন = নবীন,
- সর্বজন + ঈন = সর্বজনীন ইত্যাদি।
দ্রষ্টব্য: ইন-প্রত্যয়ের পরিবর্তিত কিছু রূপ। যেমন –
ক) একবচনে ইন-প্রত্যয় ঈ-প্রত্যয় হয়। যেমন –
- জ্ঞান + ইন (ঈ) = জ্ঞানী,
- গুণ + ঈ = গুণী,
- সুখ + ঈ = সুখী,
- ধন + ঈ = ধনী
খ) স্ত্রী লিঙ্গে ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের পরে ঈ-যুক্ত হয়ে ইনী-প্রত্যয় হয়। যেমন –
- জ্ঞান + ইনী = জ্ঞানিনী,
- গুণ + ইনী = গুণিনী
গ) ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের পরে তৎসম শব্দ থাকলে ইন-প্রত্যয়ের ‘ন্’ লোপ পায়। যেমন –
- জ্ঞানিগণ,
- গুণিগণ,
- সুখিগণ,
- মানিজন
১৫. ত/তা/ত্ব/ত্য/ত্র-প্রত্যয়:
- বন্ধু + তা = বন্ধুতা,
- শত্রু + তা = শত্রুতা,
- সৎ + তা = সততা,
- মহৎ + ত্ব = মহত্ত্ব,
- গুরু + ত্ব = গুরুত্ব,
- বন্ধু + ত্ব = বন্ধুত্ব,
- দক্ষিণ + ত্য = দাক্ষিণাত্য,
- পশ্চাৎ + ত্য = পাশ্চাত্য,
- সর্ব + ত্র = সর্বত্র,
- এক + ত্র = একত্র,
- অন্ত + ত = অন্তত,
- অংশ + ত = অংশত,
- মূল + ত = মূলত
১৬. তর/তম/তন-প্রত্যয়:
- মধুর + তম = মধুরতম,
- সুন্দর + তম = সুন্দরতম,
- প্রিয় + তম = প্রিয়তম,
- প্রিয় + তর = প্রিয়তর,
- দীর্ঘ + তম = দীর্ঘতম,
- মহৎ + তম = মহত্তম,
- চিরম + তন = চিরন্তন,
- পুরা + তন = পুরাতন,
- পূর্ব + তন = পূর্বতন
১৭. নীন-প্রত্যয়: (‘ন’ ইৎ হয়, ‘ঈন’ থাকে)। যেমন –
- কুল + নীন (ঈন) = কুলীন,
- নব + নীন = নবীন,
- সর্বজন + নীন = সর্বজনীন,
- সর্বাঙ্গ + নীন = সর্বাঙ্গীন,
- বিশ্বজন + নীন = বিশ্বজনীন
১৮. বিন-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ‘বী’ হয়। যেমন –
- মেধা + বিন (বী) = মেধাবী,
- মায়া + বিন = মায়াবী,
- তেজ + বিন = তেজস্বী,
- যশ + বিন = যশস্বী
১৯. ঈয়স-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ঈয়ান-প্রত্যয় হয়। যেমন –
- লঘু + ঈয়স (ঈয়ন) = লঘীয়ান,
- গুরু + ঈয়স = গরীয়ান,
- বলবৎ + ঈয়স = বলীয়ান,
- বৃদ্ধ + ঈয়স = বর্ষীয়ান
২০. বতুপ (বান)/মতুপ (মান)-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে যথাক্রমে ‘বান’ ও ‘মান’ হয়। যেমন –
- গুণ + বতুপ = গুণবান,
- দয়া + বতুপ = দয়াবান,
- শ্রী + মতুপ = শ্রীমান,
- বুদ্ধি + মতুপ = বুদ্ধিমান
২১. ময়ট-প্রত্যয়: তদ্ধিতান্ত শব্দে ‘ময়’ হয়। যেমন –
- মধু + ময়ট (ময়) = মধুময়,
- পৃথিবী + ময়ট = পৃথিবীময়,
- রূপ + ময়ট = রূপময়
২২. শ/শালী-প্রত্যয়:
- শক্তি + শালী = শক্তিশালী,
- সমৃদ্ধি + শালী = সমৃদ্ধিশালী,
- প্রভাব + শালী = প্রভাবশালী,
- কর্ক + শ = কর্কশ,
- প্রায় + শ = প্রায়শ,
- ক্রম + শ = ক্রমশ
