BCS Geography Lecture – 04

বাংলাদেশের ভৌতপরিবেশ (বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ওসীমানা, আবহাওয়া ওজলবায়ু, বিরোধপূর্ণ সীমান্ত, সীমান্তবর্তী স্থান, সমুদ্রসীমা, সমুদ্রসৈকত ও নদ-নদী), নমুনা প্রশ্ন


বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা


  • পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান: ২০ ৩৪’ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬ ৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ ০১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২ ৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে।

  • বাংলাদেশ অবস্থিত মূল মধ্যরেখার পূর্ব গোলার্ধে এবং নিরক্ষরেখার উত্তর গোলার্ধে।

  • বাংলাদেশের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে ২৩.৫কর্কটক্রান্তি রেখা (কুমিল্লা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বরাবর) এবং ৯০পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা (শেরপুর ও বরগুনা জেলা বরাবর)।

  • কর্কট ক্রান্তিরেখা ও দ্রাঘিমা রেখা একত্রিত হয়েছে ঢাকা জেলায়। ঢাকার প্রতি পাদস্থান চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে।

  • বাংলাদেশের আয়তন: ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার বা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইল।আয়তনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪ তম। দক্ষিণ এশিয়ায় আয়তনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

  • বাংলাদেশের সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়; পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম এবং মিয়ানমার, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গএবংদক্ষিণে ভারতের আন্দামাননিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও বঙ্গোপসাগর।

  • বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমার এ দুটি দেশের সীমান্ত রয়েছে।বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পাঁচটি রাজ্যহলো: আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ (সংক্ষেপে: আমিত্রিমেপ)।

  • বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা ৯টি। যথা: মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর চব্বিশপরগণা, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার ও দার্জিলিং।

  • বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা ৩২টি। ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা ৩০টি। মায়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা ৩টি। ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের কোনো সীমান্ত সংযোগ নেই।

  • ভারত ও মায়ানমার উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের একমাত্র জেলা- রাঙামাটি।

  • বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যে জেলার সাথে ভারতের সীমান্ত সংযোগ নেই- বান্দরবান ও কক্সবাজার।

  • বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত র‌্যাডক্লিফ রেখা দ্বারা আলাদা করা হয়। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এই রেখা বরাবর সীমান্ত পিলার বসায়।

  • বাংলাদেশ-ভারত অমীমাংসিত সীমান্ত- ২.৫ কি.মি. (ফেনী জেলার মুহুরীর চর এলাকা)

  • বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা- ৫,১৩৮ কি.মি.

  • বাংলাদেশের সর্বমোট স্থলসীমা- ৪,৪২৭ কি.মি.

  • বাংলাদেশের সর্বমোট জলসীমা- ৭১১ কি.মি.

  • বাংলাদেশ-ভারত সীমা রেখার দৈর্ঘ্য- ৪,১৫৬ কি.মি.

  • বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমা রেখার দৈর্ঘ্য- ২৭১ কি.মি.

(সূত্র: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)


 

ভূ-প্রকৃতির ভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ভৌত পরিবেশকে প্রধানত তিনটি শেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন:

(ক) টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এ সকল পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ পাহাড় গুলো বেলে পাথর, শেল ও কর্দম দ্বারা গঠিত। এগুলো আসামের লুসাই ও মায়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রীয়। দক্ষিণ-পূবাঞ্চলের পাহাড় সমূহ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা অঞ্চলে অবস্থিত।

 

(খ)প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ: বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমি (আয়তন ৯,৩২০ বর্গকি.মি.), টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর এবংগাজীপুরের ভাওয়াল (আয়তন ৪,১০৩ বর্গকি.মি.) এবংকুমিল্লার জেলার লালমাই ও ময়নামতির উচ্চভূমি (আয়তন ৩৪ বর্গ কি.মি.; উচ্চতা ২১ মিটার) এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এ সকল স্থানের মাটি লালচে ও ধূসরবর্ণের।

 

(গ) সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি: সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ৮০% নদী বিধৌত ভূমি এর অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের অসংখ্য ছোট-বড় নদী সমতল ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এ বন্যার সাথে পরিবাহিত মাটি সঞ্চিত হয়ে প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর অংশ থেকে উপকূলের দিকে ক্রমনিম্ন এ সমভূমির আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গ কি.মি.।প্লাবন সমভূমির মাটির স্তর খুব গভীর এবং ভূমি খুবই উর্বর।উল্লেখ্য,সমুদ্র সমতল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চতম জেলা দিনাজপুর (উচ্চতা: ৩৭.৫০ মিটার)।

বাংলাদেশের
দিকভিত্তিক অবস্থান (সর্ব)
স্থানউপজেলাজেলা
উত্তরজায়গীরজোততেঁতুলিয়াপঞ্চগড়
দক্ষিণপঞ্চগড়টেকনাফকক্সবাজার
পূর্বআখানইঠংথানচিবান্দরবান
পূশ্চিমমনাকশাশিবগঞ্জচাঁপাইনবাবগঞ্জ

 


বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু


  • বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানকার জলবায়ু ‘ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু’ নামে পরিচিত। উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।

  • বাংলাদেশের মোট ঋতু ৬টি। যথা: গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ঋতু বর্ষা। বাংলাদেশের জলবায়ুকে মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও বার্ষিক তাপমাত্রার ভিত্তিতে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই তিনটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।

  • বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সে. মি. । বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় সিলেটের লালখানে এবং সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত হয় নাটোরের লালপুরে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ২০% হয় গ্রীষ্মকালে এবংবাকি ৮০% হয় বর্ষাকালে।

  • বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬ সেলসিয়াস। শীতকালে ১৭সে., গ্রীষ্মকালে ২৮ সে. এবং বর্ষাকালে ২৭ সেলসিয়াস। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তামপাত্রা রেকর্ড করা হয় নীলফামারীর সৈয়দপুরে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯০৫ সালে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরে সর্বনিম্ন ১সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

  • বাংলাদেশের আবহাওয়া স্টেশন ৩৫টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কেন্দ্র ২টি। যথা: ঢাকা ও চট্টগ্রাম।

  • বাংলাদেশে ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে ৪টি। যথা: ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট।

বাংলাদেশে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ৪টি। যথা: রাঙামাটির বেতবুনিয়া (প্রথম), গাজীপুরের তালিবাবাদ, ঢাকার মহাখালী ও সিলেট।

বাংলাদেশের উষ্ণতমমাসএপ্রিল
স্থাননাটোরের লালপুর
জেলারাজশাহী

 

বাংলাদেশের শীতলতমমাসজানুয়ারি
স্থানশ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
জেলারাজশাহী

 


বিরোধপূর্ণ সীমান্ত ও সীমান্তবর্তী স্থান


  • বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ অবস্থিত- হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায়। এ দ্বীপের আয়তন ৮ বর্গ কি.মি.।

  • দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অন্য নাম- নিউমুর দ্বীপ বা পূর্বাশা দ্বীপ।

  • বাংলাদেশ-ভারত সীমানা নির্ধারণকারী নদী- হাড়িয়াভাঙ্গা নদী।

  • বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমানা বিভক্তকারী নদী- নাফনদী।

বিরোধপূর্ণ সীমান্তঅবস্থান
মুহুরীর চর, বিলোনিয়াফেনী
নয়াদ্বীপ, বাঁশবাড়িয়াসাতক্ষীরা
রৌমারী, বড়াইবাড়ী, দইখাতাকুড়িগ্রাম
নয়াগ্রাম, জৈন্তাপুরসিলেট
নির্মল চররাজশাহী
লাঠিটিলামৌলভীবাজার
মংডুবান্দরবান
চর ফরিদনাফনদী, কক্সবাজার

 

জেলার নামসীমান্তবর্তী স্থান
কুড়িগ্রামকলাবাড়ি, ভুরুঙ্গামারী, ইতালামারী, ভন্দরচর, রাজিবপুর, রৌমারী, বড়াইবাড়ী
লালমনির হাটহাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, দহগ্রাম, বুড়িমারী
নীলফামারীচিলাহাটী
দিনাজপুরহিলি, বিরল, ফুলবাড়ি, বিরামপুর
রাজশাহীপবা, চারগ্রাম, গোদাগাড়ি
চাঁপাইনবাবগঞ্জসোনামসজিদ,শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট
কুষ্টিয়াভেড়ামারা
মেহেরপুরমুজিবনগর, গাংনী
যশোরবেনাপোল, শর্শা, ঝিকড়গাছা
ময়মনসিংহহালুয়াঘাট
শেরপুরনলিতাবাড়ি
সিলেটতামাবিল, জৈন্তাপুর, পাদুয়া, প্রতাপপুর, গোয়াইনঘাট,জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সোনারহাট
মৌলভীবাজারবড়লেখা, ডোমাবাড়ি
কুমিল্লাচৌদ্দগ্রাম, বিবিরবাজার, বুড়িচং
ফেনীবিলোনিয়া, মুহুরীগঞ্জ, ফুলগাজী
খাগড়াছড়িপানছড়ি
কক্সবাজারউখিয়া
সাতক্ষীরাকুশখালি, বৈকারী, কলারোয়া, পদ্মশাখরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ
ঠাকুরগাঁওবালিয়াডাঙ্গা, হরিপুর
জয়পুরহাটচেঁচড়া

 


সমুদ্রসীমা ও সমুদ্রসৈকত


  • বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের মোট আয়তন ২২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। গড় গভীরতা ২,৬০০ মিটার এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৪,৬৯৪ মিটার।

  • বঙ্গোপসাগরের একটি খাতের নাম ‘সোয়াচ অব নোগ্রাউন্ড’। এর অপরনাম ‘Ninety East Ridg’ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ৯০০পূর্ব দ্রাঘিমা রেখার সমান্তরালে একটি নিমজ্জিত পর্বত শ্রেণি।

  • বাংলাদেশের মোট সমুদ্র সীমা- ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি.মি. ।

  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমুদ্র সীমার দৈর্ঘ্য – ১২ নটিক্যালমাইল।

  • বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা অর্থাৎ Exclusive Economic Zone (EEZ)-এর দৈর্ঘ্য- ২০০ নটিক্যালমাইল।

  • ১ নটিক্যালমাইল = ১.৮৫৩ কিলোমিটার।

  • কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য- ১২০ কি.মি. । এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত।

  • কক্সবাজারের ইনানী সৈকত সোনালি বালু ও পরিষ্কার পানির জন্য বিখ্যাত।

  • কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য- ১৮ কি.মি.

  • সূর্য উদয় ওসূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে

  • বাংলাদেশ ২০১২ সালে জার্মানির হাম বুর্গে অবস্থিত International Tribunal for the Law of the Sea (ITLOS) এর রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা জয় লাভ করে।

  • বাংলাদেশ ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডের হেগশহরে অবস্থিত Permanent Court of Arbitration (PCA) এর রায়ের মাধ্যমে ভারতের সাথে সমুদ্র সীমা জয় লাভ করে।

  • সমুদ্রের তীর ঘেঁষা সড়ক পথকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক বলে। বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজারে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার।

সমুদ্রসৈকতঅবস্থান
কুয়াকাটাপটুয়াখালি
পতেঙ্গাচট্টগ্রাম
কটকাবাগেরহাট
ইনানী, লাবণীকক্সবাজার
তারুয়াভোলা

 


নদ-নদী


  • বাংলাদশে ছোট-বড়  মিলে প্রায় ৭০০টি নদ-নদী রয়েছে । উপনদী ও শাখা নদীসহ বাংলাদশের মোট নদীপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪,১৪০ কিলোমিটার (সূত্র: বাংলাপিডিয়া)

  • নদী ভাঙনের ফলে নদী গর্ভে জনপদ বিলীন হয়ে যাওয়াকে ‘নদীশিকস্তি’ বলে। আবার ভেঙে যাওয়া জনপদ নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠাকে ‘নদীপয়স্তি’ বলে।

  • কলকাতাবন্দরকে পলির হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তের প্রায় ১৮ কি.মি. উজানে গঙ্গানদীতে মনোহরপুরের কাছে ১৯৭৪ সালে ‘ফারাক্কাবাধ’ নির্মাণ করা হয়। ফারাক্কা বাধ চালু হয় ১৯৭৫ সালে।

  • বাংলাদেশের সিলেট সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. পূর্বে ভারতের মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ নামক স্থানে বরাক ও তুই ভাই নদীর সংযোগ স্থলে ভারত সরকার একটি বাধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজশুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন, অভিন্ন নদীর উজানে এই বাধ ভাটির বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

১৯৯৮ সালে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা বাধ নির্মাণ করা হয়। তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে নির্মিত বাধের নাম গজলডোবা বাধ। গজলডোবা বাধটি বাংলাদেশ সীমান্তের ৬০ কি.মি. উজানে জলপাইগুঁড়ি জেলার মালবাজারে নির্মাণ করা হয়।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদব্রহ্মপুত্র
বাংলাদেশের প্রশস্ততম, দীর্ঘতম, গভীরতম ও সবচেয়ে নব্যনদীমেঘনা (৬৬৯ কি.মি.)
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম নদী (পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত)গোবরা (৪ কি.মি.)
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদী৫৭টি
বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীর সংখ্যা৫৪টি
বাংলাদেশ-মায়ানমার অভিন্ন নদীর সংখ্যা৩টি
বাংলাদেশ-মায়ানমার ৩টি অভিন্ননদীনাফ (৫৬ কি.মি.), সাঙ্গু ও মাতামুহুরী
বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে সমাপ্ত নদী হলোশংখ ও হালদা
বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে ভারতে গিয়েছেকুলিখ
বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়ে ভারতে গিয়ে আবার বাংলাদেশের ফিরে এসেছেনাগর, টাঙন, আত্রাই ও পূনর্ভবা
বাংলাদেশের প্রধান নদী বন্দরনারায়ণগঞ্জ
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়১৯৭২ সালে
বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়১৯৭৭ সালে ফরিদপুরে
(এটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে)ফেনী
নদীর নামে যে জেলার নামকরণ করা হয়েছেরূপসা (রূপচাঁদ সাহা’র নামে)
মানুষের নামে নদীর নামকর্ণফুলী (১৮০ কি.মি.)
বাংলাদেশের খরস্রোতা নদীগোমতী
যে নদীতে জোয়ার-ভাটা হয় না (একে কুমিল্লার দুঃখবলা হয়)মেঘনা
যে নদীর পানি সবচেয়ে বিশুদ্ধকর্ণফুলী
যে নদীর পানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় (কাপ্তাই নামক স্থানে)যমুনা
যে নদীর পানিতে পাশাপাশি দুই রং-এর স্রোত দেখাযায়বুড়িগঙ্গা
দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীহালদা নদী (চট্টগ্রাম)
এশিয়ার সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রবলেশ্বর ও রায়মঙ্গল
সুন্দরবনের পূর্বে ও পশ্চিমে অবস্থিত নদীদামোদার নদকে
বাংলার দুঃখ বলা হয় (এটি কলকাতার হুগলি নদীর উপনদী)চকতাই খালকে
চট্টগ্রামের দুঃখ বলা হয়গাবখান নদীকে
বাংলার সুয়েজ খাল বলা হয়গড়াই নদীকে

 

নদীর নামযে জেলায় অবস্থিত
মহিলাদিনাজপুর
পুরুষ, বাঙালিবগুড়া
তেঁতুলিয়াভোলা
ভোলা, বগী, পশুরবাগেরহাট
চেঙ্গীখাগড়াছড়ি
শংখবান্দরবান
মনুমৌলভীবাজার
পায়রা, কারখানাপটুয়াখালি
গোবরাপঞ্চগড়
সন্ধ্যা, বলেশ্বরপিরোজপুর
বিশখালী, ধানসিঁড়ি, গাবখানঝালকাঠি
তিতাসব্রাহ্মণবাড়িয়া
আড়িয়াল খাঁমাদারীপুর
কীর্তন খোলাবরিশাল
ধরলাকুড়িগ্রাম
নবগঙ্গাঝিনাইদহ
চিত্রাগোপালগঞ্জ
খোয়াইহবিগঞ্জ
কপোতাক্ষযশোর
কুমারফরিদপুর
ধলশ্বেরীমুন্সিগঞ্জ
গোমতীকুমিল্লা
ইছামতিপাবনা
মহানন্দাবাংলাবান্দা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
গড়াইকুষ্টিয়া
পুর্নভবাদিনাজপুর
টাঙনঠাকুরগাঁও
পাঙ্গাশিয়াসাতক্ষীরা
বুড়িগঙ্গাঢাকা
সুরমাসিলেট
ভৈরবখুলনা

 

নদীর তীরর্বতী স্থানসমূহনদীর নাম
পাটুরয়িা ও আরচিা (মানকিগঞ্জ), গোয়ালন্দ ও দৌলতদয়িা (রাজবাড়ী), মাওয়া (মুন্সগিঞ্জ), কাওড়াকান্দি (মাদারীপুর), রাজশাহী, সারদা, পাকশী, শলিাইদহ, ভড়োমারাপদ্মা
বাহাদুরবাদ ও জগন্নাথগঞ্জ (জামালপুর), নগরবাড়ী (পাবনা), সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলযমুনা
নরসিংদী, আশুগঞ্জ, চাঁদপুরমেঘনা
ফেঞ্চুগঞ্জকুশিয়ারা
ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জপুরাতন ব্রহ্মপুত্র
বাগরেহাট, গোপালগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়ামধুমতি
পঞ্চগড়, বগুড়া, মহাস্থানগড়করতোয়া
নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুরতিস্তা
গাইবান্ধা, নওগাঁ, নাটোরআত্রাই
মংলা, চালনাপশুর
চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাইকর্ণফুলী
নারায়ণগঞ্জ, ঘোড়াশাল, সোনারগাঁওশীতলক্ষ্যা
টেকনাফ, কক্সবাজারনাফ
টঙ্গী, গাজীপুরতুরাগ

 

নদীর নামপূর্ব নাম
পদ্মাকীর্তিনাশা
মেঘনাকালনি (মিলনস্থলে)
যমুনাজোনাই
ব্রহ্মপুত্রলৌহিত্য
বুড়িগঙ্গাদোলাই

 

প্রধান নদীনদীসমূহের উৎপত্তিস্থল
পদ্মা, মহানন্দাহিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী হিমবাহ
মেঘনাআসামের নাগা-মণিপুর পাহাড়
ব্রহ্মপুত্রতিব্বতের হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ
যমুনাজামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের নিকট ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা যমুনা নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে
কর্ণফুলীমিজোরামের লুসাই পাহাড়
সাঙ্গু, নাফআরাকান পাহাড়
মাতামুহুরীলামার মইভার পর্বত
করতোয়া, তিস্তাসিকিমের পার্বত্য অঞ্চল
মুহুরীত্রিপুরার লুসাই পাহাড়
ফেনী, গোমতী, সালদাত্রিপুরার পার্বত্য অঞ্চল
হালদাখাগড়াছড়ির বাদনাতলী পর্বত
মনুমিজোরামের পার্বত্য অঞ্চল

 

নদীর নামবাংলাদেশে প্রবেশের স্থান
পদ্মাচাঁপাইনবাবগঞ্জ
মেঘনাসিলেট
ব্রহ্মপুত্রকুড়িগ্রাম
তিস্তানীলফামারী
কর্ণফুলীচট্টগ্রাম
তিতাসব্রাহ্মণবাড়িয়া
মহানন্দাপঞ্চগড়
ভৈরবমেহেরপুর

 

নদীর নামমিলনস্থলমিলিত হওয়ার পরে নদীর নাম
পদ্মা ও যমুনাগোয়ালন্দ,
রাজবাড়ী
পদ্মা
পদ্মা ও মেঘনাচাঁদপুরমেঘনা
সুরমা ও কুশিয়ারাআজমিরীগঞ্জ,
হবিগঞ্জ
কালনী
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনাভৈরব,
কিশোরগঞ্জ
মেঘনা
বাঙালি ও যমুনাবগুড়াযমুনা
হালদা ও কর্ণফুলীকালুরঘাট,
চট্টগ্রাম
কর্ণফুলী
তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রচিলমারী,
কুড়িগ্রাম
ব্রহ্মপুত্র
ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যানারায়ণগঞ্জশীতলক্ষ্যা

 

নদীর নামউপ নদীশাখা নদী
পদ্মামহানন্দাকুমার,
ভৈরব, মাথাভাঙা, গড়াই, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ
মহানন্দাপুনর্ভবা,
নাগর, ট্যাঙন, কুলিখ
মেঘনামনু,
বাউলাই, তিতাস, গোমতী
ব্রহ্মপুত্রধরলা, তিস্তাযমুনা, বংশী, শীতলক্ষ্যা
যমুনাকরতোয়া,
আত্রাই
ধলেশ্বরী
ধলেশ্বরীবুড়িগঙ্গা
ভৈরবকপোতাক্ষ,
শিবসা, পশুর
কর্ণফুলীহালদা,
বোয়ালমারী, কাসালং
সাইনী

 


নমুনা প্রশ্ন


১. বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমা রেখার দৈর্ঘ্য কত?

