ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়, ব্যাকরণের প্রাথমিক আলোচনা, ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, নমুনা প্রশ্ন
ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ
ব্যাকরণ (Grammar) বলতে ভাষার অবকাঠামোগত গবেষণা ও উন্নয়নকে বুঝায়। ব্যাকরণ ভাষার সংবিধান। ভাষা ব্যাকরণের প্রাণ। ‘ব্যাকরণ’ শব্দটি তৎসম শব্দ। ব্যাকরণ (বি + আ + কৃ + অন) শব্দটি উপসর্গ ও প্রত্যয়ের নিয়মে গঠিত। ব্যাকরণের বুৎপত্তিগত অর্থ ‘বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’। ভাষাকে ভিত্তি করে ব্যাকরণশাস্ত্র রচিত হয়। ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সাধারণত যে শাস্ত্রে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়তাকে ব্যাকরণ বলে। বাংলা ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অবকাঠামো যে শাস্ত্রে আলোচিত হয় তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়
প্রতিটি ভাষারই মৌলিক অংশ চারটি: ধ্বনি (Sound), শব্দ (Word), বাক্য (Sentence) ও অর্থ (Meaning)। পৃথিবীর সব ভাষার ব্যাকরণে এ চারটি মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয় চারটি: ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology), শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology), বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) ও অর্থতত্ত্ব বা বাগর্থ বিজ্ঞান (Semantics)। এ ছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography), ছন্দোবিজ্ঞান ও অলংকারশাস্ত্র (Prosody & Rhetoric) প্রভৃতিও বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
- ধ্বনিতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, যুক্তবর্ণ, বর্ণ সংযোগ, বর্ণ বিশ্লেষণ, ধ্বনির উচ্চারণ বিধি, ণত্ব ও ষত্ব বিধান, ধ্বনি পরিবর্তন, সন্ধি ও বাংলা বানানের নিয়ম।
- শব্দতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: শব্দের শ্রেণিবিভাগ, সংখ্যাবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, লৈঙ্গিক শব্দ, বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ, একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ, পারিভাষিক শব্দ, বচন, পদাশ্রিত নির্দেশক, পদ প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার ভাব, বাংলা অনুজ্ঞা, পুরুষ, অতিশায়ন, কারক ও বিভক্তি, অনুসর্গ, উপসর্গ, ধাতু, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, সমাস, বাগধারা, প্রবাদ প্রবচন, সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ।
- বাক্যতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: বাক্য প্রকরণ, উদ্দেশ্য ও বিধেয়, বাক্য সংকোচন, বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম, উক্তি, বাচ্য ও বিরাম চিহ্ন।
- অর্থতত্ত্বোর আলোচ্য বিষয়: শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের শ্রেণিবিন্যাস ও অর্থ পরিবর্তন।
ব্যাকরণের প্রাথমিক আলোচনা
- ধ্বনি (Sound): মানুষের বাক-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজ বা মুখে উচ্চারিত শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে ধ্বনি বলে। ধ্বনি ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, ভাষার মৌখিক রূপ ও ভাষার মূল ভিত্তি বা উপাদান। ভাষা সৃষ্টি হয় ধ্বনির সাহায্যে এবং ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
- বাগযন্ত্র (Voice Organ): গলনালী, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহবা, তালু, দন্ত, নাসিকা, ওষ্ঠ ইত্যাদি বাক-প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বাগযন্ত্র বলে। ধ্বনি উচ্চারণের মূল উপকরণ ২ টি: জিহবা ও ওষ্ঠ।
- ধ্বনিমূল (Voice Organ): বাক-প্রত্যঙ্গজাত ধ্বনির সূক্ষ্মতম মৌলিক অংশ বা একককে ধ্বনিমূল বলে।
- বর্ণ (Letter): ধ্বনির লিখিত রূপ বা ধ্বনি নির্দেশক সাংকেতিক চিহ্নকে বর্ণ বলে। ধ্বনির লিখিত রূপকে হরফ বা লিপিও (Script) বলা হয়।
- অক্ষর (Syllable): শব্দের মাঝে স্বরধ্বনির অবস্থান বা নিঃশ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একবারে একত্রে উচ্চারিত হয় তাকে অক্ষর বলে। যেমন: ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দে (বিশ্ + শো + বিদ্ + দা + লয়্) এ পাঁচটি অক্ষর আছে। অক্ষর দু প্রকার:
স্বরান্ত অক্ষর বা মুক্তাক্ষর (Opened Syllable): যে অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন: ভালোবাসি তোমাকে। এ বাক্যর প্রতিটি অক্ষরই মুক্তাক্ষর।
ব্যঞ্জনান্ত অক্ষর বা বদ্ধাক্ষর (Closed Syllable): যে অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে বদ্ধাক্ষর বলে। যেমন: সোমবার দিন হরতাল। এ বাক্যের প্রতিটি অক্ষরই বদ্ধাক্ষর। - বর্ণমালা(Alphabet): বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণগুলির লিখিত সমষ্টিকে বর্ণমালা বলে।
- বর্ণ সংযোগ: বর্ণে বর্ণে যোগ করাকে বর্ণ সংযোগ বলে। বিভিন্ন বর্ণ সংযোগে শব্দ সৃষ্টি হয়। যেমন: ক + ব্ + ই = কবি।
- বর্ণ বিশ্লেষণ: শব্দের বর্ণগুলি পৃথক পৃথক করে দেখানোর নাম বর্ণ বিশ্লেষণ। যেমন: বিষ্ণু = ব্ + ই + ষ্ + ণ্ + উ।
- মাত্রা: বাংলা বর্ণমালার কোনো কোনো বর্ণের উপরে যে রেখা বা কষি দেওয়া হয় তাকে মাত্রা বলে।
- হসন্ত চিহ্ন: উচ্চারণের সুবিধার্থে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি ‘অ’ যুক্ত করা হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণ যুক্ত না হলে অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে কারযুক্ত বর্ণ আলাদা করলে ব্যঞ্জনবর্ণের নিচে একটি বিশেষ চিহ্ন দেওয়া হয়, একে হসন্ত বা হলন্ত চিহ্ন বলে। যেমন: ক = ক্ + অ; বি = ব্ + ই।
- রূপ (Morpheme): শব্দের ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ অংশকে রূপ বলে। এজন্য শব্দতত্ত্ব কে রূপতত্ত্ব বলা হয়।
- শব্দ (Word): কিছু ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে বা বর্ণ একত্রে বসে যদি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বলে। শব্দ ভাষা ও বাক্যের মূল উপাদান, বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক বা প্রাণ।
- পদ (Parts of Speech): বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দকেই পদ বলে। যেমন: অনুষ্ঠানে। আমি অনুষ্ঠান দেখেছি। প্রথম উদাহরণে অনুষ্ঠানে ‘এ’ বিভক্তি এসেছে এবং পরবর্তী উদাহরণের প্রতিটি শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং এগুলো পদ।
- বাক্য (Sentence): যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে। বাক্য ভাষার মূল উপকরণ বা প্রাণ।
- অর্থ (Meaning): ভাষার আদান-প্রদান বা ভাব বিনিময়ের সাথে অর্থের সম্পর্ক। শব্দ বা বাক্যের অর্থ না বুঝলে মনেব ভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ
- বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলো প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১. স্বরধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরে কোথাও কোনো প্রকার বাঁধা না পায়, অথবা যে সকল ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় তাদেরকে স্বরধ্বনি (Vowel sound) বলে। আবার কিছু কিছু ধ্বনি আছে যাদের অবস্থান স্বর ও ব্যঞ্জনের মাঝামাঝি এদেরকে অর্ধস্বরধ্বনি (Semi-vowel) বলে। বাংলায় অর্ধস্বরের সংখ্যা চারটি। (ই উ এ ও)।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি: যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরে কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাঁধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, অথবা যে সকল ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্যে উচ্চারিত হয় তাদেরকে ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant sound) বলে। - বাংলা ভাষার বর্ণগুলো দুই প্রকার। যথা-
১. স্বরবর্ণ: স্বরধ্বনি-দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে স্বরবর্ণ বলে। স্বরবর্ণ মোট ১১ টি। স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘কার’ বলা হয়। ‘কার’ যুক্ত স্বরধ্বনির সংখ্যা ১০ টি। ‘অ’ এর কোনো কার নেই। প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে একটি ‘অ’ লুপ্ত অবস্থায় থাকে। এ জন্য ‘অ’-কে নিলীন বর্ণ বলে।
২. ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনধ্বনি-দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। ব্যঞ্জনবর্ণ মোট ৩৯টি কিন্তু প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৫ টি। (ৎ, ং, ঃ, ঁ) এই চারটি প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণ নয়। ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘ফলা’ বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ফলা’ মোট ৬ টি। যেমন- ব ফলা, ম ফলা, ল ফলা, র ফলা, য ফলা, ন ফলা। - বাংলা বর্ণমালা:
বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০ টি সরল বা অসংযুক্ত বর্ণ আছে।
স্বরবর্ণ- ১১ টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ- ৩৯ টি।
স্বরবর্ণ: অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ = ১১ টি।
ব্যঞ্জনবর্ণ: ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ময র ল শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ ং ঃ ঁ = ৩৯ টি।
স্বরবর্ণ - গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বরধ্বনি ২ প্রকার। যেমন-
১. মৌলিক স্বরধ্বনি: যে ধ্বনিগুলো একক স্বরের অধিকারী অর্থাৎ যাদেরকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বা একক স্বরধ্বনি বলে। মৌলিক স্বরধ্বনি ৭ টি। (অ আ ই উ এ ও অ্যা)।
২. যৌগিক স্বরধ্বনি: যে ধ্বনিগুলো একটি স্বর ও একটি অর্ধস্বরের সমন্বয়ে গঠিত অর্থাৎ যাদেরকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যৌগিক স্বরধ্বনি ২৫ টি। কিন্তু স্বরবর্ণে যৌগিক স্বরের প্রতীকী বর্ণ ২ টি। (ঐ ঔ)। যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর, দ্বৈতস্বর বা দ্বি-স্বর (Diphthong) বলা হয়। - উচ্চারণ-কাল ও সময়অনুসারে স্বরধ্বনি ২ প্রকার। যেমন-
১. হ্রস্ব-স্বর: অল্প সময়ে যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণ করা যায় তাকে হ্রস্বস্বর বলে। হ্রস্ব স্বর ৪ টি। (অ ই উ ঋ)
২. দীর্ঘস্বর: যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণে অধিক সময় লাগে তাকে দীর্ঘস্বর বলে। দীর্ঘ স্বর ৭ টি। (আ ঈ ঊ এ ঐ ও ঔ)
ব্যঞ্জনবর্ণ - উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ৫ প্রকার। যথা-
- উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ২ প্রকার। যথা-
১. অঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না তাকে বলা হয় অঘোষ (Unvoiced) ধ্বনি ।
২. ঘোষ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় তাকে বলে ঘোষ (Voiced) ধ্বনি। - ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনিগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-
১. অল্পপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের স্বল্পতা থাকে তাকে বলে অল্পপ্রাণ (Unaspirated) ধ্বনি।
২. মহাপ্রাণ ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের চাপের আধিক্য থাকে তাকে বলে মহাপ্রাণ (Aspirated) ধ্বনি।
৩. নাসিক্য ধ্বনি: যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নাক দিয়ে ফুসফুসতাড়িত বাতাস বের হয় তাকে বলে নাসিক্য (Nasal) ধ্বনি। - নিম্নে অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ এবং অঘোষ ও ঘোষ স্পর্শব্যঞ্জন ও নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো ছকে দেখানো হলো:
- উল্লেখ্য, ঃ (বিসর্গ) হলো ‘হ’ এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি। হ এর উচ্চারণ ঘোষ কিন্তু ঃ এর উচ্চারণ অঘোষ। তবে ধ্বনিগত প্রতিবেশের কারণে ‘হ’ কখনো অঘোষ আবার কখনো ঘোষবৎ উচ্চারিত হয়। শ, স হলো অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি।
- ব্যঞ্জনবর্ণের পরিচয়
ব্যঞ্জনবর্ণে বর্গ বাগুচ্ছ ৫ টি। যেমন- ক-বর্গ, চ-বর্গ, ত-বর্গ, ট-বর্গ ও প-বর্গ। বর্গীয়ধ্বনি ২৫ টি। যেমন- ক খ গ ঘ ঙ, চ ছ জ ঝ ঞ, ট ঠ ড ঢ ণ, ত থ দ ধ ন, প ফ ব ভ ম।
ব্যঞ্জনবর্ণে স্পৃষ্ট বা স্পর্শধ্বনির (Plosive) সংখ্যা সর্বাধিক ১৬ টি। যেমন- ক খ গ ঘ, ট ঠ ড ঢ, ত থ দ ধ, প ফ ব ভ
- বর্ণের মাত্রাবিন্যাস
যুক্তবর্ণ
যুক্তব্যঞ্জনধ্বনির দ্যোতনার জন্য দুটোবা অধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রিত হয়ে সংযুক্তবর্ণবা যুক্তব্যঞ্জন (Ligature) গঠিত হয়। একে আবার যুগ্মব্যঞ্জন বা ধ্বনিসংযুক্তি বলে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু যুক্তবর্ণ নিচে দেওয়া হলো:
নমুনা প্রশ্ন
১. ভাষার মূল উপাদান কোনটি?