গ) বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়: বিদেশি ভাষা থেকে আগত যে সমস্ত প্রত্যয় বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেগুলোকে বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। এগুলো বাংলা নিজস্ব শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বহু মিশ্র/সঙ্কর শব্দের সৃষ্টি করেছে। নিম্নে সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের নিয়ম ও উদাহরণ আলোচনা করা হলো।
হিন্দি তদ্ধিত প্রত্যয়:
১. আনা (য়ানা)/আনি (য়ানি)-প্রত্যয়: মুনশীআনা/মুনশীয়ানা, বিবিয়ানা, গরিবানা, বাবুয়ানি, হিন্দুয়ানি
২. ওয়ালা-প্রত্যয়:বাড়িওয়ালা > বাড়িয়ালা, দিল্লীওয়ালা, মাছওয়ালা, দুধওয়ালা
৩. ওয়ান-প্রত্যয়: গাড়োয়ান, দারোয়ান, কোচওয়ান
৪. পনা/পানা/পারা-প্রত্যয়: ছেলেপনা, গিন্নীপনা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা, চাঁদপানা, কুলোপানা, পাগলপারা
৫. সা/সে/সি-প্রত্যয়:পানসা >পানসে, কালসা >কালসে,রূপসা, রূপসি, মাকড়সা, ভাপসা > ভেপসা
ফারসি তদ্ধিত প্রত্যয়:
৬. গর/কর-প্রত্যয়: কারিগর, সওদাগর, বাজিকর
৭. দার-প্রত্যয়: খবরদার, দোকানদার, দেনাদার, পাহারাদার
৮. বাজ/বাজি-প্রত্যয়: কলমবাজ, ধোঁকাবাজ, গলাবাজ, ধড়িবাজ, কলমবাজি, চালবাজি
৯. বন্দি/বন্দ-প্রত্যয়:জবানবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দ, সারিবন্দি, নজরবন্দ
১০. সই-প্রত্যয়: মানানসই, চলনসই, টেকসই, জুতসই (‘সই’ প্রত্যয়টি ‘মতো’ অর্থে ব্যবহৃত)।
দ্রষ্টব্য: টিপসই ও নামসই শব্দ দুটো সই-প্রত্যয়যুক্ত শব্দ নয়। এটি ‘সহি’ (স্বাক্ষর) শব্দ থেকে উৎপন্ন।
নমুনা প্রশ্ন
১. কোনটি অসম্পূর্ণ ধাতু?
ক) কৃ
খ) মাগ্
গ) আছ্
ঘ) টুট্
উত্তরঃ গ
২. কোনটি সংস্কৃত ধাতু?
ক) বুঝ্
খ) পড়্
গ) কহ্
ঘ) পঠ্
উত্তরঃ ঘ
৩. কোনটি বিদেশি ধাতু?
ক) ডাক্
খ) কৃ
গ) কাঁদ্
ঘ) হাস্
উত্তরঃ ক
৪. ‘এখনও সাবধান হও’ এ বাক্যে কোন প্রকার ধাতু পাওয়া যায়?
ক) বিদেশি ধাতু
খ) সাধিত ধাতু
গ) নাম ধাতু
ঘ) সংযোগমূলক ধাতু
উত্তরঃ ঘ
৫. ‘কাজটি ভাল দেখায় না’ এ বাক্যে কোন প্রকার ধাতু ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) প্রযোজক ধাতু
খ) কর্মবাচ্যের ধাতু
গ) সংযোগমূলক ধাতু
ঘ) নাম ধাতু
উত্তরঃ খ
৬. কোনটি মাইকেলী নাম ধাতু?
ক) উত্তরিলা
খ) নিরবিলা
গ) বেতা
ঘ) ক+খ
উত্তরঃ ঘ
৭. যে সব ধাতু বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, রূপ গঠনের দিক থেকে ন্যূনতম একক সেগুলোকে বলা হয় –
ক) মৌলিক ধাতু
খ) সাধিত ধাতু
গ) যৌগিক ধাতু
ঘ) সংযোগমূলক ধাতু
উত্তরঃ ক
৮. বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পর ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে বলে-
ক) প্রযোজক ধাতু
খ) নাম ধাতু
গ) সংযোগমূলক ধাতু
ঘ) কর্মবাচ্যের ধাতু
উত্তরঃ খ
৯. “যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর।” এখানে হারায় কোন ধাতু?
ক) নাম ধাতু
খ) কর্মবাচ্যের ধাতু
গ) সংযোগমূলক ধাতু
ঘ) মৌলিক ধাতু
উত্তরঃ খ
১০. “সে নিজে করে না আর একজনকে দিয়ে করায়।” এ বাক্যটিতে ‘করায়’ কোনটির উদাহরণ?