ক) ২৭০ কি.মি.

খ) ২০০ কি.মি.

গ) ১২০ কি.মি.

ঘ) ২৭১ কি.মি.

উত্তরঃ ঘ


২. বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিম বঙ্গের জেলা নয় কোনটি?

ক) মালদহ

খ) নদীয়া

গ) বাকুড়া

ঘ) দার্জিলিং

উত্তরঃ গ


৩. নিম্নের কোনটি সীমান্তবর্তী জেলা নয়?

ক) চুয়াডাঙ্গা

খ) শেরপুর

গ) ঝিনাইদহ

ঘ) বগুড়া

উত্তরঃ ঘ


৪. ‘গাংনী’ সীমান্ত কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) মেহেরপুর

খ) যশোর

গ) কুষ্টিয়া

ঘ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ

উত্তরঃ ক


৫. বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের স্থান কোনটি?

ক) মনাকশা

খ) আখাইনঠং

গ) বাংলাবান্ধা

ঘ) ছেঁড়াদ্বীপ

উত্তরঃ খ


৬. চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড় সমূহ কোন পর্বতের অংশ?

ক) আরাকান ইয়োমা

খ) হিমালয়

গ) চিম্বুক

ঘ) কুলাউড়া

উত্তরঃ ক


৭. বরেন্দ্র ভূমির আয়তন কত বর্গ কি.মি.?

ক) ৯৩২০ 0

খ) ৯৮৪৭

গ) ৪১০৩

ঘ) ৮৩২০

উত্তরঃ ক


৮. বাংলাদেশ হতে ভারতে প্রবেশকারী নদী কোনটি?

ক) কুলিখ

খ) আত্রাই

গ) পুনর্ভবা

ঘ) টাঙন

উত্তরঃ ক


৯. বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয় কত সালে?

ক) ১৯৭৪

খ) ১৯৭৬

গ) ১৯৭২

ঘ) ১৯৭৮

উত্তরঃ গ


১০. মেঘনা নদীর উৎপত্তি স্থল হলো-

ক) সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল

খ) লুসাই পাহাড়

গ) লামারমইভার পর্বত

ঘ) গঙ্গোত্রী হিমবাহ

উত্তরঃ খ


১১. বাঙালি ও যমুনা নদী মিলিত হয়েছে কোথায়?

ক) চাঁদপুরে

খ) বগুড়ায়

গ) গোয়ালন্দে

ঘ) আজমিরিগঞ্জে

উত্তরঃ খ


১২. মহানন্দার উপনদী কোনটি?

ক) পুনর্ভবা

খ) কুমার

গ) আড়িয়ালখাঁ

ঘ) মধুমতি

উত্তরঃ ক


১৩. আরিচা ঘাট কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

ক) যমুনা

খ) মেঘনা

গ) পদ্মা

ঘ) কীর্তনখোলা

উত্তরঃ গ


১৪. পাহাড়ের রানি নামে পরিচিত-

ক) চিম্বুক

খ) চন্দ্রনাথ

গ) গারো

ঘ) তাজিংডং

উত্তরঃ ক


১৫. ‘ভেঙ্গিভ্যালি’ কোথায় অবস্থিত?

ক) খাগড়াছড়ি

খ) রাঙামাটি

গ) কক্সবাজার

ঘ) চট্টগ্রাম

উত্তরঃ খ


১৬. মৎস্য আহরণ ও অতিথি পাখির জন্য‍ বিখ্যাত কোন দ্বীপ?

ক) সোনাদিয়া

খ) সন্দ্বীপ

গ) মহেশখালী

ঘ) নিঝুম

উত্তরঃ ক


১৭. পশ্চিমা বাহিনীর নদী বলা হয়-

ক) ডাকাতিয়া বিল

খ) তামা বিল

গ) চলন বিল

ঘ) ভবদহ বিল

উত্তরঃ ক


১৮. বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম হাওড় ‘বুরবুক’ কোথায় অবস্থিত?

ক) সুনামগঞ্জ

খ) সিলেট

গ) যশোর

ঘ) ভবদহ বিল

উত্তরঃ খ


১৯. বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যের জন্য কোন চর বিখ্যাত?

ক) চর শাহাবানী

খ) চর গজারিয়া

গ) চর কুকড়িমুকড়ি

ঘ) নির্মল চর

উত্তরঃ গ


২০. দুবলার চরের অপর নাম কী?

ক) কটকা পয়েন্ট

খ) জাফর পয়েন্ট

গ) হিরণ পয়েন্ট

ঘ) টাইগার পয়েন্ট

উত্তরঃ খ


২১. শুভলং ঝর্ণা কোথায় অবস্থতি?

ক) রাঙামাটি

খ) বান্দরবান

গ) কক্সবাজার

ঘ) সীতাকুণ্ড

উত্তরঃ ক


২২. ভারতের কোন প্রদেশটির সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই?

ক) মেঘালয়

খ) মিজোরাম

গ) আসাম

ঘ) ঝাড়খণ্ড

উত্তরঃ ঘ


২৩. সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের কোন রাজ্য অবস্থিত?

ক) পশ্চিমবঙ্গ

খ) মেঘালয়

গ) আসাম

ঘ) ত্রিপুরা

উত্তরঃ খ


২৪. বাংলাদেশের কোন জেলাটি ভারতের সীমান্তের সাথে নয়?

ক) ময়মনসিংহ

খ) কুষ্টিয়া

গ) দিনাজপুর

ঘ) রংপুর

উত্তরঃ ঘ


২৫. বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য কত?

ক) ২০০ নটিক্যালমাইল

খ) ২৭১ কি.মি.

গ) ৪১৫৬ কি.মি.

ঘ) ৭১১ কি.মি

উত্তরঃ ঘ


২৬. ‘বেড়–বাড়ী’ সীমান্ত কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) যশোর

খ) দিনাজপুর

গ) পঞ্চগড়

ঘ) কুড়িগ্রাম

উত্তরঃ গ


২৭. বাংলাদেশের কোন পাহাড়ে ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে?

ক) গারো

খ) চন্দ্রনাথ

গ) কুলাউড়া

ঘ) চিম্বুক

উত্তরঃ গ


২৮. ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার উঁচু ভূমিকে বলা হয় – 

ক) বরেন্দ্রভূমি

খ) লালমাইপাহাড়

গ) মধুপুরের গড়

ঘ) ভাওয়াল গড়

উত্তরঃ গ


২৯. কাপ্তাই থেকে প্লাবিত পার্বত্য চট্টগ্রামের উপত্যকা এলাকা –  

ক) হালদাভ্যালি

খ) সাঙ্গু ভ্যালি

গ) নাপিতখালিভ্যালি

ঘ) ভেঙ্গি ভ্যালি

উত্তরঃ ঘ


৩০. রাতে নৌ চলাচলের সুবিধার্থে দেশের কোন দ্বীপে পুরানো বাতি ঘর ছিল?

ক) মহেশখালি

খ) কুতুবদিয়া

গ) সোনাদিয়া

ঘ) হাতিয়া

উত্তরঃ খ


৩১. নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম – 

ক) নিউমুর

খ) দক্ষিণ শাহবাজপুর

গ) বাউলার চর

ঘ) দুবলার চর

উত্তরঃ গ


৩২. বাংলাদেশের কোন দ্বীপে পর্তুগিজরা বাস করতো?

ক) ছেঁড়াদ্বীপ

খ) ভোলাদ্বীপ

গ) মনপুরাদ্বীপ

ঘ) সন্দ্বীপ

উত্তরঃ গ


৩৩. হিরণপয়েন্ট : সুন্দরবন :: জাফর পয়েন্ট?

ক) কক্সবাজার

খ) সুন্দরবন

গ) ঢাকা

ঘ) চট্টগ্রাম

উত্তরঃ খ


৩৪. ‘নির্মলচর’ কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) ভোলা

খ) ফেনী

গ) চট্টগ্রাম

ঘ) রাজশাহী

উত্তরঃ ঘ


৩৫. কোন নদীতে জোয়ার-ভাটা হয় না?

ক) আত্রাই

খ) গোমতী

গ) হালদা

ঘ) কুলিখ

উত্তরঃ খ


৩৬. বাংলাদেশের সব চেয়ে নাব্যনদী কোনটি?

ক) ব্রহ্মপুত্র

খ) মেঘনা

গ) যমুনা

ঘ) কর্ণফুলী

উত্তরঃ খ


৩৭. আরাকান পাহাড় থেকে উৎপন্ন নদী?

ক) কর্ণফুলী

খ) হালদা

গ) সাঙ্গু

ঘ) করতোয়া

উত্তরঃ গ


৩৮. ভৈরব বাজারের নিকট মিলিত নদীদ্বয় – 

ক) পদ্মা ও যমুনা

খ) কুশিয়ারা ও সুরমা

গ) পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা

ঘ) বাঙালি ও যমুনা

উত্তরঃ গ


৩৯. শীতলক্ষ্যা নদীর উৎপত্তি হয়েছে – 

ক) যমুনা নদী থেকে

খ) ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে

গ) মেঘনা নদী থেকে

ঘ) পদ্মা নদী থেকে

উত্তরঃ খ


৪০. তিস্তা নদী কোন জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে?

ক) নবাবগঞ্জ

খ) নীলফামারী

গ) কুড়িগ্রাম

ঘ) সিলেট

উত্তরঃ খ


৪১. কুষ্টিয়া কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

ক) গড়াই

খ) আত্রাই

গ) মধুমতি

ঘ) কপোতাক্ষ

উত্তরঃ ক


৪২. ‘আড়িয়ল বিল’ কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) সিলেট

খ) যশোর

গ) মুন্সিগঞ্জ

ঘ) খুলনা

উত্তরঃ গ


৪৩. বাংলাদেশে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা কত?

ক) ২৬ ডিগ্রি সে.

খ) ১৭ ডিগ্রি সে.

গ) ২৭ ডিগ্রি সে.

ঘ) ২৮ ডিগ্রি সে.

উত্তরঃ ক


৪৪. পাকশিতে পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত সেতুর নাম কী?

ক) হার্ডিঞ্জব্রিজ

খ) কীন সেতু

গ) লালনশাহ সেতু

ঘ) পাকশি সেতু

উত্তরঃ গ


৪৫. ‘বুড়িমারি’ স্থলবন্দর কোথায়?

ক) লালমনিরহাট

খ) রংপুর

গ) পঞ্চগড়

ঘ) সুনামগঞ্জ

উত্তরঃ ক


৪৬. বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃষি খামার কোথায় অবস্থিত?

ক) ঝিনাইদহ

খ) গাজীপুর

গ) কিশোরগঞ্জ

ঘ) পাবনা

উত্তরঃ ক


৪৭. ধলেশ্বরী নদীর শাখা নদী কোনটি?

ক) শীতলক্ষ্যা

খ) মহানন্দা

গ) হালদা

ঘ) বুড়িগঙ্গা

উত্তরঃ ঘ


৪৮. সুন্দরবনের পশ্চিমে কোন নদী অবস্থিত?

ক) পশুর নদী

খ) হাড়িয়াভাঙ্গা নদী

গ) পায়রানদী

ঘ) রায়মঙ্গল নদী

উত্তরঃ ঘ


৪৯. বাংলাদেশের যে জেলাটির সাথে ভারত-মায়ানমারের সীমান্ত আছে?

ক) বান্দরবন

খ) নোয়াখালী

গ) কক্সবাজার

ঘ) রাঙামাটি

উত্তরঃ ঘ


৫০. ‘আইলাবিল’ কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) মৌলভীবাজার

খ) সুনামগঞ্জ

গ) কক্সবাজার

ঘ) চট্টগ্রাম

উত্তরঃ খ


৫১. বন : মরুভুমি :: লোকালয়?

ক) জলাশয়

খ) নির্জন

গ) মরুদ্যান

ঘ) গ্রাম

উত্তরঃ খ


৫২. ‘তারুয়া’ সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত?

ক) কক্সবাজার

খ) চট্টগ্রাম

গ) নোয়াখালী

ঘ) ভোলা

উত্তরঃ ঘ


৫৩. তিন বিঘা করিডোর কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

ক) ব্রহ্মপুত্র

খ) তিস্তা

গ) করতোয়া

ঘ) আত্রাই

উত্তরঃ খ


৫৪. পায়রা নদী কোথায় অবস্থিত?

ক) ভোলা

খ) বাগেরহাট

গ) পটুয়াখালি

ঘ) পিরোজপুর

উত্তরঃ গ


৫৫. বাংলাদেশের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা কত?

ক) ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

খ) ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

গ) ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

ঘ) ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

উত্তরঃ ঘ


৫৬. বাংলাদেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন থাকে যে মাসে – 

ক) জানুয়ারি

খ) এপ্রিল

গ) মার্চ

ঘ) নভেম্বর

উত্তরঃ ক


৫৭. বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়?

ক) দক্ষিণ-পশ্চিমে

খ) উত্তর-পূর্বে

গ) উত্তর-পশ্চিমে

ঘ) পূর্ব-দক্ষিণে

উত্তরঃ খ


৫৮. বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি মামলার রায় হয় – 

ক) ৭ জুন ২০১৩

খ) ৭ জুলাই ২০১৪

গ) ১৪ মার্চ ২০১২

ঘ) ১৪ জুন ২০১৪

উত্তরঃ ঘ


৫৯. ফারাক্কা বাঁধ চালু হয় কবে?

ক) ১৯৭৫ সালে

খ) ১৯৭৮ সালে

গ) ১৯৬৯ সালে

ঘ) ১৯৮৮ সালে

উত্তরঃ ক


৬০. ব্রহ্মপুত্র নদ কোন জেলার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে?

ক) লালমনিরহাট

খ) কুড়িগ্রাম

গ) গাইবান্ধা

ঘ) পঞ্চগড়

উত্তরঃ খ


গ্রন্থপঞ্জি:


১. রওশনআরাবেগম, আব্দুলহাইশিকদারপ্রমুখ, ‘মাধ্যমিকসামাজিকবিজ্ঞান’ (জাতীয়শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকবোর্ড, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৬)

২. মমতাজউদ্দীনপাটোয়ারী, শওকতআরাবেগমপ্রমুখ‘বাংলাদেশে ও বিশ্বপরিচয়’ (জাতীয়শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকবোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১৩)

৩. সেলিনাশাহজাহান, ড. শেখমো. রেজাউলকরিমপ্রমুখ, ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ (জাতীয়শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকবোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১২)

৪. কে. আশরাফুলআলম, ‘বৈশ্বিকপরিবেশেরপ্রাকৃতিকভূগোল (পারফেক্টপাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০১৪)

৫. রফিকআহমেদ, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ুবিজ্ঞান’ (রাজশাহীবিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৭)।

BCS Geography Lecture – 03

বারিমণ্ডল, দুর্যোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ, নমুনা প্রশ্ন

 


বারিমণ্ডল


পৃথিবীর পৃষ্ঠে ভূত্বকের নিচু অংশগুলো জলে পরিপূর্ণ আছে এগুলোকে বারিমণ্ডল(Hydrosphere) বলে। পৃথিবীতে জলভাগের সীমানা৭০.৮% এবং স্থলভাগের সীমানা ২৯.২%। পৃথিবীতে পানি দুই রকম। যথা:

    • লবণাক্ত পানি: এর উৎস সমুদ্র ও হ্রদ (৯৭%)
    • মিঠাপানি: এর উৎস নদ-নদী, পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদি (৩%)

  • বারিমণ্ডল নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। যেমন:
    1. নদ-নদী, সাগর, মহাসাগর, উপসাগর, হ্রদ, হাওড়-বাওড়, বিল-ঝিল
    2. সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ
    3. সমুদ্রস্রোত
    4. জোয়ার-ভাটা

 মহাসাগর:উন্মুখ বিস্তীর্ণ জলরাশিকে মহাসাগর (Ocean) বলে। পৃথিবীতে ৫টি মহাসাগর আছে। যথা:

    • প্রশান্ত মহাসাগর: এটি সবচেয়ে বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর।এর গভীরতম স্থানফিলিপাইনের নিকট মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (গভীরতা ১১৩৩ মিটার) ।
    • আটলান্টিক মহাসাগর: দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর।
    • ভারত মহাসাগর
    • আর্কটিক মহাসাগর/উত্তর মহাসাগর
    • এন্টার্কটিক মহাসাগর/দক্ষিণ মহাসাগর: সবচেয়ে ছোট মহাসাগর।

 

সাগর: মহাসাগরের চেয়ে আয়তনে ছোট পানিরাশিকে সাগর (Sea) বলে।স্রোতহীন যে পানিতে ভাসমান আগাছা ও শৈবাল সঞ্চিত হয় তাকে শৈবাল সাগর বলে। এটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।

  • বৃহত্তম সাগর: দক্ষিণ চীন সাগর
  • ক্ষুদ্রতম সাগর: বাল্টিক সাগর
  • ব্যস্ততম সাগর: ভূমধ্যসাগর

উপসাগর: তিন দিকে স্থল দ্বারা বেষ্টিত জলরাশিকে উপসাগর (Bay) বলে। প্রায় চারদিকে স্থল দ্বারা বেষ্টিত জলরাশিকে (Gulf) উপসাগর বলে। সবচেয়ে বড় উপসাগর মেক্সিকো উপসাগর। বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) একটি উপসাগর। এর গভীরতম খাদের নাম ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ (গভীরতা ১১৩০মিটার) ।


হ্রদ: চারদিকে সম্পূর্ণভাবে স্থল দ্বারা বেষ্টিত জলরাশিকে হ্রদ (Lake) বলে। এটি লবণাক্ত ও মিঠাপানি উভয়ই হতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত পানির হ্রদ কাস্পিয়ান সাগর (মধ্য এশিয়া) এবং মিঠাপানির হ্রদ সুপিরিয়র (যুক্তরাষ্ট্র)। ইসরাঈল ও জর্ডানের মাঝখানে অবস্থিত একটি হ্রদের নাম মৃত সাগর(Dead Sea) । এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে ৩৯৩ মিটার নিচে অবস্থিত। অতিরিক্ত লবণাক্ততার ফলে এ সাগরে মানুষ ডোবে না।


হাওড় ও বাওড়:হাওড় হলো বিশাল গামলা আকৃতির জলাশয়। যেখানে অনেক পানি জমে। যা ভূআলোড়নের ফলে সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওড়: হাকালুকি হাওড় (মৌলভীবাজার)। অন্যদিকে, বাওড় হলো পুরাতন নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট জলাশয়।


বিল ও ঝিল:পুরতান নদীর গতিপথের ধার ঘেঁষে বিল সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল: চলনবিল (পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ) ।ঝিল হলো নদীর পরিত্যক্ত খাত বা বিল অপেক্ষা গভীর জলাশয়। সাধারণত ঝিলকে অশ্বখুরাকৃতির হ্রদ হিসেবে নির্দেশ করা হয়।


নদ ও নদী:নদ ও নদী সাধারণত মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা ঝরনাধারা, বরফগলিত স্রোত অথবা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহ শেষে সাগরমহাসাগরহ্রদ বা অন্য কোনো নদী বা জলাশয়ে পতিত হয়।

  • নদ ও নদীর পার্থক্য: প্রচলিত তথ্য মতে, নদীর শাখা থাকে, নদের শাখা থাকে না।প্রকৃতপক্ষে নদ ও নদীর সঙ্গে শাখা থাকা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। এই দুয়ের মাঝে যা পার্থক্য আছে তা হলো ব্যাকরণগত।বাংলা, হিন্দি ও ফারসি ইত্যাদি ভাষার ক্ষেত্রে, পুরুষবাচক শব্দ সাধারণত অ-কারান্ত এবং নারীবাচক শব্দ আ-কারান্ত বা ই, ঈ-কারান্ত হয়। যেমন; পদ্মজ (অ-কারান্ত), পদ্মজা (আ-কারান্ত, নামের শেষে আ আছে), রজক (অ-কারান্ত) -রজকী (ঈ-কারান্ত, নামের শেষে ঈ আছে)।