ক) ধ্বনি
খ) বাক্য
গ) শব্দ
ঘ) বর্ণ
উত্তর: ক
২. বাংলা ব্যাকরণ প্রথম কত সালে প্রকাশিত হয়?
ক) ১৭৩৪ সালে
খ) ১৭৪৩ সালে
গ) ১৮০১ সালে
ঘ) ১৭৭৮ সালে
উত্তর: খ
৩. প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতা –
ক) আসসুম্পসাও
খ) উইলিয়াম কেরি
গ) ব্রাসি হ্যালহেড
ঘ) রামমোহন রায়
উত্তর: গ
৪. বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক কোনটি?
ক) ধ্বনি
খ) শব্দ
গ) বর্ণ
ঘ) অক্ষর
উত্তর: খ
৫. ভাষার মৌলিক ক্ষুদ্রতম একক হল-
ক) শব্দ
খ) ধ্বনি
গ) অক্ষর
ঘ) কণ্ঠ
উত্তর: খ
৬. ব্যাকরণের প্রধান কাজ কোনটি?
ক) ভাষার শৃংখলা
খ) ভাষার উন্নতি
গ) ভাষার নিয়ম প্রতিষ্ঠা
ঘ) ভাষার বিশ্লেষণ
উত্তর: গ
৭. কোন বাঙালি সর্বপ্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন?
ক) রাজা রামমোহন রায়
খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ঘ) এন বি হ্যালহেড
উত্তর: ক
৮. ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কতটি?
ক) দুটি
খ) তিনটি
গ) চারটি
ঘ) পাঁচটি
উত্তর: গ
৯. কোনটি ধ্বনিতত্তে¡র আলোচ্য বিষয় নয়?
ক) সন্ধি
খ) ন-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান
গ) বচন
ঘ) অক্ষর
উত্তর: গ
১০. ‘পূর্ণচ্ছেদ’ বিরাম চিহ্নটি কোন ব্যাকরণ থেকে বাংলা ব্যাকরণে এসেছে?
ক) বাংলা ব্যাকরণ থেকে
খ) হিন্দি ব্যাকরণ থেকে
গ) সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে
ঘ) তৎসম ব্যাকরণ থেকে
উত্তর: গ
১১. বাংলা ব্যাকরণণে ‘বচন ও লিঙ্গ’ আলোচিত হয় কোন বিভাগে?
ক) পদক্রমে
খ) বাক্যতত্ত্বে
গ) ধ্বনিতত্ত্বে
ঘ) রূপতত্ত্বে
উত্তর: ঘ
১২. ‘কারক ও বিভক্তি’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?
ক) ছন্দ প্রকরণে
খ) অর্থতত্ত্বে
গ) বাক্যতত্ত্বে
ঘ) রূপতত্ত্বে
উত্তর: ঘ
১৩. কোনটি পদক্রমের আলোচ্য বিষয় নয়?
ক) উক্তি
খ) বচন
গ) ছেদচিহ্ন
ঘ) বাচ্য
উত্তর: খ
১৪. ‘অনুসর্গ’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?
ক) ধ্বনিতত্ত্ব
খ) রূপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) বাক্যতত্ত্ব
উত্তর: খ
১৫. ব্যাকরণের মৌলিক আলোচ্য বিয়ষ নয় কোনটি?
ক) অলঙ্কার
খ) ধ্বনি
গ) রূপ
ঘ) অর্থ
উত্তর: ক
১৬. ‘সমাস ও সন্ধি’ আলোচিত হয় যথাক্রমে ব্যাকরণের কোন অংশে?
ক) রূপতত্ত্বে ও ধ্বনিতত্ত্বে
খ) শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বে
গ) ধ্বনিতত্ত্বে ও শব্দতত্ত্ব
ঘ) পদক্রম ও রূপতত্ত্বে
উত্তর: ক
১৭. পদের রূপ পরিবর্তন ব্যাকরণের কোন অংশের আলোচ্য বিষয়?
ক) বাক্যতত্ত্ব
খ) রূপতত্ত্ব
গ) অর্থতত্ত্ব
ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর: ক
১৮. ব্যাকরণ কত প্রকার হতে পারে?