ক) সংযোগমূলক ধাতু
খ) প্রযোজক ধাতু
গ) কর্মবাচ্যের ধাতু
ঘ) নামধাতু
উত্তরঃ খ
১১. সম্ভাবনা অর্থে যৌগিক ক্রিয়া গঠনে ‘উঠ্’ ধাতুর ব্যবহার কোনটি?
ক) আমার আর থাকা হয়ে উঠল না
খ) এসব কথা আমার সহ্য হয়ে ওঠে না
গ) লোকটি হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল
ঘ) ঋণের বোঝা ভারী হয়ে উঠেছে
উত্তরঃ ঘ
১২. কোনটি নাম ধাতু?
ক) টকা
খ) পাড়া
গ) দেখা
ঘ) বলা
উত্তরঃ ক
১৩. আদ্য স্বরের পরবর্তী সমুদয় ধ্বনিকে কী বলে?
ক) উপধা
খ) গুণ
গ) ইৎ
ঘ) টি
উত্তরঃ ঘ
১৪. গুণের নিয়মে ‘উ’ স্থলে কোনটি হয়?
ক) এ
খ) ও
গ) ঔ
ঘ) ঐ
উত্তরঃ খ
১৫. কোনটি ‘অনট্’ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দ?
ক) নয়ন
খ) খ্যাত
গ) গঠিত
ঘ) ঝরনা
উত্তরঃ ক
১৬. ‘ধার্য’ শব্দের প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?
ক) √ধৃ + য
খ) √ধৃ + ঘ্যণ
গ) √ধৃ + র্য
ঘ) √ধৃ + য্য
উত্তরঃ খ
১৭. প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয়ের সময় প্রত্যয়ের যে অংশ লুপ্ত হয় তাকে কী বলে?
ক) টি
খ) গুণ
গ) উপধা
ঘ) ইৎ
উত্তরঃ ঘ
১৮. বৃদ্ধির নিয়মে ‘ঋ’ পরিবর্তিত হয়ে কী হয়?
ক) ঋত
খ) আর
গ) অর
ঘ) এর
উত্তরঃ খ
১৯. ‘মুক্ত’ শব্দটির প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?
ক) √মুক্+ক্ত
খ) √মুক্+ত
গ) √মুচ্+ক্ত
ঘ) √মুচ্+তি
উত্তরঃ গ
২০. কৃৎ প্রত্যয় কোথায় যুক্ত হয়?
ক) ধাতুর পরে
খ) প্রকৃতির পরে
গ) প্রাতিপদিকের পরে
ঘ) শব্দের পরে
উত্তরঃ ক
২১. কোনটি বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ?
ক) পানসা
খ) নীলিমা
গ) লঘিষ্ঠ
ঘ) ডিঙা
উত্তরঃ ক
২২. ‘গীতি’ শব্দটির প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?
ক) গৈ+ক্তি
খ) গম্+তি
গ) গীত্+ই
ঘ) গান্+ক্তি
উত্তরঃ ক
২৩. কোনটি নিপাতনে সিদ্ধ কৃদন্ত শব্দ?
ক) বুদ্ধি
খ) পাঠক
গ) কারক
ঘ) কাটতি
উত্তরঃ ক
২৪. ‘মাধুর্য’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় হবে-
ক) মধু+ষ্ণ
খ) মধুর+য
গ) মধু+ষ্ণিক
ঘ) মধু+র
উত্তরঃ খ
২৫. ‘বন্দি’ প্রত্যয়টি কোন ভাষার?
ক) হিন্দি
খ) ফারসি
গ) আরবি
ঘ) সংস্কৃত
উত্তরঃ খ
২৬. ‘শোক’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কোনটি?
ক) √শুচ্+ঘঞ
খ) √শুচ্+অক
গ) √শুচ্+নক
ঘ) √শো+ক
উত্তরঃ ক
২৭. ‘শ্রমী’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কী?
ক) √শ্রম্+ঈ
খ) √শ্রম+ই
গ) √শ্রম+ইন্
ঘ) √শ্রম+ণিন
উত্তরঃ গ
২৮. কোনটি বাংলা কৃৎ প্রত্যয় নয়?
ক) তি
খ) আল
গ) না
ঘ) ক্তি
উত্তরঃ ঘ
২৯. নিপাতনে সিদ্ধ কৃদন্ত পদ কোনটি?
ক) শক্তি
খ) মতি
গ) মাতা
ঘ) শ্রমী
উত্তরঃ ক
৩০. কোনটি ‘অপত্য’ অর্থে গঠিত তদ্ধিতান্ত পদ?
ক) দাশরথি
খ) আগ্নেয়
গ) কুলীন
ঘ) মহত্ত্ব
উত্তরঃ ক
৩১. কোনটি ‘নৈপুণ্য’ অর্থে তদ্ধিতান্ত পদ?