তাই যে সকল নদীর নাম পুরুষবাচক অর্থাৎ অ-কারান্ত তারা নদ আর যে সকল নদীর নাম নারীবাচক অর্থাৎ আ-কারান্ত বা ঈ, ই-কারান্ত তারা নদী। যেমন: নীল নদ, কপোতাক্ষ নদ, আমাজন নদ ইত্যাদি। পদ্মা নদী, আড়িয়াল খাঁ নদী, সুরমা নদী, গোমতী নদী ইত্যাদি।

  • প্রধান নদী: এটি প্রাকৃতিক উৎস থেকে সৃষ্টি অর্থাৎ অন্য কোনো নদী থেকে সৃষ্ট হয়নি।
  • উপনদী: কোনো ক্ষুদ্র জলধারা, পর্বত বা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রধান নদীর সাথে মিলিত হলে তাকে উপনদী বলে।
  • শাখানদী: কোনো বৃহৎ নদী থেকে কোনো জলধারা বের হয়ে অন্য কোনো সাগর বা হ্রদে পতিত হলে তাকে শাখা নদী বলে।
  • আন্তঃসীমান্ত নদী/অভিন্ন নদী: যে নদী এক বা একাধিক দেশের রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে তাকে আন্তঃসীমান্ত নদী/অভিন্ন নদী বলে।
  • উপত্যকা: যে খাদ বা নদীপথ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় সেই খাদকে উক্ত নদীর উপত্যকা বলে।
  • নদীগর্ভ: উপত্যকার তলদেশকে নদীগর্ভ বলে।
  • মোহনা: নদী যখন কোনো সাগর বা হ্রদে এসে মিলিত হয়, ঐ মিলিত হওয়ার স্থানকে মোহনা বলে।
  • নদীসঙ্গম: একাধিক নদীর মিলনস্থলকে নদীসঙ্গম বলে।
  • খাঁড়ি: নদীর অধিকবিস্তৃত মোহনাকে খাঁড়ি বলে।
  • অববাহিকা: নদীর উৎপত্তি স্থান থেকে যে বিস্তৃত অঞ্চল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে প্রবাহিত হয় সে অঞ্চলকে অববাহিকা (Basin) বলে।
  • দোয়াব: দুই নদীর মধ্যবর্তী উর্বর শস্যাঞ্চলকে দোয়াব বলে।

2.সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপ: সমুদ্র তলদেশের ভূমিরূপকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:

  • মহীসোপান (Continental Shelf): মহাদেশসমূহের চারদিকে স্থলভাগের কিছু অংশ অল্প ঢালু হয়ে সমুদ্রের পানির মধ্যে নেমে গেছে। সমুদ্রের উপকূলরেখা থেকে তলদেশের নিমজ্জিত অংশকে মহীসোপান বলে।এটি হালকা খাঁড়া ও অধিক প্রশস্ত হয়। মহীসোপানের সমুদ্রের পানির সর্বোচ্চ গভীরতা ২০০ মিটার। ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে পৃথিবীর বৃহত্তম মহীসোপান অবস্থিত। ১৯৮২ সালে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত কনভেনশন অনুযায়ী উপকূলীয় রাষ্ট্রের মহীসোপানের সীমা হবে ভিত্তিরেখা হতে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল। মহীসোপানের সবচেয়ে উপরের অংশকে উপকূলীয় ঢাল(Coastal Slop) বলে।

 

  • মহীঢাল (Continental Slop): মহীসোপানের শেষসীমা থেকে ভূভাগ হঠাৎ খাঁড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীর তলদেশের সঙ্গে মিশে যায়। এ ঢালু অংশকে মহীঢাল বলে। এটি একদম খাঁড়া ও কম প্রশস্ত হয়। মহীঢালের সমুদ্রের পানির সর্বোচ্চ গভীরতা ২০০ মিটার থেকে ৩,০০০ মিটার।

 

  • গভীর সমুদ্রের সমভূমি (Oceanic Plain): মহীঢাল শেষ হওয়ার পর থেকে সমুদ্র তলদেশে যে বিস্তৃত সমভূমি দেখা যায় তাকে গভীর সমুদ্রের সমভূমি বলে। এর গভীরতা ৫,০০০ মিটার। এ অঞ্চলটি সমভূমি নামে খ্যাত হলেও প্রকৃতপক্ষে তা বন্ধুর।

 

  • নিমজ্জিত শৈলশিলা (Oceanic Ridge): সমুদ্রতলদেশ থেকে আগ্নেয়গিরির লাভা উদগিরণের ফলে সমুদ্রগর্ভে শৈলশিরার ন্যায় ভূমিরূপ গঠিতহয়েছে। এগুলো নিমজ্জিত শৈলশিরা নামে পরিচিত। এর মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরের শৈলশিরা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

 

  • গভীর সমুদ্রখাত (Oceanic Trench):গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চলে মাঝে মাঝে গভীর খাত দেখা যায়। এ সকল খাতকে গভীর সমুদ্রখাত বলে। এগুলো অধিক প্রশস্ত না হলেও খাঁড়া ঢালবিশিষ্ট। এর গভীরতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৪০০ মিটারের অধিক। প্রশান্ত মহাসাগরে এসব খাতের সংখ্যা বেশি। প্রশান্ত মহাসাগরের ‘মারিয়ানা ট্রেঞ্চ’ পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত। আটলান্টিক মহাসাগরের ‘পোর্টোরিকো’ দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র খাত।

  1. সমুদ্রস্রোত: বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের উপরিভাগে স্রোত তৈরি করে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলে যায়। সমুদ্রস্রোত মূলতউষ্ণতার তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহের কারণে হয়।বিভিন্ন কারণে সমুদ্রস্রোত হয়। যেমন:

→উষ্ণতার তারতম্য

→ বায়ুপ্রবাহ

→ লবণাক্ততার তারতম্য

→ বাষ্পীভবনের তারতম্য

→ গভীরতার তারতম্য

→ পৃথিবীর আবর্তন

→ স্থলভাগের অবস্থান

→ আহ্নিক গতি

→ মেরু অঞ্চলের বরফগলন।

সমুদ্রস্রোত প্রধাণত ২ প্রকার। যথা:

ক. উষ্ণস্রোত: নিরক্ষীয় বা বিষুবীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে পানি উষ্ণ ও হালকা হয়। ফলে, এখানে উষ্ণস্রোত দেখা যায়।

খ. শীতলস্রোত: মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে পানি শীতল ও ভারী হয়। ফলে, এখানে শীতলস্রোত দেখা যায়। শীতল স্রোতের গতিপথে জাহাজ চালানো বিপজ্জনক। কারণ এখানে বড় বড় হিমপ্রাচীর থাকে। মূলত, উষ্ণস্রোত ও শীতলস্রোতের মিলনস্থলে কুয়াশা ও ঝড় হয়। উল্লেখ্য, আটলান্টিক মহাসাগরের ক্রান্তীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব-অক্ষাংশ বলে।


  1. জোয়ার-ভাটা

পৃথিবীর উপর চন্দ্রের আকর্ষণ ও মহাকর্ষ শক্তি জোয়ার-ভাটার (High Tide&Low Tide)মূল কারণ। দূরত্বের কারণে সূর্যের চেয়ে জোয়ার-ভাটার উপর চাঁদের আকর্ষণ বেশি হয়।সূর্য অপেক্ষা চন্দ্রের আকর্ষণ পৃথিবীর উপর দ্বিগুণ।উপকূলের কোনো স্থানে পরপর দুটি জোয়ারের মধ্যে ব্যবধান ১২ ঘন্টা। জোয়ার সৃষ্টির ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট পর ভাটার সৃষ্টি হয়। জোয়ার-ভাটার কারণ ২টি। যথা:

ক. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব

খ. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি।

 

  • জোয়ার-ভাটা প্রধাণত ৪ প্রকার। যথা:

(ক) মুখ্য জোয়ার: পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের নিকটবর্তী হয় সে অংশে চাঁদের আকর্ষণে পানি ফুলে উঠে। একে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলে।

 

(খ) গৌণ জোয়ার: চাঁদের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয়তাকে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।

 

(গ) তেজকটাল/ভরাকটাল: পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একপাশে একই সরলরেখায় অবস্থান করে। এদের মিলিত আকর্ষণে যে জোয়ার হয় তাকে তেজকটাল বা ভরাকটাল বলে।

 

(ঘ) মরাকটাল: অষ্টমী তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য একই সমকোণে অবস্থান করে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। চন্দ্রের আকর্ষণেযে জোয়ার হয় সূর্যের আকর্ষণে তা কমে যায়। এ সময় জোয়ারের বেগ প্রবল হয় না। এই জোয়ারকে মরাকটাল বলে। প্রতি মাসে ২ বার ভরাকটাল ও মরাকটাল হয়।

 


দুর্যোগ


জীবন, সমাজ ও পরিবেশে সৃষ্ট অস্বাভাবিক অবস্থা যা মানুষের ক্ষতি সাধন করে তাকে দুর্যোগ(Disaster) বলে।এর ফলে বাহ্যিক ক্ষতিসাধন, জীবনহানি কিংবা পরিবেশগত ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়।দুর্যোগ প্রধানত ২ প্রকার। যথা:প্রাকৃতিক দুর্যোগ ওমানবসৃষ্ট দুর্যোগ।

 

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ ৩ ভাবে সৃষ্টি হতে পারে। যথা:

(ক) বায়ুমণ্ডলীয় সৃষ্ট দুর্যোগ: বায়ুমণ্ডল তথা পৃথিবী থেকে উপরিভাগের আবহাওয়াজনিত পরিবর্তনের কারণে নিম্নোক্ত দুর্যোগসমূহ সৃষ্টি হয়। যেমন:

  • ঘূর্ণিঝড় (Cyclone): Cyclone শব্দটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ কুণ্ডলী পাকানো সর্প। ঘূর্ণিঝড় হলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় (Tropical Cyclone). পৃথিবীর ৩০ উত্তর ও ৩০ দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়কে আমেরিকায় ‘হারিকেন’; দূরপ্রাচ্যে ‘টাইফুন’ এবং উপমহাদেশে ‘সাইক্লোন’ বলে। ঘূর্ণিঝড়ে সবসময় বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘন্টায় ১১৮ কি.মি. এর বেশি।ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপ থেকে সৃষ্টি হয়ে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এর ফলে প্রবল বাতাস, ভারীবর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়।

 

  • জলোচ্ছ্বাস (Tidal Bore): ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝড়ো বাতাস সমুদ্রপৃষ্ঠে আকস্মিক তরঙ্গ ও জলস্ফীতির সৃষ্টি করে যা জলোচ্ছ্বাস হিসেবে পরিচিত।এটি ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্টি হয়। জলোচ্ছ্বাস হলো ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক উপাদান। এর ফলে পানির স্বাভাবিক উচ্চতা থাকে ১৩ থেকে ১৫ মিটার।

 

  • ঝড় ও অতিবৃষ্টি (Strom& Downpour): ঝড় বায়ুমণ্ডলের একটি ভয়াবহ দুর্যোগ। এর ফলে তীব্র বাতাস সৃষ্টি, ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রবিদ্যুৎ উৎপন্ন এবং সমুদ্র ফুসে উঠে উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়।পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘেরসৃষ্টি করে। এই ঘনীভূত মেঘ থেকে ভারী বৃষ্টিপাত দেখা দেয়।

 

  • বজ্রঝড়ও বজ্রপাত (Thunderstorm&Thunderclap): বজ্রঝড় এক প্রকার ক্রান্তীয় ঝড়। বজ্রপাত বিদ্যুৎ চমকানো সহযোগে সংঘটিত ভারীবর্ষণ অথবা শিলাবৃষ্টি। গ্রীষ্মের উষ্ণ ও আর্দ্র দিনে উত্তপ্ত বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠতে থাকে এবং দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে গাঢ় কৃষ্ণবর্ণের বজ্রমেঘ উৎপন্ন করে। বাংলাদেশে এই ঝড়ের নাম ‘কালবৈশাখী’। কালবৈশাখী এক ধরনের বজ্রঝড়। এ ঝড়েশিলাবৃষ্টি হয়।

 

  • টর্নেডো (Tornado): Tornado শব্দটি স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ ঘুরে আসা। টর্নেডো ঘূর্ণিঝড় অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী ছোট আকারের বজ্রঝড়। স্থলভাগে নিম্নচাপের ফলে এর উৎপত্তি হয়। এতে বাতাসে ঘূর্ণনের বেগ থাকে ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৪৮০ কি.মি. পর্যন্ত।

 

  • খরা ও মহামারী (Drought & Epidemic):এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ যা বিরূপ আবহাওয়ার ফলে হয়। এর ফলে প্রচণ্ড দাবদাহে জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে।দীর্ঘকালীন শুষ্ক আবহাওয়া ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতেরকারণে মূলত খরা ও মহামারী দেখা দেয়।

 

  • মরুকরণ (Desertification): শুষ্ক, শুষ্কপ্রায় এবং শুষ্ক আর্দ্রপ্রায় এলাকাতে ভূমি অবনয়নের (Land Degradation) বিস্তৃতি হলো মরুকরণ, যা মরু এলাকার বহির্মুখী প্রসারণ ঘটায়। জলবায়ুগত পার্থক্য ও মানুষের অবাধ বৃক্ষনিধন মরুকরণের অন্যতম কারণ।এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী দুর্যোগ যা খরার কারণে ঘটে থাকে।

 

  • শৈত্যপ্রবাহ (Cold Wave):শৈত্যপ্রবাহ কোনো স্থানের বায়ুর তাপমাত্রার নিম্নগামীতাকে নির্দেশ করে। বাতাসের তাপমাত্রা দ্রুততার সাথে নেমে যাওয়াকে শৈত্যপ্রবাহ বলে। এর ফলে কুয়াশার প্রকোপ বেড়ে যায় এবয় শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।শীতপ্রধান অঞ্চল তথা ইউরোপে শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়।

 

  • হিমবাহ (Glacier): হিমবাহ হলো বরফের বিরাট চলমান স্তুপ বা নদী। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে তুষার পড়ার হার গ্রীষ্মে গলনের হারের চেয়ে বেশি হলে পাহাড়ের উপরে তুষার জমতে শুরু করে এবং জমে শক্ত বরফে পরিণত হয়। এই বরফজমা এলাকাটিকে বরফক্ষেত্র (Icefield) বলে। যখন এই জমা বরফ নিজের ওজনের ভারে এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে ধীরগতিতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে, তখন তাকে হিমবাহ বলে।

(খ) ভূপৃষ্ঠের প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগ:এ ধরনের দুর্যোগ স্থলভাগের আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। যেমন:

  • বন্যা (Flood): বন্যাপ্রচুর বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ঘটে থাকে। সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাত, বরফ, তুষারগলা পানিঅথবা এদের মিলিত পানি নদীপ্রণালির ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেলে বন্যা সংঘটিত হয়।

 

  • নদীভাঙন (Riverbank Erosion):নদীর সমুদ্রে গিয়ে পড়ার সময় সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি হলে তীব্র গতিপ্রাপ্ত হয়। তখন পানির তীব্র তোড়ে নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। নদীর পানির স্রোতে নদীর পাড় ভাঙার এই অবস্থাকে নদীভাঙন বলে।এটি পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ।

 

  • উপকূলীয় ভাঙন (Coastal Erosion):জোয়ার-ভাটা ও সামুদ্রিক তরঙ্গ ক্রিয়ার ফলে উপকূলীয় ভূমি দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে উপকূলীয় ভাঙন দেখা দেয়।

 

  • মাটিক্ষয় (Soil Erosion): মাটিতে প্রবাহিত পানি, বাতাসের বেগ ও অভিকর্ষীয় টানের কারণে মাটি ক্ষয় হয়। মাটিক্ষয় মূলত পৃষ্ঠমৃত্তিকার ভৌত অপসারণ। ভূতাত্ত্বিক ক্ষয় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের প্রভাব ব্যতীত প্রাকৃতিক পরিবেশে ভূমির ক্ষয়সাধন করে। এটি একটি ধীর গতিসম্পন্ন ও গঠনমূলক প্রক্রিয়া।

 

  • ভূমিধস(Landslide):ভূমিধস বলতে পাহাড়-পর্বতের গা থেকে মাটির চাকা বা পাথরের খণ্ড বিরাট আকারে খসে নীচে পড়ার ঘটনাকে বোঝায়।এটি পাহাড় কর্তন, জুম চাষ ও পাহাড়ে বৃষ্টির পানি জমার ফলে ঘটে থাকে। পাহাড় কর্তন মূলত ভূমিধসের প্রধান কারণ।

 

  • লবণাক্ততা (Saltiness): লবণাক্ততা বলতে লবণ দ্বারা প্রভাবিত এক প্রকার মৃত্তিকা বা পানি বুঝায় যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রবণীয় লবণ, বিশেষ করে সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে।বৈশ্বিক সমুদ্রের জলের গড় লবণাক্ততা প্রায় ৩.৫%। এর ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজন বেশি লবণাক্ততার শিকার হয়।

(গ) ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুর্যোগ:এ ধরনের দুর্যোগ পৃথিবীর অভ্যন্তরে অর্থাৎ মাটির নিচে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। যেমন:

  • ভূমিকম্প (Earthquake):ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপন্ন হয়,তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কি.মি. এর মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কি.মি. গভীরে গুরুমণ্ডল থেকেও ভূ-কম্পন উত্থিত হতে পারে।ভূমিকম্প পূর্বসতর্কতা ছাড়াই সংঘটিত হয়। কেন্দ্রের গভীরতার ভিত্তিতে ভূমিকম্পকে অগভীর কেন্দ্র (০ থেকে ৭০ কি.মি.), মাঝারি কেন্দ্র (৭০ থেকে ৩০০ কি.মি.) ও গভীর কেন্দ্র (৩০০ থেকে ৭০০ কি.মি.) সংজ্ঞায় অভিহিত করা হয়।

ভূমিকম্পের তরঙ্গ সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। রিখটার স্কেল ভূকম্পন তীব্রতা/শক্তি পরিমাপের একটি গাণিতিক স্কেল। এ স্কেলে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ভূমিকম্পের তীব্রতা ধরা হয়। ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী সি. এফ. রিখটার এটি আবিষ্কার করেন।১৮৯৭ সালে ভারতের শিলং মালভূমিতে ৮.৭ রিখটার স্কেল মাত্রায় সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে। ২০১৫ সালে নেপালে ৭.৮ রিখটার স্কেল মাত্রায় ভূমিকম্প ঘটে।

ভূ-ত্বকীয়পাত (TectonicsPlate): ভূত্বকীয় পাত হলোএকটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যার দ্বারা পৃথিবীর অশ্বমণ্ডল অর্থাৎএকে অপরের দিকে চলাচল করতে সক্ষম কিছু পাতলা, অনমনীয় খণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি ভূত্বক বা পৃথিবীর উপরিতলের বর্ণনা দেওয়া হয়। সর্বপ্রথম ১৯১২ সালে জার্মান আবহাওয়াবিদ আলফ্রেড ওয়েগেনারের মহীসঞ্চারণ তত্ত্ব (Continental Drift) থেকেই এই ধারণাটির জন্ম হয়।

ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (Plate Tectonics) বিজ্ঞানের আধুনিকতম আবিষ্কার ও গবেষণার দৌলতে এটি বিজ্ঞানসম্মত একটি ঘটনা, যা পৃথিবীতে সংঘটিত ভূমিকম্পের জন্য দায়ী বলে ভূবিজ্ঞানীরা গ্রহণ করেছেন। বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বটিকে ব্যবহার করে ভূমিকম্প ছাড়াও আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, পর্বত সৃষ্টি এবং মহাসাগর ও মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।

 

  • সুনামি (Tsunami):Tsunami শব্দটি জাপানি শব্দ। এর অর্থ পোতাশ্রয়ের ঢেউ।সমুদ্র তলদেশে (২০-৩০ কি.মি. গভীরে) প্রচণ্ড মাত্রার ভূকম্পন, অগ্ন্যুৎপাত, টেকটনিক প্লেটের উত্থান-পতন কিংবা অন্য কোনো কারণে ভূ-আলোড়নের সৃষ্টি হলে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় তা সুনামি নামে পরিচিত। সুনামি উপকূলীয় শহর ও অন্যান্য লোকালয়ে আকস্মিক ও ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করে।গভীর জলে সুনামি ঘন্টায় ১,০০০ কি.মি. গতির হতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগর অংশে সুনামি হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। ২০০৪ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সুনামির গতি ছিল ঘণ্টায় ৭০০-৮০০ কি.মি.। ২০১১ সালে জাপানে ৯.০০ রিখটার স্কেল মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় এবং এর ফলে উচ্চতর সুনামি আঘাত হানে। এর ফলে ৩টি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে প্লান্টটি গরম হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।