ক) দু প্রকার
খ) তিন প্রকার
গ) চার প্রকার
ঘ) পাঁচ প্রকার
উত্তর: গ
১৯. ব্যাকরণ শব্দের ‘ব্যা’ কোন নিয়মে হয়েছে?
ক) সন্ধি
খ) সমাস
গ) প্রত্যয়
ঘ) উপসর্গ
উত্তর: ক
২০. বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম কোন ব্যাকরণ থেকে এসেছে?
ক) সংস্কৃত
খ) প্রাকৃত
গ) পালি
ঘ) অবহট্ঠ
উত্তর: ক
২১. ‘দিকনির্দেশনা’ শব্দে কয়টি অক্ষর আছে?
ক) ৪ টি
খ) ৫ টি
গ) ৬ টি
ঘ) ৭ টি
উত্তর: খ
২২. বাক্যের প্রাণ বলা হয় কাকে?
ক) বর্ণকে
খ) শব্দকে
গ) ভাষাকে
ঘ) অক্ষরকে
উত্তর: খ
২৩. ব্যাকরণ কী?
ক) ভাষার ভিত্তি
খ) ভাষার সমন্বয়
গ) ভাষার শাসনতন্ত্র
ঘ) ভাষার প্রাণ
উত্তর: গ
২৪. শব্দের ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ অংশকে বলে –
ক) বর্ণ
খ) ধ্বনি
গ) অক্ষর
ঘ) রূপ
উত্তর: ঘ
২৫. ভাষার মূল উপকরণ কোনটি?
ক) বাক্য
খ) শব্দ
গ) অক্ষর
ঘ) ব্যাকরণ
উত্তর: ক
২৬. ব্যাকরণের প্রাণ কী?
ক) শব্দ
খ) ভাষা
গ) ধ্বনি
ঘ) বাক্য
উত্তর: খ
২৭. “ধ্বনি থেকে আঁট বাধা শব্দই ভাষার ইট।” এই ‘ইট’ কে বাংলা ভাষায় কী বলে?
ক) বাক্য
খ) ব্যাকরণ
গ) বর্ণ
ঘ) কথা
উত্তর: গ
২৮. ধ্বনি উচ্চারণের মূল উপকরণ কি কি?
ক)জিহ্বা ও কণ্ঠ
খ) জিহ্বা ও ওষ্ঠ
গ) জিহ্বা ও গলনালী
ঘ) জিহ্বা ও দন্ত
উত্তর: খ
২৯. ‘বিরাম চিহ্ন’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?
ক) পদক্রম
খ) শব্দতত্ত্ব
গ) ধ্বনিতত্ত্ব
ঘ) অভিধানতত্ত্ব
উত্তর: ক
৩০. একাক্ষর শব্দ নয় কোনটি?
ক) যা
খ) যাই
গ) যায়
ঘ) যাক
উত্তর: খ
৩১. চন্দ্রবিন্দু ( ঁ ) এর ইংরেজি পরিভাষা –
ক) Moon-point
খ) Moon-dot
গ) Moon-light
ঘ) Moon-com
উত্তর: খ
৩২. নিম্নের কোনগুলো দন্ত্য বর্ণ?
ক) র, ষ
খ) ল, স
গ) ক, হ
ঘ) য, য়
উত্তর: খ
৩৩. বর্গীয় বর্ণের পরে এবং শিষ বর্ণের পূর্বের বর্ণগুলোকে বলে –
ক) অযোগবাহ বর্ণ
খ) তাড়নজাত বর্ণ
গ) অন্তঃস্থ বর্ণ
ঘ) পার্শ্বিক বর্ণ
উত্তর: গ
৩৪. প্রকৃত ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা কতটি?
ক) ৩৯ টি
খ) ৩৫ টি
গ) ৩০ টি
ঘ) ৩৮ টি
উত্তর: খ
৩৫. বাংলা বর্ণমালায় অসংযুক্ত বর্ণের সংখ্যা কতটি?
ক) ৩২ টি
খ) ৫০ টি
গ) ১০ টি
ঘ) ৩৯ টি
উত্তর: খ
৩৬. ‘জ ড দ’ উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কোন প্রকার ধ্বনি?
ক) ঘোষ অল্পপ্রাণ
খ) অঘোষ মহাপ্রাণ
গ) ঘোষ মহাপ্রাণ
ঘ) ঘোষ নাসিক্য
উত্তর: ক
৩৭. তরল বর্ণ কোনটি?
ক) ল
খ) র
গ) ড়
ঘ) হ
উত্তর: ক
৩৮. উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী ‘র ড় ঢ়’ কোন জাতীয় বর্ণ?