ক) দেমাকে
খ) জেলে
গ) ডাক্তারী
ঘ) মিঠাই
উত্তরঃ ক
৩২. নতুন নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয় কোনটি?
ক) উপসর্গ
খ) প্রত্যয়
গ) কারক
ঘ) সমাস
উত্তরঃ গ
৩৩. কোনটি ব্যতিক্রম?
ক) বধ
খ) জয়
গ) লেখক
ঘ) দেয়
উত্তরঃ ক
৩৪. শব্দের মূলকে বলে-
ক) কারক
খ) প্রকৃতি
গ) প্রত্যয়
ঘ) বৃদ্ধি
উত্তরঃ খ
৩৫. ‘দর্শন’ শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় কোনটি?
ক) √দর্শ+অন
খ) √দৃশ্+অনট
গ) √দর্শ+ন
ঘ) √দর+শন
উত্তরঃ খ
৩৬. ‘কর্তব্য’ এর প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?
ক) √কর+তব্য
খ) √কৃ+তব্য
গ) √কৃৎ+তব্য
ঘ) √কৃত+তব্য
উত্তরঃ খ
৩৭. কোনটি শূন্য প্রত্যয়ের শব্দ?
ক) হত
খ) ভয়
গ) জয়
ঘ) ঘুর
উত্তরঃ ঘ
৩৮. নাম বা শব্দের উত্তরে যে সকল প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলে-
ক) অনুসর্গ
খ) উপসর্গ
গ) তদ্ধিত প্রত্যয়
ঘ) কৃৎ প্রত্যয়
উত্তরঃ গ
৩৯. নিচের কোন শব্দটি তদ্ধিত প্রতয়যোগে গঠিত?
ক) নায়ক
খ) চলন্ত
গ) মেধাবী
ঘ) গায়ক
উত্তরঃ গ
৪০. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে কোনটি ব্যতিক্রম?
ক) জুতসই
খ) চলনসই
গ) টিপসই
ঘ) মানানসই
উত্তরঃ গ
৪১. কোন শব্দে প্রত্যয় ‘উপজীবিকা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) গেছো
খ) মেছো
গ) টেকো
ঘ) গেঁয়ো
উত্তরঃ খ
৪২. বিশেষ নিয়মে সাধিত তদ্ধিত প্রত্যয় কোনটি?
ক) বায়বীয়
খ) দেশীয়
গ) রাজকীয়
ঘ) জলীয়
উত্তরঃ গ
৪৩. বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত শব্দ নয় কোনটি?
ক) আফিংখোর
খ) শিক্ষানবিশ
গ) রূপময়
ঘ) দারোয়ান
উত্তরঃ গ
৪৪. ‘জ্ঞানবান’ শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?
ক) জ্ঞান + বান
খ) জ্ঞান + বতুপ
গ) জ্ঞান + মতুপ
ঘ) জ্ঞানী + মতুপ
উত্তরঃ খ
৪৫. ‘মাধ্যমিক’ শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় কোনটি?
ক) মধ্যম + ষ্ণিক
খ) মধ্য + ষ্ণিক
গ) মাধ্যমিক + ষ্ণ
ঘ) মাধ্য + ইক
উত্তরঃ ক
৪৬. দর্শনীয় শব্দটির সঠিক প্রকৃতি-প্রত্যয় হলো –
ক) দৃশ্য + অনীয়
খ) দৃশ + নীয়
গ) দৃশ + অনীয়
ঘ) দৃষ্টি + নীয়
উত্তরঃ গ
৪৭. ‘মাতা, দাতা’ এখানে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে?
ক) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়
খ) সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়
গ) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়
ঘ) বাংলা কৃৎ প্রত্যয়
উত্তরঃ খ
৪৮. কোন শব্দে বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে?
ক) মাথাল
খ) ন্যাকামি
গ) বাগিচা
ঘ) মধুময়
উত্তরঃ গ
৪৯. কোন বাক্যে অজ্ঞাতমূল ধাতুর ব্যবহার হয়েছে?
ক) হেরিনু প্রভাতে
খ) আমি ওকে দিয়ে গল্প বলাই
গ) যা কিছু হারায়, সব তোর দোষ
ঘ) বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে
উত্তরঃ ক
৫০. কোনটি বিদেশি ধাতু?
ক) হস
খ) হাস
গ) কাট
ঘ) ডর
উত্তরঃ ঘ
তথ্যসূত্র:
১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, দ্বিতীয় খণ্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৪. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৫. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৬. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৭. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৮. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৯. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
১০. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)