 

  • আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত (Volcanic Eruption):ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ বেশি হলে সেখানে গর্ত বা ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং সেই ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন পদার্থ নির্গত হয় তাকে আগ্নেয়গিরি (Volcano) বলে। আগ্নেয়গিরির উদগিরিত পদার্থকে লাভা বলে। লাভার উর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হওয়াকে (Eruption) অগ্ন্যুৎপাত বলে। বাংলাদেশে এই দুর্যোগ ঘটার সম্ভাবনা নেই।

 

  • আর্সেনিক দূষণ (Arsenic Polution): আর্সেনিকধূসর আভাযুক্ত সাদা রং বিশিষ্ট ভঙ্গুর প্রকৃতির একটি অর্ধধাতু বা উপধাতু। প্রকৃতিতে আর্সেনিক বিভিন্ন যৌগ আকারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।মানবদেহে যখন আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় তখন সে অবস্থাকে আর্সেনিক বিষক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দীর্ঘসময় ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি খেলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব শরীরে দেখা যায়।আর্সেনিক দূষণ বা ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষণ বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক দুর্যোগ।আর্সেনিক বিষাক্ততার কারণে সৃষ্ট রোগাক্রান্ত অবস্থাকে আর্সেনিকোসিস (Arsenicosis) বলে।

 

  • এল নিনো ও লা নিনো: ‘এল নিনো ও লা নিনো’ শব্দ দুটি স্প্যানিশ শব্দ। এল নিনো অর্থ বালক এবং লা নিনো অর্থ বালিকা। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সম্পৃক্ত। এল নিনোর প্রভাবে সাগরে উষ্ণ পানির স্রোত প্রবাহিত হয় এবং লা নিনোরপ্রভাবে পানির উষ্ণতা কমে আসে। লা নিনো’র কারণে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়।

 

  • মানবসৃষ্ট দুর্যোগ:মানুষের অজ্ঞতা, আধিপত্য বিস্তার, পারস্পরিক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি কারণে প্রাকৃতির পরিবেশের ভারসাম্যহানি ঘটে। মানুষ তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। একে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলে। মানবসৃষ্ট যে দুর্যোগ বর্তমানে সবার চিন্তা ও গবেষণার বিষয়, তা হচ্ছে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া।মানুষ কর্তৃক নিম্নোক্ত কাজের কারণে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ঘটে থাকে। যেমন:

→ শিল্পায়ন

→ অপরিকল্পিত নগরায়ন

→ বনাঞ্চল নিধন

→ যুদ্ধ ও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার

→ পরিবেশ দূষণ

→ গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া

→ অবকাঠামোগত বিপর্যয়


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (Disaster Management) একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান। দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গৃহীত বিভিন্ন কৌশল বা পদেক্ষেপকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রথমে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ করতে হবে। অর্থাৎ যে সকল এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ তা চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাকে দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলে।

দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতিকে দুর্যোগ প্রশমন বলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে Community Level থেকে ব্যবস্থাগ্রহণ করা সবচেয়ে ফলপ্রসূ। দুর্যোগের পরপরই সাড়াদানের প্রয়োজন হয়। অতীতে সাড়াদানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে ধরে নেওয়া হতো। দুর্যোগে সম্পদ ও পরিবেশের যে ক্ষতিসাধন ঘটে তা পুনর্নিমাণের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনাকে পুনরুদ্ধার বলে।

 

  • দুর্যোগ মোকাবিলায় ৪ ‍টি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন:
  1. দুর্যোগ পূর্বকালীন ব্যবস্থা (Preparation)
  2. দুর্যোগকালীন ব্যবস্থা (Adaption)
  3. দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থা (Mitigation)
  4. দুর্যোগের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা (Development)

 


বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ


বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বদ্বীপ ও অন্যান্য ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ দেশে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ দুর্যোগের ঝুঁকি তুলানামূলক কম। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেঘূর্ণিঝড়,বন্যা, নদীভাঙন, ভূমিধস, আর্সেনিক দূষণ বা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ঘূর্ণিঝড়: বাংলাদেশে প্রাক-বর্ষা মৌসুম (এপ্রিল-মে-জুন) এবং বর্ষা-পরবর্তী মৌসুম (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। গ্রীষ্মকালে এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তর-পশ্চিম অভিমুখী প্রচণ্ড ঝড়ের স্থানীয় নাম ‘কালবৈশাখী’। এ ঝড় সাধারণত শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে সংঘটিত হয়। কালবৈশাখী ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৬০ কি.মি.।


বাংলাদেশে ইতিহাসেঘটে যাওয়া কতিপয় ঘূর্ণিঝড় হলো:


 

  • ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২২ কি.মি.। জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১০.৬ মিটার। সরকারি হিসাব মোতাবেক এ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের প্রাণহাণি ঘটেছিল।

  • ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কেও প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় নামে চিহ্নিত করা হয়। এতে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী ‘অপারেশন মান্না’ নামে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করে। এ সময় বাংলাদেশে আসা মার্কিন টাস্কফোর্সের নাম ছিল ‘অপারেশন সি-এঞ্জেল’।

  • ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘সিডর’। সিডর সিংহলি শব্দ। এর অর্থ চোখ। এতে প্রায় ছয় সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ সময় মার্কিন সেনাবাহিনী পরিচালিত টাস্কফোর্সের নাম ছিল ‘অপারেশন সি-এঞ্জেল-২’।

  • এছাড়াও, ২০০৮ সালের নার্গিস ও রেশমি, ২০০৯ সালের বিজলি ও আইলা, ২০১৩ সালের মহাসেন, ২০১৫ সালের কোমেন, ২০১৬ সালের রোয়ানু এবং ২০১৭ সালের মোরা ঘূর্ণিঝড়সমূহ বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য।

বন্যা: প্রতি বছর মৌসুমী ঋতুতে বাংলাদেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূভাগ বন্যায় প্লাবিত হয়। সাধারণত মে মাস থেকেই এদেশে বন্যা শুরু হয় এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বন্যা বাংলাদেশে একটি পুনঃপুনঃ সংঘটিত ঘটনা। ১৭৮৭ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত পুনরাবৃত্ত বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পুরোনো গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংঘটিত বন্যাকে তিনটি শেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন:

(ক) মৌসুমী বন্যা

(খ) আকস্মিক বন্যা

(গ) জোয়ারসৃষ্ট বন্যা

বাংলাদেশে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কতিপয় প্রলয়ংকারী বন্যার মধ্যে ১৯৭৪ সাল, ১৯৮৭ সাল, ১৯৮৮ সাল ও ১৯৯৮ সালের বন্যাউল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ বন্যায় রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়।


নদীভাঙন:বাংলাদেশের পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন সংঘটিত হয়। বন্যা মৌসুমে দেশের প্রধান নদী পাড়ের ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের সর্বমোট প্লাবনভূমির প্রায় ৫% ভূমি প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের কবলে পড়ছে। এটি বাংলাদেশের একটি স্থানীয় ও পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।


ভূমিধস: ভূমিধস বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় একটি সাধারণ ঘটনা। বিশেষত পার্বত্য জেলা তথা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস দেখা দেয়। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উভয় কারণে ভূমিধস হয়ে থাকে। খাঁড়া পাহাড়ি ঢালে ঝুম চাষ, বৃষ্টির পানি জমা, পাহাড় কর্তন প্রভৃতি ভূমিধস সংঘটনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


আর্সেনিক দূষণ: আর্সেনিক দূষণ বা ভূগর্ভস্থ পানি দূষণবর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক দুর্যোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী প্রতিলিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০১ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত প্রতিলিটার পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম অর্থাৎ ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে সে পানি পান করা কিংবা রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। পার্বত্য অঞ্চল বাদে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার পানিতে কম-বেশি আর্সেনিক বিদ্যমান। বাংলাদেশের সবচেয়ে আর্সেনিক আক্রান্ত জেলা চাঁদপুর।

 


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো প্রাকৃতিক, পরিবেশগত ও মনুষ্যসৃষ্ট আপদসমূহের ক্ষেত্রে জনগণের, বিশেষ করে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিতদের ঝুঁকি, মানবিক ও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং বড় মাপের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম ও কার্যকর জরুরি সাড়াপ্রদান পদ্ধতি প্রস্তুত রাখা।

দুর্যোগের কারণে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসসহ দুর্যোগ উত্তরকালে জাতীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বাংলাদেশে সরকারের মূল লক্ষ্য।

সরকারের প্রধান কার্যাবলী হলো: দুর্যোগপ্রবণ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রণয়ন; গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মপরিকল্পনা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা; সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকান্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা; দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা ইত্যাদি।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত আইন, নীতিমালা ও প্রয়োজনীয়পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ:

  • ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর’ গঠিত হয়। এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

  • ১৯৭২ সালে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়’ গঠিত হয়। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ রয়েছে। এর প্রধান হলো প্রধানমন্ত্রী। এই কাউন্সিলের অধীনে কিছু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি রয়েছে। এইসব কমিটির প্রধান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী।

  • ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র’ এ বোর্ডের আওতাধীন।

  • ১৯৮০ সালে ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগে বাংলাদেশের একমাত্র পূর্বাভাস কেন্দ্র Space Research and Remote Sensing Organisation (SPARRSO) গঠিত হয়। এর নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। SPARRSO গত ১০০ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সমূহের জলবায়ুগত দিক পর্যালোচনা করে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে পূর্বাভাসের জন্য টাইয়ান (Tyan) নামে একটি মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড় ভূপৃষ্ঠে আঘাত হানার ২৪ ঘন্টা পূর্বে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।

  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৯৩ সালে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থার প্রধানের পদবি মহাপরিচালক।

  • ২০১২ সালে দুর্যোগ প্রতিরোধে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন’ প্রণীত হয়।

  • ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ সালে ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ গ্রহীত হয়।

  • ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতাকে প্রশমনের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এর যৌথ উদ্যোগে Cyclone Preparedness Programme (CPP) নামে একটি কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

  • ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে দেশে ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে বহুমাত্রিক বন্যা সমীক্ষা কার্যক্রম অর্থাৎ Flood Action Plan (FAP) গ্রহণ করা হয়; যা ছিল UNDP পরিচালিত Flood Policy Study এর ধারাবাহিক একটি সমীক্ষা। বিগত ১০০ বছরের তুলনায় ১৯৮৮ সালের বন্যার মাত্রা অধিকতর হওয়ায় FAP কার্যক্রম দাতাদের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়।

  • ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ চট্টগ্রাম শহরে বাংলাদেশের একমাত্র ভূমিকম্প রেকর্ড কেন্দ্র বা ভূমিকম্প মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করে।

  • ১৯৮৩ সালে ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি Geographical Information Systems (GIS) পদ্ধতি ব্যবহার করে পার্বত্য এলাকার ভূমিধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে। বান্দরবনে অবস্থিত ‘মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও জল ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র’ এ প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন।

  • সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাসমূহ হলো: অক্সফাম, কেয়ার বাংলাদেশ, প্রশিকা, ডিজ্যাস্টার ফোরাম, বিডিপিসি (বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্র) ইত্যাদি।

  • বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বেতার ও টেলিভিশনে নদীবন্দরের জন্য১ থেকে ৪ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরের জন্য১ থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সংকেত প্রচার করা হয়। নিম্নে সংকেত নম্বর ও এর অর্থসমূহ উল্লেখ করা হলো:

দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত-১ : দূর সমুদ্রে প্রবাহিত বাতাস ঝড়ে পরিণত হতে পারে।


দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত-২ : দূর সমুদ্রে ঝড় উঠেছে।


স্থানীয় সতর্ক সংকেত-৩ : বন্দরে দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা আছে।


স্থানীয় সতর্ক সংকেত-৪ : বন্দরে ঝড় আঘাত হানার সম্ভাবনা আছে।


বিপদ সংকেত – ৫ : ছোট বা মাঝারি ঝড়ের কারণে বন্দরে তীব্র আবহাওয়া বিরাজ করবে। এ ঝড় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের     দক্ষিণ উপকূল এবং মংলা বন্দরের পূর্ব উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।


বিপদ সংকেত – ৬ : ছোট বা মাঝারি ঝড়ের কারণে বন্দরে তীব্র আবহাওয়া বিরাজ করবে। এ ঝড় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরে     উত্তর উপকূল এবং মংলা বন্দরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।


মহাবিপদ সংকেত – ৭ : বন্দরের উপর দিয়ে ছোট বা মাঝারি গতিসম্পন্ন ঝড়ের কারণে ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে।


মহাবিপদ সংকেত – ৮ : বন্দরের উপর দিয়ে ছোট বা মাঝারি গতিসম্পন্ন ঝড়ের কারণে তীব্র ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। এ ঝড় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের দক্ষিণ উপকূল এবং মংলা বন্দরের পূর্ব উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার  আশঙ্কা রয়েছে।


মহাবিপদ সংকেত – ৯ : বন্দরের উপর দিয়ে প্রবল গতিসম্পন্ন ঝড়ের কারণে তীব্র ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। এ ঝড় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের উত্তর উপকূল এবং মংলা বন্দরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।


মহাবিপদ সংকেত – ১০ : বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে অতিক্রমকারী তীব্র গতিসম্পন্ন ঝড়ের কারণে বন্দরে তীব্র ঝড়ো   আবহাওয়া বিরাজ করবে।


মহাবিপদ সংকেত – ১১ : আবহাওয়া সতর্ক কেন্দ্রের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে                                         উদ্যত।


নমুনা প্রশ্ন


১. বঙ্গোপসাগরের গভীরতম স্থান ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে’র গভীরতা কত – 

ক) ১১,০৩৩ মিটার

খ) ১০,০৩৩ মিটার

গ) ৮,৮৫০ মিটার

ঘ) ১১,০৩০ মিটার

উত্তরঃ ঘ


২. সবচেয়ে ব্যস্ততম সাগর কোনটি?

ক) বাল্টিক সাগর

খ) দক্ষিণ চীন সাগর

গ) কাস্পিয়ান সাগর

ঘ) ভূমধ্যসাগর

উত্তরঃ ঘ


৩. চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সমকোণে অবস্থান করলে যে জোয়ার হয় তাকে বলে- 

ক) মরা কটাল

খ) মুখ্য জোয়ার

গ) তেজ কটাল

ঘ) গৌণ জোয়ার

উত্তরঃ ক


৪. সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গেলে নাবিককে অনুসরণ করতে হয় – 

ক) বায়ুপ্রবাহ

খ) সমুদ্রস্রোত

গ) স্থলভাগের অবস্থান

ঘ) পৃথিবীর আবর্তন

উত্তরঃ খ


৫. সমুদ্রে উষ্ণস্রোত ও শীতলস্রোতের মিলনস্থলে কী ঘটে?

ক) পানিপ্রবাহ থেমে যায়

খ) কুয়াশা ও ঝড় হয়

গ) সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে যায়

ঘ) পানি বরফে পরিণত হয়

উত্তরঃ খ


৬. তিনদিকে স্থলবেষ্টিত বিশাল পানিরাশিকে বলে – 

ক) মহাসাগর

খ) হ্রদ

গ) উপসাগর

ঘ) সাগর

উত্তরঃ গ


৭. জোয়ার সৃষ্টির কত ঘণ্টা পরে ভাটার সৃষ্টি হয়?

ক) ৬ ঘণ্টা

খ) ১২ ঘণ্টা

গ) ৬ ঘণ্টা ১৩ মি.

ঘ) ১১ ঘণ্টা

উত্তরঃ গ


৮. সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ কোনটি?

ক) গভীরতার তারতম্য

খ) উষ্ণতার তারতম্য

গ) লবণাক্ততার তারতম্য

ঘ) বাষ্পীভবনের তারতম্য

উত্তরঃ খ


৯. যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রান্ড ক্যানিয়ন’ একটি – 

ক) গিরিপথ

খ) জলপ্রপাত

গ) গিরিখাত

ঘ) মালভূমি

উত্তরঃ গ


১০. দুই নদীর মধ্যবর্তী উর্বর অঞ্চলকে বলে – 

ক) মোহনা

খ) দোআব

গ) সাভানা

ঘ) মহীঢাল

উত্তরঃ খ


১১. বাংলাদেশের একমাত্র ‘ভূমিকম্প রেকর্ড কেন্দ্র’ কোন জেলায় অবস্থিত?

ক) বান্দরবন

খ) সিলেট

গ) রাঙামাটি

ঘ) চট্টগ্রাম

উত্তরঃ ঘ


১২. ‘দুর্যোগ প্রশমন’ বলতে কী বোঝায়?

ক) দুর্যোগপূর্ব ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ

খ) দুর্যোগপরবর্তী সাড়াদান

গ) দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি

ঘ) দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনা

উত্তরঃ গ


১৩. ‘বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র’ সংস্থাটি কিসের অধীনে?

ক) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর

খ) পানি উন্নয়ন বোর্ড

গ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো

ঘ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

উত্তরঃ খ


১৪. ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন’ প্রণীত হয় কত সালে?

ক) ২০০১

খ) ২০১৫

গ) ২০১২

ঘ) ২০০৪

উত্তরঃ গ


১৫. ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ একটি – 

ক) গার্হস্থ্যবিদ্যা

খ) ব্যবহারিকবিদ্যা

গ) আবহবিদ্যা

ঘ) বাস্তুবিদ্যা

উত্তরঃ খ


১৬. ‘টাইফুন’ কোন ভাষার শব্দ?

ক) স্প্যানিশ

খ) গ্রিক

গ) আরবি

ঘ) চীনা

উত্তরঃ গ


১৭. ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় – 

ক) ১১০ কি. মি.

খ) ২২২ কি. মি.

গ) ১১৮ কি. মি.

গ) ৩২০ কি. মি.

উত্তরঃ গ


১৮. বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ংকারী বন্যা হয় – 

ক) ১৯৭০ সালে

খ) ১৯৯৮ সালে

গ) ১৯৮৮ সালে

ঘ) ১৯৯১ সালে

উত্তরঃ গ


১৯. পুনঃসঙ্ঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনটি?

ক) ভূমিধ্বস

খ) বৃষ্টিপাত

গ) মাটিক্ষয়

ঘ) নদীভাঙন

উত্তরঃ ঘ


২০. ভূমিধ্বস সঙ্ঘটিত হয় না কোনটির কারণে?

ক) পাহাড় কর্তন

খ) অভিকর্ষীয় টান

গ) বৃষ্টির পানি জমা

ঘ) পাহাড়ে জুম চাষ

উত্তরঃ খ


২১. বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত নয় – 

ক) খরা

খ) ঝড়

গ) বন্যা

ঘ) বজ্র

উত্তরঃ গ


২২. আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম কী?

ক) উইলি উইলি

খ) টাইফুন

গ) জোয়ান

ঘ) হ্যারিকেন

উত্তরঃ ঘ


২৩. বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় হয় – 

ক) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে

খ) এপ্রিল-মে মাসে

গ) নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে

ঘ) জুন-জুলাই মাসে

উত্তরঃ খ


২৪. SPARRSO কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে?

ক) প্রতিরক্ষা

খ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

গ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ

ঘ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

উত্তরঃ ক


২৫. বর্তমানে বাংলাদেশের জন্যে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্যোগ – 

ক) খরা ও মহামারী

খ) বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস

গ) ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষণ

ঘ) মাটিক্ষয় ও ভূমিধ্বস

উত্তরঃ গ


২৬. বাংলাদেশে কোন দুর্যোগ ঘটার সম্ভাবনা নেই?

ক) ভূমিকম্প

খ) টর্নেডো

গ) সুনামি

ঘ) অগ্ন্যুৎপাত

উত্তরঃ ঘ


২৭. কত সালে ঘূণিঝড় সিডর উপকূলে আঘাত হানে?

ক) ২০০৬ সালে

খ) ২০০৭ সালে

গ) ২০০৮ সালে

ঘ) ২০০৯ সালে

উত্তরঃ খ


২৮. বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সর্বোচ্চ কত নম্বর পর্যন্ত সতর্কসংকেত প্রচার করা হয়?