ক) কণ্ঠ্য
খ) তালব্য
গ) মূর্ধন্য
ঘ) দন্ত্য
উত্তর: গ
৩৯. ‘ক থেকে ম’ পর্যন্ত বর্ণগুলোকে বলা হয় –
ক) ঘৃষ্ট বর্ণ
খ) স্পর্শ বর্ণ
গ) উষ্ম বর্ণ
ঘ) বর্গীয় বর্ণ
উত্তর: ঘ
৪০. ব্যঞ্জনবর্ণে মোট মাত্রাযুক্ত বর্ণ কতটি?
ক) ৪০ টি
খ) ৭ টি
গ) ৩৩ টি
ঘ) ২৬ টি
উত্তর: গ
৪১. বাংলা বর্ণমালায় সরল বর্ণ কয়টি?
ক) ৩৫ টি
খ) ৪০ টি
গ) ৫০ টি
ঘ) ৩৯ টি
উত্তর: গ
৪২. নিচের কোনগুলো অর্ধ্বস্বর?
ক) ও এ
খ) অ আ
গ) য ব
ঘ) হ ং
উত্তর: ক
৪৩. ‘ত্ম্য, ন্ধ্র’ এখানে যুক্তবর্ণের বিশ্লেষণ –
ক) ত+ন+য, ন+দ+র
খ) ত+ম+য, ন+ধ+র
গ) ত+ম+য, ন+ব+র
ঘ) ত+ণ+য, ন+ব+র
উত্তর: খ
৪৪. বাংলা বর্ণমালায় মাত্রাযুক্ত বর্ণ কয়টি?
ক) ২৬ টি
খ) ১৬ টি
গ) ৩৩ টি
ঘ) ৪০ টি
উত্তর: ঘ
৪৫. নিচের কোনটি পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ?
ক) ষ
খ) স
গ) শ
ঘ) হ
উত্তর: ক
৪৬. উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘ছ থ’ কোন ধরনের বর্ণ?
ক) অঘোষ মহাপ্রাণ
খ) ঘোষ মহাপ্রাণ
গ) ঘোষ অল্পপ্রাণ
ঘ) জিহবামূলীয়
উত্তর: ক
৪৭. ঘোষ মহাপ্রাণ কণ্ঠ্য বর্ণ কোনটি?
ক) স
খ) হ
গ) ঙ
ঘ) গ
উত্তর: খ
৪৮. নাসিকা ও অগ্রতালুর সমন্বয়ে উচ্চারিত বর্ণ?
ক) ঙ
খ) ণ
গ) ঞ
ঘ) ম
উত্তর: গ
৪৯. অন্য বর্ণের সাথে যোগ রেখে যে ধ্বনিগুলোর প্রয়োগ হয় তাকে কী বলে?
ক) অন্তঃস্থ বর্ণ
খ) অযোগবাহ বর্ণ
গ) পরাশ্রয়ী বর্ণ
ঘ) ঘর্ষণজাত বর্ণ
উত্তর: খ
৫০. তাড়নজাত ও কম্পনজাত বর্ণগুলো উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী –
ক) পশ্চাৎ দন্তমূলীয় বর্ণ
খ) কণ্ঠ্য বর্ণ
গ) তালব্য বর্ণ
ঘ) ওষ্ঠ্য বর্ণ
উত্তর: ক
তথ্যসূত্র:
১. রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার ও মাহবুবুল হক, প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (বাংলা একাডেমি, জানুয়ারি ২০১৪)
২. রফিকুল ইসলাম ও পবিত্র সরকার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, প্রথম খন্ড (বাংলা একাডেমি, ডিসেম্বর ২০১১)
৩. মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)
৪. নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ (বিশ্বভারতী ২০০০)
৫. কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, অভিনব ব্যাকরণ (ঢাকা ১৯৪৮)
৬. মুহম্মদ আবদুল হাই, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪)
৭. ড. হায়াৎ মামুদ, ভাষাশিক্ষা : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (২০০৪)
৮. ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, ভাষাবিধি : বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও প্রবন্ধ রচনা (আদিল ব্রাদার্স, জানুয়ারি ২০০৯)
৯. ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (অগ্নি পাবলিকেশন্স, এপ্রিল ২০০৪)
১০. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৬৮)
১১. ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (বাংলা একাডেমি, স্বরবর্ণ অংশ: ডিসেম্বর১৯৭৪ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ: জুন ১৯৮৪)