ক) ৪ নং

খ) ১০ নং

গ) ১১ নং

ঘ) ১২ নং

উত্তরঃ গ


২৯. ‘দূর্যেোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

ক) ১৯৯২ সালে

খ) ১৯৯৩ সালে

গ) ১৯৯৪ সালে

ঘ) ১৯৯১ সালে

উত্তরঃ খ


৩০. SPARRSO কোথায় অবস্থতি?

ক) মোহাম্মদপুর

খ)  সেগুনবাগিচা

গ) শেরেবাংলা নগর

ঘ) আগারগাঁও

উত্তরঃ ঘ


গ্রন্থপঞ্জি:


১. রওশন আরা বেগম, আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ, ‘মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৬)

২. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, শওকত আরা বেগম প্রমুখ ‘বাংলাদেশে ও বিশ্বপরিচয়’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১৩)

৩. সেলিনা শাহজাহান, ড. শেখ মো. রেজাউল করিম প্রমুখ, ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১২)

৪. কে. আশরাফুল আলম, ‘বৈশ্বিক পরিবেশের প্রাকৃতিক ভূগোল (পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০১৪)

৫. সংকলিত, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাপিডিয়া (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, প্রকাশকাল: জুন ২০১১)

৬. রফিক আহমেদ, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ুবিজ্ঞান’ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৭)

BCS Geography Lecture – 02

পরিবেশ ও দূষণ, গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন :

বাংলাদেশ ও বর্তমানবিশ্ব,পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন, সংস্থা, চুক্তি, দিবস,

নীতিমালা ও আইন, নমুনা প্রশ্ন

 


পরিবেশ


পরিবেশ বলতে কোনো ব্যবস্থার উপর কার্যকর বাহ্যিক প্রভাবকসমূহের সমষ্টিকে বোঝায়। যেমন: চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান ইত্যাদির সামষ্টিক রূপই হলো পরিবেশ। পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের দ্বারাই একজন ব্যক্তি, প্রাণী, জীব এমনকি উদ্ভিদ প্রভাবিত হয়ে থাকে। এই প্রভাবকসমূহের মধ্যে থাকে প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক বা কৃত্রিম পারিপার্শ্বিক উপাদানসমূহ। মূলত একটি জীবের অস্তিত্ব বা বিকাশের উপর ক্রিয়াশীল সামগ্রিক অবস্থাকে পরিবেশ (Environment)বলে। আমাদের চারপাশের সকল কিছুই পরিবেশের অংশ।পরিবেশের উপাদান দুইটি। যথা:

      ১. জড় উপাদান

      ২. জীব উপাদান

 

  • পরিবেশের প্রকারভেদ: পরিবেশ প্রধানত ২ প্রকার। যথা:

১. ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ: প্রাকৃতিক পরিবেশ হচ্ছে সেই পরিবেশ যা প্রকৃতি নিজে নিজে তৈরি করে। এগুলো হচ্ছে: গাছ,পাহড়-পর্বত,ঝর্ণা,নদী ইত্যাদি। এগুলো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এগুলো প্রাকৃতিক ভবেই সৃষ্টি হয়।

 

২. সামাজিক পরিবেশ: এটি মানবসৃষ্ট পরিবেশ। মানুষের তৈরি পরিবেশ হচ্ছে: দালান-কোঠা,নগরায়ন,বন্দর ইত্যাদি। এগুলো মানুষ নিজের প্রয়োজনের তাগিদে তৈরি করে।

 

  • পরিবেশের যে উপাদানগুলো জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখার অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করে তাকে পরিবেশের ভারসাম্য (Ecological Balance) বলে।
  • পরিবেশবিজ্ঞানীআর্নেস্ট হেকেল সর্বপ্রথম Ecology শব্দটি ব্যবহার করেন। Ecology শব্দটিগ্রিক শব্দ। এরঅর্থ বাস্তুবিদ্যা, বাস্তুসংস্থান।পরিবেশের সাথে প্রাণিজগতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে যে বিদ্যা তাকে বাস্তুবিদ্যা বা Ecology বলে।
  • পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা করেন ডেভিড থ্যারো।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান নিয়ামক তিনটি। যথা:

          ক. বায়ু

          খ. পানি         

          গ. গাছপালা

 


পরিবেশ দূষণ


পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের ব্যতয়ই পরিবেশের দূষণ ঘটায় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। পরিবেশ বিভিন্ন কারণে দূষিত হতে পারে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর সাথে দায়ী। পরিবেশ দূষণের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ১২টি মারাত্মক রাসায়নিক দ্রব্যকে একত্রে ‘ডার্টি ডজন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরিবেশবিভিন্নভাবে দূষিত হয়। যেমন:

  1. Water Pollution (পানি দূষণ)
  2. Air Pollution (বায়ু দূষণ)
  3. Sound Pollution (শব্দ দূষণ)
  4. Soil Pollution (মাটি দূষণ)
  5. Odour Pollution (গন্ধ দূষণ)
  6. Industrial Pollution (শিল্প দূষণ)
  7. Radiation Pollution (তেজস্ক্রিয় দূষণ)

 

  • Water Pollution:পানি দূষণ বলতে পানিতে কোনো বিষাক্ত দ্রব্য অথবা দূষিত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রণের ফলে মানব ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এই দূষণে। পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি পানি দূষণের অন্যতম কারণ। WHO এর মতে, Arsenic এর নিরপদ মাত্রা ০.০১ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশের পানিতে এর মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম (সর্বোচ্চ)।

আর্সেনিক দূষণের কারণ হলো ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলন। এছাড়াও, অতিরিক্ত সাবান বা সাবান জাতীয় পদার্থ পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে। সাবানের উপাদান হলো সোডিয়াম স্টিয়ারেট।

  • Air Pollution:বায়ু দূষণবলতে বোঝায় যখন বায়ুতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের কণা ও ক্ষুদ্র অণু অধিক অনুপাতে বায়ুতে মিশে যায়। তখন এটি বিভিন্ন রোগএমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক উপাদানসমূহ:
  • কার্বন মনোক্সাইড:এই গ্যাস যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে নির্গত হয়।
  • সালফার-ডাই-অক্সাইড: ডিজেল পোড়ালে বাতাসে এই গ্যাসের মিশ্রণ ঘটে। শিল্প কারখানার দূষিত গ্যাস এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী। এই বৃষ্টিতে সালফার-ডাই-অক্সাইড এর আধিক্য থাকে।
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইড: জীবাশ্ম জ্বালানী দহনের ফলে বায়ুমন্ডলে এই গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ওজন স্তরের ক্ষতির জন্য প্রধানত দায়ী।
  • হাইড্রোজেন সায়ানাইড: প্লাস্টিক দহনের ফলে এই গ্যাস সৃষ্টি হয়।

 

  • SMOG (Smoke+Fog) এর অর্থ ধোঁয়াশা যা এক ধরনের দূষিত বাতাস। ঢাকা শহরের বায়ুতে মাত্রাতিরিক্তসীসা পাওয়া যায়। তাই এটা দূষিত বাতাস। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর হলো মেক্সিকো।
  • বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৩ সালে ১ জানুয়ারি ঢাকা শহর থেকে২ স্ট্রোক বিশিষ্ট যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়।

 

  • Sound Pollution:শব্দদূষণ বলতে মানুষের বা কোনো প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী কোনো শব্দসৃষ্টির কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বোঝায়।  মানুষ সাধারণত ২০ থেকে ২০,০০০ হার্জের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য শব্দদূষণ প্রকৃতপক্ষে এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারাই হয়ে থাকে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক অস্থিরতা হতে পারে। শব্দের স্বাভাবিক সহনীয় মাত্রা ৬০ ডেসিবল। জাতিসংঘের মতে ৪৫ ডেসিবল। শব্দের মাত্রা পরিমাপের একক ডেসিবল। ১০৫ ডেসিবলের বেশি শব্দদূষণে মানুষ বধির হতে পারে। বাংলাদেশে শব্দের স্বাভাবিক সহনীয় মাত্রা ৮০ ডেসিবলহলে শব্দদূষণ ধরা হয়। শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্রের তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট শব্দ হলো সনিক বুম।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের জন্য শব্দ দূষণের ৫টি মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যথা:

ক. নীরব এলাকা: ৪৫ ডেসিবল

খ. আবাসিক এলাকা: ৫০ সেডিবল

গ. মিশ্র এলাকা: ৬০ ডেসিবল

ঘ. বাণিজ্যিক এলাকা: ৭০ ডেসিবল

ঙ. শিল্প এলাকা: ৭৫ ডেসিবল

  • Soil Pollution: মাটি দূষণ বলতে রাসায়নিক বর্জ্যের নিক্ষেপ কিংবা ভূ-গর্ভস্থ ফাটলের কারণে নিঃসৃত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়াকে বুঝায়।মাটি দূষণের প্রধান কারণ পলিথিন তথা প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ। ঢাকা শহরে ১ জানুয়ারি ২০০২ সালে এবং সারাদেশে ১ মার্চ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়।

 

  • Odour Pollution:এটি গন্ধদূষণ।এ দূষণের ফলে মস্তিষ্কের অস্বস্তি দেখা দেয়। প্রাণির মলমূত্র বা মরদেহ পঁচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের যে অস্বস্তিকর অবস্থা বা ভারসাম্যহীন অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে গন্ধ দূষণ বলে।

 

  • Industrial Pollution:এটি শিল্পদূষণ।কারখানা ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত দ্রব্য বা বিষাক্ত বর্জ্য থেকে পরিবেশের যে অবক্ষয় ঘটে তাকে শিল্পদূষণ বলে।বাংলাদেশের ৬টি দূষিত শিল্প এলাকা হলো:ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়া।

 

  • Radiation Pollution:এটি তেজস্ক্রিয় দূষণ।তেজস্ক্রিয়তা হলো কোনো কোনো ভারী মৌলিক পদার্থের একটি গুণ যেগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফাবিটাও গামারশ্মির বিকিরণ ঘটে।মূলত পারমাণবিক চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ও আলফা, গামা, বিটা ও অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ এর মূল উৎস। এটি মূলত অদৃশ্য দূষণ।

 


গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন


Greenhouse Effect:বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া। গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া (Greenhouse Effect)এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ তাপবায়ুমণ্ডলীগ্রিনহাউজ গ্যাসসমূহ দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে এসে ভূপৃষ্ঠের তথা বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে বিরূপ আকার ধারণ করছে।

১৮৯৬ সালে সুইডিশ পরিবেশ বিজ্ঞানী সোভনটে আরহেনিয়াস সর্বপ্রথম GreenhouseEffect কথাটি ব্যবহার করেন।বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়াকে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া বলে। মূলত এটি হলো তাপ আকে পড়ে সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।

 

  • GreenhouseGas: যে গ্যাস বায়ুমন্ডলে সূর্যের বিকিরিতরশ্মি শোষণ বা নির্গত করে একে Greenhouse Gas বলে। গ্রিনহাউজ গ্যাসসমূহ হলো:
  • কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2)
  • ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC); এর বাণিজ্যিক নাম ফ্রেয়ন
  • মিথেন (CH4); প্রাকৃতিক গ্যাসের অপর নাম মিথেন।
  • নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)
  • হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (HFC)
  • জলীয় বাষ্প (H2O)
  • ওজন (O3)

 

  • Global Warming:Greenhouse Gas এর প্রভাবে বায়ুমন্ডলের সার্বিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে Global Warming (বৈশ্বিক উষ্ণতা) বা Northern Hemisphere Warming (উত্তর গোলার্ধ উষ্ণায়ন) বলে।এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

 

n   Impact of Greenhouse Gas:

  • বৈশ্বিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি
  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া
  • সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া
  • ওজনস্তরের অবক্ষয়
  • ভূপৃষ্ঠে তেজস্ক্রিয় রশ্মির আগমন ও নানা রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব।

 

n   Causes of Greenhouse Gas:

  • জীবাশ্ম জ্বালানী দহন অর্থাৎ কয়লা, ডিজেল, খনিজ তেল, গ্যাস ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডেলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি।
  • অবাধে বৃক্ষনিধন
  • রেফ্রিজারেটর, এয়ার-কন্ডিশন, ইনহেলার, এরোসল ইত্যাদিতে এবং প্লাস্টিক কারখানায় CFC গ্যাসের ব্যবহার।
  • ওজোনস্তর অবক্ষয় (OzoneLayer Depletion): ওজোন অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। এর রং গাঢ় নীল। গন্ধমাছের আঁশের মতো। ভূ-পৃষ্ঠের ৬৫ মাইল উপরে স্ট্রাটোমন্ডলে ওজোনস্তর অবস্থিত। ১৯৭০ সালে বিজ্ঞানী জোনাথন শাকলিন সর্বপ্রথম ওজোনস্তরের ফাটল লক্ষ্য করেন। ওজোনস্তর অবক্ষয়ের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহ:
  • ক্লোরিন (এটি ওজোনস্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে)
  • ক্লোরোফ্লোরোকার্বন CFC (সিএফসি)
  • মিথাইল
  • ক্লোরোফর্ম
  • ফ্লোরিন
  • CFC গ্যাস ১৯২০ সালে টমাস মিডগ্লাই আবিষ্কার করেন। যে ফ্রিজ ক্ষতিকারক CFC গ্যাস ছড়ায় না তাকে পরিবেশ-বান্ধব ফ্রিজ বলে। এই ফ্রিজে ফ্রেয়নের পরিবর্তে গ্যাজোলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

 


জলবায়ু পরিবর্তন : বাংলাদেশ ও বর্তমান বিশ্ব


কোনোস্থানের গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারেতাকে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) বলে। জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল। যেমন: জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (Tectonic Plate),আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ইত্যাদি। তবে, বর্তমানে সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বললে সারা পৃথিবীর মানবিক কার্যকর্মের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন বোঝায় যা ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি নামে বেশি পরিচিত। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ু চাপ ও তাপের বিরূপ পরিস্থিতি কারণেজলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে।

 

  • জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটনাকে বাংলাদেশ সরকারেরবন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত National Environment Management Action Plan (NEMAP)-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় গত দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যেই রয়ে গেছে। ১৯ বছর ধরে দুর্যোগের সংখ্যা, মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির মোট হিসাবের ভিত্তিতে তৈরি ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গত কয়েক বছরের মত ষষ্ঠ অবস্থানেই রয়ে গেছে বাংলাদেশ। শীর্ষে রয়েছে কাতার এবং সর্বনিম্ন অবস্থানে ভানুয়াতু। কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কি-না, তা চারটি মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়। যেমন:

 

১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ।

২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে।

৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এর মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে।বাংলাদেশ সরকার বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা, পানি বৃদ্ধি ও মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এলাকাগুলো এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে এবং বছরে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

 


পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন:


প্রথম সম্মেলন:১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন সুইডেনের স্টকহোমে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর নাম United Nations Conference on the Human Environment বা Stockholm Conference.এই সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষায় UNEP (United Nation Environment Program) গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৯৭২ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে (সদর দপ্তর) UNEP প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনেই ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 

*    দ্বিতীয় সম্মেলন:১৯৯২ সালের ৩-১৪ জুন ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরিও শহরে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক প্রথম সম্মেলন হয়। এটি প্রথম ধরিত্রী সম্মেলন যা United Nations Conference on Environment and Development বা Rio Summit বা Earth Summit নামে পরিচিত। উক্ত সম্মেলনে ১৭২টি দেশ অংশগ্রহণ করে। ধরিত্রী সম্মেলন প্রচলিত উন্নয়নের ধারণার বিপরীতে টেকসই উন্নয়নের(Sustainable Development) ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

সম্মেলনে গৃহীত নীতিমালাসমূহ:

সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ:

 

*    তৃতীয় সম্মেলন: ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর অপর নাম Rio+10 Summit বা World Summit on Sustainable Development (WSSD). টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে এটিই প্রথম সম্মেলন।

 

*    চতুর্থসম্মেলন: ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরিও শহরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর অপর নাম United Nations Conference on Sustainable Development (UNCSD) বা Rio+20 Summit. এই সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তথা Sustainable Development Goal (SDG) তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয় এবংসবুজ অর্থনীতি (Green Economy) গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

  • জতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন:

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্বন নির্গমন কমানো ও পরিবেশ রক্ষায় United Nation Framework Convention on Climate Change (UNFCCC) এর উদ্যোগে প্রতিবছর জাতিসংঘজলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি Conference of the Parties (COP) নামে পরিচিত।১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিনে প্রথম COP-1 অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে পোল্যান্ডের ক্যাটুইয়েসে সর্বশেষ এই সম্মেলন COP-24 অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে চিলির সান্টিয়াগো শহরে পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন (COP-25) অনুষ্ঠিত হবে।

 


পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা:


  1. UNEP:UNEP (United Nation Environment Program)৫ জুন ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর কেনিয়ার নাইরোবিতে অবস্থিত। এটি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা। এর কাজ পরিবেশগত কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পরিবেশগতভাবে স্বীকৃত নীতি ও অভ্যাস বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

 

  1. WMO:WMO (World Meteorological Organization) ২৩ মার্চ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। এর কাজ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনজীবনে আবহাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে অবহিত করা এবং আগাম সতর্কবার্তা প্রেরণ করা। ১৯৫১ সাল থেকে এ সংস্থার উদ্যোগে সারাবিশ্বে ২৩ মার্চ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস পালিত হয়ে আসছে।

 

  1. IPCC:IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change) ১৯৮৮ সালে UNEP (United Nations Environment Program)ও WMO (World Meteorological Organization) এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত।এটি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক অঙ্গ সংগঠন। এর কাজ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা হ্রাসকরণে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করা।

 

  1. UNFCCC: UNFCCC (United Nation Framework Convention on Climate Change) ১৯৯২ সালে প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং ১৯৯৪ সালে কার্যকর হয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের একটি রূপরেখা।

 

  1. Green Climate Fund:এটিUNFCCCএর উদ্যোগে ২০১০ সালে Green Climate Fund গঠিত হয়। এর সদরদপ্তর দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে অবস্থিত। এর কাজ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

 

  1. Green Peace:Green Peace ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডের আমষ্টারডামে অবস্থিত।এটি একটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা। এর মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীনামক গ্রহের সব ধরনের জীববৈচিত্রের প্রতিপালনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

 

  1. IUCN:IUCN (International Union for Conservation of Nature) ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের গ্লান্ড শহরে অবস্থিত। এর কাজ প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করা।

 

  1. WWI:WWI (World Watch Institute) ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। এর কাজ পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

 

  1. WRI:WRI(World Resource Institute) ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। এর কাজ বন পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ করা।

 

 

 


পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি:


  1. ভিয়েনা কনভেনশন:এটি ওজোনস্তর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের বিষয়ে ১৯৮৫ সালে অস্ট্রিয়ায় রাজধানী ভিয়েনায় গৃহীত হয় এবং ১৯৮৮ সালে কার্যকর হয়।

 

  1. মন্ট্রিল প্রটোকল:এটি কানাডার মন্ট্রিলে শহরে ওজোনস্তর বিনষ্টকারী দূষিত রাসায়নিক পর্দাথের নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে ১৯৮৭ সালে গৃহীত হয় এবং ১৯৮৯ সালে কার্যকর হয়।এ প্রটোকলটি কার্যকর হওয়ার পরএই পর্যন্ত মোট ৪ বার সংশোধিত হয়েছে। যথা:লন্ডনে ১৯৯০ সালে, কোপেনহেগেনে ১৯৯২ সালে, মন্ট্রিলে ১৯৯৭ সালে এবং বেইজিংয়ে ১৯৯৯ সালে।

 

  1. বাসেল কনভেনশন:এটি ১৯৮৯ সালে সুইজারল্যান্ডে গৃহীত হয় এবং ১৯৯২ সালে কার্যকর হয়।এর উদ্দেশ্য বিপদজনক বর্জ্য দেশের সীমান্তের বাহিরে চলাচল ও নিয়ন্ত্রণ করা।

 

  1. জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত কনভেনশন: এটি ১৯৯২ সালে প্রথম ধরিত্রী সম্মেলনের মাধ্যমে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরিও শহরে গৃহীত হয় এবং ১৯৯৩ সালে কার্যকর হয়। এর উদ্দেশ্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।

 

  1. কিয়োটো প্রঢৌকল:১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়েটোতে বিশ্বের উষ্ণতা রোধ বিষয়ে এ প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০০৫ সালে কার্যকর হয়।প্রটোকলটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালে। অনুমোদনকারী মোট দেশ ১৯১টি। যুক্তরাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে কিন্তু অনুমোদন করেনি। এই প্রটোকল প্রত্যাহারকারী একমাত্র দেশ কানাডা।

 

  1. কার্টাগেনাপ্রটোকল: এটি ২০০০ সালে কানাডার মন্ট্রিলে গৃহীত হয় এবং ২০০৩ সালে কার্যকর হয়। এটি জাতিসংঘের জৈব নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তি। উল্লেখ্য, কার্টাগেনা কলম্বিয়ার একটি শহর।

 


পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দিবস:


  • ২১ মার্চ – বিশ্ব বন দিবস
  • ২২ মার্চ – বিশ্ব পানি দিবস
  • ২৩ মার্চ – বিশ্ব আবহাওয়া দিবস
  • ২২ এপ্রিল – বিশ্ব ধরিত্রী দিবস
  • ২২ মে – আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস
  • ৫ জুন- বিশ্ব পরিবেশ দিবস
  • ১৭ জুন – বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস
  • ২৯ জুলাই – বিশ্ব বাঘ দিবস
  • ১৬ সেপ্টেম্বর – আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর সংরক্ষণ দিবস
  • ৪ অক্টোবর – বিশ্ব প্রাণী দিবস
  • ১৩ অক্টোবর – আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস

 


জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা ও আইন:


পরিবেশ নীতিমালা ও আইনে পরিবেশ বলতে বোঝানো হয়েছে পানি, বাতাস, ভূমি ও অন্যান্য ভৌত সম্পদ; এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মানুষ, অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা ও অণুজীবসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক।উনিশ শতকের শুরুতে দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত অনেক আইন ও বিধিমালা প্রণীত হয়।

  • পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারকির জন্য ১৯৮৯ সালে ‘বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়’ গঠিত হয়।
  • বাংলাদেশে ১৯৯০ সালকে পরিবেশ বর্ষ ও ১৯৯০-৯১ সালকে পরিবেশ দশক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
  • ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের প্রথম ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি’ গৃহীত হয়। যেখানে ১৫টি কর্মকৌশল ছিল।
  • ১৯৯২ সালে Bangladesh Environment Layers Association (BELA) অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি’ গঠিত হয়।
  • ১৯৯৫ সালে‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন’ প্রণীত হয়।
  • ১৯৯৭ সালে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ নিরাপত্তা বিধিমালা’ প্রণীত হয়।
  • ২০০০ সালে Bangladesh Poribesh Andolon (BAPA)/বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গঠিত হয়।
  • ২০০১ সালে‘বাংলাদেশ পরিবেশ আদালত’ গঠিত হয়। পরিবেশ আদালত ৩টি। যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট।
  • ২০১৮ সালে ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি’ গৃহীত হয়।

 


নমুনা প্রশ্ন


১. গাড়ী থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার যে বিষাক্ত গ্যাস থাকে – 

ক) ইথিলিন

খ) পিরিডন

গ) কার্বন মনোক্সাইড

ঘ) মিথেন

উত্তরঃ গ


২. যে দূষণ প্রক্রিয়ায় মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় – 

ক) পানি দূষণ

খ) বায়ু দূষণ

গ) গন্ধ দূষণ

ঘ) শব্দ দূষণ

উত্তরঃ ক


৩. জাতিসংঘের মতে, শব্দ দূষণের স্বাভাবিক ও সহনীয় মাত্রা কত?

ক) ৬০ ডেসিবল

খ) ৪৫ ডেসিবল

গ) ৫০ ডেসিবল

ঘ) ৮০ ডেসিবল

উত্তরঃ খ


৪. জীবাশ্ম জ্বালানী দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে যে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ সবচেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে – 

ক) জলীয় বাষ্প

খ) সিএফসি

গ) কার্বন ডাই অক্সাইড

ঘ) মিথেন

উত্তরঃ গ


৫. প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান নিয়ামক কোনটি?

ক) মানুষ

খ) গাছপালা

গ) আবহাওয়া

ঘ) মাটি

উত্তরঃ খ


৬. এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী গ্যাস কোনটি?

ক) কার্বন-ডাই-অক্সাইড

খ) কার্বন-মনোক্সাইড

গ) সালফার-ডাই-অক্সাইড

ঘ) হাইড্রোজেন সায়ানাইড

উত্তরঃ গ


৭. বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয় কত সালে?

ক) ১ জানুয়ারি ২০০২

খ) ১ মার্চ ২০০২

গ) ১ জানুয়ারি ২০০৩

ঘ) ১ মার্চ ২০০৩

উত্তরঃ খ


৮. ‘জিঙ্ক সালফেট’ ব্যবহার করা হয় – 

ক) কাগজ শিল্পে

খ) কৃষিকাজে

গ) প্লাস্টিক শিল্পে

ঘ) চামড়া শিল্পে

উত্তরঃ ঘ


৯. গ্রিনহাউজ ইফেক্ট সৃষ্টিকারী গ্যাস নয় কোনটি?

ক) N2O

খ) N2O

গ) CH4

ঘ) D2O

উত্তরঃ ঘ


১০. ‘গ্রিন হাউস’ কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন কে?

ক) আর্নেস্ট হেকেল

খ) ডেভিট থ্যারো

গ) সোভনটে আরহেনিয়াস

ঘ) টমাস মিডগ্লাই

উত্তরঃ গ


১১. ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন’ কথাটি কোন অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত?

ক) নিরক্ষীয়মÐল

খ) আর্কটিক অঞ্চল

গ) কুমেরু অঞ্চল

ঘ) উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল

উত্তরঃ খ


১২. ওজোনস্তর অবক্ষয়ের ফলে – 

ক) ভূপৃষ্ঠে তেজস্ক্রিয় রশ্মির আগমন ঘটে

খ) মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যায়

গ) সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়

ঘ) ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে

উত্তরঃ ক


১৩. CFC গ্যাসের বাণিজ্যিক নাম কী?

ক) মিথেন

খ) ক্লোরিন

গ) ফ্রেয়ন

ঘ) হ্যালন

উত্তরঃ গ


১৪. কত সালে জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণীত হয়?

ক) ১৯৮৯ সালে

খ) ১৯৯২ সালে

গ) ২০০১ সালে

ঘ) ১৯৯৫ সালে

উত্তরঃ খ


১৫. প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলন কোন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

ক) জোহান্সবার্গ

খ) স্টকহোম

গ) রিও ডি জেনেরিও

ঘ) প্যারিস

উত্তরঃ খ


১৬. জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার সদর দপ্তর কোথায়?

ক) স্টকহোম

খ) নাইরোবি

গ) ডারবান

খ) জেনেভা

উত্তরঃ খ


১৭. তৃতীয় বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলন (Rio + 20 Summit) অনুষ্ঠিত হয় –

ক) ২০০২ সালে

খ) ১৯৯২ সালে

গ) ২০১২ সালে

ঘ) ২০০৮ সালে

উত্তরঃ গ


১৮. জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (COP) প্রথম কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

ক) প্যারিস, ১৯৯০

খ) বার্লিন, ১৯৯৫

গ) কার্টাগেনা, ১৯৮৫

ঘ) মন্ট্রিল, ১৯৯৫

উত্তরঃ খ


১৯. পরিবেশ বিজ্ঞানের ভাষায় ঝসড়ম হচ্ছে – 

ক) সিগারেটের ধোঁয়া

খ) কুয়াশা

গ) যানবাহনের ধোঁয়া

ঘ) দূষিত বাতাস

উত্তরঃ ঘ


২০. ‘Blue Economy’ কথাটি কীসের সাথে সম্পৃক্ত?

ক) পরিবেশ

খ) অর্থনীতি

গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ঘ) সমুদ্র

উত্তরঃ ঘ


২১. জাতিসংঘ ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি কোনটি?

ক) ভিয়েনা কনভেনশন (১৯৮৫)

খ) মন্ট্রিল প্রটোকল (১৯৮৭)

গ) কিয়োটো প্রটোকল (১৯৯৭)

ঘ) বাসেল কনভেনশন (১৯৮৯)

উত্তরঃ গ


২২. আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস – 

ক) ১৬ সেপ্টেম্বর

খ) ৫ জুন

গ) ২২ এপ্রিল

ঘ) ২২ মে

উত্তরঃ ঘ


২৩. পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা নয় কোনটি?

ক) WRI

খ) WWI

গ) IUCN

ঘ) WHO

উত্তরঃ ঘ


২৪. কত সালে বন ও পরবিশে মন্ত্রণালয় গঠতি হয়?

ক) ১৯৮৯ সালে

খ) ১৯৮৮ সালে

গ) ১৯৯২ সালে

ঘ) ১৯৭৯ সালে

উত্তরঃ ক


২৫. আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-

ক) ২৯ জুলাই

খ) ১৬ সেপ্টেম্বর

গ) ৪ অক্টোবর

ঘ) ১৩ অক্টোবর

উত্তরঃ ঘ

 


গ্রন্থপঞ্জি:


১. রওশন আরা বেগম, আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ, ‘মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৬)

২. সেলিনা শাহজাহান, ড. শেখ মো. রেজাউল করিম প্রমুখ, ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১২)

৩. কে. আশরাফুল আলম, ‘বৈশ্বিক পরিবেশের প্রাকৃতিক ভূগোল (পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০১৪)

৪. এস রিজওয়ানা হাসান, ‘পরিবেশ দূষণ বাংলাপিডিয়া (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯)

৫. এস. এম. হুমায়ূন কবির, ‘ডার্টি ডজন বাংলাপিডিয়া (বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৯)

৬. রফিক আহমেদ, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ুবিজ্ঞান’ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৭)

 

 

BCS Geography Lecture – 01

বায়ুমণ্ডল, আবহাওয়া ও জলবায়ু, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, শিলা ও খনিজ, ভূমরিূপ, ভূপৃষ্ঠরে পরর্বিতন, নমুনা প্রশ্ন

 


বায়ুমণ্ডল


পৃথিবীর চারদিকে বেষ্টন করে বায়ুর যে আস্তরণ আছে তাকে বায়ুমন্ডল (Atmosphere) বলে। এর গড় গভীরতা ১০,০০০ (দশ হাজার) কি.মি.। বায়ুমন্ডলের ৯৭% স্তর ভূপৃষ্ঠের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বায়ুমন্ডলের ভূপৃষ্ঠের সাথে লেপ্টে থাকে মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে।

উপাদান ও রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী বায়ুমন্ডলের ২টি স্তর। যথা:

  1. Homosphere (সমমন্ডল): এই স্তর প্রাণীদের বসবাসযোগ্য এবং এখানে বাতাসে বিভিন্ন উপাদান সমানভাবে থাকে।
  2. Heterosphere (বিষমমন্ডল):এ স্তরে বাতাসে বিভিন্ন উপাদান সমানভাবে থাকে না। এটি সমমণ্ডলের বিপরীত।

উষ্ণতা ও বায়ুচাপের তারতম্য অনুযায়ী বায়ুমন্ডলের ৬টি স্তর। যথা:

  1. Troposphere (ট্রপোমন্ডল)
  2. Stratosphere (স্ট্রাটোমন্ডল)
  3. Mesosphere (মেসোমন্ডল)
  4. Thermosphere (থার্মোমন্ডল)
  5. Exosphere (এক্সোমন্ডল)
  6. Magnetosphere (ম্যাগনিটোমন্ডল)

(মনে রাখার কৌশল: ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে মেসো থাকে একলা মনে।)

  1. Troposphere (ট্রপোমণ্ডল):এটি ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তর। এর গড় গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২.৮৭ কি.মি. পর্যন্ত। আবহাওয়া ও জলবায়ুজনিত যাবতীয় প্রতিক্রিয়ার (ঝড়, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি) অধিকাংশ এ স্তরে ঘটে। একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে।
  2. Stratosphere (স্ট্রাটোমন্ডল): ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের ১২.৮৭ কি.মি. হতে ৫০ কি.মি. পর্যন্ত এ স্তর বিস্তৃত। এখানে বায়ুর ঘনত্ব, তাপ ও চাপ কম। এ স্তরে বিমান চলাচল করে। এর গড় গভীরতা ট্রপোমন্ডল থেকে ৫০ কি. মি. উপর পর্যন্ত। একে শান্তমন্ডল বলে।

এ স্তরের উপরিভাগে ওজোনস্তর/ওজোনমণ্ডল। ওজোন একটি গ্যাসের স্তর। এর রং গাঢ় নীল। এটি স্ট্রাটোমণ্ডলের উপরের ১২ থেকে ১৬ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কি.মি. উপরিভাগে ওজোন স্তর বিদ্যমান। এ স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্থিত শব্দ প্রতিফলিত হয়। ওজোনস্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এবং প্রাণীকূলকে মারাত্মক সব রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে চোখে ছানি পড়া, ত্বক ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

  1. Mesosphere (মেসোমন্ডল): এখান থেকে যত উপরে যাওয়া হবে ততই তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এর উর্ধ্বসীমার তাপমাত্রা 1500 ফারেনহাইট। এই স্তরে মহাকাশ থেকে আসা উল্কাপিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায় অর্থাৎ ধ্বংস হয়।
  2. Thermosphere (থার্মোমন্ডল): এই স্তরে মেরুজ্যোতি বা অরোরা (Aurora) দেখা যায়। Aurora মূলত বায়ুমন্ডলের উচ্চতর স্তরে বৈদ্যুতিক বিচ্যুতির কারণে হয়। এর উপরিভাগে আয়নমন্ডল অবস্থিত যেখানে বেতারতরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই স্তরে স্যাটেলাইটে থাকে। বেতারতরঙ্গের গতিবেগ প্রায় আলোর গতিবেগের সমান।
  3. Exosphere (এক্সোমন্ডল): এই স্তরে উল্কা ও মহাজাগতিক রশ্মি পাওয়া যায়। এই স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস রয়েছে যা দাহ্য পদার্থ। বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস নিজে জ্বলে কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে না। অক্সিজেন নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে।
  4. Magnetosphere (ম্যাগনিটোমন্ডল): এটি বায়ুমণ্ডলের তড়িৎ চুম্বকীয় স্তর। এই স্তরে ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের সন্ধান পাওয়া যায়। এক্সোমণ্ডল ও ম্যাগনিটোমন্ডল এ দুটি স্তরকে Fountain Layer বলা হয়। কারণ এখানে অণু-পরমাণুগুলো সর্বদা উপরের দিকে ধাবিত হয়।

 

বায়ুর উপাদান:বায়ু হলো বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ। এর উপাদানকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  1. মুখ্য উপাদান:

 নাইট্রোজেন (78.01%)

 অক্সিজেন (20.71%)

 আর্গন (0.80%)

 ওজোন (0.0001%)

 কার্বন-ডাই-অক্সাইড (0.03%)

 হাইড্রোজেন (0.00005%)

 মিথেন (0.00002%)

 হিলিয়াম (0.0005%)

 নিয়ন (0.0018%)

 ক্রিপটন (0.00012%)

 জেনন (0.00009%)

 নাইট্রাস অক্সাইড (0.00005%)

  1. জলীয় বাষ্প(0.41%)
  2. ধূলিকণা বা Aerosol (0.4399%)

 


আবহাওয়া ও জলবায়ু


কোনো স্থানের বায়ুর তাপ, চাপ, উষ্ণতা, আর্দ্রতা, মেঘ, বৃষ্টি, জলীয়-বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ ও তুষারপাত ইত্যাদির দৈনন্দিন অবস্থাকে সে স্থানের আবহাওয়া (Weather) বলে।সাধারণত কোনো স্থানের ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়ার অবস্থাকে জলবায়ু (Climate) বলে।

*     পৃথিবীতে জলবায়ু অঞ্চল ৪টি। যথা:

  1. উষ্ণ (মরুভূমি অঞ্চল)
  2. নাতিশীতোষ্ণ
  3. মেরুদেশীয় (সাইবেরিয়া ও আলাস্কা অঞ্চল)
  4. পার্বত্যঅঞ্চল
  • জলবায়ু ২ ধরনের। যথা:

১।    সমভাবাপন্ন: সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকার জলবাযু। এখানে তাপমাত্রার পার্থক্য কম-বেশি হয় না।
২।    চরমভাবাপন্ন:সমুদ্র দূরবর্তী এলাকার জলবায়ু। এখানে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। এর অপর নাম মহাদেশীয় জলবায়ু।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর ৫টি উপাদান আছে। যথা:

  1. বায়ুর তাপ
  2. বায়ুর চাপ
  3. বায়ু প্রবাহ
  4. বায়ুর আর্দ্রতা
  5. পানিচক্র ও বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ামকসমূহ: নিম্নোক্ত নিয়ামকসমূহ আবহাওয়া ও জলবায়ুকে নির্ধারণ করে। যেমন:

  1. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ
  2. সমুদ্রস্রোত
  3. সমুদ্র থেকে দূরত্ব
  4. বনভূমির অবস্থান
  5. ভূমির বন্ধুরতা (বায়ুপ্রবাহ বাধা পায়)
  6. ভূমির ঢাল (বায়ুপ্রবাহ বাধা পায়)
  7. পর্বতের অবস্থান (বায়ুপ্রবাহ বাধা পায়)
  8. মৃত্তিকার গঠন
  9. ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা (উপরের দিকে গেলে বায়ুর চাপ ও তাপ কমে)

বায়ুর তাপ: বায়ুমন্ডলের মোট শক্তির ৯৯.৯৭% সূর্য থেকে আসে। বায়ুমন্ডল ৩টি প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত হয়। যথা:

  1. পরিবহন: এটি মূলত কঠিন পদার্থে হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়।
  2. পরিচলন: এটি মূলত তরল পদার্থে হয়ে থাকে।এর মাধ্যমে বায়ুর ঘূর্ণন প্রক্রিয়া, পানি ও তাপের বিনিময় হয়।
  3. বিকিরণ: এটি মূলত শূন্য মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় সূর্য থেকে তাপ পৃথিবীতে আসে এবং পৃথিবী তাপ হারিয়ে শীতল হয়।সূর্য আমাদের বিকিরণ মাধ্যমে তাপ দেয়।

বায়ুর চাপ: বায়ু তার ভরের জন্য চতুর্দিকে যে চাপ দেয় তাকে বায়ুচাপ বলে। বায়ুচাপ ৩টি নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ বায়ুচাপ ৩টি কারণে হয়ে থাকে। যথা:

  1. 1. উচ্চতা:সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় বায়ুর চাপ তত কমে।
  2. উষ্ণতা:তাপে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয় ফলে বায়ু চাপ কমে। অর্থাৎ তাপ বাড়লে চাপ কমে, তাপ কমলে চাপ বাড়ে।
  3. জলীয় বাষ্প: এটি মূলত বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ। জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা হালকা। বায়ু আর্দ্র হলে চাপ কমে। শুষ্ক ও ঠান্ডা হলে চাপ বাড়ে।

বায়ুর স্বাভাবিক চাপ:

সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ ৭৬ সে.মি.।

ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ ১০ নিউটন।

স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের উপর বাযুর চাপ ১৪.৫/১৫ পাউন্ড।

ভূগর্ভস্থ পানি লিফট পাম্পের সাহায্যে সর্ব্বোচ্চ ১০ মিটার নিচ থেকে উঠানো যায়।

সাধারণ পাম্প পানিকে ৩৪ ফুটের অধিক উচ্চতায় উঠাতে পারে না।

  • নিম্নচাপ: বায়ুচাপের হ্রাস পাওয়াকে নিম্নচাপ বলে। এর ফলে বাতাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটা সর্বদা সাগর/মহাসাগরে হয়ে থাকে। হঠাৎবায়ুর চাপ কমে গেলে বায়ুপ্রবাহ বেড়ে যায়। বাতাসের চাপ নির্ণায়ক যন্ত্র ব্যারোমিটার। এই যন্ত্রে পারদ ব্যবহার করা হয়। পারদ একমাত্র তরল ধাতু যা সবচেয়ে ভারী। ব্যারোমিটারে পারদ স্তম্ভের উচ্চতা হ্রাস পেলে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
  • বায়ুপ্রবাহ: সূর্যতাপ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য বায়ু এক স্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়।বায়ু সাধারণত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।

 

  • বায়ুপ্রবাহের কারণ ২টি। যথা:

১. সূর্যতাপ

২. বায়ুচাপ

বায়ু উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহের সময় ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধের ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের বামদিকে বেঁকে যায়।

 উচ্চচাপ বলয়: ২৫-৩০ অক্ষাংশের মধ্যে।

→ নিম্নচাপ বলয়: ৬০-৭০ অক্ষাংশের মধ্যে।

  • বায়ুপ্রবাহের ৪টি প্রকার। যথা:

১.  নিয়ত বায়ু

২.  সাময়িক বায়ু

৩.  অনিয়মিত বায়ু

৪.  স্থানীয় বায়ু

  • নিয়ত বায়ু: এই বায়ু সারা বছর একই দিকে অর্থাৎ উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। এই নিয়তবায়ু আবার ৩ প্রকার। যথা:

     

অয়ন বায়ু: এর অপর নাম বাণিজ্য বায়ু। এ বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।

প্রত্যয়ন বায়ু: এর অপর নাম পশ্চিমা বায়ু। এ বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরের ৪০থেকে ৪৭ দক্ষিণ অক্ষাংশে পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি। তাই এই অঞ্চলকে গর্জনশীল চল্লিশা বলে। এর অপর নাম প্রবল পশ্চিমা বায়ু।

মেরুবায়ু: উত্তর (সুমেরু) থেকে দক্ষিণে সুমেরু বায়ুপ্রবাহিত হয় এবং দক্ষিণ (কুমেরু) থেকে উত্তরে কুমেরু বায়ু প্রবাহিত হয়।

 

  • সাময়িক বায়ু: নির্দিষ্ট কোনো সময় ও ঋতুতে জল ও স্থলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য যে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। এই বায়ু অল্প সময়ের জন্য প্রবাহিত হয়। সাময়িক বায়ু ৩ প্রকার। যথা:

মৌসুমী বায়ু: ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এ বায়ুর দিক পরিবর্তন হয়। এই বায়ু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে এ বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকালে মহাদেশীয় বায়ু অর্থাৎ পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা বায়ু প্রবাহিত হয়।

→ স্থলবায়ু: এ বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এটি রাতে প্রবাহিত হয়। মধ্যরাতে এর গতিবেগ বেশি থাকে।

→ সমুদ্রবায়ু: এ বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এটি দিনে প্রবাহিত হয়। বিকেলে/অপরাহ্ণে এর গতিবেগ বেশি থাকে।

 

অনিয়মিত বায়ু: কোনো স্থানে অধিক উত্তাপের জন্য নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে কিংবা অধিক শৈত্যপ্রবাহের জন্য উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে যে বায়ু প্রবাহ হয় সেটিই অনিয়মিত বায়ু। এ বায়ুর কারণে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। অনিয়মিত বায়ুর মধ্যে ‘টর্নেডো’ স্থলভাগে সৃষ্টি হয়।টর্নেডো স্প্যানিশ শব্দ। এটা এমন এক ধরনের ঘূর্ণিঝড় যা সীমিত স্থানে হয়। এর গতিবেগ ঘন্টায় ৪০০ কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে। জলভাগে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যে:

 সাইক্লোন (ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়)

 টাইফুন (প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়)

 হারিকেন (আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হয়)

 

  • স্থানীয় বায়ু : স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে স্থানীয় বায়ু বলে। অঞ্চলভেদেএর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন:

সাহারা ও আরব মরুভূমিতে ‘সাইমুম’

যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতমালায়‘চিনুক’

মিশরীয় অঞ্চলে‘খামসিন’

উপমহাদেশে ‘লু’

আফ্রিকা ও ইতালিতে‘সিরক্কো’

দক্ষিণ আমেরিকায় ‘পাম্পেরু’

 

  • বায়ুর আদ্রর্তা: বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলে। আর্দ্রতার পরিমাণও জলীয়বাষ্প একই কথা। বাতাসে তাপমাত্রা হ্রাস পেলে আর্দ্রতা বাড়ে; তাপমাত্রা বাড়লে আর্দ্রতা কমে। আর্দ্রতা দুই প্রকার। যথা:

      ১. পরম আর্দ্রতা: বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণকে পরম আর্দ্রতা বলে।

      ২. আপেক্ষিক আর্দ্রতা: কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণ এবং একই আয়তনের বায়ুকে একই উষ্ণতায় পরিপৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন; এ দুটির অনুপাতকেআপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।

আর্দ্র বা ভেজা বায়ুতে বায়ুর চাপ কমে। শুষ্ক বা ঠান্ডা বায়ুতে বায়ুর চাপ বাড়ে।

শীতকালে বায়ুর আর্দ্রতা কম থাকে বলে বাতাস শুষ্ক থাকে তাই ঠোঁট ও গায়ের চামড়া ফেটে যায়।

বর্ষাকালে বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে এবং শীতকালে জলীয় বাষ্প কম থাকে ফলে বাতাস ভেজা কাপড় হতে জলীয় বাষ্প শোষণ করে তাই শীতকালে ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায়।

 

  • পানিচক্র:পানি প্রবাহের সার্বিক অবস্থাকে পানিচক্র বলে। পানিচক্রের ৪টি অবস্থা। যথা:
  1. বাষ্পীভবন: সমুদ্র জলীয় বাষ্পের উৎস। সূর্য-ই বাষ্পীভবনের কারণ।
  2. ঘনীভবন: বায়ু যত উষ্ণ হয় জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা তত বেশি হয়। বায়ু শীতল হতে থাকলে জলীয় বাষ্পের কিছু অংশ পানিতে পরিণত হয়। বায়ু যে উষ্ণতায় জলীয়বাষ্পরূপে ঘনীভূত হয় তাকে শিশিরাঙ্ক বলে। পানি ০সেলসিয়াস আকার ধারণ করলে তখন তুষারপাত হয়। অন্যথায় শিশির ও কুয়াশায় পরিণত হয়।
  3. বারিপাত:সকল বারিপাত জলীয় বাষ্পের উপর নির্ভরশীল। বারিপাত বলতে ৪টি জিনিসকে বুঝায়। যথা: শিশির (Dew), তুহিন (Frost), কুয়াশা (Fog), তুষার (Snow)। ঘন কুয়াশাকে কুজ্ঝটিকা বলে।
  4. পানিপ্রবাহ:ভূ-পৃষ্ঠে পানির মূলত ৪টি প্রবাহ। যথা: পৃষ্ঠপ্রবাহ, অন্তঃপ্রবাহ (মাটির নিচ দিয়ে প্রবাহ), চুয়ানো ও পরিস্রাবণ (ছাকন পদ্ধতি) ।

 

  • বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাত প্রধানত ৪ ধরনের। যথা:
  1. পরিচলন বৃষ্টি: এটি নিরক্ষীয় অঞ্চল তথা পৃথিবীর কেন্দ্রভাগে হয়ে থাকে।
  2. শৈলৎক্ষেপণ বৃষ্টি: এটি পার্বত্য অঞ্চলে হয়ে থাকে।
  3. ঘূর্ণি বৃষ্টি: শীতকালে এটি ইউরোপে হয়ে থাকে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে হয়।
  4. বায়ুপ্রাচীর-জনিত বৃষ্টি: এটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে হয়ে থাকে।

 


পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন


পৃথিবী প্রথম উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিন্ড ছিল। ধীরে ধীরে পৃথিবী শীতল হয়ে কঠিন পদার্থগুলো নিচে ঘনীভূত হয়ে চারটি স্তরে বিভক্ত হয়। যেমন:

  1. ভূত্বক (Earth’s Crust)
  2. অশ্বমন্ডল (Lithosphere)
  3. গুরুমন্ডল (Barysphere)
  4. কেন্দ্রমন্ডল (Centrosphere)

 

ভূত্বক: ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে শিলার যে কঠিন বহি-আবরণ দেখা যায় তাকে ভূত্বক বলে। এর পুরত্ব গড়ে ২০ কিলোমিটার।ভূপৃষ্ঠ থেকে গর্ত করে নিচের দিকে গেলে চাপ ও তাপ উভয়ই বাড়বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠলে চাপ ও তাপ কমবে।ভূত্বক দুই শ্রেণির। যথা:

ক. মহাদেশীয় ভূত্বক: ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে এর পুরত্ব৩৫ কি. মি. প্রায়। এটি সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে গঠিত।

      খ. সমুদ্র তলদেশীয় ভূত্বক:সমুদ্র তলদেশ থেকে এর পুরত্ব ৫ কি.মি. প্রায়। এটি সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম দিয়ে গঠিত।

      → ভূত্বকের উপাদান: অক্সিজেন, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম।

      → ভূত্বকের প্রধান উপাদানঅক্সিজেন (৪২.৭%)

      → পৃথিবী তৈরির প্রধান উপাদানসিলিকন (২৭.৭%)

(ভূপৃষ্ঠে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ধাতু অ্যালুমিনিয়াম(৮.১%)

 

অশ্বমন্ডল:ভূত্বকের নিচে এবং গুরুমন্ডলের উপরে ১০০ কি.মি. বিস্তৃত যে কঠিন শিলার আস্তরণ আছে তাকে অশ্বমন্ডল বলে। এর অপর নাম শিলামন্ডল। এটি তৈরির উপাদানসিলিকন (Si) ও অ্যালুমিনিয়াম (Al)। সংক্ষেপে: SiAl (সিয়াল)

 

গুরুমন্ডল: অশ্বমন্ডলের নিচে ও কেন্দ্রমণ্ডলের উপরে৩০৫৮ কি. মি. পর্যন্ত বিস্তৃত মন্ডলকে গুরুমন্ডল বলে। এটি মূলত ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত।এটি তৈরির প্রধান উপাদানসিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Ma)। সংক্ষেপে: SiMa (সিমা)

 

কেন্দ্রমন্ডল: গুরুমন্ডল থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রভাগ পর্যন্ত যে স্তর তাকে কেন্দ্রমন্ডল বলে।এ স্তরের তাপমাত্রা ৩০০০ থেকে ৫০০০ সেলসিয়াস পর্যন্ত। এটি তৈরির উপাদান নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe)। সংক্ষেপে: NiFe (নিফে)

 


শিলা ও খনিজ


ভূত্বক যে সব উপাদান দিয়ে তৈরি তার সাধারণ নাম শিলা। এটি মূলত একাধিক খনিজের সমন্বয়।কতগুলো মৌলিক পদার্থ প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে তাকে খনিজ বলে। পৃথিবীর বিচিত্র ভূমিরূপ প্রক্রিয়া শিলা ও খনিজের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয়।

  • শিলা ও খনিজের পার্থক্য:

শিলা:

  1. বিভিন্ন রং
  2. একাধিক খনিজের সমন্বয়
  3. সুলভ/সহজেই পাওয়া যায়
  4. রাসায়নিক সংকেত নেই
  5. প্রাকৃতিক নাও হতে পারে
  6. অসমসত্ত্ব (উপাদানগুলো একইভাবে সাজানো নয়)
  7. কঠিন ও হালকা নরম
  8. উদাহরণ: গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, কোয়ার্টজাইট, চুনাপাথর ইত্যাদি।

খনিজ: 

  1. খনিজ একটি নির্দিষ্ট রং
  2. এক বা একাধিক মৌলিক পদার্থের সমন্বয়
  3. দুর্লভ/কম পাওয়া যায়
  4. রাসায়নিক সংকেত আছে
  5. প্রাকৃতিক
  6. সমসত্ত্ব (উপাদানগুলো একইভাবে সাজানো)
  7. কঠিন ও স্বচ্ছ
  8. উদাহরণ: মাইকা, কোয়ার্টাজ, স্বর্ণ, লোহা, ক্যালসাইট ইত্যাদি।

শিলা প্রধানত তিন প্রকার। যথা:

  1. আগ্নেয় শিলা
  2. পাললিক শিলা
  3. রূপান্তরিত শিলা

 

  1. আগ্নেয় শিলা: এ শিলা উত্তপ্ত গলিত অবস্থা থেকে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে কঠিন হয়েছে। এ শিলায় জীবাশ্ম নেই। একে প্রাথমিক শিলাও বলা হয়। এটি অস্তরীভূত শিলা। যেমন: গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, শেল, ল্যাকোলিথ ইত্যাদি।

 

  1. পাললিক শিলা: এই শিলা পলি দ্বারা গঠিত হয়ে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। এ শিলায় জীবাশ্ম আছে। জীবাশ্ম মূলত বিভিন্ন প্রাণী ও বৃক্ষের ধ্বংসাবশেষ যা যুগ যুগ ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। একে স্তরীভূত শিলা বলা হয়। এই শিলায় ভাঁজ আছে। যেমন: কয়লা, চুনাপাথর, নুড়িপাথর, বেলেপাথর, জিপসাম, চক, লবণ ইত্যাদি।

 

  1. রূপান্তরিত শিলা: এই শিলায় স্তরে স্তরে ভাঁজ থাকে। চাপ, তাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এই শিলায় গঠিত হয়। এটি মূলত আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয়। যেমন: গ্রাফাইট, মার্বেল, নিস, স্লেট, কোয়ার্টজাইট, ক্যালসাইট ইত্যাদি।
  • গ্রাফাইট: কয়লা থেকে সৃষ্ট
  • নিস: গ্রানাইট থেকে সৃষ্ট
  • স্লেট: শেল থেকে সৃষ্ট
  • কোয়ার্টজাইট: কোয়ার্টজ ও বেলেপাথর থেকে সৃষ্ট
  • মার্বেল ও ক্যালসাইট: চুনাপাথর থেকে সৃষ্ট

  • খনিজ: কতগুলো মৌলিক পদার্থ প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে তাকে খনিজ বলে। খনিজ দুই বা ততোধিক মৌলের সমন্বয়ে গঠিত।কিছু কিছু খনিজএকটি মাত্র মৌলিক পদার্থ দিয়েও গঠিত হতে পারে। যেমন: সোনা, রূপা, তামা, হীরা, পারদ, গন্ধক, টেলক প্রভৃতি এক মৌল দিয়ে গঠিত খনিজ।

→ হীরা সবচেয়ে কঠিন পদার্থ/খনিজ।

→ টেলক সবচেয়ে নরম পদার্থ/খনিজ।

 


ভূমিরূপ


ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন আকৃতি বা গঠনের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপ মূলত ৪ শ্রেণির। যথা:

১. সমভূমি (Plain)

২.  মরুভূমি (Desert)

৩.  মালভূমি (Plateau)

৪.  পার্বত্যভূমি (Mountain)

 

পার্বত্যভূমি: সাধারণত ৬০০-১০০০ মিটার হালকা ঢালবিশিষ্ট ভূমিরূপকে পাহাড় বলে। কিন্তু ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু খাড়া ঢালবিশিষ্ট ভূমিকে পর্বত বলে। ৬০০ মিটার এর কম উচ্চতাসম্পন্ন ভূমিরূপকে টিলা বলে। সিলেট, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জেটিলা দেখতে পাওয়া যায়। দুই পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ ও অনুচ্চ পথকে গিরিপথ বলে। পর্বত ৪ ধরনের। যথা:

 

  1. ভঙ্গিল পর্বত:কোমল পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ে যে পর্বত গঠিত হয়েছে তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে। যেমন:এশিয়ার হিমালয়, ইউরোপের আল্পস, রাশিয়ার ইউরাল, উত্তর আমেরিকার রকি ও দক্ষিণ আমেরিকারআন্দিজ পর্বতমালা।
  2. আগ্নেয় পর্বত:আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গরিত পদার্থ সঞ্চিত ও জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয়। যেমন: সেন্ট হেলেনা (যুক্তরাষ্ট্র), ফুজিয়ামা (জাপান), ভিসুভিয়াস (ইতালি), কিলিমাঞ্জারো (কেনিয়া) ও পিনাটুবো (ফিলিপাইন) প্রর্ভতি পর্বত।
  3. ক্ষয়জাত পর্বত/চ্যুতি-স্তূপ পর্বত: এটি ভূ-আলোড়নের সময় ভূ-অভ্যন্তরে শিলার ফাটলের ফলে ভূত্বকের উপরের দিকে উঁচু হয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন: ব্ল্যাক ফরেস্ট (জার্মানি), লবণ (পাকিস্তান), বিন্ধ্যা ও সাতপুরা (ভারত) প্রভৃতি পর্বত।
  4. ল্যাকোলিথ পর্বত/গম্ভুজ পর্বত: ভূ-অভ্যন্তরের আগ্নেয়গিরির লাভা উৎগরিত না হওয়ায়র কারণে ভূপৃষ্ঠে যে উঁচু উঁচু ঢিবির তৈরি হয় তাকে ল্যাকোলিথ বা গম্ভুজ পর্বত বলে। এর কোনো শৃঙ্গ নেই। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি পর্বত।

 

মালভূমি: পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু বিস্তৃর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে। এটা ৩ ধরনের। যথা:

      ১পর্বত-মধ্যবর্তী মালভূমি:এটি দুই পর্বতের মধ্যবর্তী বিস্তৃর্ণ সমতল ভূমি। যেমন:পামির (এশিয়া), মেক্সিকো, মঙ্গোলিয়া, বলিভিয়া ও তিব্বতের মালভূমি।

২.  পাদদেশীয় মালভূমি:এটি উচ্চপবর্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো, দক্ষিণ আমেরিকার পাতাগনিয়া মালভূমি।

      ৩. মহাদেশীয় মালভূমি: এটি সাগর ও নিম্নভূমি পরিবেষ্টিত উচ্চভূমি, যার সাথে পর্বতের কোনো সংযোগ নেই।

 

  • মরুভূমি: সমুদ্র থেকে দূরবর্তী পাহাড়ঘেরা স্থান, যেখানে সামুদ্রিক আর্দ্রতা ও মেঘ পৌঁছাতে পারে না এবং বিষুবরেখার নিকটবর্তী অঞ্চলে মরুভূমি দেখা যায়। ইউরোপ মহাদেশে কোনো মরুভূমি নেই।ক্যাকটাস ও উট যথাক্রমে মরুভূমির বৃক্ষ ও প্রাণী। মরুভূমি ২ ধরনের। যথা:

১.  শীতল মরুভূমি:উত্তর মেরুর আর্কটিক, দক্ষিণ মেরুর এন্টার্কটিক, ভারতেরলাদাখ প্রভৃতি মরুভূমি।

২.  উষ্ণমরুভূমি: সাহারা (উত্তর আফ্রিকা), কালাহারি (দক্ষিণ আফ্রিকা), আরব (মধ্যপ্রাচ্য), গোবি (মঙ্গোলিয়া), থর (ভারত ও পাকিস্তান), তাকমালাকান (চীন), পাতাগুনিয়ান (দক্ষিণ আমেরিকা), গ্রেট ভিক্টোরিয়া (অস্ট্রেলিয়া), দস্ত-ই-লূত (ইরান) প্রভৃতি মরুভূমি।

 

সমভূমি: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু মৃদু ঢালবিশিষ্ট সুবিস্তৃত ভূমিকে সমভূমি বলে। এটি ২ ধরনের। যথা:

      ১. ক্ষয়জাত: এটি মাটি ক্ষয় হয়ে হয়ে সৃষ্টি হয়। যেমন: সাইবেরিয়ার সমভূমি, বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়াল, বরেন্দ্রভূমি (সোপান অঞ্চল) ইত্যাদি। এ ধরনের সমভূমি হলো:

    ক. পাদদেশীয় সমভূমি: রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল

    খ. স্রোতজ সমভূমি: খুলনা ও পটুয়াখালি অঞ্চল এবং বরগুনা জেলার কিছু অঞ্চল।

২. সঞ্চয়জাত:এটি পলি সঞ্চিত হতে হতে সৃষ্টি হয়। এগুলো মূলত নদীবিধৌত অববাহিকা।এ ধরনের সমভূমি চার প্রকার। যথা:

ক.প্লাবন সমভূমি: ধলেশ্বরী ও যমুনার প্লাবন ভূমি।

খ.বদ্বীপ সমভূমি: গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল।

    গ.উপকূলীয় সমভূমি: চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল।

ঘ.হিমবাহ সমভূমি: কানাডার প্রেইরি অঞ্চল ও মধ্য ইউরোপের সমভূমি।

 


ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন


যে কার্যাবলির কারণে প্রাকৃতিকভাবে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয় তাকে ভূপ্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়া তিনভাবে হয়ে থাকে। যথা:

  • আকস্মিক পরিবর্তন: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূকম্পন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের সংকোচন, ভূগর্ভের তাপ ও অন্যান্য প্রচণ্ড শক্তির ফলে ভূপৃষ্ঠে হঠাৎ যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে আকস্মিক পরিবর্তন বলে। এটি প্রধাণত ভূমিকম্প, সুনামি ও আগ্নেয়গিরিরি ফলে সৃষ্টি হয়।
  • ভূমিকম্প ও সুনামি:ভূ-অভ্যন্তরস্থ শিলারাশিতে সঞ্চিত শক্তির আকস্মিক অবমুক্তির কারণে সৃষ্ট স্পন্দন থেকে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ভূপৃষ্ঠের নিচে ৫ কি. মি. থেকে ১১২৬ কি. মি. পর্যন্ত ভূমিকম্প (Earthquake) হতে পারে। ভূকম্পন যদি সমুদ্রের তলদেশে হয়ে বিশাল ঢেউ এর সৃষ্টি করে তাকে সুনামিবলে। সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরে বেশি হয়। ভূমিকম্প প্রশান্ত মহাসাগরের বহিঃসীমানা বরাবর ঘটে। প্রধানত জাপান, চিলি, ফিলিপাইন, আলাস্কায় ভূমিকম্প বেশি হয়।ভূমিকম্প প্রধাণত৩ ধরনের। যথা: অগভীর (সবচেয়ে বেশি হয়), মাঝারি ও গভীর।

 

আগ্নেয়গিরি: ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ বেশি হলে সেখানে গর্ত বা ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং সেই ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন পদার্থ নির্গত হয় তাকে আগ্নেয়গিরি (Volcano) বলে।

উদগিরিত পদার্থকে লাভা বলে।

লাভার উর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হওয়াকে (Eruption) অগ্ন্যুৎপাত বলে।

আগ্নেয়গিরির উদগিরণ মুখকে জ্বালামুখ বলে।

উদগিরণ শেষে জ্বালামুখ ধ্বসে পড়ে যে গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে ক্যালডেরা বলে।

লাভা ঠান্ডা হয়ে যে দ্বীপের সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় দ্বীপ বলে। যেমন: হাওয়াই দীপপুঞ্জ (যুক্তরাষ্ট্র)

এই লাভা যখন ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে গলিত অবস্থায় থাকে তাকে ম্যাগমা বলে।

সব আগ্নেয়গিরি মহাদেশ ও সমুদ্রসীমানা বরাবর অবস্থিত। এই সীমানাকে আগ্নেয় মেখলা বলে।

আগ্নেয়গিরির উৎক্ষিপ্ত পদার্থে হাইড্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোক্লরিক এসিড, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি গ্যাস থাকে। সবচেয়ে বেশি জলীয়বাষ্প থাকে। স্ট্রম্বোলি আগ্নেয়গিরিকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলা হয়। আগ্নেয়গিরি ৩ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:

 

  1. জীবন্ত বা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি: যে আগ্নেয়গিরি থেকে মাঝে মাঝে বা সবসময় অগ্ন্যুৎপাত হয় তাকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি বলে। এটি আবার২ ধরনের। যথা:

ক. অবিরাম আগ্নেয়গিরি: যে আগ্নেয়গিরি থেকে সবসময়অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।যেমন: লাসেনপিক (যুক্তরাষ্ট্র, ক্যালিফোর্নিয়া)

খ. সবিরাম আগ্নেয়গিরি:যে আগ্নেয়গিরি থেকে মাঝে মাঝেঅগ্ন্যুৎপাত ঘটে। যেমন:ভিসুভিয়াস (ইতালি)।

 

  1. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি: যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বহুদিন যাবৎ বন্ধ আছে, তবে যে কোনো সময় অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে। যেমন: ফুজিয়ামা (জাপান)। কোহি সুলতান (ইরান), হেকলা (আইসল্যান্ড)

 

  1. মৃতআগ্নেয়গিরি: যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বহুদিন যাবৎ বন্ধ আছে এবং ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাত ঘটার সম্ভাবনা নেই। যেমন: কোহিসুলতান (ইরান), হ্যাকলা (আইসল্যান্ড)।

 

√ আগ্নেয়গিরির ফলে ৪ ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়। যথা:

ক. আগ্নেয়দ্বীপ (যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ)

খ. আগ্নেয় হ্রদ (যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার মাউন্ট আতাকমা হ্রদ)

গ. আগ্নেয় সমভূমি (উত্তর আমেরিকার স্লেক নদীর লাভা সমভূমি)

ঘ. আগ্নেয় মালভূমি (ভারতের দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণমৃত্তিকাময় মালভূমি)

 

  • ধীর পরিবর্তন: বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে বিশাল এলাকা জুড়ে ধীরে ধীরে যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তাকে ভূপৃষ্ঠের ধীর পরিবর্তনবলে। মূলত এই ধীর পরিবর্তনের কারণে ভূপৃষ্ঠে ক্ষয়জাত ও সঞ্চয়জাত পরিবর্তন ঘটে। নিম্নে ধীর পরিবর্তনের কারণগুলো বর্ণিত হলো:

√ বায়ুপ্রবাহ:বাতাসের কারণে তথা বায়ুপ্রবাহে ভূমিক্ষয় হয়।

 

√ বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি অঞ্চলের বেশি ভূমিক্ষয় ঘটে।

 

√ হিমবাহ: এটি এক প্রকার চলন্ত বরফের স্তুপ। একে বরফের নদী বলে। এর ফলে ভূমিক্ষয় ঘটে। ভারতের কারাকোরাম পর্বতের ‘গ্লেট বালটোরা’ সবচেয়ে বড় হিমাবাহ। এর দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার।

 

√ নদীর কারণে সৃষ্ট পরিবর্তন: নদী প্রবাহের কারণে প্রকৃতিতে মূলত দুই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন:

১) ক্ষয়জাত

২) সঞ্চয়জাত

১) নদীর ক্ষয়জাত ভূমিরূপ: নদীর গতি ও পানিপ্রবাহের কারণে এ ধরনের ভূমিক্ষয় ঘটে। নদীর গতিপথ ৩ ধরনের। যথা:

  • ক. ঊর্ধ্বগতি: পর্বতের যে স্থান থেকে নদীর উৎপত্তি হয়েছে সেখান থেকে সমভূমিতে পৌঁছানো পর্যন্ত অংশকে নদীর ঊর্ধ্বগতি বলে। এ ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর স্রোতের বেগ প্রবল হওয়ার কারণে নদী বড় বড় শিলাখণ্ড বহন করে নিচের দিকে অগ্রসর হয়। এর ফলে নিম্নক্ষয় বেশি হয় এবং ‘V’ আকৃতির উপত্যকা তৈরি হয়।
  • খ. মধ্যগতি: পার্বত্য অঞ্চল পার হয়ে নদী যখন সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন এর প্রবাহকে মধ্যগতি বলে। এর ফলে পার্শ্বক্ষয় বেশি হয় এবং ‘U’ আকৃতির উপত্যকা তৈরি হয়।
  • গ. নিম্নগতি:নদীর জীবনচক্রের শেষ পর্যায় হলো নিম্নগতি। এ অবস্থায় স্রোত একেবারে কমে যায়। এর ফলে নিম্নক্ষয়বন্ধ হয় ও পার্শ্বক্ষয় অল্প পরিমাণে হয়। নদীর উপত্যকা খুব চওড়া ও অগভীর হয়। স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় পানিবাহিত বালুকণা, কাদা প্রর্ভতি নদীগর্ভে ও মোহনায় সঞ্চিত হয়।
  • গিরিখাত ও ক্যানিয়ন: ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর প্রবল স্রোত খাড়া পর্বতগাত্র বেয়ে নিচে প্রবাহিত হওয়ার সময় দুই পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ যে নদীপথ তৈরি হয় তাকে গিরিখাত (Gorge) বলে। সিন্ধু নদীর গিরিখাত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গিরিখাত। গভীর ও দীর্ঘতম গিরিখাতকে ক্যানিয়ন (Canyon) বলে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্রান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীর গিরিখাত।
  • জলপ্রপাত: ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় কঠিন ও নরম শিলার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহের সময় নরম শিলা ক্ষয়ে ভূগর্ভস্থ গর্তের সৃষ্টি হয় এবং সেখানে উঁচু ও কঠিন শিলাস্তর থেকে খাড়াভাবে পানির পতনকে জলপ্রপাত (Waterfall) বলে। উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স নদীরনায়াগ্রা জলপ্রপাত পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত।

 

     ২) নদীর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ: নদীর গতি ও পানিপ্রবাহের কারণে এ ধরনের ভূমিসঞ্চয় ঘটে। যেমন:

  • পলল কোণ ও পলল পাখা: পার্বত্য অঞ্চল থেকে হঠাৎ কোনো নদী যখন সমভূমিতে পতিত হয় তখন শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি পাহাড়ের পাদদেশে সমভূমিতে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার ন্যায় ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এরূপ ভূমিকে পলল কোণ ও পলল পাখা বলে। হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীর গতিপথে এরূপ ভূখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়।
  • পাদদেশীয় পলল সমভূমি: অনেক সময় পাহাড়ি নদী পাদদেশে পলি সঞ্চয় করতে করতে একটা বিশাল সমভূমি গড়ে তোলে, এরূপ ভূমিকে পাদদেশীয় পলন সমভূমি বলে। বাংলাদেশের তিস্তা, আত্রাই, করতোয়া নদী সংলগ্ন রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থানে পলল সমভূমি দেখতে পাওয়া যায়।
  • প্লাবন সমভূমি: প্লাবন বা বন্যার শেষে নদীর দুপাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তরের কাদা ও পলি জমতে জমতে যে বিস্তৃত ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে। বাংলাদেশের প্রায় সমগ্র জেলাই পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা প্রভৃতি নদীবিধৌত প্লাবন সমভূমি। এ ধরণের সমভূমিতে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, বালুচর ও প্রাকৃতিক বাধ প্রর্ভতি সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়।
  • বদ্বীপ সমভূমি:মোহনার কাছাকাছি নদীর স্রোতের বেগ কমে গেলে নদীরতলদেশে বালু ও কাদা সঞ্চিত হয়। ঐ সমস্ত বালু ও কাদা নদীর মুখে জমে নদীমুখ প্রায় বন্ধ হয়ে ধীরে ধীরে এর স্তর সাগরের পানির উচ্চতার উপরে উঠে যায়। তখন নদী বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে সাগরে পতিত হওয়ার সময় ত্রিকোণাকার এক নতুন সমতলভূমি তৈরি হয়। এটা বাংলা ‘ব’ বর্ণের মতো দেখায় বলে একে ব-দ্বীপ সমভূমি বলে। এই ভূমি গ্রিক বর্ণ ডেলটা’র মতো দেখতে তাই এর ইংরেজি নাম Delta হয়েছে। হুগলী থেকে পূর্ব দিকে মেঘনার সীমানা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলা দেশের সমস্ত দক্ষিণাংশ গঙ্গা ও পদ্মা নদীর বিখ্যাত ব-দ্বীপ অঞ্চল।

 

→ ব্যারিয়ার রীফ:এটি উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘ ও সরু পলিস্তরযুক্ত প্রবালদ্বীপ, যা মূল ভূখন্ড থেকে জলাভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন ওনিমজ্জিত থাকে, একেব্যারিয়ার রীফ বলে।

→ বালিয়াড়ি ও বারখান:বাতাসের সাথে বালুকণা প্রবাহিত হয়ে যে বালুর ঢিবি সৃষ্টি হয় তাকে বালিয়াড়ি বলে। এর আকৃতি অর্ধচন্দ্রাকৃতির ন্যায় বাঁকা হলে তাকে বারখান বলে।

→ প্রস্রবণ বা ঝরনা: ভূ-অভ্যন্তরে সঞ্চিত পানি ভূপৃষ্ঠের কোনো ছিদ্র দিয়ে নির্গত হলে তাকে প্রস্রবণ বা ঝরনা বলে।

 

ধীর ও আকস্মিক পরিবর্তন:

ভূ-আলোড়ন: এর ফলে ভূপৃষ্ঠে ধীর ও আকস্মিক উভয় পরিবর্তন ঘটে। এটি মূলত তাপ ও চাপের কারণে ভূগর্ভস্থ পরিবর্তন। ভূ-অভ্যন্তরীণ অথবা বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের আকস্মিক অথবা ধীর পরিবর্তনকে ভূগাঠনিক ঝামেলা বা ভূ-আলোড়ন বলে।

 


নমুনা প্রশ্ন


১. বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি?

ক) ট্রপোমণ্ডল

খ) থর্মোমণ্ডল

গ) সমমণ্ডল

ঘ) এক্সোমণ্ডল

উত্তরঃ ঘ


২. ওজোন গ্যাস বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে বিদ্যমান?

ক) ট্রপোমণ্ডল

খ) স্ট্রাটোমণ্ডল

গ) মেসোমণ্ডল

ঘ) তাপমণ্ডল

উত্তরঃ খ


৩. হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য আছে বায়ুমণ্ডল কোন স্তরে?

ক) ম্যাগনিটোমণ্ডল

খ) থার্মোমণ্ডল

গ) আয়নমণ্ডল

ঘ) মেসোমণ্ডল

উত্তরঃ ক


৪. ওজোনস্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে কত মাইল উপরে?

ক) ৫০ মাইল

খ) ৬৫ মাইল

গ) ৮০ মাইল

ঘ) ১৬ মাইল

উত্তরঃ খ


৫. বায়ুর যে উপাদান জীবন ধারণের জন্যে অতি প্রয়োজনীয় –  

ক) অক্সিজেন

খ) ওজোন

গ) জলীয় বাষ্প

ঘ) নাইট্রোজেন

উত্তরঃ ক


৬. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপাদান কত?

ক) ০.৮০%

খ) ০.৪১%

গ) ০.০৩%

ঘ) ২০.৭১%

উত্তরঃ খ


৭. আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ামক নয় কোনটি?

ক) পর্বতের অবস্থান

খ) বায়ুপ্রবাহ

গ) সমুদ্রস্রোত

ঘ) বারিপাত

উত্তরঃ ঘ


৮. সমুদ্র নিকটবর্তী এলাকার জলবায়ুকে বলে – 

ক) মহাদেশীয় জলবায়ু

খ) সমভাবাপন্ন জলবায়ু

গ) চরমভাবাপন্ন জলবায়ু

ঘ) মেরুদেশীয় জলবায়ু

উত্তরঃ খ


৯. পৃথিবী তাপ হারিয়ে শীতল হয় কোন প্রক্রিয়ায়?

ক) পরিবহন

খ) বিকিরণ

গ) পরিচলন

ঘ) পরিক্রমন

উত্তরঃ খ


১০. পৃথিবীতে কতটি চাপবলয় আছে?

ক) সাতটি

খ) পাঁচটি

গ) চারটি

ঘ) দুইটি

উত্তরঃ ক


১১. বায়ুর চাপ সম্পর্কে কোন তথ্যটি অসত্য?

ক) তাপ কমলে বায়ুর চাপ কমে

খ) তাপ কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে

গ) বায়ু আর্দ্র হলে বায়ুর চাপ কমে

ঘ) শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হলে বায়ুর চাপ বাড়ে

উত্তরঃ ক


১২. বায়ুর চাপ কমে গেলে বায়ুপ্রবাহ – 

ক) স্বাভাবিক থাকে

খ) বেড়ে যায়

গ) কমে যায়

ঘ) বন্ধ হয়ে যায়

উত্তরঃ খ


১৩. স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি বর্গইঞ্চিতে মানুষের উপর বায়ুর চাপ – 

ক) ১০ নিউটন

খ) ১৫ পাউন্ড

গ) ৭৬ সেন্টিমিটার

ঘ) ১০ মিটার

উত্তরঃ খ


১৪. বায়ুর আর্দ্রতা বলতে বায়ুতে কীসের উপস্থিতিকে বুঝায়?

ক) তাপমাত্রা

খ) গ্যাসীয় পদার্থ

গ) জলীয় বাষ্প

ঘ) ধূলিকণা

উত্তরঃ গ


১৫. শীতকালে ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায়, কারণ – 

ক) বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে

খ) বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে

গ) বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে

ঘ) বাতাসে তাপমাত্রা কম থাকে

উত্তরঃ গ


১৬. কোনটি ব্যতিক্রম?

ক) কুয়াশা

খ) শিশির

গ) তুষার

ঘ) বৃষ্টি

উত্তরঃ ঘ


১৭. জমাট হিমকণাকে কী বলে?

ক) শিশির

খ) তুহিন

গ) কুজ্ঝটিকা

ঘ) তুষার

উত্তরঃ খ


১৮. গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ু কোন দিক থেকে প্রবাহিত হয়?

ক) দক্ষিণ-পশ্চিম

খ) উত্তর-পূর্ব

গ) পূর্ব-পশ্চিম

ঘ) উত্তর-দক্ষিণ

উত্তরঃ ক


১৯. আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলে –  

ক) সাইক্লোন

খ) টাইফুন

গ) হারিকেন

ঘ) টর্নেডো

উত্তরঃ গ


২০. সকল প্রকার বারিপাত কীসের উপর নির্ভরশীল?

ক) সমুদ্রস্রোত

খ) জলীয় বাষ্প

গ) পানিপ্রবাহ

ঘ) সূর্য

উত্তরঃ খ


২১. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ কোন বায়ুর অন্তর্ভূক্ত?

ক) অয়ন বায়ু

খ) মেরু বায়ু

গ) প্রত্যয়ন বায়ু

ঘ) মৌসুমী বায়ু

উত্তরঃ গ


২২. শীতকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় – 

ক) মহাদেশীয় বায়ু

খ) মৌসুমী বায়ু

গ) অনিয়মিত বায়ু

ঘ) স্থানীয় বায়ু

উত্তরঃ ক


২৩. ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় বায়ুর নাম কী?

ক) সাইমুম

খ) চিনুক

গ) খামসিন

ঘ) লু

উত্তরঃ ঘ


২৪. জলীয় বাষ্পের প্রধান উৎস কোনটি?

ক) বায়ুমণ্ডল

খ) সূর্য

গ) সমুদ্র

ঘ) মেঘ

উত্তরঃ গ


২৫. বায়ু সে উষ্ণতায় ঘনীভূত হয় তাকে কী বলে?

ক) ঘনীভবন

খ) শিশিরাঙ্ক

গ) বাষ্পীভবন

ঘ) ঊর্ধ্বপাতন

উত্তরঃ খ


২৬. মহাদেশীয় ভূত্বকের প্রধান উপাদান কী কী?

ক) সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম

খ) সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম

গ) আয়রন ও নিকেল

ঘ) সিলিকন ও পটাশিয়াম

উত্তরঃ খ


২৭. পৃথিবীতে যে মৌলিক পদার্থ বেশি বিদ্যমান – 

ক) নাইট্রোজেন

খ) সিলিকা

গ) অ্যালুমিনিয়াম

ঘ) অক্সিজেন

উত্তরঃ ঘ


২৮. কোন শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায়?

ক) আগ্নেয় শিলা

খ) পাললিক শিলা

গ) রূপান্তরিত শিলা

ঘ) অস্তরীভূত শিলা

উত্তরঃ খ


২৯. সবচেয়ে নরম খনিজ পদার্থ কোনটি?

ক) হীরা

খ) বোরজেন

গ) টেলক

ঘ) গন্ধক

উত্তরঃ গ


৩০. ‘গ্রাফাইট’ তৈরি হয় – 

ক) চুনাপাথর থেকে

খ) কয়লা থেকে

গ) গ্রানাইট থেকে

ঘ) কোয়ার্টজ থেকে

উত্তরঃ খ


৩১. কোনটি ল্যাকোলিথ পর্বত?

ক) লবণ (পাকিস্তান)

খ) হেনরি (যুক্তরাষ্ট্র)

গ) কিলিমাঞ্জারো (আফ্রিকা)

ঘ) ফুজিয়ামা (জাপান)

উত্তরঃ খ


৩২. কানাডার প্রেইরি অঞ্চল কোন সমভূমির অন্তর্ভূক্ত?

ক) ক্ষয়জাত সমভূমি

খ) প্লাবন সমভূমি

গ) হিমবাহ সমভূমি

ঘ) উপকূলীয় সমভূমি

উত্তরঃ গ


৩৩. আগ্নেয়গিরির উদগরিত পদার্থকে কী বলে?

ক) ম্যাগমা

খ) লাভা

গ) অগ্ন্যুৎপাত

ঘ) ক্যালডেরা

উত্তরঃ খ


৩৪. কোন আগ্নেয়গিরিকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলা হয়?

ক) ভিসুভিয়াস

খ) লাসেনপিক

গ) স্ট্রম্বোলি

ঘ) কোটোপ্যাক্সি

উত্তরঃ গ


৩৫. যে প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠে ধীর ও আকস্মিক উভয় পরিবর্তন আনে তাকে বলে – 

ক) অগ্ন্যুৎপাত

খ) ভূমিকম্প

গ) ভূ-আলোড়ন

ঘ) নগ্নীভবন

উত্তরঃ গ


গ্রন্থপঞ্জি


১. রওশন আরা বেগম, আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ, ‘মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, মার্চ ১৯৯৬)

২. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, শওকত আরা বেগম প্রমুখ ‘বাংলাদেশে ও বিশ্বপরিচয়’ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১৩)

৩. সেলিনা শাহজাহান, ড. শেখ মো. রেজাউল করিম প্রমুখ,‘ভূগোল ও পরিবেশ’(জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, অক্টোবর ২০১২)

৪. কে. আশরাফুল আলম, ‘বৈশ্বিক পরিবেশের প্রাকৃতিক ভূগোল (পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০১৪)

৫. রফিক আহমেদ, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ুবিজ্ঞান’ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৭)